প্রতিবন্ধী ভাতা কি? প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনের নিয়ম

প্রতিবন্ধী ভাতা কি? প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনের নিয়ম

সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হচ্ছে এই প্রতিবন্ধী ভাতা। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের প্রতিবন্ধী নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং তাদের যত সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলো যাতে তারা সঠিকভাবে পায় সেগুলো নিশ্চিত করা।

প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার জন্য আগে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় গিয়ে বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন অনলাইনের মাধ্যমেই করা যায়। কিন্তু অনেকেই জানে না যে, কীভাবে অনলাইনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন করতে হয়। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য অনেক উপকারী হতে চলেছে। কারণ, এখানে আমি প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কীভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয় তার সবকিছুই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-

প্রতিবন্ধী ভাতা কী

আর্টিকেলটির সূচিপত্র

প্রতিবন্ধী ভাতা কী?

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ এর আইন অনুসারে, প্রতিবন্ধী অর্থ এমন এক ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং উক্তরুপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম তাদেরকেই প্রতিবন্ধী বলা হয়।

বাংলাদেশে যেসব প্রতিবন্ধী নাগরিক রয়েছেন মূলত তাদের জীবনযাত্রার মান সহজ করার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম শুরু  করা হয়েছিল। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে এই কর্মসূচি ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে। প্রথম যখন এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল তখন প্রাথমিকভাবে স্বল্প সংখ্যক প্রতিবন্ধী এই ভাতার আওতাভুক্ত হয়েছিল। তবে বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, প্রায় ২৯ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই ভাতার সুবিধাভোগী হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন কেবল তারাই এই কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলী

প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলী

প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে যে কেউ আবেদন করলেই তাকে দেওয়া হয় না। কারণ, কেউ যদি প্রতিবন্ধী না হয়েই এই ভাতার জন্য আবেদন করেন তাহলে তাকে এই ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই যারা প্রতিবন্ধী রয়েছেন তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য অর্থাৎ আবেদনকারীকে নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। যথাঃ

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রতিবন্ধী হতে হবে।
  • আবেদনকারী যেই এলাকা থেকে আবেদন করবে সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • আবেদনকারী শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হলেই কেবল, এই প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন।
  • প্রতিবন্ধী আইন ২০১৩ অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন বা পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
  • সমাজসেবা কার্যালয়ের অনলাইন ডাটাবেজে (Online database) নিবন্ধন করে এই পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা সে জেলা থেকে নিবন্ধন করে ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে হবে।
  • আবেদনকারী ব্যাক্তির মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ টাকার নিচে হতে হবে।
  • আবেদনকারী যেকোনো ব্যাক্তির বয়স অবশ্যই ৬ (ছয়) উর্ধ্বে হতে হবে।
  • প্রার্থীকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।

প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা

আবার অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও এই ভাতার আওতাভুক্ত হবেন না। শুধুমাত্র নিম্নলিখিত তথ্যগুলির উপর ভিত্তি করেই প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া আপনি অন্য কোন উপায়ে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না অন্যথায় আপনার আবেদনটি বাতিল করা হবে। নিম্নে তথ্যগুলো লেখা হলো-

  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মচারী হন কিংবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হিসেবে পেনশনভোগী হন তবে তিনি ভাতার টাকা পাবেন না।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরকারের অন্য কোন কর্মসূচির আওতায় সেবা গ্রহণ করিলে তখন তিনি এই ভাতার আওতায় আসবেন না।
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনো বেসরকারি সহযোগিতা সংস্থা (NGO)/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান পেলে, তিনি ভাতার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
  • মাথাপিছু বার্ষিক আয় আয় ৩৬,০০০ হাজারের উর্ধ্বে হলে।
  • বয়স ৬ এর নিচে হলে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

প্রতিবন্ধী ভাতার অনলাইন আবেদন করতে যা যা কাগজপত্র লাগবে

প্রতিবন্ধী ভাতার অনলাইন আবেদন করতে যা যা কাগজপত্র লাগবে

কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে তার বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। ওইসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তার নিজের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতার আবেদন করার জন্য আবেদনকারীর যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে নিম্নোক্ত সেগুলো লেখা হল-

  • ১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ  (Online Birth Certificate) আর যদি ১৮ বছরের উর্দ্ধে হয় তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্র (National Identity Card)।
  • সুবর্ণ নাগরিক কার্ড (প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র)
  • নগদ/বিকাশ একাউন্টসহ একটি সচল মোবাইল নাম্বার।

প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই কাগজপত্রগুলো আপনার কাছে থাকতে হবে। অনলাইনে প্রতিবন্ধী আবেদনের পর এখান থেকে আপনাকে পিডিএফ টি প্রিন্ট করে নিতে হবে। এবং পরবর্তী সময়ে এই কাগজটি আপনি আপনার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থেকে অথবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হতে সম্মতি স্বাক্ষর করে নিবেন। এর পর আপনাকে আবার সমস্ত ডকুমেন্ট এবং কাগজপত্রসহ আপনার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। তারা পরবর্তী সময়ে সকল ধরনের আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যদি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবেই সেটি গ্রহণ করা হবে।

অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার নিয়ম

অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার নিয়ম

প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের আরো যে সকল নানান কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ বিষয়ক নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এই ওয়েবসাইটে ভাতা প্রাপ্তির আবেদন ফরম পূরণ করে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তারপর আবেদনের প্রিন্টেড কপি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়ে চূড়ান্ত আবেদন করতে হয়।

আর এই আবেদনের ভিত্তিতেই যোগ্যপ্রার্থী বাছাই করা হয়। এবং এর আবেদন করার সময় এতে দেওয়া তথ্যগুলো পুনরায় সংশোধন করা যায় না। ফলে খুবই যত্নসহকারে সঠিকভাবে এই আবেদন করতে হবে। এবং আবেদন করতে যে তথ্যগুলোর প্রয়োজন সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপরেই আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার যে প্রক্রিয়াটি রয়েছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে নিচে ধাপে ধাপে লেখা হলো-

ধাপ ১: সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতা আবেদন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে

অনলাইনে আবেদন করতে প্রথমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আবেদন ফরমে প্রবেশ করুন। সরাসরি মূল ওয়েবপেইজে যেতে এই লিংকে প্রবেশ করুন। প্রথমে কার্যক্রম অপশনে ভাতার ধরন নির্বাচন করতে হবে। এরপর নির্বাচন ঘরে ক্লিক করুন তাহলে একটি ড্রপডাউন মেন্যু দেখতে পাবেন। এখানে প্রতিবন্ধীসহ, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার জন্যও আবেদন করতে পারবেন। ভাতার অপশনগুলো থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা নির্বাচন করুন।

ধাপ ২: জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই ও ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে

প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করতে হবে। আপনার কাছে যেই ডকুমেন্ট আছে সেটি নির্বাচন করুন। এবার আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখুন। পাশের জন্ম তারিখের ঘরে ক্যালেন্ডার অপশনে ক্লিক করে সঠিক তারিখটি নির্বাচন করুন। এবার দেখুন লেখা আছে যাচাই করুন সেই লেখাতে ক্লিক করুন। এখানে আপনার এনআইডি কার্ড/জন্ম নিবন্ধনের পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। এনআইডি কার্ডের নাম্বার দেয়া হয়ে গেলে ছবিসহ আবেদনকারীর সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে।

ধাপ ৩: প্রতিবন্ধী ভাতা অনুযায়ী বিস্তারিত তথ্য পূরণ করতে হবে

এবার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে ফাঁকা ঘরগুলো পূরণ করতে হবে। ভাতা আবেদন অনুমোদনের জন্য যেই তথ্যসমূহের দরকার সেগুলো হলো- আবেদনকারীর প্রতিবন্ধীতার পরিচয়পত্রের নাম্বার বা “ডি আই এস” নাম্বার পূরণ করতে হবে। এরপর প্রতিবন্ধীর ধরন অনুযায়ী কোড নাম্বার নির্বাচন করতে হবে। পরিশেষে এই দুটি তথ্য দিয়ে যাচাই বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ডি আই এস’ নাম্বার সঠিকভাবে দেয়ার পর নিম্নোক্ত তথ্যগুলো দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হবে।

  • বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, বহুবিবাহ ইত্যাদি)
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • আবেদনকারীর পেশা
  • বার্ষিক আয়ের পরিমাণ
  • স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য
  • বাসস্থানের তথ্য (নিজস্ব, ভাড়া, গৃহহীন বা অন্যান্য)
  • সরকারি বা বেসরকারি অন্য কোন আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির তথ্যাবলী।
  • ভূমির মালিকানা
  • ডি আই এস অনুযায়ী প্রতিবন্ধীর ধরন এবং মাত্রা

ধাপ ৪: আবেদনকারীর যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে

যেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করবে ফরমে তার বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে তা পূরণ করতে হবে। প্রথমেই আবেদনকারীকে বর্তমান ঠিকানা লিখতে হবে এবং পরে স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা যদি একই স্থানে হয় তাহলে দেখবেন ফরমে একই ঠিকানা লেখা আছে তার পার্শ্ববর্তী ঘরে ক্লিক করুন।   যেমনঃ

  • বিভাগ, জেলা, উপজেলা নির্ধারণ করতে হবে।
  • আপনি যেই এলাকার আওতাধীন যেমন (ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা) তা সিলেক্ট করুন।
  • এরপর পোস্ট কোড লিখতে হবে।
  • গ্রাম/বাড়ির হোল্ডিং ঠিকানার তথ্য দিতে হবে।
  • এবার নিচে আপনার একটি ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
  • বিকাশ/নগদ একাউন্টসহ একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখুন। যেই নাম্বারে আপনি ভাতার টাকা নিবেন।
  • মোবাইল নাম্বারের মালিকানা সিলেক্ট করুন।

ধাপ ৫: অন্যান্য যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে

এই ধাপে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনের জন্য যোগ্য কিনা সে সম্পর্কিত সব তথ্য দিতে হবে। এই ধাপে আবেদনকারীর যেই তথ্যগুলো দিতে হবে সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে লেখা হলো-

  • এখানে আবেদনকারীর বাসগৃহের তথ্য দিতে হবে।
  • খানা প্রধানের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
  • খানায় বিভিন্ন সরকারি ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য দিতে হবে।
  • গত ১ বছরে আবেদনকারীর খানায় বিদেশে অবস্থানকারী কারো নিকট থেকে কোনো অর্থ পেয়েছে কিনা, সেই তথ্য দিতে হবে।
  • এবং পরিবারের কেউ গত ১ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় কোনো সহায়তা পেয়েছে কিনা ইত্যাদি সেই তথ্যও দিতে হবে।
  • পরিশেষে সব তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে, বিস্তারিত তথ্য পূনরায় দেখে নিবেন। কারণ, তথ্যসমূহ আবার সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। এরপর নিচের সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে।

ধাপ ৬: আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে হবে

প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন সাবমিট করার পর “আপনার আবেদনটি সফলভাবে গৃহীত হয়েছে” লেখা একটি স্বয়ংক্রিয় পেজ আসবে। সেখান থেকে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করে আবেদন ফরমটির প্রিন্ট নিন এবং কম্পিউটারে প্রিন্টার সংযুক্ত না থাকলে ফরমটি ডাউনলোড করে নিন। এরপর ফরমটি প্রিন্ট করে স্থানীয় চেয়ারম্যান/পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সেটি সংরক্ষণ করুন।

ধাপ ৭: স্থানীয় জনপ্রশাসন কার্যালয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন জমা দিতে হয়

প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে অনলাইন আবেদনের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ, সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের কপি ও ছবি প্রয়োজন হতে পারে। এসব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জমা দিলে তা কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করা হয়। তারপর যারা এই ভাতার জন্য যোগ্য তাদেরকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড

প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড

প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করার পর জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয় এবং সেখানে একটি অনুমোদিত কমিটি কর্তৃক যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত মানদণ্ডগুলো বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মানদন্ডগুলো হলো-

  • প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীকে অবশ্যই “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩” – এর সংজ্ঞানুযায়ী প্রতিবন্ধী হতে হবে।
  • প্রার্থীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়।
  • ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে বয়স্ক প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষরা অগ্রাধিকার পায়।
  • বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পায়।
  • নারী প্রতিবন্ধীরা অগ্রাধিকার পায়।
  • সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পায়।
  • গরীব মানসিক রোগী/প্রতিবন্ধী শিশুরা অগ্রাধিকার পায়।
  • ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় প্রতিবন্ধীরা ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।
  • অধিক দারিদ্রপীড়িত ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে যাওয়া বা দূরবর্তী এলাকার প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পায়।

প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা দেওয়া হয় 

প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা দেওয়া হয় 

প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবর্তন করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হতো। এবং প্রায় ১,০৪,১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে এই ভাতা প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার পরিমাণ দুটোই অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে মাসে ৮৫০ টাকা করে প্রদান করা হয়। অর্থাৎ প্রতি ৩ মাস পর পর একসাথে প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীদের বিকাশ/নগদ/রকেট মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে জিটুপি পদ্ধতিতে ২,৫৫০ টাকা প্রদান করা হয়।

 

শেষ কথা

পাঠকবন্ধুরা আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পরে আপনারা প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের প্রতিবন্ধী ভাতার যাবতীয় কিছুই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি যেমনঃ প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন কীভাবে করে, আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে, কারা এই ভাতার জন্য আবেদন করলে টাকা পাবেন এবং কারা পাবেন না সেই সাথে এই ভাতায় মাসিক কত টাকা করে পাওয়া যায়। আপনার আশেপাশে যদি কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকে তাদেরকে এই ভাতার জন্য আবেদন করে সাহায্য করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ- গর্ভবতী ভাতা কি? গর্ভবতী ভাতা কিভাবে পাবেন এবং কোথায় আবেদন করবেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪