স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়

স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের কিছু টিপস

আমাদের দেশের অনেকেই আছেন যারা, স্ট্রোক কে হৃদপিণ্ডের একটি রোগ ভেবে থাকেন। বাস্তবে এটা কখনোই সত্যি নয়। স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কের একটি মারাত্মক রোগ যা আকষ্মিক ভাবে ঘটে থাকে। আপনারা যারা স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় খুজতেছেন তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি।

আজকের এই আর্টিকেলে থেকে আপনারা জানতে পারবেন, স্ট্রোক কি, স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-

স্ট্রোক কি

স্ট্রোক কি

মানুষের মস্তিষ্ক এমন একটি জটিল অঙ্গ যা ক্রমাগত রক্ত ​​সরবরাহের উপর নির্ভর করে। রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের অত্যাবশ্যক অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ কেটে যায় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটতে পারে। যখন মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলি মারা যায়, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা শরীরের অঙ্গগুলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হারিয়ে যায়। মস্তিষ্কের প্রভাবিত অংশের উপর নির্ভর করে, লোকেরা বাকশক্তি, অনুভূতি, পেশী শক্তি, দৃষ্টিশক্তি বা স্মৃতিশক্তি হারাতে পারে। কিছু লোক সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করে; অন্যরা গুরুতরভাবে অক্ষম বা মারা যায়।

স্ট্রোকের ধরণ

স্ট্রোকের ধরণ

সারা পৃথিবীর মধ্যে আকষ্মিক ভাবে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে স্ট্রোক। স্ট্রোকে আক্রান্ত মানুষ স্ট্রোক থেকে বেঁচে থাকতে পারে এবং সময়মত চিকিৎসার মাধ্যমে যেকোনো অক্ষমতা থেকে সেরে উঠতে পারে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত ​​চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে তা স্থায়ী অক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্ট্রোক এর লক্ষণ ও কারন এর উপর ভিত্তি করে স্ট্রোক প্রধানত ২ (দুই) প্রকার (wiki)। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

ইস্কেমিক স্ট্রোক

মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে রক্ত সঞ্চলনে ব্যাহত হওয়ার কারণে যে স্ট্রোক দেখা দেয় তা হলো ইস্কেমিক স্ট্রোক। সাধারণত এই ধরনের স্ট্রোক বেশি হতে দেখা যায়। এক গবেষণায় জানা গেছে প্রায় ৮৭% ক্ষেত্রেই ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়।

হেমোরেজিক স্ট্রোক

এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে যেয়ে রক্তক্ষরণ হলে তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়। এই ধরনের স্ট্রোক সাধারণত কম হলেও এটি কিন্তু বেশ গুরুতর। এটি যখন ঘটে তখন রক্তপাত মস্তিষ্কের টিস্যুকে সংকুচিত করে এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে।

স্ট্রোক এর লক্ষণ

স্ট্রোক এর লক্ষণ

পাঠক বন্ধুরা স্ট্রোকের কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো আপনার যত তারাতারি শনাক্ত করতে পারবেন আপনার পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তত ভাল। স্ট্রোকের লক্ষণ তারাতারি শনাক্ত করতে পারলে আপনি মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। নিচে স্ট্রোকের কয়েকটি লক্ষণ সমূহ তুলে ধরা হলোঃ

  • দুর্বলতাঃ এটি আপনার বাহু, পা এবং মুখ অসাড় বোধ করে। এটি আপনার শরীরের শুধুমাত্র এক দিকে ঘটতে পারে। একটি স্ট্রোক শরীরের পক্ষাঘাতের মতো গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • গুলিয়ে ফেলাঃ আপনি কি কথা বলতে, চিন্তা করতে বা বক্তৃতা বুঝতে অসুবিধার সম্মুখীন হন? যদি তাই হয়, এটি একটি স্ট্রোকের কারণ যেখানে আপনি কথোপকথনের মাঝখানে বিভ্রান্ত হন।
  • হঠাৎ মাথা ব্যথাঃ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করুন যা স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। মাইগ্রেনের রোগীদের জন্য, স্ট্রোকের লক্ষণ সনাক্ত করা কঠিন।
  • অনুপযুক্ত ভারসাম্যঃ ভারসাম্য বা সমন্বয় হারানোর ফলে পক্ষাঘাত বা শরীরের অন্যান্য দুর্বলতা হতে পারে।
  • দৃষ্টি ক্ষতিঃ আপনি যদি এক বা উভয় চোখ থেকে দেখতে না পান তবে আপনি স্ট্রোকের সম্মুখীন হচ্ছেন। দৃষ্টিশক্তি হারানো বা ঝাপসা দৃষ্টি অনুভব করা আরেকটি লক্ষণ।

স্ট্রোক এর কারন

স্ট্রোক এর কারন

স্ট্রোক হওয়ার কারণ সম্পর্কে, অধ্যাপক শিরাজী জানান,  হাই কোলেস্টেরল বা হাই রক্তচাপ, অতিরিক্ত চর্বি জমলে, বহুমূত্র ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, মদ্যপান করলে, ধূমপান বা তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করলে, পরিবারের কোন সদস্যের এ রোগের ইতিহাস থাকলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণত ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। নিচে স্ট্রোক রোগের কারণ সমূহ রুলে ধরা হলো;

  • উচ্চ রক্তচাপঃ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের প্রধান ঝুঁকির কারণ। এটি রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে এবং এগুলোর ব্লকেজ বা ফেটে যাওয়ার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
  • ধূমপানঃ ধূমপান রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
  • ডায়াবেটিসঃ রক্তনালী ও স্নায়ুর সম্ভাব্য ক্ষতির কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • উচ্চ কোলেস্টেরলঃ এলডিএল কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা ধমনীতে প্লাগ তৈরি করতে পারে এবং ব্লকেজ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনঃ অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের মতো অনিয়মিত হার্টের ছন্দের কারণে হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
  • স্থূলতাঃ অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পারিবারিক ইতিহাসঃ স্ট্রোক বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে কিছুটা হলেও ঝুঁকি থাকে।
  • টেনশনঃ এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা, ডিপ্রেশনের কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমরা এতক্ষণ জানলাম স্ট্রোক এর লক্ষণ ও স্ট্রোক এর কারন সমূহ। এখন আমরা জানবো স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় গুলো। আপনাদের জন্য নিচে স্ট্রোক প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো।

  • স্বাস্থ্যকর খাবারঃ বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, শস্যদানা, লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও সোডিয়াম সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ নিয়মিত আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনার জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে মেডিসিন গ্রহণ করুন।
  • ধূমপান ত্যাগঃ ধূমপান পরিত্যাগ স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও থাকে এক্ষেত্রে। তাই এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ প্রয়োজনে খাদ্য, ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ সঠিক ওজন ধরে রাখতে ও ফিট থাকতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
  • প্রয়োজনীয় মেডিসিন গ্রহণ করুনঃ উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিত মেডিসিন গ্রহণ করুন। অনেকে আছেন ঠিকমতো ওষুধ সেবন করেন না, গাফিলতি করেন! এই অভ্যাস পরিহার করুন।

শেষ কথা

আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা, স্ট্রোক এর লক্ষণ, স্ট্রোক এর কারন এবং স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তথ্যবহুল আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।

আর হ্যাঁ স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। স্ট্রোক ছাড়াও আরও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত আর্টিকেল পেতে আমাদের এই সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হিট স্ট্রোক কী? হিট স্ট্রোক কেন হয় এবং হিট স্ট্রোকের কারণ ও প্রতিকার