birth-certificate-applay

যেভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবেন। সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি

জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ দেশের অভ্যন্তরে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট করার জন্য একটি অপরিহার্য নথি জন্ম নিবন্ধন সনদ। তাই শিশু জন্মের পর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বাবা-মায়ের উচিত জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা। আগে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া অফলাইনে হলেও বর্তমানে সরকারি ডাটাবেসে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে তথ্যগুলো নেয়া হচ্ছে।

এই আর্টিকেলে আমি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার পদ্ধতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখাবোঃ-

অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম

আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেনঃ-

  1. আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় উপস্থিত হয়ে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
  2. ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।

তাহলে চলুন দেখে নেই কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করবেনঃ-

  • নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করতে প্রথমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সরকারি ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইট লিংক bdris.gov.bd
  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর যে ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন করতে চান সেটি বাছাই করতে হবে। যদি বাংলাদেশের বাহির থেকে আবেদন করতে চান তাহলে দূতাবাস লিখা সিলেক্ট করে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন

  • এরপরে আপনার সামনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম ওপেন হবে। এখানে যার জন্ম নিবন্ধন করবেন তার বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি দিতে হবে। সাবধানতার সাথে এই তথ্য গুলো দিতে হবে, কারণ ছোট কোন ভুল হলে পরে অনেক বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন

  • সাবধানতার সাথে সকল তথ্য সাবমিট দেওয়ার পরে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপরে পিতা ও মাতার তথ্য দিতে হবে। পূর্বের মতো সাবধানতার সাথে শিশুর মাতা ও পিতার তথ্যগুলো দিতে হবে। মাতা ও পিতার তথ্যগুলো দেওয়ার পরে আবার “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন

  • এই ধাপে যার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবেন তার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। প্রথমেই “আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা আপনার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান কিনা” এই রকম একটি অপশন থাকবে, সেখানে “কোনোটিই নয়” অপশন সিলেক্ট করলে আলাদা করে স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা দেওয়ার অপশন চলে আসবে।
  • অপশনগুলো থেকে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। যদি জন্মস্থান এর ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হয় সেক্ষেত্রে “জন্মস্থান এর ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই” অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। আর যদি স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা একই হয় সে ক্ষেত্রে তার নিচে “স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা একই” অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। সঠিকভাবে তথ্যগুলো পূরণ করা হয়ে গেলে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন

  • এরপরে আবেদনকারীর তথ্য দিতে বলবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করে দিচ্ছে তার তথ্য দিতে হবে। একজন শিশুর জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী হিসেবে পিতা, মাতা এবং আইনত অভিভাবক আবেদন করতে পারবে। এই অপশনগুলো থেকে কোন একটি সিলেক্ট করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনকারীর তথ্য পূরণ হয়ে যাবে।
  • তবে অন্যান্য অপশনটি সিলেক্ট করলে আবেদনকারীর তথ্য ইনপুট করে দিতে হবে। আবেদনকারীর তথ্য দেওয়ার পরে পুনরায় “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে। যদি কোন তথ্য ভুল থাকে অথবা কিছু ভুল হয়ে গেছে এমন মনে হয় তাহলে পূর্ববর্তী বাটনে ক্লিক করে আগের ধাপে যাওয়া যাবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

আবেদনকারীর তথ্য দেওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য সবুজ রঙের “সংযোজন” বাটনে ক্লিক করে ডকুমেন্টগুলো আপলোড করতে হবে।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুযায়ী শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। যদি কোন অসুবিধার কারণে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারেন তবে অবশ্যই শিশুর বয়স ৫ বছর হওয়ার আগে জন্ম নিবন্ধন করে নিবেন। কারণ ৫ বছর বয়স পার হলে জন্ম নিবন্ধন করতে অতিরিক্ত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় এবং ঝামেলা পোহাতে হয়।

তাহলে চলুন দেখে নেই জন্ম নিবন্ধন আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টের দরকার হয়ঃ-

শিশুর বয়স ৪৫ দিনের মধ্যে হলেঃ-

  • ইপিআই (টিকা) কার্ড
  • হাসপাতালের ছাড়পত্র
  • আবেদনকারী মাতা-পিতা/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর
  • মাতা ও পিতার ডিজিটাল বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (যদি থাকে)
  • মাতা ও পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • বাসার হোল্ডিং নম্বর ও হাল সনের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ।

শিশুর বয়স ৪৬ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর হলেঃ-

  • ইপিআই (টিকা) কার্ড
  • স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যায়নপত্র (স্বাক্ষর ও সীলসহ)
  • মাতা ও পিতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (যদি থাকে)
  • মাতা ও পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র
  • বাসার হোল্ডিং নম্বর ও হাল সনের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ
  • আবেদনকারী মাতা ও পিতা/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর
  • আবেদন ফরম জমা দেয়ার সময় ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

বয়স ৫ বছরের বেশি হলেঃ-

  • বয়স প্রমাণের জন্য চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র (এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী)
  • প্রথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট
  • মাতা ও পিতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (যদি থাকে)
  • মাতা ও পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য মাতা / পিতার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঘোষিত আবাসস্থলের হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমানপত্র
  • বাড়ি / জমি ক্রয়ের দলিল, খাজনা ও কর পরিশোধ রশিদ।

জন্ম নিবন্ধনের অরিজিনাল সনদ সংগ্রহ

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করা হলে আমাদের জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা শেষ। এখন আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এখানে ডাউনলোড করার কোন অপশন নেই তাই যদি আপনার কম্পিউটারের সাথে প্রিন্টার যুক্ত থাকে তাহলে সরাসরি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

প্রিন্টার না থাকলে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি ব্যবহার করে যেকোনো কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন। আবেদন করার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো (জন্ম নিবন্ধন করার সময় প্রমানপত্র হিসেবে দাখিল করা হয়েছে) সঙ্গে নিয়ে পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যোগাযোগ করে, জন্ম নিবন্ধনের অরিজিনাল সনদ সংগ্রহ করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন সংক্রান্ত কিছু কমন প্রশ্ন

আশাকরি কিভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবেন তা বুঝতে পেরেছেন। অনেকের মনে আবেদন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। চলুন এই রকম কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর গুলো দেখে নেই-

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কত টাকা ফি লাগে?

  1. শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করলে কোন প্রকার ফি দিতে হবে না।
  2. শিশুর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে হলে ২৫ টাকা ফি দিতে হবে।
  3. বয়স ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।

পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন না থাকলে জন্ম নিবন্ধন করা যাবে?

বর্তমানে মাতা-পিতার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা না থাকলেও সন্তানের জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যাচ্ছে, তবে অবশ্যই মাতা-পিতার জাতীয়পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হবে।

শেষ কথা

যেকোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে NID কার্ড না হওয়া পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে সব কাজ করতে হয়, এমনকি NID কার্ড করার জন্য জন্ম নিবন্ধন এর দরকার হয়। তাই অলসতা না করে সন্তান জন্মের পরে যত দ্রুত সম্ভব জন্ম নিবন্ধন করে নিবেন। এর নিজে থেকে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করতে পারেন। অবশ্যই আবেদন করার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন যাতে কোন তথ্য ভুল না হয়ে যায়।

আরও জানুনঃ- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার সঠিক পদ্ধতি।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *