শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ । কিভাবে শিমের বিচি সংরক্ষণ করবেন

শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ । কিভাবে শিমের বিচি সংরক্ষণ করবেন

আমরা অনেকে শিমের বিচি খেতে ভালোবাসি, কিন্তু শিমের বিচির উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তেমন জানি না। শিম একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। রান্নার স্বাদ বাড়াতে শীতের এই জনপ্রিয় সবজির জুড়ি নেই। শিমের পাশাপাশি শিমের বিচির চাহিদাও এখন বাজার জুড়ে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শিমের বিচির উপকারিতা ও পুষ্টি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

যারা শিমের বিচির পুষ্টি গুণ ও উপকারিতা এবং শিমের বিচি কি ভাবে সংরক্ষন করবেন জানতে চান, তাদের জন্য এই আর্টিকেল টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিম কি

শিম একটি অতি পরিচিত লতা জাতীয় গাছের বীজ যা বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। শিম ফাবাসিয়া শ্রেণি ভুক্ত একটি প্যাচানো উদ্ভিদ। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী এটিকে খাবার হিসেবে গ্রহন করে থাকে। রান্না করার মতো হলে শিম কাঁচা অবস্থায় উঠানো হয়।
শিমের বিচির উপকারিতা

শিমের পুষ্টি গুণ

বর্তমানে অনেকেই পছন্দের সবজির তালিকায় শিমের নামটি রাখেন। শিম খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। শিম এবং শিমের বিচি ছাড়াও শিমের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ মানের ফাইবার প্রোটিন রয়েছে, যা মানব শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

শিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ফারাহ মাসুদা জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম শিমে ৮৬.১ গ্রাম জলীয় অংশ আছে। এতে খনিজ উপাদান রয়েছে ০.৯ গ্রাম, আঁশ ১.৮ গ্রাম ও ক্যালোরি বা খাদ্যশক্তি রয়েছে ৪৮ কিলো ক্যালোরি। এছাড়াও শিমে ৩.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৭ গ্রাম শর্করা, ২১০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১.৭ মি.গ্রাম লৌহ পাওয়া যায়। এই সকল উপদান ছাড়াও শিমে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ও নানা রকম খনিজ উপাদান রয়েছে।

শিমের বিচির উপকারিতা

শীতকাল আসলে আমাদের কাছে শিম একটি অতি প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। আমরা অনেকে মুখের স্বাদে শিম এবং শিমের বিচি খেয়ে থাকি, আবার অনেকে শিমের বিচির উপকারিতা জেনে খেয়ে থাকি। প্রতিদিন পরিমাণ মতো শিমের বিচি খেলে আমাদের শরীরের নানা রকম উপকার হয়। শিমের বিচির উপকারিতা নিচে দেওয়া হল-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- নিয়মিত শিমের বিচি খেলে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেঃ- শিমের বিচিতে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে। শিমের বিচিতে ইসোফ্লাবোনেস, ফাইটোস্টেরলসের মত ক্যান্সার প্রতিরোধে উপাদান রয়েছে যার সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ওজন কমাতে শিমের বিচিঃ- শিমের বিচি দ্রুত পাকস্থলী ভরে ফেলতে সক্ষম। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপের সৃষ্টি হলে সিমের বিচি তা কমিয়ে আনতে পারে। শিমের বিচি ওজন বাড়াতে বাধা প্রদান করে ও শরীর কে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে থাকে।

হৃদরোগ কমাতে শিমের বিচিঃ- শিমের বিচিতে থাকা ফাইটো কেমিক্যালস হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। যারা প্রতিদিন পরিমাণ মতো শিমের বিচি খেয়ে থাকেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে শিমের বিচিঃ- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শিমের বিচির উপকারিতা ব্যাপক। শিমের বিচিতে থাকা স্যপোনিনস রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে শিমের বিচিঃ- শিমের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস সুরক্ষায় শিমের বিচিঃ- শিমে শরীরের শর্করা ও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। শরীরের শর্করা ও চিনির মাত্রা ঠিক থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।

অস্থি সন্ধির জন্য শিমের বিচিঃ- প্রতিদিন পরিমাণ মতো শিমের বিচি খেলে অস্ট্রিও অ্যাথাইটিস রোগ হওয়ার শঙ্কা কমে যায়, এবং হাড়ের সংযোগস্থলে সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম।
চুল পড়া বন্ধ করতে শিমের বিচিঃ- চুল পড়া কমাতে শিমের বিচির উপকারিতা অনেক। কেনোনা এতে থাকা খনিজ পদার্থ চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুলের গোরা শক্ত করে।
ত্বকের আদ্রতা দূর করে শিমের বিচিঃ- শিম ও শিমের বিচি তে কিছু পরিমাণ পানি থাকে। এই পানি থাকার কারনে শিমের বিচি ত্বকের আদ্রাতা দূর করতে সক্ষম।
শিমের বিচির উপকারিতা

কিভাবে শিমের বিচি সংরক্ষণ করবেন

পুষ্টিকর খাবারের তালিকা করা হলে প্রায় সবার উপরের দিকে থাকবে শিমের বিচির নাম। এটি যেমন পুষ্টিকর, খেতেও তেমনই সুস্বাদু। শিমের বিচি প্রোটিনের একটি বড় উৎস। শিমের বিচিতে কোন কোলেস্টেরল নেই। এতে থাকা উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়।

শিমের বিচি দিয়ে রান্না করা যায় নানা রকমের সুস্বাদু খাবার। শিম যেহেতু শীতকালীন সবজি তাই শীতের সময় ছাড়া শিমের বিচির দেখা মেলে না। আপনি যদি কৌশল অবলম্বন করে সংরক্ষন করতে পারেন তবে শিমের বিচি সারা বছর খাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক শিমের বিচির সংরক্ষন পদ্ধতি;

সর্বপ্রথম আপনাকে শিমের বিচি নিতে হবে। আপনি যত টুকু সংরক্ষন করতে চাচ্ছেন ততোটুকু শিমের বিচি নিন। একটি পাত্রে শিমের বিচি রেখে তাতে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে শিমের বিচির খোসা ছাড়িয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে জ্বাল দিন। গরম পানিতে শিমের বিচি গুলো দিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন। খেয়াল রাখতে হবে শিমের বিচি জেনো পুরোপুরি সিদ্ধ না হয়।

পাত্র থেকে আধা সিদ্ধ শিমের বিচি নামিয়ে সেকে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। শিমের বিচি গুলো ভালোভাবে ঠান্ডা হলে একটি এয়ার টাইট বক্স বা ব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে এক বছর পর্যন্ত শিমের বিচি সংরক্ষণ করা সম্ভব।

শেষ কথা

বন্ধুরা আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারলেন যে, শিমের বিচির উপকারিতা ও কি ভাবে শিমের বিচি সংরক্ষন করবেন। শিম ও শিমের বিচি সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধর্য্য সহকারে এই আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরও এই রকম মজার মজার আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

প্রয়োজনীয় কিছু সোর্সঃ শিম

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *