আশ্চর্যজনক ১০টি কালোজিরার উপকারিতা যেগুলো আপনার জানা দরকার

আমরা সবাই কমবেশি কালোজিরার উপকারিতা বা এটির ঔষুধিগুণ সম্পর্কে জানি আবার অনেকে জানি না। সাধারণত কালোজিরা নামে পরিচিত হলেও কালোজিরার আরও কিছু নাম রয়েছে, যেমন কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার বা রোমান ধনে, নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুসুডা ও কালংজি ইত্যাদি। এছাড়াও কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম হল ‘নিগেল্লা স্যাটিভা’।

কালজিরাকে যে নামেই ডাকা হক না কেন ঔষধি গুণ সম্পন্ন কালোজিরার উপকারিতা অনেক বেশি। কালোজিরা ও এর তেল বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করতে সক্ষম। এতে থাকা থাইমোকুইনন, নাইজেলেডিন ও আলফা-হেডেরিন নামের বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ গুলো আমাদের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।

ঔষধ হিসেবে কালো জিরার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস  

মৌরি ফুল হতে কালো জিরার বীজ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। হাজার হাজার বছর ধরে মিশর, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কালো জিরা ভেষজ ওষুধ ও রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোমান প্লিনি দ্য এল্ডার[wiki] খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে বদ হজম, সাপের কামড়, ফুসকুড়ি, এবং টিউমারের মতো অসুখের চিকিৎসার জন্য কালো জিরা ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে কালো জিরা এখনো ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কালোজিরার উপকারিতা _ wirebd.com

আশ্চর্যজনক ১০টি কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরার উপকারিতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিসীম। কালোজিরা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শুধু মাত্র স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, কালোজিরা চুল ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারি একটি উপাদান। প্রায় সবার রান্না ঘরে কালোজিরা থাকে যা খাবারকে সুবাসিত করে। চলুন  আজ আমরা আশ্চর্য বীজ কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।

১.কালোজিরা স্মরন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ-

স্মরন শক্তি বৃদ্ধিতে কালো জিরার কালোজিরার উপকারিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এক টেবিল চামচ পুদিনা পাতার রস অথবা কমলার রস এক কাপ রং চা এর সাথে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিন বার খেলে স্মরন শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।যার ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।আর মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরন শক্তি দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়।যা আমাদের সৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

২. মাথা ব্যথা নিরাময়ে কালোজিরার তেলঃ-

সকল রোগের ওষুধ বলা হয় কালোজিরাকে। মাথা ব্যথা নিরাময়ে বা ব্যথা কমাতে, হাপ চামচ কালো জিরার তেল ভাল ভাবে মাথায় মালিশ করতে হবে। এছাড়াও এক চামচ কালো জিরার তেল সমপরিমাণ মধু নিয়ে দিনে তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সেবন করলে মাথা ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৩. বদ হজম দূর করতে সাহায্য করেঃ-

কালোজিরার রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা বদ হজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে যাদের বদ হজমে সরাসরি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারনে হয়ে থাকে, তারা দিনে দুইবার বার কালোজিরা পিশিয়ে খেলে বদ হজম থেকে রক্ষা পাবেন।

৪. কালোজিরার তেল বাতের ব্যথা দূর করেঃ-

বাতের ব্যথা দূর করতে প্রথমেই আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, এবং কালজিয়ার তেল দিয়ে আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে। এছাড়াও এক চামচ কাচা হলুদের গুড়া, এক চামচ মধু ও এক চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ রঙ চা এর সাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সেবন করলে বাতের ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।

কালোজিরা খাওয়ার ১০টি আশ্চর্যজনক উপকারিতা

৫. সর্দি কাশি সারাতে ভূমিকা রাখেঃ-

সর্দি কাশি থেকে রেহায় পেতে এক চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ চা এর সাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার খেতে হবে। এবং রোগ ভাল না হওয়া পর্যন্ত মাথায় ও ঘাড়ে কালো জিরার তেল মালিশ করতে হবে। সর্দি কাশি বসে গেলে কালো জিরা বেটে কলাপে প্রলেপ দিয়ে রাখুন। আরও দ্রুত ফল পেতে বুক ও পিঠে কালো জিরার তেল মালিশ করুন।

৬. ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে কালোজিরাঃ-

কালোজিরা ডায়াবেটিক রোগীদের রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে। মূলত কালোজিরা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে, ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকেঃ-

কালো জিরা নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারে সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষদের, পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এক চামচ কালোজিরার তেল, এক চামচ জাইতুনের তেল ও মধু দিনে তিনবার করে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ খেতে হবে। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক।

৮. ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখতেঃ-

ত্বকের গঠনের উন্নতি ও ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য কালো জিরা অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। এতে লিনলেইক ও লিনলেনিক নামের এক ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে যা পরিবেশের তাপমাত্রা থেকে  আপনার ত্বক কে রক্ষা করে এবং ত্বক কে সুন্দর করে ও ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

মধু ও কালো জিরার পেষ্ট বানিয়ে ত্বকে ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন, এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। আবার আপনার ত্বকে যদি ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে আপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে কালো জিরার পেষ্ট বানিয়ে ব্রন আক্রান্ত স্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। নিয়মিত পেষ্টটি লাগালে ব্রণ দূর হবে।

৯. শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটাতে কালোজিরাঃ-

দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের কালো জিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানষিক বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতেও কালো জিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কালো জিরার তেল খাওয়ানো উচিৎ নয়।

১০.  চুল পড়া বন্ধ করতে কালোজিরার ভূমিকাঃ-

আমাদের সবার কম বেশি চুল পড়ে। কালোজিরার উপকারিতার মধ্যে মাথ্র চুলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি লক্ষণীয়। এই চুল পড়া বন্ধ করতে  চুলের গোরায় কালোজিরার তেল মালিশ করা প্রয়োজন। এছাড়াও কালো জিরা খাইলে চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি  পৌছে।

আমরা এতক্ষণ কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। কালোজিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনক ভাবে অতুলনীয়। কালোজিরা খাবারের সঙ্গে খেলে বা তেল ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রায় শুনে থাকি সব কিছুরই কিছু কালোজিরার উপকারিতা এবং কিছু অপকারিতা থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় কালোজিরার উপকারিতা ছাড়া তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *