আজকের দিনে পাকস্থলীর ক্যান্সার যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নামেও বেশ পরিচিত পরিচিত রোগ। অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রথম পর্যায়ে তেমন কোন নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দেয় না। তাই এর লক্ষণ, কারণ এবং সম্ভাব্য প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমি এই আর্টিকেলে পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার কারণ
আমরা অনেকে ব্লাড ক্যান্সারের সাথে কম বেশি ভালো ভাবে পরিচিত। কিন্তু পাকস্থলির ক্যান্সার নিয়ে অনেকের তেমন বেশি ধারণা থাকে না। এটি অনেক ধীরে ধীরে আপনার শরীরে বাসা বাঁধে এবং শেষ অবস্থায় লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। পাকস্থলীর ক্যান্সার অনেক কারণেই হয়ে থাকে যার সব কিছু আমাদের জানা নাও থাকতে পারে। সত্যি বলতে পাকস্থলীর ক্যান্সারের সঠিক কারণ অজানা, তবে কিছু অভ্যাস আপনার রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পাকস্থলীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
- নোনতা খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি কম খেলে আপনার পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়াটি অনেক লোকের পেটে পাওয়া যায় এবং এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- তামাক এবং অ্যালকোহল সেবনের ফলে এই ক্যান্সার হতে পারে।
- ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এ ক্যান্সারের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ
ক্যান্সারের লক্ষণ সবসময় দেখা দেয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময়, ক্যান্সার সুপ্ত থাকে, অর্থাৎ কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় না। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে ওঠে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের উপসর্গগুলি অনেকটা অন্যান্য নিয়মিত রোগের মতো হয় যার ফলে প্রায়ই ভুল রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে অথবা রোগ দেরিতে ধরা পড়ে। পাকস্থলীর ক্যান্সার যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঠিক এই বিষয়টাই হয়। প্রথম পর্যায়ে তেমন কোন নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না, শুধুমাত্র পরবর্তী বা শেষ পর্যায়ে লক্ষণ দেখা দেয়। তাই ক্যান্সার বাড়ার সাথে সাথে আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন, যেমনঃ-
- অতিরিক্ত বদহজম
- অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যাওয়া
- পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি হওয়া
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- খিদে কমে যাওয়া
- খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া
- মলের সঙ্গে রক্তপাত ও রক্তবমি
- চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া
পাকস্থলীর রোগ নির্ণয়
যদি লক্ষণ দেখে সন্দেহ হয় যে পাকস্থলীর ক্যান্সার হয়েছে কি না তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তারপর চিকিৎসক আপনার ক্যান্সারের ধরন ও স্টেজ শনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, যেমনঃ-
- এন্ডোস্কপিঃ- এই পরীক্ষায় মুখের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা সহ একটি পাতলা, নমনীয় টিউব ঢোকানো হয় পেটের ভেতরের আস্তরণে কোনো আস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখার জন্য।
- বায়োপসিঃ- এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পাকস্থলীর নির্দিষ্ট জায়গা থেকে টিস্যুর সামান্য নমুনা নেওয়া হয় এবং ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
- ইমেজিং পরীক্ষাঃ- ক্যান্সার বিস্তারের মাত্রা নির্ধারণ করতে এবং অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা শনাক্ত করতে এমআরআই, PET সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষাগুলো করা হয়।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা পুরোপুরি নির্ভর করে ক্যান্সার কোন পর্যায়ে আছে এবং আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর। চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়, রোগীর অবস্থার উপরে ভিত্তি করে একসাথে ২/৩ টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে। চলুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাকঃ-
পাকস্থলীর সার্জারি
এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। টিউমারের বৃদ্ধি ও আকারের ওপর ভিত্তি করে গ্যাস্ট্রেক্টমির কিছু অংশ বা পুরো গ্যাস্ট্রেক্টমি অপসারণ করা হয়। এরপরে অন্ত্রের একটি অংশ নিয়ে খাদ্যনালীর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।
কেমোথেরাপি
ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে টিউমারকে সংকুচিত করতে বা অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়।
রেডিওথেরাপি
উচ্চ-শক্তির রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা যায়। কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচারে আশানুরূপ ফল না পেলে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
যে কোন রোগ আমাদের শরীরে এক দিনে বাসা বাঁধে না। আমাদের জীবনযাত্রার মানের উপর অনেক রোগের কারণ হয়ে থাকে। কেউ যদি প্রতিদিন একটা নিয়মের মধ্যে তার জীবনকে পরিচালিত করে হবে অনেক রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকতে পারে। তেমনি, আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়ঃ-
- প্রতিদিন ব্যায়াম করা।
- বেশি করে ফল ও শাকসবজি খাওয়া।
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল একেবারে বাদ দেওয়া।
- খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করে খাওয়া।
- গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
শেষ কথা
আশা করি আর্টিকেলটি পরে পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। যদি এই লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখবেন যত দ্রুত আপনি পদক্ষেপ নিবেন, আপনার চিকিৎসা করা তত সহজ হবে। তাই নিজে সতর্ক হন এবং আপনার প্রিয়জনকেও সতর্ক করুন।
আরও জানতেঃ- (cancer.org)
Leave a Comment