প্যানিক এটাক কেন হয়? প্যানিক এটাক এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ

প্যানিক এটাক কেন হয়? প্যানিক এটাক এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ

আমাদের অনেকে মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপ্যাঁচ করে যে, প্যানিক এটাক কেন হয়? এসলে প্যানিক এটাক হলো এক প্রকার ভীতি ও উদ্বেগের তীব্র অনুভূতি। হঠাৎ ভয় খুব ভীতিকর  মনে হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। এটি যে কারোরই হতে পারে। এটি প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয়। আবার এটি শৈশবেও শুরু হতে পারে। কিন্তু প্যানিক অ্যাটাক আসলে কী?

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো প্যানিক এটাক কেন হয়? প্যানিক এটাক এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…

প্যানিক এটাক কি?

প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে ভীতি ও উদ্বেগের অনুভূতি যা হঠাৎ করেই আমাদের হতবিহ্বল করে দিতে পারে। অর্থাৎ প্রচণ্ড ভয়ে শরীরের মধ্যে যে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় তাকে প্যানিক এটাক বলে। এটি একধরনের মানসিক সমস্যা।

সাধারণত এ সমস্যার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, হালকা মাথাব্যথা ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার মতো তীব্র কিছু শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক শিশু এ ধরনের পরিস্থিতিতে আতঙ্ক অনুভব করে, সে মনে করে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। এমনকি প্রকৃতপক্ষে যখন কোনো বিপদ থাকে না, তখনও এই অনুভূতি হতে পারে।

প্যানিক এটাক কি

প্যানিক এটাক কেন হয়?

প্যানিক এটাক কেন হয়? এটার উত্তরে বিজ্ঞান অনেক গবেষণার পরও সঠিক কোন সমাধান খুজে পায়নি। আসলে প্যানিক অ্যাটাকের নির্দিষ্ট কোনো কারণ সবসময় স্পষ্ট নয়। এটি যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষনায় বলা হয়েছে- কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করা অথবা মানসিক বা কঠিন চাপযুক্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো:-

  • প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে
  • অবহেলা বা নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে মানসিক চাপ
  • স্কুলে বা বাড়িতে কোনো কঠিন অভিজ্ঞতার কারণে সৃষ্ট উদ্বেগ
  • বন্ধুত্ব, সম্পর্ক বা পরীক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে মানসিক চাপ
  • কারও মাধ্যমে অপমাণিত হওয়াতে
  • অতিরিক্ত ধূমপান, মাদকাসক্তি
  • বংশপরম্পরায় কোনো মানসিক ব্যাধির ইতিহাস থাকলে।

প্যানিক এটাক কখন হয়?

প্যানিক এটাক কেন হয় বা কখন হয় তা নিয়ে সঠিক কোন সময় নেই। প্যানিক এটাক যেকোনো সময় হঠাৎ করে হতে পারে। মানুষভেদে এর সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন  হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি ২০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হয় এবং সাত থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত তীব্র পর্যায়টি চলে। এই পরিস্থিতিগুলো একজন ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনায় বা স্বপ্নেও আসতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলো অসহায়তা, আতঙ্কের অনুভূতি এবং ভয়ের মাধ্যমে আবার অনুভব করে থাকেন

প্যানিক এটাকের লক্ষণ ও উপসর্গ

প্যানিক এটাকের লক্ষণ ও উপসর্গ

ভীতি ও উদ্বেগের তীব্র অনুভূতিই প্যানিক অ্যাটাক। কোনো দুঃখ বা ভয়ঙ্কর ঘটনা দেখে ঘাম হওয়া, বুকে ধরপরানি, শ্বাসকষ্টের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাটি যখন তখন যেকোনো সময় হতে পারে। প্যানিক এটাকের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর প্রধান কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ হলো:-

  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হওয়া।
  • হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়া।
  • পায়ে কাঁপুনি ও টালমাটাল ভাব হওয়া।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হওয়া।
  • মাথা হালকা হওয়া বা অচেতন হওয়ার অনুভূতি।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • মলত্যাগের চাপ অনুভব করা।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • কানে শব্দ হওয়া।
  • অশ্রুসিক্ত হওয়া, যেন তারা কান্না থামাতেই পারে না।
  • আলো আরও উজ্জ্বল এবং তীব্রতর মনে হওয়া।

প্যানিক এটাক হলে যা করবেন

প্যানিক এটাক হলে যা করবেন

প্যানিক এটাক হলো একটি মানসিক সমস্যা। যা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় হতে পারে। সাধারণত কারো প্যানিক এটাক হলে সে মনে করে তার হার্ট এটাক হয়েছে বা সে মারা যাচ্ছে। যে কারনে সে হাঁসফাঁস করতে থাকে বাঁচার জন্য, যার প্রভাব তার শরীরেও পড়ে।

আমরা প্যানিক এটাক কেন হয় এ সম্পর্কে ভালো ভাবে জানলাম। এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে প্যানিক এটাক হলে কি করব। এ সমস্যা ঠেকানোর কোনো উপায় এখনো বের হয়নি। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, হঠাৎ করে নিজের কিংবা প্রিয় কারো প্যানিক এটাক হলে কি করবেন:-

লম্বা শ্বাস নিন:- এ সমস্যা শুরু হওয়া মাত্র লম্বা করে শ্বাস নিন। এর পর আস্তে করে ছেড়ে দিন। কারণ মস্তিষ্ক অক্সিজেন পেতে শুরু করলে আস্তে আস্তে আক্রমণের তীব্রতা কমে আসবে।

মানসিক প্রস্তুতি নিন:- নিজেকে এটা বোঝানো যে এটি একটি সাময়িক অবস্থা যা সহজেই ঠিক হয়ে যাবে, এতে মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই।

পানি পান করুণ:- শরীরকে শান্ত করার জন্য ঠান্ডা পানি পান করুন। সম্ভব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ও মুখ পরিষ্কার করুন।

পছন্দের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন:- প্যানিক এটাকের সময় মন খুব অস্থির থাকে। সম্ভব হলে পছন্দের মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। অথবা কারো সাথে নিজের প্রবলেম শেয়ার করুন। এতে অস্থির মন শান্ত হবে, যা এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পছন্দের কাজ করার চেষ্টা করুন:- যে কাজটি করলে মন শান্ত হয়, সেটি করার চেষ্টা করুন। এ সময় মন অস্থির থাকে তাই কাজ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে নিজের পছন্দের কাজ করা, গান গাওয়া, ব্যায়াম করা এ সমস্যা থেকে দ্রুত প্রশান্তি দেয়।

শেষ কথা

প্যানিক অ্যাটাক এমনিতে খুব ভীতিকর মনে হয়। তবে সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে এটি রোধ করা যেতে পারে। প্যানিক এটাক কোনো ক্ষতি সাধন করেনা, এবং ঐ মুহূর্তে অসম্ভব মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ওই অনুভূতিটি এক সময় চলে যায়। আশাকরি আপনে বুঝতে পেরেছেন প্যানিক এটাক কেন হয় এবং প্যানিক এটাক এর লক্ষণ গুলো কিভাবে বুঝবেন।

আরও জানতেঃ-(wikipedia)

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

প্যানিক এটাক। প্যানিক এটাক এর লক্ষণ ও প্যানিক এটাক কেন হয়