প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা কি জানেন স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি, অথবা অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করলে কি রকম ক্ষতি হয়? আপনার উত্তর যদি না হয়, তাহলে আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক ও অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করলে যেসব ক্ষতি হয় সেই সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য সমূহ। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত-
স্মার্টফোন কি
স্মার্টফোন হচ্ছে মোবাইল অপেরাটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত, উন্নত এবং শক্তিশালী হার্ডওয়ার দ্বারা সক্ষম ছোট ডিভাইস। স্মার্ট ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা (যেমন; ফোন কল, অ্যাপ ও সফটওয়্যার, মাল্টিমিডিয়া এবং ইন্টারনেট) পেয়ে থাকি। বর্তমানে সকল স্মার্ট ফোনে কম্পিউটারের মতো সুবিধা পাওয়া যার।
স্মার্ট ফোন গুলোতে কম্পিউটারের মতো সুবিধায় থাকায় আধুনিক পৃথিবীর সাথে তাল মিলানোর জন্য প্রায় সকল ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এই মোবাইল ফোন দ্বারা কম্পিউটারে যতগুলো কাজ করা সম্ভব তার প্রত্যেকটি সাধারণভাবে করা যেতে পারে। বর্তমানে স্মার্টফোন পুরো বিশ্বকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক
স্মার্ট ফোন প্রায় সবার কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, যা আপনার বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার সহজ মাধ্যম। বর্তমান আধুনিক যুগে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা ছাড়া জীবনযাত্রা কল্পনা করা সম্ভব নয়। স্মার্ট ফোন ব্যবহারের যেমন ভাল দিক রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষতির দিকও রয়েছে। আসুন পাঠক বন্ধুরা নিচে থেকে জেনে নেই স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক সমূহ গুলো কি কি-
ঘাড় ব্যাথা করা
অনেকক্ষণ যাবত একটানা নিচের দিকে হয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করার কারণে ঘাড় ব্যাথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে ভিডিও দেখা, অতিরিক্ত গেমে আসক্তি এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি মনোযোগ দিয়ে গিয়ে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। যার ফলে মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড় ব্যাথা দেখা দেয়।
কানে কম শোনা
হেডফোন বা ইয়ারফোন কানে গুজে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ উচ্চ সাউন্ডে গান শোনা অথবা স্মার্ট ফোনে অনেকক্ষণ যাবত কথা বললে আপনার কানে কম শোনার মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টার বেশি সময় একটানা স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের ৩-৫ বছরের মধ্যে কানে কম শোনা বা বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া
গবেষকদের মতে, চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া এ বিষয়টি ‘এপিজেনেটিক্স’ সম্পর্কিত একটি বিষয়। একটানা অনেকক্ষণ সময় যাবত চোখের খুব কাছে রেখে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের করার কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার একধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে স্মার্ট ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন এর মতে স্মার্ট ফোনের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
শুক্রাণু কমে যাওয়া
স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া অন্যতম। স্মার্টফোন থেকে নির্গত হওয়া হাই ফ্রিকোয়েন্সীর ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের বিভিন্ন কোষ ও পুরুষের প্রজননতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রমানিত হয়েছে যে, স্মার্ট ফোনের নিঃসৃত ক্ষতিকর রেডিয়েশন তরঙ্গ শুক্রাণুর ঘনত্ব কমানো ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এ সম্পর্কে আরও পড়ুন ntvbd.com
অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি
ডিস্কাট ব্লগ ২০১৬ সালের ১৬ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি হতে জানা যায় যে, সাধারণ একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর স্ক্রিনে ট্যাপ, ক্লিক ও সোয়াইপের পরিমাণ গড়ে ২ হাজার ৬ শ ১৭ বার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪ শ ২৭ বার। অনেক্ষণ ধরে স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে টাইপিং এর কারণে আঙুলের জয়েন্টে ব্যাথা হয়। দীর্ঘদিন ধরে স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে টাইপিং এর ফলে আর্থরাইটিসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নোমোফোবিয়া
মাত্রারিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারের কারণে মনের মধ্যে সবসময় একটা ভয় বা টেনশন কাজ করে যে, আপনার স্মার্ট ফোন আছে কি না বা হাড়িয়ে গেল কি না। চিকিৎসকদের ভাষায় এ রোগের নাম নোমোফোবিয়া। ভারত ও যুক্তরাজ্যের তরুণরা যথাক্রমে ২৯ ও ৫৩ শতাংশ এ রোগের শিকার। তাছাড়া অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারের কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, যা দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের উপরও প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি দিক হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হোয়ে যাওয়া। দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে অনেক সময় ব্যবহারকারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মেজাজ খিটখিটের সাথে অস্থিরতা ও অমনোযোগীতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তখন ব্যবহারকারী সহজে এ সমস্যা উপলব্ধি করতেও পারেন না।
চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া
স্মার্ট ফোনের মাত্রারিক্ত ব্যবহারের কারণে মানুষের তড়িৎ চিন্তাশক্তি অনেকাংশে কমে যায়। সৃজনশীল বা নিত্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মেধা কমে যাওয়ার ফলে কোন কিছুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়।
পর্নো-আসক্তি
দীর্ঘ সময় ধরে একা একা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার কারণে, আজকাল কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে প্রায় সকল বয়সের মানুষ পর্নো ভিডিওতে আসক্তি হয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন পর্নো সাইটে অবাধ প্রবেশের অনুমতি থাকার ফলে এ ধরনের অসৎ কর্মকান্ডে আমাদের যুব সমাজ লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে যা একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।
ঘুমে ব্যাঘাত
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে প্রায় সকলের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। স্মার্ট ফোন এর মাত্রারিক্ত ব্যবহারের শারীরিক প্রভাবে ঘুম আসতে দেরী হয়, প্রতি রাতের যে “স্লিপ শিডিউল” তা বিঘ্নিত হয় এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো সম্ভব হয়না। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে থাকে।
কাজ ও পড়ালেখায় মন না বসা
প্রতিদিন বেশি পরিমাণে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার কারণে কাজ কর্মে ও পড়ালেখায় মন বসে না।মাত্রারিক্ত ফোন ব্যবহার করার কারণে ফোনের প্রতি আগ্রহ বা আকর্ষণের ফলে অনেকের কাজ করতে বা পড়ালেখা করতে ইচ্ছা করে না। যার ফলে যেকোন কাজ বা পড়া লেখায় মন বসে না।
মূল্যবান সময় নষ্ট
অধিক সময় ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করার কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যার ক্ষতিপূরণ কখনো সম্ভব নয়। আমরা বেশির ভাগ সবাই জানি যে আমাদের জীবন থেকে সময় একবার চলে তা আর কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের এই মহা মূল্যবান সময় স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নষ্ট না করে পড়াশুনা বা অন্য কোন ভালো কাজে লাগাতে হবে।
স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়
আধুনিক প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনযাত্রার মানকে সহজ এবং আরামদায়ক করে দিচ্ছে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকি। আমাদের সারা দিনের কর্মকাণ্ডে যেসব ইলেকট্রনিক যন্ত্র একেবারে না হলেই নয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্মার্ট ফোন। উপরে স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলের এই পার্ট এ আমরা স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত-
- একটানা অনেক ঘন্টা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা পরিহার করতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর পর ব্যবহার করতে পারেন।
- মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে ফোনের SAR Value চেক করবেন কারণ ফোনের রেডিয়েশনের হার বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
- মোবাইল ব্যবহারের সময়সীমা সীমিত করতে হবে বা ব্যবহারের জন্য একটি নির্ধারিত সময় তৈরি করতে হবে।
- রাস্তায় চলাচলের সময় অথবা রাস্তা পার হওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
- অযথা মোবাইল ব্যবহার এড়াতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- অহেতুক মোবাইল ব্যবহার করে মূল্যবান সময় নষ্ট না করে যেকোনো সৃজনশীল কাজ করতে পারেন।
- অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন যাতে মোবাইলে না আসে সেজন্য মোবাইলের সেটিংস থেকে নোটিফিকেশন অপশন কাস্টমাইজ করে নিতে হবে।
- আজকাল অনেক স্মার্টফোনে “Do not Disturb” মুড থাকে। পড়ালেখা বা কাজ করার সময়ে এই মুডটি অন করে রাখতে পারেন।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং অবশ্যই আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট গুলোতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছে নিজস্ব প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্মার্ট ফোন অধিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে বাঁচার জন্য উপরের পয়েন্ট গুলো অনুসরণ করে চলতে পারেন।
শেষ কথা
আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করলে যেসব ক্ষতি হয় ও বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং সেই সাথে তথ্য বহুল স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন, যাতে করে তারা অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করে। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ্ হাফেয।
এমন সব ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
Leave a Comment