ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় কি?

ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় কি?

ভূমিকম্প কেন হয়? এটা নিয়ে আমাদের সকলের মনেই কম-বেশি অনেক প্রশ্ন। আমাদের মনে ভূমিকম্প কেন হয় এইটা নিয়ে এখনো অনেক ভুল ধারণা আছে। সারা পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয় তার মধ্যে একটি হলো ভূমিকম্প। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই মাঝারি থেকে মৃদু মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকা। এখানে যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে এ শহর ধংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাবে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের বেলায় আগাম কোনো পূর্বাভাস পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ভূমিকম্পে ঘরের ছাদ বা দেয়াল ধসে, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা গাছ পড়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে থাকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক তার পড়ে বা গ্যাস লাইন ফেটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং তাতে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়। এসব ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে যাতে করে হতাহতের ঘটনা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কেন হয় এবং ভূমিকম্প হলে আমাদের করণীয় কি সেই সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

ভূমিকম্প কি

ভূমিকম্প কি

ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ -অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্যে যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়, এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব তাহলে বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।

গবেষকদের মতে, বিশ্বে বছরে গড়ে প্রায় ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যা আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প কেন হয়

ভূমিকম্প কেন হয়

ভূমিকম্প কেন হয় এটা নিয়ে আমাদের মনে অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের এ অত্যাধুনিক যুগে এসে ভূমিকম্প কেন হয় বা এর কারণ কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রায় সবার কাছে উন্মুক্ত হয়েছে। অনেক আগে পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগ কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। পরে সেগুলো ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। আর এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। এই টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে যদি এদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তাহলে সেখান থেকে তৈরি হয় শক্তি। আর এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর তখন যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। আর এই কাঁপুনিই মূলত ভূমিকম্প। আবার আগ্নেয়গিরির কারণেও ভূ-অভ্যন্তরের ভেতর থেকে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার কোন কোন এলাকায় ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে অতিরিক্ত পানি কিংবা তেল উঠানোর ফলে ভূপৃষ্ঠের অবস্থানের তারতম্যে ঘটে। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে, ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়

ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প হয়। আর এই ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে ১-২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে খুবই কমসংখ্যক কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভবও করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটাই। এ কম্পন আগে থেকে আঁচ করা যায় না বলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকে। তাই ভূমিকম্পের সময় আমাদের যা করতে হবে সেসব সম্পর্কে নিচে লেখা হলোঃ-

  • যদি বুঝতে পারেন যে ভূমিকম্প হচ্ছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
  • ভূমিকম্পের সময় যদি উঁচু ভবনে থাকেন এবং সেখান থেকে যদি বের হতে না পারেন তাহলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
  • ভূকম্পন অনুভূত হলে শান্ত থাকুন। হতবিহ্বল না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
  • ভূমিকম্পের সময় যদি বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকেন তাহলে সবাই এক সাথে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
  • কখনোই উঁচু বাড়ির জানালা, বারান্দা বা ছাদ থেকে লাফ দেবেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় যদি বিছানায় থাকেন তাহলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি ধরে রাখুন।
  • ভূমিকম্পের সময় যদি রান্নাঘরে থাকেন তাহলে গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
  • ভূমিকম্পের সময় যদি উঁচু ভবনে থাকেন তাহলে সেখান থেকে নিচে নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়িতেই থাকুন।
  • ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকুন।
  • ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন এবং উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
  • একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যাকে ‘আফটার শক’ বলে। তাই নিজেকে বিপদমুক্ত ভাবতে অন্তত একঘণ্টা সময় নিন।
  • সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিতে। এগুলো আপনার বিপদের সময় কাজে লাগবে।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা ভূমিকম্প কেন হয় ও ভূমিকম্প সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। যেমনঃ ভূমিকম্প কি, এটি কেন হয় বা ভূমিকম্প হলে আমাদের কি করতে হবে সেই সম্পর্কে।

ভূমিকম্প সম্পর্কে আরও জানতেঃ- (wikipedia)

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *