এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে নাম, বয়স কিংবা অন্য যেকোন তথ্য ভুল হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে যখন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়ে আসে তখন ওই ভুলগুলো থেকে যায় এবং জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে কিছু সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের দেখাবো কিভাবে খুব সহজেই ভোটার আইডি কার্ডের কোন ভুল সংশোধন করবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
আপনি চাইলে অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে পারবেন।
অফলাইনে আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য জেলা, উপজেলা অথবা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডিকার্ড এর সংশোধন ফরম-২ সংগ্রহ করতে হবে।
এরপরে সতর্কতার সঙ্গে ফরমটি পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত করে আবার নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। সংশোধন ফি পরিশোধ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশ, রকেট অথবা নগদ ব্যবহার করতে পারেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার ধাপগুলো
বর্তমানে আপনি চাইলে অনলাইনে ঘরে বসে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। চলুন আইডি কার্ড সংশোধন করার পুরো প্রক্রিয়াটি দেখে নেই-
ধাপ-১ অ্যাকাউন্ট তৈরি
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এজন্য ওয়েবসাইট ভিজিট করে “রেজিস্টার করুন” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তাহলে আপানার সামনে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার এর অপশন আসবে। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা ফর্ম নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ছবিতে প্রদর্শিত কোড দিয়ে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
সাবমিট করার পরে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যাচাই করতে বলা হবে। যদি ঠিকানা সঠিক থাকে তাহলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এরপরে মোবাইল ভেরিফিকেশন এর অপশন আসবে। যদি আপানর মোবাইল নাম্বার ঠিক থাকে তাহলে “বার্তা পাঠান” অপশনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপানার নাম্বারে একটি কোড আসবে সেই কোড ওয়েবসাইটে সাবমিট দিতে হবে।
এর পরে ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে। এজন্য আপনার ফোন নাম্বারে আসা মেসেজে NID Wallet অ্যাপ ডাউনলোড এর লিংক পাবেন। সেই লিংক থেকে NID Wallet অ্যাপ ডাউনলোড দিতে হবে।
অ্যাপ ডাউনলোড দেওয়ার পরে অ্যাপ ওপেন হলে ফেস স্ক্যান করতে বলবে। যার ভোটার আইডি সংশোধন করা হবে তার মুখমণ্ডল ডানে বামে নাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন শেষ করতে হবে। এর মাধ্যমে NID Card এর প্রকৃত গ্রাহকই কেবল অ্যাকাউন্ট এক্সেস করতে পারবে।
ধাপ-২ অ্যাকাউন্ট লগইন
অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট লগইন করতে হবে। এজন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার ও অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় যে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন সেটা দিয়ে “লগইন” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৩ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
অ্যাকাউন্ট তৈরি ও লগইন হয়ে গেলে বিস্তারিত প্রফাইল বা প্রফাইল ক্লিক করেন। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর ৩ টি ক্যাটাগরি আছেঃ-
- ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন
- ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন,
- অন্যান্য তথ্য সংশোধন।
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন
নিজের নাম, জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, লিঙ্গ, জন্মস্থান, পিতা-মাতার নাম, পিতার-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার ইত্যাদি ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের অন্তর্ভুক্ত। এক বা একাধিক তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করার জন্য-
- প্রোফাইল মেনুতে গিয়ে “এডিট” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপরে আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান তার বাম পাশের টিক অপশনে ক্লিক করুন।
- এরপরে আপনার ভুল তথ্যগুলো প্রমাণপত্রের সাথে মিল রেখে সঠিকভাবে পরিবর্তন করুন।
- তারপরে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন তাহলে আপনার সংশোধন করা তথ্যের পূর্বরুপ ও সংশোধিত রুপ দেখতে পাবেন। সব ঠিক থাকলে আবার “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
অনুরুপভাবে যদি ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন অথবা অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে চান তাহলে প্রমাণপত্রের সাথে মিল রেখে পরিবর্তন করতে পারেন।
প্রমাণপত্র বা ডকুমেন্ট আপলোড
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে, যেমনঃ-
আংশিক নাম সংশোধন করতে প্রয়োজন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের কপি।
- বিবাহিত হলে বিয়ের কাবিননামা।
সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করতে প্রয়োজন
ভোটার আইডি কার্ডে সম্পূর্ণ নাম সংশোধন জটিল প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে দায়িত্বরত কর্মরত মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে এবং প্রতিবেদন তৈরি করে সেটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে দাখিল করবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
- বিবাহিত হলে বিয়ের কাবিননামা।
- MPO/ সার্ভিস বইয়ের কপি।
- সরকার অনুমোদিত নোটারি পাবলিক কর্তৃক এফিডেভিট।
- উপজেলা নির্বাচন অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদন।
বয়স সংশোধন করতে প্রয়োজন
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স।
- একজন সিভিল সার্জন কর্তৃক সত্যায়িত বয়স প্রমাণের প্রত্যয়ন পত্র।
- চেয়ারম্যান কর্তৃক পারিবারিক সনদ বা প্রত্যয়নপত্র।
- MPO/ সার্ভিস বই/ চাকরির আইডি।
- বিবাহের কাবিন নামা।
- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অফিস স্মারক সম্মিলিত প্রত্যয়নপত্র।
স্থায়ী ঠিকানা সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হয়
- আবেদনকারীর বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- এলাকা পরিবর্তন ফরম (মাইগ্রেশন ফরম- ১৩)
- যে এলাকায় স্থানান্তর হতে চাচ্ছেন তার চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ।
- বর্তমান এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে ভোটার স্থানান্তর প্রত্যয়নপত্র।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিলের কপি।
- উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে অন্যান্য কাগজপত্র।
ধাপ-৪ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দেয়ার নিয়ম
আলাদা আলাদা তথ্য সংশোধনের জন্য আলাদা সংশোধন ফি জমা দিতে হয়। যেমনঃ-
সংশোধনের ধরণ | ফি |
ব্যক্তিগত তথ্য | ২৩০ টাকা |
অন্যান্য তথ্য | ১১৫ টাকা |
ব্যক্তিগত ও অন্যান্য উভয় তথ্য সংশোধন | ৩৭৫ টাকা |
আইডি কার্ড রিইস্যু (Urgent) | ৩৭৫ টাকা |
আইডি কার্ড রিইস্যু (Regular) | ২৩০ টাকা |
NID Card Correction Application করার পরে বিকাশ, রকেট এবং নগদ যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাবহার করে পরিচয়পত্র সংশোধন ফি পরিশোধ করা যায়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ বিকাশ ব্যবহার করে তাই চলুন বিকাশে ভোটার আইডি সংশোধন ফি জমা দেয়ার নিয়ম দেখে নেই-
- প্রথমে বিকাশ অ্যাপে ওপেন করে ড্যাশবোর্ড থেকে পে বিল অপশন সিলেক্ট করুন।
- তারপরে সরকারি ফি (NID Service) সিলেক্ট করুন।
- আবেদনের ধরন এবং আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে “বিল পে করতে এগিয়ে যান” অপশানে ক্লিক করুন।
- আপনার আবেদনের ধরনের উপরে ভিত্তি করে কতো টাকা ফি লাগবে তা শো করবে।
- আপনার বিকাশের পিন নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট করে দিলে ফি দেওয়ার কাজ শেষ।
ধাপ-৫ সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন সাবমিট করা হয়ে গেলে আপনি সংশোধন ফরম ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন সফলভাবে সাবমিট হলে এবং সাথে যথাযথ ডকুমেন্ট আপলোড দিলে ৩ সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়।
আপনার আবেদন সফল হলে ফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। তারপর আপনি সংশোধিত আইডি কার্ড উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
কিছু কমন প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কে সচারাচর সবার মনে কিছু কমন প্রশ্ন থাকে। চলুন এই রকম কিছু কমন প্রশ্ন অর তার উত্তরগুলো দেখে নেই-
এক ভোটার আইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের কোন সীমা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার তথ্য পরিবর্তন করতে গেলে বেশি ফি দিতে হবে। প্রথমবার কোন তথ্য সংশোধনের জন্য ২৩০ টাকা, দ্বিতীয়বার(একবার যা সংশোধন হয়েছে তা ছাড়া) ৩৪৫টাকা এরপর প্রতিবার ৪৬০টাকা করে সংশোধন ফি দিতে হবে।
সংশোধন আবেদন বাতিল হলে কি করণীয়?
আপনাকে নিজে দেখতে হবে ঠিক কোন কারণে আপনার সংশোধন আবেদনটি বাতিল হয়েছে। যদি কোন কারণ খুঁজে পান তবে তা সমাধান করে পুনরায় সংশোধন আবেদন দাখিল করতে হবে।
আইডি কার্ডে নিজের বয়স কিভাবে কম বেশি করবো?
নিজের ইচ্ছা মতো ভোটার আইডি কার্ডের বয়স বাড়ানো বা কমানো যায় না। বয়স পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ থাকলেই শুধু জন্মতারিখ পরিবর্তন করা যায়।
স্মার্টকার্ড সংশোধন করলে কি দ্বিতীয়বার পাওয়া যায়?
একজন ব্যক্তিকে একবারই স্মার্টকার্ড প্রদান করে নির্বাচন কমিশন। সুতরাং দ্বিতীয়বার স্মার্টকার্ড পাওয়ার সুযোগ আপাতত নেই, এক্ষেত্রে আপনাকে সংশোধিত স্মার্টকার্ডের লেমিনেটিং কপি ব্যবহার করতে হবে।
Leave a Comment