রাসেল ভাইপার সাপ কিভাবে চিনবেন । রাসেল ভাইপার নিয়ে যত অজানা তথ্য

রাসেল ভাইপার সাপ কিভাবে চিনবেন । রাসেল ভাইপার নিয়ে যত অজানা তথ্য

রাসেল ভাইপার সাপ একটি বিসাক্ত সাপ। এই সাপের কামড়ে খুব অল্প সময়ের মধ্য আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যেতে পারে। অত্যন্ত বিষধর প্রজাতির এই সাপ বাংলাদেশ থেকে বহু আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে এর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হয় বন্যার পানির সাথে এই সাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

তবে এই রাসেল ভাইপার সাপ কিভাবে চেনা যায়। অথবা এর বৈশিষ্ট্য কি তা নিয়ে আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আসুন তাহলে তা জানা যাক।

কী এই রাসেল ভাইপার সাপ

কী এই রাসেল ভাইপার সাপ

রাসেল ভাইপার সাপ অন্যান্য সাপের থেকে অনেক বিসাক্ত। রাসেল ভাইপারের বাংলা নাম চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া। বাংলাদেশে অল্প যে কয়েকটি সাপ অত্যন্ত বিষধর, তার মধ্যে এটি একটি। এটি ভাইপারিডি গোত্রের একটি ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে এ সাপ বেশি দেখা যায়। এবং বলা হয় এটি ভারতের সবচেয়ে বড় চারটি সাপের মধ্যে একটি। ১৭৯৬ সালে স্কটিশ সার্জন ও ন্যাচারালিস্ট প্যাট্রিক রাসেল তার বই ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অব ইন্ডিয়ান সার্পেন্টস, কালেক্টেড অন দ্য কোস্ট অব করোমান্ডেল’-এ এই সাপের বিশদ বিবরণ দেন।

পরবর্তীতে তারই নামে সাপটির নামকরণ করা হয় রাসেল ভাইপার। অন্যান্য সাপ মানুষ দেখে দূরে সরে থাকলেও, রাসেল ভাইপার সাপ উল্টো অতর্কিতে এসে মানুষকে আক্রমণ করে। সাধারানত দিনের বেলা এই সাপ বেশী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাসেল ভাইপার সাপ ঘন জঙ্গল এড়িয়ে চলে। এরা সাধারানত ঘাস, খোলা মাঠে অবস্থান করে থাকে। এরা টিকটিকি, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

রাসেল ভাইপারের কামড় কতটা মারাত্মক

রাসেল ভাইপারের কামড় কতটা মারাত্মক

রাসেল ভাইপার সাপ বিষাক্তের দিক দিয়ে অন্যতম সাপ হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য সাপের তুলনায় এর বিষের পরিমান অনেক বেশি। সাধারানত রাসেল ভাইপারের কামড়ে একজন মানুষ অল্প সময়ের মধ্য মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে রাসেল ভাইপারের দংশনের হার খুব বেশি না হলেও, এটি ভারতে প্রতি বছর অন্তত ৪৩% এবং শ্রীলঙ্কায় ৩০-৪০% সাপে কাটার ঘটনা রাসেল ভাইপারের কারণে হয়ে থাকে।

এবং রাসেল ভাইপার কামড় দেওয়ার পর দংশিত স্থানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয় এবং ফুলে যায়। সেই সাথে ঘন্টাখানেকের মধ্যে এর আশেপাশের কিছু জায়গাও ফুলে যায়। এছাড়া সাপে কাটা অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে অন্তত এক লাখ মানুষ মারা যান।

সাপের কামড়ে আহত হয়ে বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষের শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা তারা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন এবং এদের মধ্যে ছয় হাজার মানুষ মারা যান।

কীভাবে ফিরে আসছে রাসেল ভাইপার

কীভাবে ফিরে আসছে রাসেল ভাইপার

রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে বাংলাদেশর অনেক গবেষকরা নানা ভাবে এটিকে গবেষণা করছে। বাংলাদেশে রাসেল ভাইপারের পুনরাবির্ভাব ও এই সাপ থেকে মানুষের ঝুঁকির বিষয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ২০টি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে করা গবেষণাটি ২০১৮ সালে জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলাতেই রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণার সময় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতেই এই সাপের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। ওই গবেষণায় উঠে আসে যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি বেশি।

সম্প্রতি রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া আগের তুলনায় বেশি নজরে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান বলেন, “আগে ফেসবুক বা স্মার্ট ফোনের ব্যবহার অতটা ছিল না। তাই হয়তো জানতে পারা যেত কম।  এমনও হতে পারে বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় অন্য প্রাণীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে রাসেল ভাইপার।

বর্তমানে ঘন ঝোপ ও পরিত্যক্ত জমি অপেক্ষাকৃত কমে যাওয়ায় এই সাপ কৃষি জমিতেই থাকে। ফলে বেশিরভাগ সময় কৃষকেরাই এটির আক্রমণের শিকার হন। তাছাড়া বর্ষাকালে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভারতের নদ-নদী থেকে ভেসেও এই সাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাসেল ভাইপার নিয়ে অজানা তথ্য

রাসেল ভাইপার নিয়ে অজানা তথ্য

রাসেল ভাইপার সাপ বর্তমান সময়ে একটি বিষাক্ত সাপ হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, তার মধ্য রাসেল ভাইপার সাপ অন্যতম। অন্যান্য সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও এ সাপটির স্বভাব ঠিক তার উল্টো। বলা হয় আক্রমণের ক্ষিপ্র গতি ও বিষের তীব্রতার কারণে ‘কিলিংমেশিন’ হিসেবে বদনাম রয়েছে এই সাপটির। এদের বিষদাঁত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃহৎ।

সাপটি দেখতে ভয়ঙ্কর না হলেও এদের বিষের পরিমান অত্যাধিক যা একটি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে সক্ষম। এরা প্রচণ্ড জোরে হিস হিস শব্দ করতে পারে। রাসেল ভাইপারের বিষ হোমটক্সিন, যার কারণে কামড় দিলে মানুষের মাংস পচে যায়। তীব্রতার দিক দিয়ে সাপটি বিশ্বের ৫ নম্বর ভয়ংকর বিষধর সাপ। কিন্তু মাত্র ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে কাউকে কামড়ে বিষ ঢালতে পারে সাপটি।

কামড়ের ক্ষিপ্রগতির দিক দিয়ে সব সাপকে হারিয়ে রাসেল ভাইপার প্রথম স্থান দখল করেছে। অন্যান্য সাপ শিকারের সময় শিকারকে কামড় দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলে কিন্তু হিংস্র রাসেল ভাইপার শিকারকে শুধু একা নয়, তার পুরো পরিবারসহ খেতে ভালোবাসে। রাসেল ভাইপার সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ প্রজাতির একটি সাপ। এটি পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ।

শেষ কথা

রাসেল ভাইপার সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ প্রজাতির একটি সাপ। এটি পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ। এই সাপের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে আগে শুধু রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ পাওয়া গেলেও, বর্তমানে এরা পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা ও চরগুলোতেও বিস্তার লাভ করেছে বলে জানা যায়। এই সাপ থেকে বাঁচতে হলে কেবল মাত্র সচেতনতাই কার্যকর পথ।

রাসেল ভাইপার সম্পর্কে আরও জানতেঃ- ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের পরিচয় ও বিষাক্ত সাপ কামড়ালে করণীয়

বিষহীন সাপ কামড়ালে কি হয় । বিষহীন সাপের কামড়ের লক্ষণ