শীতে চুলের যত্ন -wirebd.com

শীতে চুলের যত্ন – সহজ হেয়ার কেয়ার টিপস

শীত আসতে না আসতেই দেখা দিচ্ছে চুলের নানারকম সমস্যা। শীতের আবহাওয়া, আমাদের সমস্ত চুলের গঠন এবং প্রকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, ত্বকের মতোই এই শীতে চুলের যত্ন নেওয়া এবং চুলকে কোমল ও সুস্থ রাখা প্রয়োজন।

যদিও জেনেটিক্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আপনার খাদ্য, আবহাওয়া, দূষণ এবং চুলের যত্নে আপনার সামগ্রিক পদ্ধতি আপনাকে স্বাস্থ্যকর চুল পেতে সাহায্য করবে। আসুন, জেনে নেই আপনার চুলকে দুর্দান্ত আকারে রাখতে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।

শীতে চুলের যত্ন

গরমের মৌসুম শেষের পথে আমরা অনেকে শীতে চুলের যত্ন নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় পরে যাই। নিম্ন তাপমাত্রা এবং ঠান্ডা বাতাস আমাদের চুলকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এসব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে শীতে চুলের যত্নে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। চুলের সমস্যা অনুযায়ী নিম্ন পদ্ধতি গুলো আমাদের চুলকে আরও বেশি শক্তিশালী বানাতে সাহায্য করবে।

শীতে চুলের যত্ন - সহজ হেয়ার কেয়ার টিপস

চুলের ধরণ যাচাই করা

আমরা কেউ দেখতে যেমন এক না, তেমনি প্রত্যেকের চুলের ধরণও আলাদা। তাই আমাদের চুলের ধরণ এবং ত্বকের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন উপায়ে  চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আপনার কি ধরনের চুল  তা জানলে আপনাকে উত্তম চুলের যত্নে রুটিন তৈরি করতে সাহায্য করবে। আপনার চুলের ধরণ যেমন হতে পারেঃ-

  • তৈলাক্ত
  • শুষ্ক
  • স্বাভাবিক
  • তরঙ্গায়িত
  • সোজা
  • কোঁকড়া
  • কুণ্ডলী
  • পুরু

আমাদের সবসময় চুলের ধরণ বুঝে চুলের যত্ন নেওয়া উচিত। আপনি আপনার চুলের ধরন শনাক্ত করার পরে, চুলের জন্য সেরা  কাজ করবে এমন পণ্যগুলি সন্ধান করুন।

চুলে শ্যাম্পু করা

চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন শ্যাম্পু করতে হবে। মনে রাখবেন, ভালো চুলের মেইন কথাই হলো সুস্থ স্ক্যাল্প। তাই, স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখার জন্যে নিয়মিত শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকলে চুল ভালো থাকবে। শ্যাম্পু করার সময়ে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রেও চুলের ধরণ বুঝে চুল শ্যাম্পু করবেন।

চুলে শ্যাম্পু করা _ wirebd.com

  • সাধারণভাবে যাদের চুল সূক্ষ্ম, সোজা, তাদের তুলনায় ঘন, কোঁকড়া বা ঢেউ খেলানো চুলের লোকদের বেশি বার শ্যাম্পু করার দরকারহয়।
  • আপনার যদি শুষ্ক চুল থাকে, তবে প্রতি তৃতীয় দিনে ধুয়ে ফেলুন।
  • যদি আপনার চুল বেশি তৈলাক্ত হয়, তবে প্রতিদিন চুল ধোয়ার চেষ্টা করুন।
  • আপনার যদি স্বাভাবিক চুল থাকে (অতি শুষ্ক নয় এবং সুপার তৈলাক্ত নয়), তবে এক দিন পর বা প্রতি তিন দিন পর পর ধুয়ে ফেলুন।
  •  যখন আপনার চুল নোংরা অনুভব করবেন তখন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে তেল

খুশকি, ড্রাই স্ক্যাল্পের সমস্যার সঙ্গে অনেকের চুলে দেখা দিয়েছে অতিরিক্ত রুক্ষতা। এইসব অবস্থাতে তেল হতে পারে সহজ সমাধান। কেননা, তেল যে শুধু চুলের নির্দিষ্ট অংশকে ফোকাস করবে তা নয়, তেলের সাহায্যে চুলের অন্যান্য অনেক সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই এই শীতে চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কিছু তেল যা সহজেই বানিয়ে নিতে পারবেন, এই জাদুকরী মিশ্রণগুলো দিয়ে। যেমনঃ-

চুলের যত্নে তেল _ wirebd.com

  • বাদামের তেল
  • জবা ও তেলের মিশ্রণ
  • মেথি ও তেলের মিশ্রণ

অনেক বেশি সময় চুলে তেল দিয়ে রাখলেই সেটা চুলের জন্য ভালো হবে এমন নয়। বরং  চুলে ধুলোবালি আরও বেশি করে আটকে থাকে এবং নানারকমের সমস্যা দেখা দেয়। তার চেয়ে এক থেকে ২ ঘণ্টা চুলে তেল রেখে ধুয়ে ফেলুন।

হেয়ার ম্যাসাজ

চুলে তেল প্রয়োগের সময় ম্যাসাজ খুব জরুরি। তবে সেটি করতে হবে খুব ধীরে ধীরে। নয়তো উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।  হেয়ার ম্যাসাজের ফলে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। এতে করে মাথার ভেতরে অক্সিজেন আসা-যাওয়া করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায়। আর হরমোন নিঃসরণের ফলে মনটাও ফুরফুরে হয়ে ওঠে।

হেয়ার ম্যাসাজ _ wirebd.com

গরম পানি এড়িয়ে চলুন

অনেকে শীতে গিজার ব্যবহার করে বা গরম পানি দিয়ে গোছল করে। এক্ষেত্রে গরম পানি আপনার চুলের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। শীতে খুব গরম পানিতে আপনার চুল ধোয়া এড়াতে চেষ্টা করুন। কারণ, গরম পানি আপনার চুল শুকিয়ে ফেলতে পারে এবং আপনার মাথার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই, এই শীতে চুল ধোয়ার সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।

সাপ্তাহিক হেয়ার মাস্ক

স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য যেমন সাপ্তাহিক ফেস মাস্ক অপরিহার্য, তেমনি শুষ্ক- ক্ষতিগ্রস্ত চুলের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক হেয়ার মাস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  হেয়ার মাস্ক দ্রুত এবং ব্যবহার করা সহজ। এগুলি প্রচুর পরিমাণে চুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়ে পরিপূর্ণ এবং 20-মিনিটের মধ্যে কার্যকর। হেয়ার মাস্ক নরম করা, হাইড্রেটিং এবং চকচকে যোগ করার মতো সুবিধা দেয়। ঘরোয়া উপায়ে কিছু হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে পারেন।যেমনঃ-

পাতা মেহেদী বেটে তার সাথে ডিমের সাদা অংশ ,লেবু, মেথির মিশ্রণে একটা মাস্ক তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও পাকা কলা,টক দই, অ্যালোভেরার মিশ্রণে হেয়ার মাস্ক  বানানো যায়।

নিয়মিত চুল ট্রিম করুন

আপনি যদি আপনার চুল না কেটে দীর্ঘ সময় ধরে রাখেন তবে এটি ক্ষতিগ্রস্থ এবং অস্বাস্থ্যকর দেখাতে পারে। প্রতি 6 মাস বা মাসে ১ বার আপনার চুল ট্রিম করার চেষ্টা করুন।

আপনার যদি ঘন ঘন সেলুন পরিদর্শন করা খুব বেশি ঝামেলা বা  ব্যয়বহুল  মনে হয় তবে আপনার চুল নিজেই ট্রিম করুন। বাড়িতে যেভাবে চুল ট্রিম করবেনঃ-

চুল কাটা কাঁচিতে বিনিয়োগ করুন এবং আপনার মাথার পিছনে দেখতে একটি আয়না ব্যবহার করুন।
আপনার চুল ভেজা বা সোজা হলে ট্রিম করা সবচেয়ে সহজ।

যদি আপনার চুল কোঁকড়া হয়, তবে এটি শুকনো বা সামান্য ভেজা অবস্থায় ছাঁটাই করা ভালো। কোঁকড়া চুল ভেজা অবস্থায় অনেক লম্বা দেখায়, তাই এটি আপনার প্রত্যাশার চেয়ে কম শুকিয়ে যেতে পারে।

ভেজা চুল নিয়ে বাহিরে বের হবেন না

অনেক সময় গোছলের পর তাড়াহুড়া করে বাহিরে বের হতে হয়। তখন ভেজা চুলের উপরে বাহিরের আবহাওয়ার অনেক বড় একটা প্রভাব পরে। আবার ভেজা চুলের উপর বাহিরের ধুলো ময়লা পড়ে চুলের একতা বাজে অবস্থা হয়ে যায়। তাই বাহিরে বের হবার আগে আপনার চুল শুকানোর জন্য অতিরিক্ত সময় হাতে রাখুন। ঠান্ডা আবহাওয়াতে আপনার চুল শুকাতে অনেক সময় লাগবে। যদি চুল ভেজা অবস্থায় থাকে তাহলে আপনার চুল ভেঙে যাওয়া এবং বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

শীতে চুল ঢেকে রাখুন

শীতে বাহিরের আবহাওয়া শুষ্ক ও জলীয় বাষ্পহীন থাকে। যার ফলে, কঠোর শীতের আবহাওয়া আপনার চুলকে নষ্ট করে দিতে পার। তাই বাহিরে বের হবার আগে স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। চুল ঢাকার জন্য এমন স্কার্ফ বা টুপি ব্যবহার করতে হবে যাতে বেশি ঘর্ষণের ফলে হিতে বিপরিত না হয়। সিল্ক বা সাটিন রেখাযুক্ত টুপি আপনার চুলের জন্য আদর্শ, কারণ তারা ঘর্ষণ এবং ভাঙ্গন এড়ায়। আপনি অতিরিক্ত চুলের সিরাম বা স্মুথিং/এন্টি-ফ্রিজ ক্রিম ব্যবহার করে ফ্লাইওয়ে এবং স্ট্যাটিক সাহায্য করতে পারেন।

মাইক্রোফাইবার তোয়ালে ব্যবহার করুন

ভেজ আচুল অনেক ভঙ্গুর হয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের উচিত খুব নরম ও সফট তোয়ালে ব্যবহার করা। তাই যে কোন তোয়ালের পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার তোয়ালে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

মাইক্রোফাইবার তোয়ালে _ wirebd.com

মাইক্রোফাইবার উচ্চ জল শোষণ ক্ষমতা রাখে, ঘর্ষণ এবং চুল শুকানোর সময় কমায়, এবং এটি আপনার লকগুলিতে অনেক মৃদু।

জিঙ্কের ঘাটতি

জিঙ্কের অভাবে চুল পড়ে যেতে পারে। এটি প্রতিরোধ করতে আপনার খাবারের তালিকায় বাদাম, আখরোট, কাজু বাদাম। এছাড়াও আপনি খেতে পারেনঃ-

  • সবজি
  • ফলমূল
  • সবুজ শাক-সবজি
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
  • প্রয়োজনে একটি মাল্টিভিটামিন বা জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট যা আপনার খাদ্যকে উন্নত করতে পারে।

শেষ কথা

চুল শরীরের খুবই সংবেদনশীল অংশ। তাই চুলের যত্ন ও সেভাবেই করা উচিত। কারণ, একবার চুল নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া কঠিন।

আরও পরুনঃ-

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ছেলেদের চুলের যত্নে কিছু পরীক্ষিত টিপস যা আপনার অবশ্যই জানা দরকার

গরমে চুলের যত্ন – গ্রীষ্মের তীব্র গরমে কীভাবে চুলের যত্ন রাখবেন?