পাট চাষ পদ্ধতি, রোগ দমন ও সঠিক সারের ব্যবহার

পাট চাষ পদ্ধতি, রোগ দমন ও সঠিক সারের ব্যবহার

পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। আমাদের দেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ব্যাপক। আমাদের দেশের পাটের সুনাম রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু পাট চাষের জন্য এতোটাই উপযোগী যে, পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মানের পাট আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়। পাঠক বন্ধুরা, আপনারা যারা পাট চাষ পদ্ধতি, রোগ দমন ও সঠিক সারের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

পাট ফসল

পাট ফসল

পাট টিলিয়াসি বর্গের কর্কোরাস গনভূক্ত দ্বিবীজপত্রী আঁশ যুক্ত একটি বর্ষাকালীন উদ্ভিদ (wiki)। বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাট ফসল প্রধানত দুটি প্রজাতি, সাদা পাট ও তোষা থেকে উৎপন্ন হয়। সাদা ও তোষা পাটের উৎপত্তিস্থল যথাক্রমে দক্ষিণ চীনসহ ইন্দো-বার্মা এবং ভূমধ্যসাগরীয় আফ্রিকা। সম্ভবত উড়িয়া শব্দ জুটা বা জোটা থেকে জুট শব্দটির উদ্ভব। অবশ্য, ‘জুটা’ ও ‘পট্ট’ বস্ত্র ব্যবহারের কথা যথাক্রমে বাইবেল এবং মনুসংহিতা ও মহাভারতে উল্লেখ আছে যা এতদঞ্চলে পাটদ্রব্যের সুপ্রাচীন ব্যবহারের সাক্ষ্যবহ।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মায়ানমার, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া, ব্রাজিল এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি দেশে পাট চাষ হয়। বাণিজ্যিক দিক থেকে বাংলাদেশ এক সময়ে একচেটিয়া সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং ১৯৪৭-৪৮ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে এদেশ থেকে প্রায় ৮০% পাট রপ্তানি হতো। বর্তমানে বিশ্ব চাহিদার শতকরা মাত্র ২৫% পাট বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

পাট চাষ পদ্ধতি

পাট চাষ পদ্ধতি

পাট একটি বর্ষজীবী বর্ষাকালীন ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। পাট গাছের ছাল আমাদের দেশে সোনালী আঁশ নামে পরিচিত। অর্থনৈতিক ফসল পাট প্রথাগতভাবে আমাদের দেশে ছিটিয়ে বপন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে পাট ফসল রোপণ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে পাট সাড়িতে বপন করলে ফলন বেশি হয়।

আপনারা যারা পাট কিভাবে চাষ করতে হয় জানেন না, তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি। আমি এই আর্টিকেলে আপনাদের পাট চাষ পদ্ধতি, পাট চাষের মৌসুম থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-

পাট চাষের মৌসুম

ফেব্রুয়ারি/মার্চ থেকে এপ্রিল/জুন (চৈত্র/বৈশাখ থেকে আষাঢ়/শ্রাবণ) এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পাট ফসলের বীজ রোপণ করা যায়। পাট চাষে সঠিক সময়ে বীজ রোপণ করাই উত্তম, কারন সঠিক সময়ে রোপণ করলে-

  • পাট গাছ যথেষ্ঠ বৃদ্ধি হওয়ার সুযোগ পায়।
  • পাট বীজের অংকুরোদ্গমন ঠিক মতো হয়।
  • সঠিক সময়ে বীজ রোপণ করলে রোগবালাই কম হয় এবং
  • আশানুরুপ ফলন পাওয়া যায়।

পাট চাষে মাটি নির্বাচন

পাট চাষে মাটি নির্বাচন

প্রায় সকল প্রকার মাটিতে পাটের চাষ করা যায়। এঁটেল, দোঁআশ ও এঁটেল দোঁআশ মাটিতে পাট ভালো জন্মে৷ গভীর পলি-মাটিতেও পাট ভালো উৎপন্ন হয়। তবে দোঁআশ মাটি পাট চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বেলে ও ইট পাটকেলযুক্ত মাটিতে পাট মোটেই ভালো হয় না৷ তবে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমে থাকে না। যেসব নিচু জমিতে সহজেই পানি জমে যায় এবং পানির নিঃসরণ করা যায় না সেসব মাটি পাট চাষের উপযোগী নয়।

পাটের বিভিন্ন জাত

পাট চাষ পদ্ধতিতে পাটের জাত নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কেননা ভালো জাতের পাট চাষ না করলে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যায়না। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৯ টি উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে দেশী পাট ২৫, তোষা পাট ১৭ টি, কেনাফ ৪ টি, ও মেস্তা ৩ টি। উক্ত ৪৯ টি জাতের মধ্যে বর্তমানে দেশী পাটের ১০ টি, তোষা পাটের ৭ টি, কেনাফের ৪ টি এবং মেস্তার ৩ টি জাতসহ সর্বমোট ২৮ টি উন্নত জাত কৃষক পর্যায়ে প্রচলিত আছে।

পাট চাষের জন্য জমি প্রস্তুত

পাট চাষের জন্য জমি প্রস্তুত

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে কয়েক পশলা প্রাক মৌসুমি-বৃষ্টি হলে পাট চাষের জন্য জমিতে প্রথম কর্ষণ শুরু করতে হবে। পাট চাষের জন্য উপযুক্ত রসযুক্ত জমিতে গভীরভাবে ৪-৫ বার সােজাসুজি ও আড়াআড়িভাবে কর্ষণ করে মই দিয়ে মাটিকে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমির সমস্ত আগাছা, আবর্জনা পরিষ্কার করে নিতে হবে।

জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে পরিমাণ মতাে গােবর সার প্রয়ােগ করে মাটির সঙ্গে ভালােভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া শেষ চাষের সময় প্রয়ােজনীয় রাসায়নিক সার (ফসফেট ও পটাশ) মূল সার হিসাবে প্রয়ােগ করতে হবে। জমিকে সমতল করে জলসেচ ও জলনিকাশের নালা তৈরি করতে হবে।

বীজ বপনের সময়

ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সঠিক পদ্ধতিতে পাট বীজ বপন ও পরিচর্যা করতে পারলে পাট চাষে মিলবে সফলতা। আসুন জেনে নেই পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময় কোনটি-

দেশি পাটঃ 

  • বিজেআরআই দেশী পাট-৫ চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ।
  • বিজেআরআই দেশী পাট-৬ চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ।
  • এটম পাট-৩৮ ফাল্গুনের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ এবং
  • বিনাদেশী পাট-২ ফাল্গুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ।

কেনাফ পাটঃ 

  • বিজেআরআই কেনাফ-২ চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ।

তোষা পাটঃ 

  • তোষা পাট -৯৮৯৭ চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম।
  • বিজেআরআই তোষা পাট-৩ চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ।

বীজ বপন পদ্ধতি ও বীজের হার

পাট বীজ সময়মতো বপন করা উচিত। সাধারণত পাট বীজ ছিটিয়েই বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পাটের ফলন বেশি হয়।পাট বীজ ছিটিয়ে বুনলে ৭.৫ কেজি/হেক্টর ( প্রতি শতাংশে ৩০ গ্রাম ) এবং সারিতে বুনলে-৬.২৫ কেজি/হেক্টর ( শতাংশ প্রতি ২৫ গ্রাম )। সারিতে বুনলে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭ সেমি বা ৩ ইঞ্চি হতে হবে।

পাট চাষে সেচ পদ্ধতি

বৃষ্টি পড়লে ভালো, না হলে অবশ্যই জমিতে সেচ দিতে হবে। এরপরেই পাট বোনের পালা শুরু করা উচিত। বীজ বোনা হয়ে গেল অথচ বর্ষা এল না, এই ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর নিয়ম মেনে প্রয়োজন মাফিক সেচ দেওয়া শুরু করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে জমিতে যাতে বেশিমাত্রায় জল না দঁড়াতে পারে।

পাট চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

পাট চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি

পাট ফসলে ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে এবং অন্যান্য সার এক কিস্তিতে জমি তৈরির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে গোবর সার ব্যবহার না করলে দেশি পাটে শেষ চাষের সময় একরপ্রতি ৩৩ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি, ১৮ কেজি জিপসাম এবং ১৮ কেজি সালফেট জিংক সালফেট ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে বীজ বপন করতে হবে। একইভাবে তোষা পাটে একরপ্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া, ২১ কেজি টিএসপি, ২৪ কেজি এমওপি, ৩৮ কেজি জিপসাম এবং ৪.৫ কেজি জিংক সালফেট প্রয়োগ করে জমি তৈরি করতে হবে।

পাট ফসলের বয়স ৪০-৪৫ দিন পর ২য় কিস্তির ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। উপরিপ্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হয় যেন মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে। ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগের আগে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। উপরিপ্রয়োগকৃত ইউরিয়া যেন গাছের কচিপাতা বা ডগায় লেগে না থাকে সেজন্য সার ছিটানোর পর পাট কাঠি অথবা অন্য কিছু দিয়ে পাতায় বা ডগায় লেগে থাকা সার সরিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, প্রখর রৌদ্র বা বৃষ্টির সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ না করাই ভালো।

জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে গোবর সার প্রয়োগ করে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রতি একর জমিতে ৪৫-৬০ মণ গোবর সার ব্যবহার করলে দেশি পাটে সর্বশেষ চাষের সময় একরপ্রতি শুধু ১২ কেজি ইউরিয়া সার এবং তোষা পাটে ১৮ কেজি ইউরিয়া সার, ৪.৫ কেজি এমওপি, ২০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও গাছের বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে ২য় কিস্তিতে ইউরিয়া দেশি পাটে একরপ্রতি ৩৩ কেজি এবং তোষা পাটে ৪০ কেজি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

পাট চাষে রোগ দমন পদ্ধতি

পাট চাষে রোগ দমন পদ্ধতি

প্রতি বছর নানা প্রকার রোগের আক্রমণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ ২০-৪০% পর্যন্ত হতে পারে। সময়মত রোগ নির্ণয় ও দমনের ব্যবস্থা করে পাটকে রক্ষা করা যেতে পারে। ছত্রাক, ভাইরাস দ্বারা বিভিন্ন পর্যায়ে পাট গাছ আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। আসুন জেনে নেই পাট চাষে রোগের নাম ও দমন পদ্ধতি গুলো কি কি-

চারা মড়ক

চারা মড়ক এক ধরনের ছত্রাকবাহীত রোগ। বীজ বপনের পর প্রথম অবস্থায় যে রোগ দেখা দেয় তা হচ্ছে চারা মড়ক। সাধারণত পাট গাছ যখন ১ ইঞ্চি থেকে ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত গাছের গোড়ায় কালো দাগ ধরে মারা যায়। জমিতে চারা মড়ক রোগ দেখা দিলে যেভাবে দমন করবেন-

  • চারা মড়কের কবল থেকে রা পাওয়ার প্রধান উপায় বীজ শোধন। বীজ বপনের আগে ভিটাভেট-২০০ (০.৪%) দিয়ে বীজ শোধন করে নিলে চারা মড়কের হাত থেকে রা পাওয়া যায়।
  • যদি রোগ ব্যাপকহারে দেখা দেয় তবে মরা চারা উঠিয়ে ফেলে জমিতে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম মিশিয়ে সেই পানি চারা গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • পটাশ সার প্রয়োগ করে জমি ভালোভাবে নিড়িয়ে দিলে রোগ কম হয়।
  • জমি যেন ভিজা স্যাঁতসেঁতে ও তাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে ল্য রাখতে হবে।

ঢলে পড়া রোগ

ঢলে পড়া রোগে গোটা পাট গাছ ঢলে পড়ে ও মরে যায়। দেশি পাটের চেয়ে তোষা পাটে এ রোগ বেশি দেখা যায়। ছোট ও বড় উভয় অবস্থায় পাট গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ফুল আসার সময় থেকে তোষা পাটে এ রোগ বেশি হয়। ঢলে পড়া রোগ দমনের উপায় হলো-

  • আক্রান্ত জমিতে পানি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • গাছের গোড়া আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত ক্ষেতে ২-৩ বছর তোষা পাটের আবাদ না করে দেশী পাটের আবাদ করা যেতে পারে।
  • পাট কাটার পর গাছের গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

কাণ্ড পচা রোগ

পাট গাছের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো কাণ্ড পচা রোগ। এ রোগের কারণে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে। কাণ্ড পচা রোগ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। চারা যখন ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স পর্যন্ত পাটগাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়। গাছের পাতা ও কালো, গাঢ় বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয়।

এ দাগ গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত যেকোনো অংশে দেখা দিতে পারে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দাগি জায়গাগুলোতে অসংখ্য কালো বিন্দু দেখা যায়। এ কালো বিন্দুগুলোতে ছত্রাক জীবাণু থাকে। এরা বাতাসে বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে আশপাশের গাছে সংক্রমিত হয়। কখনো আক্রান্ত স্থানে গোটা গাছই ভেঙে পড়ে। কাণ্ড পচা রোগ যেভাবে দমন করবেন-

  • প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • এরপর প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ গুলে ৩-৪ দিন পরপর ২-৩ বার করে জমিতে ছিটাতে হবে।
  • নীরোগ পাট গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • জমিতে সর্বদা পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কালো পট্টি রোগ

কালো পট্টি রোগের লক্ষণ প্রায় কাণ্ড পচা রোগের মতোই। তবে এতে কাণ্ডে কালো রঙের বেষ্টনীর মতো দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থানে ঘষলে হাতে কালো গুঁড়ার মতো দাগ লাগে। সাধারণত গাছের মাঝামাঝি বয়স থেকে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

  • প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • এরপর প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ গুলে ৩-৪ দিন পরপর ২-৩ বার করে জমিতে ছিটাতে হবে।
  • নীরোগ পাট গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • জমিতে সর্বদা পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাতার হলদে সবুজ ছিট পড়া পাতার মোজাইক রোগ

মোজাইক আক্রান্ত পাট গাছের সংগৃহীত বীজ বপনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে পাতায় হলুদ-সবুজ ছিট দাগ পড়ে, আক্রান্ত গাছের বাড় কমে যায় এবং আঁশের পরিমাণ শতকরা ৫০% পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। মোজাইক রোগ দমন করতে হলে যেসব কাজ করতে হবে-

  • পাতার মোজাইক রোগ প্রতিরোধে নীরোগ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত।
  • জমিতে আক্রান্ত চারা দেখামাত্র তা তুলে ফেলতে হবে।
  • কোনক্রমেই হলদে সবুজ ছিট পড়া আক্রান্ত গাছকে সুস’ গাছের আশে পাশে বাড়তে দেয়া ঠিক নয়।
  • সাদা মাছি মারার জন্য মাঝে মাঝে পাট ক্ষেতে ডায়াজিনন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি পরিমাণ ওষুধ মিশ্রণ তৈরি করে ৩০-৪০ দিন বয়সের গাছে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার ছিটানো উচিত।
  • পাট গছের মাঝামাঝি বয়সে বাড়ন্তকালে যদি এ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেয় তাহলে ঐ ক্ষেতের পাট গাছ থেকে আঁশ সংগ্রহ করা চলতে পারে কিন’ বীজ সংগ্রহ করা একেবারেই নিষিদ্ধ।
  • আক্রান্ত গাছের বীজ সংগ্রহ করে বপন করলে পরবর্তী বছর ব্যাপকভাবে এ রোগ দেখা দেবে।

উপরোক্ত রোগ গুলো ছাড়াও পাট চাষে আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের উপদ্রব হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা রোগগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ফসল সংগ্রহ

ফসল সংগ্রহ

সাধারণত ভালো ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভালো থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। আবার দেরিতে কাটলে ফলন বেশি হয় কিন্তু আঁশের মান খুব খারাপ হয়।

পাট কেটে পাতা না ঝরা পর্যন্ত মাঠে বা কোনও জায়গায় গাদা করে রেখে দিতে হবে। তারপর আঁটি বেঁধে জলে পচাতে হয়। পচানোর ৮-১০দিন পর পাটকাঠি বের করে নিতে হবে। তারপর পাটের আঁশ পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। ভালভাবে রোদে শুকিয়ে গাঁট বেঁধে বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানো হয়।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা পাট চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের পাট চাষ পদ্ধতি, রোগ দমন ও সঠিক সারের ব্যবহার জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা পাট চাষ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছেন। তাছাড়া আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে কমেন্টে মতামত জানাবেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এরকম ইনফরমেটিভ আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইট ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *