হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন? শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন? শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

আপনি কি হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সাথে লড়াই করছেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এলার্জিক রাইনাইটিস রোগটির মতো শ্বাসকষ্ট সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এই শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় কি? কিছু কৌশল এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করতে পারে। যদি সমস্যা অব্যাহত থাকে বা আপনি অন্যান্য উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

আজকে আমি আলোচনা করব, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে আপনি কী করবেন এবং শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়। যারা শ্বাসকষ্ট কি, শ্বাসকষ্ট কেন হয়? শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কিত সকল বিষয় জানতে চান, তারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। আশা করি, আজকের আর্টিকেলের আলোচিত বিষয়টি আপনাদের উপকারে আসবে।

শ্বাসকষ্ট কি

শ্বাসকষ্ট কি?

শ্বাসকষ্ট যা ডাক্তারি ভাষায় ডিসপনিয়া নামে পরিচিত। শ্বাসকষ্ট বলতে শ্বাস নেওয়ার সময় একটি অস্বস্তিকর অবস্থা বোঝায়। যা আপনার ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করা কঠিন করে তোলে। হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যা আপনার শ্বাসের ক্ষতি করতে পারে। কিছু লোক অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারে। যেমন সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়, অতিরিক্ত পরিশ্রম করার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া স্বাভাবিক, হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় অপ্রত্যাশিতভাবে শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে ৩০ মিনিট বিশ্রামের পরেও যদি দূর হয় না, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার অন্যরা দীর্ঘ মেয়াদী অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে শ্বাসকষ্ট অনুভব করে।

শ্বাসকষ্ট কেন হয়

শ্বাসকষ্ট কেন হয়?

শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন ফুসফুসের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, সংক্রমণ, প্যানিক অ্যাটাক বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া। শ্বাসকষ্টের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল হার্ট এবং ফুসফুসের অবস্থা। হার্ট এবং ফুসফুস শরীরের অক্সিজেনেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার রক্ত ​​এবং টিস্যুতে অক্সিজেন গ্রহণ করতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতে আপনার হৃদয় এবং ফুসফুস একসাথে কাজ করে। যদি একটি বা অন্যটি সঠিকভাবে কাজ না করে তবে আপনি আপনার রক্তে খুব কম অক্সিজেন গ্রহণ বা খুব বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করতে পারেন।

যার ফলে আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।  তীব্র ব্যায়াম বা ঠাণ্ডা লাগার ফলেও আপনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন। তাছাড়া, ফুসফুসের জ্বালা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুসের চলাচলে বাধা, বা অবরুদ্ধ বা সংকীর্ণ শ্বাসনালীর কারণে বায়ুপ্রবাহের প্রতিরোধের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আপনার যদি অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হয়, বিশেষ করে এটি হঠাৎআপনার শরীরে অনুভব করে এবং গুরুতর হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তারকে দেখানো উচিত। এই উদাহরণগুলির বাইরেও শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণ রয়েছে।

  • দুশ্চিন্তা
  • রক্তশূন্যতা
  • হার্ট এবং ফুসফুসের অবস্থা
  • মেদ বৃদ্ধি
  • শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ – ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল এবং ছত্রাকজনিত
  • ধূমপান
  • উচ্চ হৃদস্পন্দনের হার বা ধড়ফড় ৩০ এর উপরে
  • শ্বাসযন্ত্রের রোগ – হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, প্লুরাল ইফিউশন, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি।

শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ

শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ

মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তবে এটি একটি স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। খুব কঠোর ব্যায়াম, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, ওজন বৃদ্ধি এবং উচ্চতা সবই একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। নিম্নে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও উপসর্গ দেওয়া হল-

  • গভীর শ্বাস নিতে অসুবিধা।
  • গোড়ালি বা পা ফোলা।
  • বুকে টানটান ভাব।
  • ঘ্রাণ
  • কাশি
  • দ্রুত রেসিং হার্ট রেট বা শ্বাস প্রশ্বাস
  • ঠোঁট নীল
  • মনে হচ্ছে জোর করে শ্বাস নেওয়া দরকার

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন?

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন?

কিছু লোকের অল্প সময়ের জন্য শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এই অপ্রত্যাশিত এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট আপনার জীবন হুমকির সম্মুখিন হতে পারে। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। এরকম সমস্যা হলে ভয় পাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক সময় দুশ্চিন্তার কারণে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আবার ঠান্ডা বা কাশি হলে শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে নিচের অংশে কিছু কৌশল অবলম্বন কুরলে আপনার শ্বাসকষ্ট উপশম হতে পারে।

ঠোঁট কুঁচিত করে শ্বাস নেয়া

হঠাৎ আতঙ্ক বা হাইপারভেন্টিলেশনের কারণে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এসময় ঠোঁট কুঁচিত করে শ্বাস নিতে পারেন। এটি শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি সহজ উপায়। এটি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ধীর করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করার পরে যদি আপনার খুব শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে আপনি ঠোঁট কুঁচিত করে শ্বাস নিন। এটি করার ফলে শ্বাসকষ্ট উপশম না হলে আপনার চিকিৎকের সহায়তা নেওয়া উচিত। এটি আপনার ফুসফুস থেকে আটকে থাকা বাতাসকে মুক্তি দিতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে ভারী বস্তু তোলা, হাঁটা বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আপনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে এই উপায় ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ঠোঁট এমনভাবে কুঁচিত করুন যেন মনে হয় আপনি শিস দিতে চলেছেন এবং আসতে আসতে শ্বাস ছাড়ুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে আপনি সাথে সাথে চেয়ারে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিন। এতে আপনার শরীরকে শিথিল করতে এবং শ্বাস প্রশ্বাসকে সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।  শ্বাসকষ্ট হলে যেভাবে আপনি বিশ্রাম নিবেন-

  • আপনার পা মেঝেতে সমান করে রেখে একটি চেয়ারে বসতে পারেন।
  • চেয়ারে বসে আপনার বুককে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে কিছুক্ষণ বসতে পারেন। এভাবে ঝুঁকে বসার ফলে ফুসফুস ও হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
  • চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর বালিশ রেখে তাতে মাথা নিচু করে শোয়া।
  • একটি চেয়ারে বসে আলতো করে আপনার কনুই হাঁটুতে রাখুন বা আপনার হাত টেবিলের উপর রাখুন।
  • একটি চেয়ারে বসে হাত দিয়ে আপনার থুতনি ধরে রাখুন।

দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়ানো

হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার শ্বাসকষ্ট হলে দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। এই কৌশলটি আপনার শরীর এবং শ্বাসনালীকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।

একটি দেয়ালের কাছে  শরীর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, পা দেয়াল থেকে এক ফুট দূরত্বে রেখে দাঁড়ান এবং আপনার উরুতে হাত রাখুন। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় এই পদ্ধতি করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন।

হাতের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়ানো

বিভিন্ন কারণে আপনার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমন সময় আপনার সামনে শক্ত আসবাবপত্র থাকলে তার উপর দুই হাত দিয়ে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকুন। যেভাবে করবেন- আপনার কাঁধের উচ্চতার ঠিক নীচে একটি টেবিলে বা অন্য কোন শক্ত আসবাবপত্রের উপরে উভয় হাত দিয়ে ভর করে দাঁড়ান। এতে আপনার শ্বাসকষ্ট কিছুক্ষণের জন্য হলেও কমে যাবে। এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি মেনে চললে শ্বাসকষ্ট সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। তবে নিয়মিত এইরকম শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরামদায়কভাবে শোয়া

স্লিপ অ্যাপনিয়া( Sleep Apnea ) এর অর্থ নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত। বিভিন্ন কারণে আপনার যদি শ্বাস নালী বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে ঘুমের মধ্যে সশব্দে নাক ডাকার শব্দ হয়। আর নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত নাক ডাকার অন্যতম কারণ। যার ফলে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঘুমানোর সময় হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। এতে আপনি ঘুম থেকে ঘন ঘন জেগে উঠতে পারেন। এজন্য আপনি নিম্নের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

রাতে ঘুমানোর সময় আপনি উঁচু বালিশের উপর মাথা রেখে শোয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার পিঠ সোজা রেখে হাঁটুর নিচে একটি বালিশ রাখুন। এই পদ্ধতিটি আপনার শরীর এবং শ্বাসনালীকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং শ্বাস প্রশ্বাসকে সহজ করে তোলে।  স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য আপনি একটি CPAP মেশিন ব্যবহার করতে পারেন।

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

শ্বাসকষ্ট অনেক কারণে ঘটতে পারে এবং এটি পরিত্রাণ করা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট কারণের উপর নির্ভর করে। যদি আপনার শ্বাসকষ্ট গুরুতর না হয়, তবে আপনি ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমেও শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন গভীর শ্বাস নেওয়া, হাত পাখা ব্যবহার করা বা অবস্থান পরিবর্তন করা ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার শ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।

শ্বাসকষ্ট কমাতে ব্ল্যাক কফি

একটি প্রাথমিক সমীক্ষা হতে দেখা যায় যে, ব্ল্যাক কফিতে রয়েছে ক্যাফিন যা হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপস্থিত পেশীগুলোকে শিথিল করতে পারে। এটি ৪ ঘন্টা পর্যন্ত ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রতিকারে অবদান রাখে।

কিন্তু ক্যাফেইন গ্রহণ করার আগে আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। কারণ,  অত্যধিক ক্যাফিন গ্রহণ করার ফলে আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ রয়েছে।

শ্বাসকষ্ট কমাতে হলুদ

হলুদে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনাকে সমস্ত সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলেই আমরা ছোটবেলা থেকেই হলুদের দুধ পান করতাম। হলুদে প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন রয়েছে যা অ্যালার্জির রাইনাইটিস এবং অ্যান্টিহিস্টামিন বন্ধ করতে সহায়তা করে। হলুদের এই সমস্ত গুণাবলী শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আদা সহজে শ্বাস নিতে সাহায্য করে

আদায় প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উষ্ণ আদা চা বা জল পান করলে শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং সহজে শ্বাস নিতে সাহায্য করতে পারে।

সহজেই শ্বাস নিতে পেঁয়াজ খান

পেঁয়াজে রয়েছে Quercetin (healthline.com) যা হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামাইন যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এবং শ্বাসকষ্টকে উপশম করে। এতে সালফার যৌগও রয়েছে যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণকে দূরে রাখে।

অর্ধেক পেঁয়াজ কুঁচির সাথে প্রচুর পরিমাণে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন একবার খেতে পারেন। এতে হাঁপানি রোগীরা শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পায়। আপনি একটি পেঁয়াজকে অর্ধেক করে কেটে আপনার বিছানার পাশে রেখে দিতে পারেন। এতে আপনি রাতে সহজেই শ্বাস নিতে পারবেন।

লেবু হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করে

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিদিন এক গ্লাস পানির মধ্যে লেবুর রস এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে হাঁপানি রোগীদের কষ্ট অনেক করে যায়।

ফ্যানের কাছাকাছি বসুন

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা ঠাণ্ডা বাতাস ফুঁকতে এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে ফ্যান ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। আপনার মুখের দিকে একটি ছোট হ্যান্ডহেল্ড ফ্যান থাকলে  আপনার শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলিকে এড়াতে সাহায্য করতে পারে। ফ্যানের কাছাকাছি বসলে আপনার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দূর করতে সহায়তা করে।

স্টিম ইনহেলার

কখনও কখনও স্টিম ইনহেলার নেওয়ার কারণে শ্বাসনালীতে পুরু শ্লেষ্মা জমতে পারে, যার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি সহজেই শ্বাস নিতে বাধা দেয়। স্টিম ইনহেলেশন । এ ক্ষেত্রে স্টিম ইনহেলেশন বা গরম ভাপ নিলে শ্বাসনালীতে জমে থাকা ঘন শ্লেষ্মাকে তরল করে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

শ্বাসকষ্ট এড়াতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন

শ্বাসকষ্ট এড়াতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন

কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট অনুভব করার আগে আপনার জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন করা ভালো। যাতে আপনাকে সেই দিনটি দেখতে না হয়। শ্বাসকষ্টের অনেক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু গুরুতর এবং জরুরি চিকিৎসা যত্নের প্রয়োজন হয়। আপনার শ্বাস নিতে কেন অসুবিধা হয় এবং আপনি যদি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হওয়ার কারণগুলোকে চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে আপনি বাড়িতেই এটি উপশমের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। শ্বাসকষ্ট দূর করতে আপনি যে জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারেন তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • ধূমপান ত্যাগ করা এবং তামাকের ধোঁয়া এড়ানো।
  • বায়ু দূষণকারী, অ্যালার্জেন এবং পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এড়ানো।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • কঠোর পরিশ্রম এড়ানো।
  • সুষম খাদ্য, ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
  • COVID-19 এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা গ্রহণ করা।

শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা

শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা

শ্বাসকষ্টের চিকিত্সা অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করতে পারে। আপনি যদি ডাক্তার দেখান তাহলে তারা একটি নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসার সুপারিশ করবে।  যদিশ্বাসকষ্টের কারণগুলো আপনার জীবনের মানকে ব্যাহত না করে বা কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজে নিজেই সমাধান হয় তবে চিকিত্সার কোনও প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। শ্বাসকষ্টের জন্য নিম্নলিখিত ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন, তার মধ্যে রয়েছে-

  • শ্বাস নেওয়া ওষুধ যা শ্বাসনালী খুলতে সাহায্য করে।
  • থুতু কমাতে এবং ফুসফুস পরিষ্কার করতে সাহায্য করার জন্য বড়ি বা তরল
  • অ্যালার্জিক রাইনাইটিস পরিচালনা করার জন্য ওষুধ
  • হার্টের অবস্থার জন্য চিকিত্সা।
  • গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ওষুধ।

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয় এবং আপনার বুকে ব্যথা হয়, কথা বলতে অসুবিধা হয় বা জ্বর হয়, আপনি অতিরিক্ত ঘুম অনুভব করেন বা আপনার লক্ষণগুলি আরও গুরুতর অবস্থায় খারাপ হয় তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সহায়তা নিন। তারা আপনাকে এটি থেকে রেহায় পাওয়ার উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা দেখে দীর্ঘস্থায়ী চিকিত্সার পরামর্শ দিতে পারে।

আজকের আর্টিকেলে আমরা শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি, এই আর্টিকেল থেকে শ্বাসকষ্ট কি? শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ, শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা, শ্বাসকষ্ট এড়াতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন? এই সকল বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করবেন।

আরও পড়ুনঃ- শীতে শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে জেনে রাখুন এর লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শীতে শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে জেনে রাখুন এর লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

প্যানিক এটাক। প্যানিক এটাক এর লক্ষণ ও প্যানিক এটাক কেন হয়