তারাবি নামাজ কত রাকাত? তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল? কীভাবে তারাবি নামাজ পড়ে?

তারাবি নামাজ কত রাকাত? তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল? কীভাবে তারাবি নামাজ পড়ে?

রমজান মাসে তারাবি নামাজ কত রাকাত এইটা নিয়ে অনেকের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামের নানা রকম মতের কারণে তারাবি নামাজ ৮ রাকাত না ২০ রাকাত তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। এ কারনে বর্তমান সময়ে কিছু কিছু আলেম ও সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে মতের পার্থক্য দেখা যায়।

অনেকেই আছেন যারা প্রশ্ন করেন কোনো কোনো মসজিদে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়া হয় আবার কোনো কোনো মসজিদে ৮ রাকাত পড়া হয় কেন? সে সকল মুসল্লিদের জন্যই আমি আজকের এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারবেন, তারাবি নামাজ কত রাকাত? তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল? কীভাবে তারাবি নামাজ পড়ে? এই সব কিছু জানার আগের সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নিবো তারাবি নামাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য সমূহ-

তারাবি নামাজ

তারাবি নামাজ

তারাবির নামাজ বা সালাতুত্ তারাবি হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তারাবি শব্দটি এসেছে আরবি তারবিহাতুন ধাতু থেকে যেটির আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম করা বা আরাম করা। ইসলামী পরিভাষায়, রমজান বা রামাদান মাসে এশার নামাজ এর পর এবং বেতরের নামাজের আগে বিশেষ যে নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে তাকেই তারাবি নামাজ সালাতুত তারাবি বলে।

তারাবি নামাজ যেহেতু দুই রাকাআত করে পড়া হয় সেহেতু প্রতি চার রাকাআত অন্তর পরবর্তী নামাজের দাড়ানোর পূর্বে অল্প কিছু সময় বিশ্রাম বা আরামের জন্য বসার প্রচলন রয়েছে, শাব্দিক অর্থগত দিক থেকে এ নামাজকে এজন্যই তারাবি বলে অভিহিত করা হয়। তারাবি নামাজ প্রসঙ্গে হযরত আবু হূয়ারাররা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মাহে রামাদ্বান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবের প্রত্যাশায় এ মাসে রাত্রিজাগরণ করে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী, হাদীস নং-২০০৮)

তারাবি নামাজ কত রাকাত

তারাবি নামাজ কত রাকাত

তারাবি নামাজ কত রাকাত তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মসজিদগুলোতে ২০ রাকাআত তারাবি নামাজ আদায়ের প্রচলন রয়েছে। তারাবির নামাজ বিশ রাকাত ও তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর যুগ থেকে তারাবির নামায বিশ রাকাত হিসেবেই পালিত হয়ে আসছে। তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের যুগ এবং পরবর্তী কোন যুগে এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

চার মাযহাবের প্রত্যেক ইমাম থেকে তারাবির নামাজ বিশ রাকাত বলেছেন। বিশ রাকাতের কম কেউ বলেননি। এমনকি ইমাম মালিক (রঃ) থেকে এক বর্ণনায় তিন রাকাত বিতরসহ তারাবির নামাজ ৩৯ রাকাত এবং অন্য বর্ণনায় একচল্লিশ রাকাত বলে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম মালিক (র.)-এর অন্য বর্ণনা জমহুরের অনুরূপ, অর্থাৎ তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। তারাবির নামাজ প্রসঙ্গে ইমাম নববী (রাঃ) বলেন;

জেনে রাখো, উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে তারাবির নামাজ সুন্নত। আর এটি বিশ রাকাত। প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবে। আর এ নামাজের পদ্ধতি অন্যান্য নামাজের মতোই। তারাবি নামাজ মোট কত রাকাত পড়তে হবে, তা রাসূল (সঃ) নির্ধারণ করে যাননি, তবে গবেষণার মাধ্যমে বিশ রাকাত তারাবি নামাজের পক্ষেই দলিল বেশি পাওয়া যায়। আপনাদের জন্য নিচে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো;

  • হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি এবং বিতর নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১)।
  • হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রমজান মাসের এক রাতে মহানবী (সঃ) তাশরীফ নিয়ে এলেন, আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত (৪ রাকাআত এশার এবং ২০ রাকাআত তারাবি) নামাজ পড়ালেন। আর তিন রাকাআত বিতর নামাজ পড়ালেন। (তারীখে জুরজান-২৭)।
  • হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩)।
  • হযরত ওমর (রাঃ) এর সময়ে যে বিশ রাকাআত তারাবি নামাজের প্রচলন ছিল তার আরো প্রমাণ পাওয়া যায় হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রাঃ) এর কথায়, আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম। (সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩)।

হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকাআত করে তারাবি নামাজ আদায় করে থাকেন। সঠিকভাবে তারাবি নামাজ আদায়ের জন্য ২০ রাকাআত আদায় করাই উত্তম। এছাড়াও আপনি যে অনুসারীই হয়ে থাকেন না কেনো, তারাবি নামাজ আদায়ের পক্ষেই থাকুন, তা ধীরেসুস্থে নির্ভুলভাবে আদায় করাটাই সবচেয়ে জরুরী।

তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল

তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল

প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলমান নারী-পুরুষদের জন্য তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুন্নতে মুয়াক্কাদার গুরুত্ব বোঝাতে হলে ওয়াজিবের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ ওয়াজিব ছেড়ে দিলে যেমন শেষ বিচারের দিনে জবাবদিহি করতে হবে তেমনি সুন্নতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রেও। তারাবি নামাজ আদায়ের গুরুত্ব এ থেকে বোঝা যায়।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মান্বেষণের সঙ্গে নেক পাওয়ার আশায় রোজা রেখে, তারাবির নামাজ আদায় করে এবং কদর রাতে সারারাত ইবাদত করে,আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেন।”

আল্লামা জুরজানী (রঃ) এর মতে, ওয়াজিব ছেড়ে দিলে সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আবার সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিলে আল্লাহ তা’আলা মাফও করতে পারেন, আবার শাস্তিও প্রদান করতে পারেন।

খোলাফায়ে রাশেদীন বিশেষত হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের শেষ জামানা থেকে মুয়াযাবাত তথা নিয়মিত তারাবি নামাজ পড়তেন এবং তারাবি নামাজের সুন্নত আদায়ের তাগিদ দেন।

ইমাম নববী বলেন, আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবী নামাজ পড়া সুন্নত। (আলমাজমূ ৪/৩১)

কীভাবে তারাবি নামাজ পড়তে হয়

কীভাবে তারাবি নামাজ পড়তে হয়

আরবি মাস রমজানের চাঁদ দেখার পর থেকে এশার ওয়াক্তের ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায়ের পর এবং ৩ রাকাত বেতর নামাজ আদায়ের পূর্বে ২ রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পূর্ব রাত পর্যন্ত প্রতি রাতেই তারাবি নামাজ আদায় করতে হয়।

তারাবি নামাজ মূলত দুটি পদ্ধতিতে আদায় করতে হয়। যথা; খতম তারাবি ও সূরা তারাবি। খতম তারাবি নামাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কোরআন ধারাবাহিক ভাবে পাঠ করে রমজান মাসের প্রথম তারিখ থেকে সাতাশ তারিখের মধ্যে শেষ করা হয়। খতম তারাবি’র ক্ষেত্রে কোরআনে হাফেজগণ মসজিদে ইমামতি করেন। সূরা তারাবি নামাজের ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা তেলওয়াত করা হয় অন্য সকল নামাজের মতোই।

তারাবি নামাজের জন্য নিয়ত করে দুই রাকাত করে মোট বিশ রাকাত নামাজ জামাআতের সহিত আদায় করতে হবে, নামাজের বাকি সব নিয়ম অন্য সকল নামাজের মতোই৷ তবে প্রতি চার রাকাআত অন্তর কিছু সময় বসে বিশ্রাম করতে হবে। বিশ্রাম কালীন তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকর আজগার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে পৃথক পৃথক নিয়তে তারাবি নামাজ আদায় করতে হবে।

শেষ কথা

পাঠক বন্ধুরা তারাবি নামাজ হলো রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই জানি না তারাবি নামাজ কত রাকাত? তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল? কীভাবে তারাবি নামাজ পড়তে হয়। আজকের এই আর্টিকেলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আপনারা সকলেই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং তারাবি নামাজ কত রাকাত ও এর সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছেন।

তারাবি নামাজ নিয়ে আরও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল পেতে হলে নিয়মিত আমাদের ওয়েব-সাইটটি ভিজিট করুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *