সাধারণত কোলন ক্যান্সারে পুরুষ ও কৃষ্ণাঙ্গরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের সকলের কোলন ক্যন্সারের লক্ষণ সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। বয়স ৫০ পেরুলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বর্তমানে কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সার খুবই পরিচিত একটি মারাত্মক অসুখ। প্রতিবছর অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মৃত্যুবরণ করছে।
ইদানিং অল্প বয়সেও মলাশয় ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাত্মক এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কোলন ক্যান্সার কি, ক্যান্সারের লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা পদ্ধতি কি কি?
কোলন ক্যান্সার কি?
আমাদের খাদ্য পরিপাক এবং খাদ্যের যে নালিটি রয়েছে তার নিচের অংশে রয়েছে কোলন বা বৃহদন্ত্র। কোলন বা বৃহদন্ত্র অঞ্চলে শুরু হওয়া ক্যান্সারকে কোলন ক্যান্সার বলে। মলাশয় ক্যান্সার এমন একটি রোগ যার সঙ্গে শরীরের কোষ গুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জড়িত। এটি একটি নিয়ন্ত্রণহীন রোগ যা শরীরের অন্যান্য অংশ গুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
মলাশয় ক্যান্সার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি ক্যান্সার যার প্রাথমিক পর্যায়ে কোষ গুলির অক্যান্সারযুক্ত ক্লাস্টার হিসেবে শুরু হয়। এই গুচ্ছ কোষ গুলি কোলনের অভ্যন্তরে পলিপ গঠন করে এবং দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু পলিপগুলি ক্যান্সার হয়ে যায়। যার ফলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার হতে পারে। ওষুধ, সার্জারি এবং রেডিয়েশন থেরাপির মতো বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা এই রোগের চিকিৎসা করা যায়।
কোলন ক্যান্সার বা মলাশয় ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার বা মলাশয় ক্যান্সারের কোন সুস্পষ্ট লক্ষণ বা উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায় না। তবে, আপনি কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য আপনাকে সাহায্য করতে পারে এমন কয়েকটি লক্ষণ নিম্নরূপঃ-
- কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর মল বা মলদ্বারে রক্তপাত হতে পারে।
- এই রোগে আক্রান্ত রোগীর পেটের অস্বস্তি কখনও শেষ হবে না। এর মধ্যে ক্র্যাম্প, গ্যাসটিক বা পেট- ব্যথা অন্তর্ভুক্ত।
- অপ্রত্যাশিত ভাবে ওজন কমে যাওয়া।
- আচমকা বমি বমি ভাব, গা গুলিয়ে ওঠা।
- কোলন বা মলাশয় ক্যানসারের রোগীদের মল ত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। মল ত্যাগের পরেও মল রয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেখা যায়। সরু ফিতের মতো মল নির্গত হওয়াও কোলন ক্যানসারের লক্ষণ।
- কোলন ক্যানসারে যেহেতু অন্ত্র থেকে রক্তপাত হয় তাই, এটি রক্ত স্বল্পতা তৈরি করে। রক্ত স্বল্পতা ডেকে আনে দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব।
- সব সময় পেট ভরা থাকা।
যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে ক্যান্সারটি শরীরের কোথায় অবস্থিত তার উপর নির্ভর করে কতগুলি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। লক্ষণ সমূহ হলঃ-
- ক্রমাগত কাশি হওয়া
- প্রচন্ড পরিমাণে হাড়ের ব্যথা
- ক্ষুধা না লাগা
- হাত-পা ফুলে যাওয়া
- জন্ডিস হওয়া
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা অনুভুব করা এবং
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারন এটি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণ
যে কেও কোলন বা মলাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায় না, তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হলঃ-
- কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ভিতরে ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি
- শারীরিক পরিশ্রম না করলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- পরিবারের কোনো সদস্যের যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাহলে ঐ পরিবারের অন্য ব্যক্তিদেরও কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- বিভিন্ন অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ও ধুমপান করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
- যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মলাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি
কোলন বা মলাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসা এক-কথায় সার্জারি। সার্জারির আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অপারেশনের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনো প্রচলিত হয় নি, তবে এটি গবেষণাধীন রয়েছে। চিকিৎসার পরে ক্যান্সার যেন আবারও ফিরে না আসে তা নিশ্চিত করার জন্য রোগীদের নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং করতে হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত নিয়মিত কলোনস্কোপি এবং সিটি স্ক্যান করা হয়।
- কেমোথেরাপি নিয়ে বিস্তারিত জানতে – কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি
পরিশেষে বলতে চাই, আপনি একটি বিষয় সব সময় মনে রাখবেন যে, ক্যান্সার কঠিন রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। এক্ষেত্রে রোগীদের সচেতনতায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর প্রথম দিকে রোগ ধরতে পারলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে।
Leave a Comment