রাজবাড়ী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি জেলা। রাজা সূর্যকুমারের বাড়ির নামানুসারে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত জেলাটির নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ রাজবাড়ীকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
রাজবাড়ী জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
বাংলাদেশের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা রাজবাড়ী জেলা। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমা ফরিদপুর থেকে আলাদা হয়ে রাজবাড়ী জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাজবাড়ী জেলার বৃহত্তম শহর রাজবাড়ী। এ জেলার মোট আয়তন ১,১১৮.৮০ বর্গকিমি (৪৩১.৯৭ বর্গমাইল)। ২টি সংসদীয় আসন রয়েছে।
১৮৯০ সালে রাজবাড়ী রেল স্টেশনটি স্থাপিত হয়। ১৮৯০ সালে রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয়। রাজবাড়ী জেলায় সর্বমোট ৪২টি ইউনিয়ন, ৫টি উপজেলা ও ৩ টি পৌরসভা রয়েছে। ২০২২ সালের পপুলেশন সেন্সাস প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অনুসারে জেলার লিঙ্গানুপাত ৯৭.৭৯
- নারী – ৬,০৭,৪৯৯ জন
- পুরুষ – ৫,৮১,৯০৭ জন
- হিজড়া – ৯৫ জন
এই ছোট আয়তনের মধ্যে রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থানও রয়েছে যা আপনাদের এই জেলা ভ্রমণ করতে আগ্রহ যোগাবে। রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কল্যাণদিঘি, জোড় বাংলা মন্দির, জামাই পাগলের মাজার, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র সহ আরো অনেক স্থান।
রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি জেলা রাজবাড়ী। রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে; শাহ পাহলোয়ানের মাজার,মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন, জামাই পাগলের মাজার, দাদ্শী মাজার শরীফ, নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির, সমাধিনগর মঠ, নীলকুঠি, রথখোলা সানমঞ্চ, চাঁদ সওদাগরের ঢিবি, গোয়ালন্দঘাট, কল্যাণদিঘি।
কল্যাণদিঘি
কল্যাণদিঘি রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান মধ্যে একটি। কল্যাণদিঘি এ জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামের পাশে অবস্থিত। বিশাল আকারের এই দিঘি বর্তমানে সমতল বিরাট বিলে পরিণত হলেও দিঘীর আয়তন স্পষ্টই বুঝা যায়। অনেকের মতে ১৬ খাদা জমি নিয়ে দীঘিটির অবস্থান ছিল। এত বিশাল দিঘী এ অঞ্চলে দেখা যায় না। এই দীঘি খনন নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে, যেমন অনেকেই ভাবে এটা সীতারামের তৈরি, আবার অনেকেই ভাবে এটা খানজাহান আলীর তৈরি।
তবে বেশিরভাগ মানুষের মতে, এই দিঘি খনন করা হয় খানজাহান আলীর খলিফাবাদ রাজ্যে জনসাধারণের কল্যাণে। খানজাহান আলী জনহিতকর কাজ ও ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন দিঘি খনন করেন।
রাজধানী ঢাকা গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহন, রাবেয়া, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে রাজবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ৪০০ টাকা লাগে। এছাড়া ভাড়া কমাতে চাইলে বিআরটিসি বাসে ১০০ টাকায় পটুয়াখালি এসে সেখান থেকে লঞ্চে ২৫ টাকা ভাড়ায় নদী পেরিয়ে আবার ৩০ টাকা বাস ভাড়ায় রাজবাড়ি যেতে পারবেন। রাজবাড়ি থেকে নসিমন কিংবা ইজিবাইকে কল্ল্যাণ দিঘী দেখতে যেতে পারবেন।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন
রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন অনেক পুড়নো একটি নিদর্শন। এটি প্রায় দেড়শত বছর পুরোনো এই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন। গোয়ালন্দ হাই ইংলিশ নামে ১৮৭৮ সালে এ স্কুলটি লাল ভবনে তৎকালীন জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও তার ভাই অভয় শংকর মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজধানী ঢাকা গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহন, রাবেয়া, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে রাজবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ৪০০ টাকা। রাজবাড়ি জেলা সদরের যেকোনো স্থান থেকে অটোরিকশা কিংবা রিকশা নিয়ে রাজবাড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন দেখতে যেতে পারবেন।
জোড় বাংলা মন্দির
রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দির উপজেলায় নলিয়াগ্রামে দুটি এক বাংলা মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত যা জোড় বাংলা মন্দির নামে পরিচিত। জোড়া বাংলা মন্দির রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান যা দূরদূরান্ত হতে অনেক দর্শনার্থী দেখতে আসে। এই মন্দিরের মধ্যে একটি মন্দির চূড়া যুক্ত এবং আরেকটি চূড়া বিহীন। এ মন্দিরটি ১৬৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উড়িষ্যার গৌরীয় রীতিতে রাজা সীতারাম এ জোড় বাংলা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন এ মন্দিরটি ১৭০০ সালে তৈরি। (banglapedia.org)
রাজধানী ঢাকা গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহন, রাবেয়া, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে রাজবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ৪০০ টাকা লাগে। রাজবাড়ি থেকে বালিয়াকান্দি বাস স্টান্ডে নেমে ইজিবাইক, অটো টেম্পু, বাস অথবা নসিমন চড়ে জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়াগ্রাম গেলে জোড় বাংলা মন্দির দেখতে পারবেন।
জামাই পাগলের মাজার
রাজবাড়ি সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামে জামাই পাগলের মাজার অবস্থিত। ধারণা করা হয়, ১৯৬০ সালের দিকে নেংটি পরিহিত এক ব্যক্তি বর্তমানে জামাই পাগলের মাজারের পাশে শেওরা গাছের নিচে অবস্থান নেয়। তাকে কেউ কিছু প্রশ্ন করলে তিনি একই পুনরাবৃত্তি করতেন। তার মৃত্যুর পর সেই স্থানে এই মাজারটি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে মাজার কম্পাউন্ডে একটি বিরাট মসজিদ গড়ে উঠেছে।
রাজধানী ঢাকা গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহন, রাবেয়া, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে রাজবাড়ি জেলা সদর যেতে পারবেন। সেখান থেকে মুর্শিদ জামাই পাগল মাজারের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে রিকশা কিংবা ইজিবাইক নিয়ে সহজেই মাজারে যেতে পারবেন।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র
মীর মশাররফ হোসেনের সমাধি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদি গ্রামে। তিনি ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়ার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের পুরো সময় অতিবাহিত হয়েছে তার পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমতীতে মৃত্যুবরণ করলে তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়।
রাজধানী ঢাকা গাবতলী থেকে রাজবাড়ি পরিবহন, রাবেয়া, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে রাজবাড়ি জেলা সদর যেতে পারবেন। রাজবাড়ি জেলায় এসে অটোরিক্সা রিজার্ভ করে সরাসরি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র যেতে পারবেন।
রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করেছি রাজবাড়িজেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং এই জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
Leave a Comment