গর্ভবতী ভাতা কি? গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাবেন এবং কোথায় আবেদন করবেন

গর্ভবতী ভাতা কি? গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাবেন এবং কোথায় আবেদন করবেন

গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা সরকার কর্তৃক অনুদানকৃত একটি মাধ্যম। আমাদের দেশে ধনি গরিব মিলে অনেক জনগন বসবাস করে। গরীব দুখীদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার ভাতা প্রদান মাধ্যম চালু করেছেন। এ ক্ষেত্রে গরীব দুঃখী গর্ভবতিদের জন্য ভাতা প্রদান মাধ্যম চালু করেছেন। যারা অত্তান্ত দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন তাদেরকে সরকার কতৃক ভাতা প্রদান করা হয়।

এজন্য সরকার প্রত্যেক জেলার উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন এর মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। গর্ভবতী ভাতা কি? গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাবেন এবং কোথায় আবেদন করতে হবে সমস্থ কিছু আজকের এই পোস্ট এর মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার শ্রেষ্ঠা করবো।

গর্ভবতী ভাতা কি

গর্ভবতী ভাতা কি

গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা বলতে একজন মেয়ে যখন গর্ভধারণ করে তখন সরকার কতৃক তাকে কিছু অনুদান দেওয়া হয় মুলত এই অনুদানই হল গর্ভকালীন ভাতা। গর্ভকালীন ভাতা চাইলেই সবাই পাবে এমনটা নয়। এটি পাওয়ার জন্য সরকার কিছু শর্ত প্রদান করেছেন। একজন অনেক গরীব/দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে সরকার এ ভাতা প্রদান করে থাকেন। গর্ভবতী ভাতা মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর এর আওতায় একটি নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়ে থাকে।বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিম্ন আয়ের শ্রেণীর নাগরিকদের কে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করে যাচ্ছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল মাতৃকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতা। বাংলাদেশে প্রতি বছর চিকিৎসার অভাব ও পুষ্টিহীনতার কারণে অনেক মা ও শিশু মৃত্যু বরণ করে থাকে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সাল থেকে এই মাতৃকালীন ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা চালু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় যে সকল দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা রয়েছে তাদেরকে সন্তান জন্মদানের পর তিন বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। বর্তমানে মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আপনি এই ভাতার আওতায় আসতে পারেন।

গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই দরিদ্র গর্ভবতী মাকে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ এ যোগাযোগ করতে হবে। ভাতা প্রকল্পে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে নিতে হবে। এরপর ইউনিয়ন পরিশোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিগন ভাতা প্রকল্পের তালিকা গুলো নির্বাচন করে নিবেন। যদি আপনি আপনার নাম এই তালিকার মধ্যে থাকে। তাহলে আপনি গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন।

বর্তমান গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। তবে বিকল্প হিসেবে উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছ থেকে ফর্ম নিয়ে পুরন করে সেটি জমা দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা কষ্টকর। সবথেকে সহজ প্রক্রিয়া হল অনলাইনে আবেদন করা।

প্রতিমাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর আবেদন করা যাবে। সঠিক ভাবে আবেদন করা হলে সেটি আবার যাচাই বাচাই করে কতৃপক্ষ চুড়ান্ত চিবেচনা করে এটি সাবমিট করে।

গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত

গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত

গরীব ও দুঃস্থ অসহায় মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতার ব্যাবস্থা করেছেন। একজন মা এই ভাতা আওতাধীন হতে পারবে তবে এর জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। যদি আপনি সব শর্ত ও নীতিমালা এর ভিতরে থাকেন তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে। তবে সরকার সবাইকে গর্ভকালীন ভাতা দেয় না। ভাতাভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিটি বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা করে আবেদন অনুমোদন করে থাকে।

তাই আবেদন করছেন মানেই আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন বিষয়টি এমন নয়। গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে আবেদন করা হয়। শর্তগুলো নিম্নরুপঃ-

  • প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের সন্তান গর্ভ অবস্থায় জন্মের ২ বছর পর মারা গেলে ৩য় বারের মতো কেউ গর্ভবতী হলে তখন সে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
  • একজব ব্যক্তি একবার ২ বছর সময়কালের জন্য ভাতা পাবে।
  • গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য প্রথম বা সর্বোচ্চ ২বার গর্ভবতী হতে হবে।
  • গর্ভবতী ব্যক্তির পরিবারের মাসিক আয় ১৫০০ এর নিচে হতে হবে।
  • পরিবারের কোন জমি বা পুকুর নেই।
  • আবেদনকারি ব্যক্তিকে অবশ্যয় নিম্ন সীমার দরিদ্র হতে হবে।
  • গর্ভবতী মায়ের বয়স ২০-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

উপরোক্ত শর্তসমুহ গুলো একজন দরিদ্র গর্ভকালীন ব্যক্তির মাঝে বিদ্যমান থাকলে সে ব্যক্তি গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার যোগ্য। শর্ত গুলো আপনার মাঝে বিদ্যমান থাকলে আপনিও অনলাইন কিংবা ফর্ম পুরনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।

গর্ভকালীন গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন/পৌরসভা থেকে শর্তগুলো পুরন করে ৪০ টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

গর্ভকালীন ভাতা আবেদনের জন্য কি কি প্রয়োজন

গর্ভকালীন ভাতা আবেদনের জন্য কি কি প্রয়োজন?

প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশনে মাতৃকালীন ভাতা আবেদন গ্রহণ করা হয়। আপনি মোট কয়েকটি ধাপে মাতৃকালীন ভাতা না গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে। এটি খুবই সহজ এবং ঘরে বসে আপনি মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। মাতৃকালীন ভাতা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি পাবেন। অর্থাৎ গরিব অসহায় বসতবাড়ি রয়েছে বা ভাড়া থাকে, চাষ করার কোনো জমি নেই বা পুকুর নেই এই সমস্ত নিয়মের মধ্যে যারা রয়েছে তারা এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে।

গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন কারিকে নিম্নের কাগজপত্র গুলো বাবস্থা করতে হবে:-

  • ব্যক্তিকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কতৃক গর্ভকালীন নাগরিক সনদপত্র থাকতে হবে।
  • গর্ভকালীন ব্যক্তিকে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কতৃক সনদ পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
  • জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আইডি কার্ড লাগবে।
  • গর্ভবতী ব্যক্তির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
  •  টিকা কার্ড ( প্রয়জনের ক্ষেত্রে)
  • টাকা পেইড করার মাধ্যম( বিকাশ/নগদ/ রকেট/ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট)

গর্ভকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

গর্ভকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

গর্ভকালীন ভাতার আবেদনের জন্য মহিলা ও শিশু বিশয়ক মন্ত্রনালয় ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করতে হবে। এর পর তথ্য অনুযায়ী পুরন করতে হবে। ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করার পর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম জন্মস্থান, ধর্মীয় তথ্য, জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম তারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্মস্থান ইত্যাদি পূরণ করতে হবে।

আপনি যদি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এন আর বি অপশনটি মার্ক করে রাখবেন।
পরবর্তীতে আপনার স্থায়ী, অস্থায়ী ঠিকানা প্রদান করতে হবে। বাড়ি, গ্রাম, রাস্তা, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, বোর্ড ইত্যাদি সঠিক মতো সিলেক্ট করতে হবে।
এরপর আপনার আর্থিক তথ্য যেমন জমিজমা পুকুর আছে কিনা ,বাসস্থান আছে কিনা, বয়স গর্ভধারণ ক্রম ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
এরপর উক্ত পেজে পেমেন্ট তথ্য নামে একটি অপশন পাবেন সেখানে আপনি মাতৃত্তিক করে ভাতাটি পেতে সেটি উল্লেখ করতে হবে।
পরিশেষে যে স্টেপটি ফলো করতে হবে সেটি হল আপনার ছবি এবং স্বাক্ষর স্ক্যান করে আপলোড করা। এই স্টেপ গুলো ফলো করে আপনি সহজেই গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে পারবেন।

গর্ভকালীন ভাতা কত টাকা

গর্ভকালীন ভাতা কত টাকা

আবেদন কারী ব্যক্তি ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তি হলে সে মাসিক ৮০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর ৪৮০০ টাকা পাবেন। এভাবে তারা গর্ভবতী ভাতা ২ বছর পাবেন। ২ বছর অর্থাৎ ২৪ মাসের ক্ষেত্রে ৪ বার মোট ১৯,২০০ টাকা পাবেন। যদি ৩ সন্তান হয় তাহলে ৩৬ মাসে মোট ২৮,৮০০ টাকা পাবেন।

গর্ভবতী ভাতা কি? গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাবেন এবং কোথায় আবেদন করবেন সব কিছু সম্পর্কে আমি আপনাদের কে বোঝানোর শ্রেষ্ঠা করেছি। গর্ভবতী ভাতা আবেদন এর জন্য সকল পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি সবাই বুঝতে পেরেছেন।

আরও জানতেঃ- forms.mygov.bd

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *