চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা কি?

চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা কি?

বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আর যদি সেটা হয় চিনা বাদাম তাহলে তো কোনো কথায় নেই। কারণ, যে কোনো খাবারের চেয়ে চিনা বাদামের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা বেশি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আসলে চিনা বাদাম সস্তা বাদাম হিসেবে বিবেচিত হয়। এটিতে সেই সমস্ত উপাদান এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দামী বাদামে পাওয়া যায়। তাই সবাই এই বাদামটা খেতে খুব পছন্দ করে। তো চলুন এই আর্টিকেলে আজ আমরা জানবো চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতাগুলো কি কি?

চিনা বাদাম কেন বাদাম নয়? _ wirebd.com

চিনা বাদাম কেন বাদাম নয়?

মজার ব্যপার হলো, আমরা যে বাদাম খাই, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটি কিন্তু বাদাম নয়, বরং শস্য। এই চিনা বাদাম মাটির নিচে শস্যদানার মতো হয়ে থাকে যা Legumes গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই বাদাম মাটির নিচে হওয়ায় এর আরেক নাম গ্রাউন্ড নাট বা মাটির বাদাম। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় বাদাম হতে গেলে সেটিকে বড় কোনো গাছে ফল বা বীজ আকারে হতে হবে। যেমনটাঃ- আখরোট, কাজু বাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি।

তবে এই বাদামে অন্যান্য বাদামের মতোই নানাবিধ পুষ্টিগুন রয়েছে। অন্যান্য বাদামের স্বাদের সঙ্গে এবং পুষ্টিগুনে মিল থাকায় একে চিনা বাদাম বলা হয়ে থাকে।

চিনা বাদাম কাঁচা না ভাজা কীভাবে খেলে মিলবে এর উপকার?

চিনা বাদাম বেশ সহজলভ্য এবং উপকারী। এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বো-হাইড্রেট ও প্রোটিন আছে। প্রতিদিন এক মুঠো চিনা বাদাম খেলে আপনি আপনার শরীরকে অনেক রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তবে এই বাদাম আপনি কাঁচা খাবেন নাকি ভাজা খাবেন। কোনটি খেলে আপনার বেশি উপকার হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ-

  • কাঁচা চিনা বাদামঃ- কাঁচা বাদামে রয়েছে ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুন হাড়ের জোর বাড়ায়। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সারের আশঙ্কাও দূরে রাখে।
  • ভাজা চিনা বাদামঃ- গবেষকদের মতে, ভাজা বাদামে থাকে ভালো কোলেস্টেরল, প্রোটিন এবং ফাইবার। ভাজা বাদাম খেলে বদহজমের সমস্যা দূর হয়। রক্তের শর্করা মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। দাঁতের ক্ষয়ও কমে।

চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

চিনা বাদাম নানাবিধ পুষ্টিগুণে ভরপুর যা শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি একমুঠো চিনা বাদাম যুক্ত করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই চিনা বাদামের রয়েছে বেশ কিছু উপকারিতা। তো চলুন এই পর্যায়ে চিনা বাদামের কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে জানবোঃ-

  • চিনা বাদাম খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেঃ- গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করেন তাহলে জীবনে কোনো দিনও আপনার কোনো হাড়ে রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
  • চিনা বাদাম ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে করেঃ- বাদামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্যে করে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
  • পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে চিনা বাদামঃ- এই চিনা বাদামটিতে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকয়টি উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানগুলোই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে।
  • চিনা বাদাম খেলে ব্রেনের পাওয়ার বৃদ্ধি পায়ঃ- গবেষণায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
  • বাদাম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখেঃ-  বাদামে শুধু ডায়াবেটিস নয়, এতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্নক বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বেশি দিন হয়ে গেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির মতো অনেক মারাত্নক রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসেঃ- বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। এতে করে শরীরের ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিনা বাদামে খাওয়া যেতে পারেঃ-  চিনা বাদামের মধ্যে শর্করার পরিমাণ খুবই কম পক্ষান্তরে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবার রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত চিনা বাদাম খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ- চিনা বাদামের মধ্যে Arginine নামক একটি উপাদান রয়েছে যা লিঙ্গের মধ্যে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ইরেকটাইল ডিসফাংশন দূর করতে সহায়তা করে।

চিনা বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

চিনা বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

চিনা বাদামের যেমন নানাবিধ পুষ্টিগুন ও উপকারিতা রয়েছে তার পাশাপাশি এর কিছু আপকারিতাও রয়েছে। তো চলুন এই পর্যায়ে আমরা চিনা বাদামের এই রকম কমন তিনটি অপকারিতা সম্পর্কে জানবোঃ

  • পয়জনিংঃ- কাঁচা চিনা বাদাম ভালোভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তাতে এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে একটি বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে। এই উপাদানটি মূলত লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যার লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া এবং ক্ষুদামন্দা।
  • বাদাম আয়রন ও জিঙ্ক শোষণে বাধা প্রদান করেঃ- বাদামের মধ্যে phytic acid নামক একটি উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। যাদের শরীরে আয়রন বা জিংকের ঘাটতি রয়েছে তাদের জন্য এই phytic acid বিপজ্জনক হতে পারে। তাই তাদের বেশি চিনা বাদাম না খাওয়ায় ভালো।
  • চিনা বাদাম খেলে এলার্জি দেখা দেয়ঃ- চিনা বাদামে রয়েছে একটি কমন allergen foods যা এলার্জি সৃষ্টি করে থাকে। অনেকেরই এই চিনা বাদাম খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের এই চিনা বাদাম খেলে এলার্জি হয় তাদের এই বাদামটি এড়িয়ে চলা উচিত।

অন্যান্য বাদামের তুলনায় চিনা বাদাম কিছুটা কম পুষ্টিগুন সম্পন্ন তবে চিনা বাদামের সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে প্রতিদিন অবশ্যই একমুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পেতে আপনাকে সাহায্য করবে চিনা বাদাম।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *