চ্যাট জিপিটি কি? চ্যাট জিপিটি কীভাবে কাজ করে?

চ্যাট জিপিটি কি? চ্যাট জিপিটি কীভাবে কাজ করে?

টেকনোলজি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন অথচ চ্যাট জিপিটি-র নাম শোনেননি এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছে। যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, চ্যাট জিপিটি হল একটি কথোপকথনমূলক AI মডেল, যার রীতিমতো অসীম সম্ভাবনা আছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমি চ্যাট জিপিটি কি? কীভাবে কাজ করে? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো-

চ্যাট জিপিটি কি?

চ্যাট জিপিটি (Chat GPT) একটি AI চ্যাটবট যার সাথে আপনি মানুষের মত কথা বলতে পারবেন। আপনি যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ করেন তখন গুগল আপনাকে শুধু সেই টপিক সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখায়, কিন্তু চ্যাট জিপিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে কাজ করে। এটি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ইমেল, প্রবন্ধ, গল্প এমনকি কমপ্লেক্স কোড লেখার মতো কাজগুলিতেও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

চ্যাট জিপিটি কি?

OpenAI নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান Chat GPT তৈরি করেছে। ২০২২ সালের ৩০শে নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে Chat GPT যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর মডেলটির আরো উন্নয়ন সাধন করে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন পার করেছে।

চ্যাট জিপিটি কিভাবে কাজ করে?

সহজভাবে বলতে গেলে Chat GPT একটি সুপার-স্মার্ট টেক্সট জেনারেটরের মতো। চ্যাটজিপিটি কে মানুষের মতো কথা বলা শেখাতে‌ ইন্টারনেট থেকে প্রায় ৪৫ টেরাবাইট লিখিত তথ্য দিয়ে ১৭৫ বিলিয়ন আলাদা আলাদা কথোপকথনের ধরনের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আপনি যখন এটিকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন তখন সেই জ্ঞান ব্যবহার করে আপনাকে উত্তরটি দিয়ে দেয়। Chat GPT কোটি কোটি তথ্য নিয়ে বসে থাকা এক জ্ঞানী বৃদ্ধের মতো যে সবকিছু জানে।

GPT এর অর্থ হল জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমার[wiki]। “জেনারেটিভ” মানে উৎপাদনক্ষম, এটি নিজের মতো করে লিখতে পারে। “প্রি-ট্রেইনড” মানে প্রাক-প্রশিক্ষিত, ডেভেলপাররা এটিকে আগে থেকে যা শিখিয়েছে শুধু মাত্র সেইটুকু জানে, এজন্য Chat GPT র কাছে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডাটা আছে। ২০২১ সালের পরে কী হয়েছে সেটা এখনো জানে না। “ট্রান্সফরমার” হল Chat GPT এর মডেলের ধরণ, যার ফলে এটি সত্যিই স্মার্টভাবে বুঝতে এবং সে অনুযায়ী উত্তর দিতে পারে। এডভান্স মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম এর সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য একাধিক উত্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ সামঞ্জস্যপূর্ণ উত্তরটি দিতে ৬ থেকে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগে।

সুতরাং আপনি যখন GPT কে কোন প্রশ্ন করেন বা প্রম্পট দেন, তখন সে প্রশিক্ষণের সময় যা শিখেছে তার উপর ভিত্তি করে উত্তর দেয়। এর নিজের কোন অনুভূতি বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই, তবে এটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডেটার ভিত্তি করে সাবলীলভাবে মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে।

যত বেশি মানুষ এই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করবে, এর সিস্টেম তত বেশি উন্নত হবে। এজন্য ভার্সন আপডেট এর সাথে সাথে Chat GPT র উত্তর আরও বেশি ইম্প্রভ হচ্ছে। ভার্সন ৩ থেকে ভার্সন ৪ এর উত্তর অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক।

চ্যাট জিপিটি যা যা করতে পারে

সত্যি বলতে চ্যাট জিপিটির সামর্থ্যের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলুন এর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো জেনে নেই:-

চ্যাট জিপিটি

  • মানুষের মতো কথা বলতে ও বুঝতে পারে।
  • যেকোনো প্রশ্নের উত্তর, প্রয়োজনীয় তথ্য, ভাষা অনুবাদের কাজগুলো খুব সহজেই করতে পারে।
  • ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে জীবনী, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, কনটেন্ট স্ক্রিপ্ট ইত্যাদির মতো জিনিসগুলি সহজেই লিখতে পারে।
  • কোন টপিক বা বিষয়ের উপরে অভিজ্ঞ ব্যক্তির মতো মত প্রকাশ ও আলোচনা করতে পারে।
  • কোডিং ও অ্যালগরিদম রিলেটেড কোন প্রশ্ন, বিশ্লেষণ ও ডিবাগিং এর কাজে এক্সপার্টের মতো সহায়তা প্রদান করতে পারে।
  • মানুষের সাথে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে করে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে, ফলে আর বেশি মানুষের মতো ও যৌক্তিক উত্তর দিতে পারে।
  • বড় কোন উপন্যাস, মুভি, বই বা তথ্যকে সংক্ষিপ্ত করে শুধু মাত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো বলে দিতে পারে।
  • ২০২১ সালের আগের যে কোন ঘটনা বা তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে সহজেই উত্তর দিয়ে দিতে পারে।
  • পূর্বের আলাপ মনে রেখে মানুষের মত দীর্ঘ সময় আলাপ চালিয়ে যেতে পারে।
  • কাস্টমাইজ করে Chat GPT কে নিজের সুবিধা মত বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।

চ্যাট জিপিটির সুবিধা ও অসুবিধা

চলুন এবার চ্যাট জিপিটির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক:-

চ্যাট জিপিটির সুবিধাঃ-

  • সবথেকে বড় সুবিধা হল যখন কেউ এখানে কোন প্রশ্ন করে তখন সরাসরি বিস্তারিতভাবে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। অথচ আপনি যখন গুগলে কিছু সার্চ করেন তখন সার্চের উপর ভিত্তি করে গুগল আপনাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ধরিয়ে দেয়।
  • এর চমৎকার একটি সুবিধা হলো আপনি যদি কোন ফলাফলে সন্তুষ্ট না হন তাহলে আপনার তথ্যের ভিত্তিতে ফলাফল আপডেট করতে পারে।
  • কোডিং থেকে শুরু করে যেকোনো ইমার্জেন্সি অবস্থায় অনেক দ্রুত সঠিক সমাধান দিতে পারে।
  • ব্যবহারকারী যে কোনো প্রশ্ন বা টাস্ক দিলে অনেক দ্রুত তার উত্তর দিতে পারে।
  • পড়ালেখা থেকে শুরু করে গবেষণা যে কোন বিষয়ে Chat GPT এর সাহায্য করতে পারে।
  • বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা বুঝে সেই ভাষায় উত্তর দিতে পারে।
  • বর্তমানে ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে Chat GPT ব্যবহার করতে পারবেন।

আমি শুরু থেকে Chat GPT র অনেক সুবিধা ও ভালো দিক নিয়ে কথা বলেছি। চলুন এবার এর কিছু অসুবিধা নিয়ে কথা বলা যাক,

চ্যাট জিপিটির অসুবিধাঃ-

  • শুধুমাত্র ২০২২ এর আগের তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাই এর পরের কোন তথ্য দিতে পারে না।
  • Chat GPT বিভিন্ন ভাষাতে কথা বলতে পারলেও বর্তমানে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর ফলাফল দিতে পারে।
  • চ্যাটজিপিটিকে ইন্টারেন্টে থাকা তথ্য ব্যবহার করে ট্রেইন করা হয়েছে। যেহেতু ইন্টারেন্টে প্রচুর ভুল তথ্য আছে তাই এর উত্তর অনেক সময় ভুল হয়।

চ্যাট জিপিটি কিভাবে ব্যবহার করবেন?

চ্যাট জিপিটি কিভাবে ব্যবহার করবেন?

চ্যাটজিপিটির এত এত গুনগান শোনার পরে এখন অনেকের এটি ব্যবহার করার ইচ্ছা হতে পারে। তো Chat GPT ব্যবহার করার জন্য আপনাকে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (chat.openai.com) গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পরে এটির ভার্সন ৩.৫ আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ভার্সন ৪ ব্যবহার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট চার্জ দিতে হবে।

চ্যাটজিপিটি মানুষের বিকল্প নাকি সহায়ক?

পৃথিবীতে প্রযুক্তির উন্নয়নে বহু পেশা যেমন বিলীন হয়ে গেছে, তেমনি আবার নতুন পেশার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই চ্যাটজিপিটির কাজ করার সামর্থ্য দেখে অনেকের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, চ্যাটজিপিটি কি মানুষের কর্মসংস্থানে ভাগ বসাবে? লেখালেখি বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে যারা আছেন, তাদের অনেকের ভয় চ্যাটজিপিটি তাদের চাকরিটা কেড়ে নেয় কি না!

আসলেই কি মানুষের জায়গা নিতে পারবে চ্যাটজিপিটি? এই প্রশ্নের আসলে সোজা কোনো উত্তর নেই। দেখুন চ্যাটজিপিটির অবশ্যই অনেক সামর্থ্য আছে, যেমন ভালো কন্টেন্ট লিখতে পারে, কোডিং করতে পারে আরও অনেক অনেক কাজ করতে পারে। কিন্তু নিজে থেকে কিছু করতে পারে না, চিন্তা করার ক্ষমতা নেই। চ্যাটজিপিটির প্রশংসা করলেও এর বেশ কিছু সমস্যা বা ত্রুটি আছে, অনেক সময় ভুল তথ্য দেয়। তাই প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন এখনো রয়েছে।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে লড়াইটা হবে দক্ষতায়। দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ কাজের প্যাটার্ন পরিবর্তন করে টিকে থাকবে। যদি আপনি মোটামুটি মানের কন্টেন্ট লিখতে পারেন, মোটামুটি মানের কোডিং করতে পারেন তাহলে চ্যাটজিপিটি আপনার স্থান নিতে পারে। হয়ত আজ নয় কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মোটামুটি মানের কাজগুলো সব AI দখল করে নিবে। কিন্তু আপনি যদি ভালো মানের কন্টেন্ট, কোডিং, ডিজাইন করতে পারেন তাহলে আপনার খুব একটা ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করুন। নিজের কাজে চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন Survival of the fittest, যোগ্যরাই টিকে থাকার সামর্থ্য রাখে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রাউটার কি? রাউটার কিভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে? (সহজ বিশ্লেষণ)