মেয়েদের চুলের যত্ন

মেয়েদের চুলের যত্ন – ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন

কাজে ব্যস্ত থাকলে চুলের যত্ন নেওয়া হয় না। আবার মেয়েদের চুলের যত্ন খুব ভালোভাবে নেওয়ার উপকরণ কেনাকাটা করাও সময়সাপেক্ষ  ব্যাপার। ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করেও আমরা চুলের সঠিক যত্ন নিতে পারি। চুলের যত্নে বাহিরের উপকরণ থেকে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করা বেশি উপকারী। আমরা আজকে আপনাদের ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিতে কিছু কার্যকরী প্যাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

মেয়েদের চুলের যত্নে ঘরোয়া পদ্ধতি

মেয়েদের ক্ষেত্রে পার্লারে গিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া খুবই সহজ। কিন্তু অনেকের কাছে পার্লার মানেই ব্যয়বহুল সাথে সময়সাপেক্ষ। তাই ঐসব আপুদের কথা চিন্তা করেই নিম্নে চুলের যত্নে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব, যাতে তাদের একটু হলেও উপকারে আসবে।

মেয়েদের চুলের যত্নে ঘরোয়া পদ্ধতি _ wirebd.com

ডিম ও কলা

চুলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে, মজবুত করতে এবং যোগ করতে অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ কলা এবং ডিমের সমন্বয়ে একটি “কলা প্রোটিন স্মুদি” তৈরি করতে পারেন।

এটি যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ

দুটি ডিমের কুসুম, দুটি পাকা কলা, দুই থেকে তিন টেবিল চামচ মধু, আধা কাপ কন্ডিশনার এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল পুরোপুরি বিশুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। চুলে 20 থেকে 30 মিনিট রেখে দিন; ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চা-পাতা

চা খাওয়ার পর চা-পাতা ফেলে দেবেন না। সেটি আরেকবার ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে রেখে দিন। গোসলের শেষে চায়ের পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

কলা ও মধু

সিল্কি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কলা আর মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করুন। মধু হলো প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট (উপাদান যা আর্দ্রতাকে আকর্ষণ করে এবং আটকে রাখে) এবং তৃষ্ণার্ত চুলকে হাইড্রেট করে। তবে কলার এই পেস্ট ১০ মিনিটের বেশি চুলে রাখবেন না। তাহলে চুল ধুতে কষ্ট হবে। ৫-৬ মিনিট রেখে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

পেঁয়াজের রস

ঘরে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হলো পেঁয়াজ। চুলকে মজবুত রাখার জন্য এটি খুবই উপকারী। রুক্ষ চুলে পেঁয়াজের রসের সাথে লেবুর রস বা অল্প তেল মিশিয়ে নেবেন। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন।

নারিকেল তেল

একটি বাটিতে চুল অনুযায়ী নারিকেল তেল নিন। মাইক্রোওয়েভে বা চুলায় হালকা গরম করুন। এটি ঠান্ডা হলে চুলে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে সকালে বা বাহিরে যাওয়ার আগে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

টকদই

শ্যাম্পুতে বড় অর্থ বিনিয়োগ করুন এবং কন্ডিশনারগুলিতে সঞ্চয় করুন।

অনেকের চুলে কন্ডিশনার (conditioner) ব্যবহার করলে প্রচুর চুল পড়ে। তাই প্রতিদিনই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না। টকদই কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। তাই টকদই চুলে মেখে রেখে দিন ১০ মিনিট তারপর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে শ্যাম্পুর পর টকদই ব্যবহার করলে আপনার চুল হবে ঝলমলে।

ক্যাস্টর অয়েল

চুল ঘন করার জন্য এবং দ্রুত বাড়ার জন্য ক্যাস্টর অয়েল অনেক উপকারী। এই তেল অনেক ঘন হয়। তাই এই তেল অল্প করে চুলে ম্যাসেজ করে ৩০ মিনিট রাখবেন, নারকেল তেলের সাথে মিক্স করে অয়েল ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন। চাইলে সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে পারেন।

ক্যাস্টর অয়েল _ wirebd.com

ভিটামিন ই ক্যাপসুল

নারিকেল তেলের সাথে এক -দুইটি  ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি তুলোতে ভিজিয়ে মাথার ত্বকে ঘষুন।সারারাত তেল লাগিয়ে রাখুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল _ wirebd.com

শুষ্কতা মোকাবেলা করার জন্য একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে, ত্বকের মৃত কোষগুলিকে ঝেড়ে ফেলতে এবং চুলের ফলিকলগুলিকে বন্ধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও চুলকানিযুক্ত স্থানে তেল মালিশ করতে পারেন।

মেহেদি পাতা

চুলকে মজবুত এবং সিল্কি করতে মেহেদির পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।  মেহেদি পাতা পিষে তার সাথে ডিমের সাদা অংশ, লেবু, মেথি, পেঁয়াজের রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে এক-দুইবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। সমস্যা চলতে থাকলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে পারেন।

মেহেদি পাতা _ wirebd.com

আদার ব্যবহার

আদার মধ্যে থাকে জিঞ্জারল নামের এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চুলকে গোড়া থেকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও, আদা  চুলে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে । আজকাল দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে চুল বেশি খসখসে হয়ে যায়। হারিয়ে যায় প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য। আদার ব্যবহার মাথার ত্বক প্রশমিত করতে এবং খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

আদা _ wirebd.com

দুই কাপ পানিতে অর্ধেক আদা ভালো করে ফুটিয়ে নিন।এরপর, আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এবং চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন  শ্যাম্পু দিয়ে।

এছাড়াও চুলের যত্নে নিম্নলিখিত টিপস যা চুলকে আরও ভালো, সুরক্ষিত এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

  • চুল সুরক্ষিত রাখুন।
  • ভেজা চুলকে সাবধানে ট্রিট করুন।
  • সঠিকভাবে শ্যাম্পু করুন।
  • নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
  • অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • তোয়ালে ব্যবহার করুন আলতোভাবে।
  • আঁটসাঁট বেণী নয়।
  • ভালো বালিশের কভার ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিত তেল দিন।
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন।

সুন্দর চুলের জন্য যে খুব ব্যয়বহুল লাইফস্টাইল অথবা প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে হয় এমনটা কখনোই নয়। শুধু প্রয়োজন নিয়মিত চুলের যত্ন, পরিচর্যা আর প্রয়োজন সঠিক পুষ্টির। আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্বাস্থ্যকর থাকলে, ভালো থাকবে চুল। তাই সুন্দর চুল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও আবশ্যক।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *