গরুর মাংস খাওয়া কতোটা নিরাপদ

গরুর মাংস খাওয়া কতোটা নিরাপদ? উপকারিতা এবং অপকারিতা

বর্তমানে সবার বাড়িতে গরুর মাংস না থাকলেও, কুরবানির ঈদে প্রায় সবার বাড়িতেই কম বেশি গরুর মাংস পাওয়া যায়। ঈদের পর প্রায় সকলের বাড়িতে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত মাংস থাকে। এই সময় গরুর অথবা খাসির মাংস দিয়ে প্রায় বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়, খাবার এত সুস্বাদু হয় যে লোভ সামলানো মুশকিল হয়ে পরে।

গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯ টি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। পুষ্টি উপাদান গুলি হল, যথাক্রমে; প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন ১২, আয়রন, ফসফরাস, নায়াসিন, সেলেনিয়াম, রিবোফ্লেভিন এবং ভিটামিন বি-৬। আমরা যে মুখের স্বাদে না বুঝে বেশি বেশি গরুর মাংস খাই, আমরা কি এর উপকারিতা আর অপকারিতা সম্পর্কে জানি? তাহলে আসুন আজকে জেনে নেই গরুর মাংসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা কেমন!

গরুর মাংসের উপকারিতা

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরের ঘাটতি পুরনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যতম উপদান হচ্ছে প্রোটিন। গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রোটিন ও আমিষ যা মানব শরীরে প্রোটিন বা আমিষ এর প্রধান যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে

গরুর মাংস _ wirebd.com

প্রোটিনের ভাল উৎসঃ

উন্নত ও উচ্চ মানের আমিষ বা প্রোটিন একমাত্র গরুর মাংস হতে পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণে আমিষ পাওয়া যায়। এই আমিষ থেকে পাওয়া অ্যামাইন এসিড হাড় ও মাংসপেশি ভাল রাখতে কাজে লাগে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংস থেকে ২২.৬ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়।

জিংকের ঘাটতি দূর করেঃ

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জিংক এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে কিশোর- কিশোরীদের জিংকের অভাব জনিত রোগ দেখা যায়। কিশোর- কিশোরী ছাড়াও সকলের উচিৎ প্রয়োজনীয় পরিমানে গরুর মাংস খেয়ে জিংকের অভাব পুরুন করা। জিংক আমাদের শরীরের কোষ ভাল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা যদি ৮৫ গ্রাম মাংস খাই, তবে দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ পুরুন করা সম্ভব হবে।

খনিজ বা আয়রনের অভাব দূর করেঃ

শরীরের রক্তস্বল্পতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খনিজ বা আয়রন অভাব। এর অভাবে শরীরের সকল কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়না। এর জন্য প্রয়োজন সুষম মাত্রায় আয়রন বা খনিজ জাতিয় খাবার গ্রহন করা, গরুর মাংসে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে।শরীরে আয়রনের ঘাটতি পুরুনের জন্য গরুর মাংস বিশেষ ভুমিকা পালন করে। গরুর মাংসে থাকে জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, প্রচুর লৌহ ছাড়াও ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদি। আর এই পুষ্টিকর উপাদান গুলো-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
  • রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
  •  দেহে শক্তি যোগান দেয়
  • বিভিন্ন ভাবে পেশি, দাঁত, ও হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে।
  • দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখে।
  • মানষিক অবসাদ ও হতশা দূর করে।

শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়কঃ

পরিমাণ অনুযায়ী গরুর মাংস খেলে আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন, শারীরিক ও রক্ত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক চাহিদার ১২৫% ভিটামিন বি-১২, ৯০% প্রোটিন, ৩২% আয়রন, ২৯% নায়াসিন, ৭৪% জিংক, ৪২% সেলেনিয়াম, ৩২% ভিটামিন বি-১২, ২৩% রিবোফ্লেভিন এবং ১৬% ফসফরাস পাওয়া যায়।

গরুর মাংসের অপকারিতা

পরিমিত খাবার যেমন শরীরের জন্য উপকার, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে,যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি পরিমাণে আছে তারা যদি গরুর মাংস খায় এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ

অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে থাকেন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ে।  কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তিতে আরও অনেক রকমের অসুখ দেখা দিতে পারে। গরুর মাংসের সাথে বিভিন্ন  ধরনের সবজি মিলিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ

রান্না করা মাংস যতোই লোভনীয় হক না কেন খেতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি নয়। চিকিৎসকদের মতে সপ্তাহে ৫ বেলা গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস খেলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাছাড়া কোলন ক্যান্সার মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুকিঃ

গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। সোডিয়াম রক্তচাপ সৃষ্টি বা বাড়াতে কাজ করে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারনে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যতটুকু গরুর মাংস খেতে পারবেনঃ

একজন সুস্থ ব্যক্তি দৈনিক চর্বি ছাড়া ৮৫ গ্রাম মাংস খেতে পারবেন। চর্বি ছাড়া ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে আপনার ক্যালোরির চাহিদার ১০% পুরুন হবে। রান্না করা ৩ টুকরো মাংসে ৮৫ গ্রাম হয়, সেহেতু চেষ্টা করুন দিনে ৩ টুকরার বেশি মাংস না খেতে।

সবশেষে বলব,  যে কোন খাবারের  ভাল এবং খারাপ দুটি দিকই থাকে। অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে,কম খেলে পুষ্টির অভাব থাকে। সুতরাং আমাদের কে পরিমান মত গরুর মাংস খেতে হবে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *