আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার হল ভেজানো আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার, সালাদ ড্রেসিংস, মেরিনেডস, ভিনাইগ্রেটস এবং ফুড প্রিজারভেটিভস চাটনিতে ব্যবহার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় আপেল পিষে এর থেকে রস বের করা হয়। অ্যালকোহলীয় গাঁজন প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাকটেরিয়া এবং খামির তরলে যুক্ত হয় যা শর্করাগুলিকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে। এটি হল দ্বিতীয় গাঁজন পদক্ষেপ অ্যালকোহল দ্বারা রূপান্তরিত হয় অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া।

তবে এটিতে এসিটিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড একত্রিত হয়ে ভিনেগার কে স্বাদ যুক্ত করে তোলে। আপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় আপেল সিডার ভিনেগার যা আপেল জুসকে অ্যালকোহলে পরিনত করে।

আপেল সিডার ভিনেগার কি

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

এটি আপেলের রস থেকে তৈরি ভিনেগার যা দুবার গাঁজানো হয়েছে। প্রথমত, আপেলের রস আপেল সিডারে গাঁজন করা হয়। তারপরে, আপেল সিডারকে আপেল সিডার ভিনেগার এ গাঁজন করা হয়। এই দ্বিগুণ গাঁজন আপেলের রসের প্রাকৃতিক শর্করাকে প্রথমে অ্যালকোহলে এবং তারপরে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে ভেঙে দেয়। অ্যাসিটিক অ্যাসিড ছাড়াও, আপেল সাইডার ভিনেগারে ভিটামিন, খনিজ, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, দ্রবণীয় ফাইবার, লাইভ এনজাইম এবং পলিফেনল (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) রয়েছে। এটিতে যেমন লাইভ ইস্ট ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক, এটিতে চমৎকার প্রোবায়োটিক গুণাবলীও রয়েছে।

এ ভিনেগারে ৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট ৫% অ্যাসেটিক এসিড থাকে এবং কোনও ফ্যাট বা প্রোটিন নেই। ইহা ২২ ক্যালোরি সরবরাহ করে। এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এসিটিক অ্যাসিড থাকার জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ সাধারণত টক হয় এবং রঙ হয় হালকা বাদামি। এতে খনিজ লবণ, ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিডস, অর্গানিক অ্যাসিডস, পলিফেনল কম্পাউন্ডস রয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এর মধ্যে।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

সচেতন মানুষদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগারখুবই জনপ্রিয়। আপেল সিডার শরীরের ওজন,কোলেস্টেরল,রক্তে শর্করা, কমানো সহ বিভিন্ন উপকারে সাহায্য করে থাকে। শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোসহ অনেক উপকার করে এ ভিনেগার। গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল থেকে এ ভিনেগারটি তৈরি করা হয়। এ ভিনেগারে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে।এটি শরীরের জন্য উপকারি। এছাড়া এ ভিনেগারে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ।

আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া নিধন করতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নখের ছত্রাক, আঁচিল, উকুন, কানের ইনফেকশন উপশম করতেও আপেল সিডার ব্যবহার করা যায়। কয়েক হাজার বছর আগে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হতো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

  • বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে দেড় (1½) চা চামচ (৭.৫ মিলি) আপেল সিডার মিশিয়ে পান করতে হবে। পানির সাথে না মিশিয়ে সরাসরি পান করা যাবে না। পান করার পর অবশ্যেই ½ ঘন্টা দ্রুত হাটা ও ½ ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে।
  • যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ২৫০ মিলি পানিতে দেড় (1½) চা চামচ আপেল সিডার মিশিয়ে পান করতে হবে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ২০-৩০ মিনিট পর অবশ্যই কিছু খাওয়া উচিৎ।
  • ডা: জাহাংগীর কবিরের মতে, আপেল সিডার ভিনেগার ১ চা চামচ ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিবার খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে। এর সাথে লেবুর রস বা আদার রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
  • দীর্ঘ দিন ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার মূলত আপেল থেকে তৈরি একধরনের ভিনেগার। বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যাসিটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য উন্নয়নকারী বৈশিষ্ট্যর জন্য বেশ উপকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ACV ট্যাবলেটগুলি বিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমানো থেকে শুরু করে পেটের মেদ কমাতে বেশ উপকারী। শুধু তাই নয় ত্বক ও চুলের যত্নেও কার্যকরী এই উপাদানটি। জৈব ACV সিন্থেটিক কীটনাশক ছাড়া জন্মানো আপেল থেকে তৈরি করা হয়, যা চূড়ান্ত পণ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক অবশিষ্টাংশের ঝুঁকি হ্রাস করে।

আপেল সিডার ভিনেগারের কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হল:-

  • রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ার গতি কমায়। বিশেষ করে Type-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগারের মাত্রা প্রায় ৩১% কমে যায়।
  • একাধিক গবেষণাতে দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনগার সেবন করলে রক্তের সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন গ্রহণ না করে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার পান করলে সকালে সুগারের এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতে দেখা গেছে, যে সকল লোক শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে আপেল সিডার ভিনেগার পান করেন তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা কম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর অ্যান্টি গ্লাইসেমিকের প্রভাব এর মূল চাবিকাঠি।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, রোজ আপেল সিডার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে কমে পেটের মেদ। তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে, শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।
  • আপেল সিডার ভিনেগার স্টার্চ পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্ত প্রবাহে ক্যালরির পরিমাণ কম হয়।
  • বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না, খিদে কমায়, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং ফ্যাট বার্ন করে।
  • বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আপেল সিডার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে।
  • আপেল সিডার দেহের PH এর সমতা রক্ষা করে।
  • আপেল সিডার শরীরের লিভারের ফ্যাট বার্ন করে লিভারকে ভালো রাখে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
  • আপেল সিডার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে (যাদের আলসার আছে তাদের জন্য নয়)।

কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও আপেল সিডার ভিনেগার অত্তান্ত উপকারী একটি পানিয়। নিজেদের খাদ্য তালিকায় এটি সংযুক্ত করা আমাদের উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেলে বা ব্যবহার করলে অনেকটাই উপকারে আসবে।

আরও জানতেঃ-(wikipedia)

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *