স্মার্টফোন ব্যবহারে যে ভুলগুলো একদম-ই করবেন না

স্মার্টফোন ব্যবহারে যে ভুলগুলো একদম-ই করবেন না

ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে, দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে। তবে স্মার্টফোন ব্যবহারে আমাদের কিছু ভুলের কারণে ডিভাইসের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নষ্ট হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমি স্মার্টফোন ব্যবহারের কিছু সাধারণ কিছু ভুল নিয়ে কথা বলব যা কমবেশি সবাই করে থাকে এবং কীভাবে সেগুলি এড়াতে হয় সে সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

স্মার্টফোন ব্যবহারে যে ভুলগুলো একদম-ই করবেন না

আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় না জেনে অথবা বাধ্য হয়ে অনেক ভুল করে ফেলি যা আমাদের স্মার্টফোনের পাশাপাশি আমাদের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেমনঃ-

নিয়মিত সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা আপডেট না করা

নিয়মিত সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা আপডেট না করা

এখন যেকোনো ব্র্যান্ডের নতুন স্মার্টফোন কেনার পর তাতে একাধিক সফটওয়্যার আপডেট আসে। কিন্তু অনেকেই আলসেমি করে বা বিভিন্ন কারণে এই আপডেটগুলো এড়িয়ে যান। স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো কিন্তু এই সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা আপডেটগুলো অকারণে দেয়না। নিরাপত্তা আপডেট আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস প্রবেশ করতে বাঁধা দেয় এবং ফোনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। সফটওয়্যার আপডেট করলে অনেক নতুন ফিচার্স পাওয়া যায়, যা আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও ভালো ও স্মুথ করে।

যেকোনো অ্যাপকে ফোনের সব পারমিশন দেওয়া

প্রতিটি অ্যাপই ভালোভাবে কাজ করতে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অনুমতি চায়, আর অনেকে ভালমতো চেক না করেই সব পারমিশান দিয়ে দেয়। অপ্রয়োজনীয় অনুমতি দিলে অনেক থার্ডপার্টি অ্যাপ আপনার সংবেদনশীল ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে৷ যেমন, মনে করেন ক্যালকুলেটর আপনার ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনের অ্যাক্সেস চাচ্ছে যা বাধ্যতামূলক বা প্রয়োজনীয় নয়। তাই কোন অ্যাপকে আনুমতি দেওয়ার সময় কেবল প্রয়োজনীয় পারমিশন দেওয়া উচিত।

দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা

পাসওয়ার্ড আপনার স্মার্টফোনের প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে অন্যদের জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেস বা চুরি করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। তাই কি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে একটু ক্রিয়েটিভ হতে হবে। পাসওয়ার্ড হিসেবে ১২৩৪ বা সহজ কোন প্যাটার্ন ব্যবহার না করে অন্যের পক্ষে অনুমান করা কঠিন হবে এমন কিছু ব্যবহার করতে পারেন।

যেকোনো চার্জার বা ক্যবল ব্যবহার করা

যেকোনো চার্জার বা ক্যবল ব্যবহার করা

হয়তো কোথাও ঘুরতে গেছেন কিন্তু নিজের চার্জার নিয়ে যাননি। বর্তমানে অধিকাংশ ফোনে ইউএসবি টাইপ-সি চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করা হয় তাই হাতের সামনে যে চার্জার পেলেন তা দিয়েই আপনার ফোন চার্জ দিলেন। এতে করে আপনার ফোনের ব্যাটারির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, আপনার সখের স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু কমে যেতে পারে। এজন্য যেকোনো চার্জার বা ক্যবল ব্যবহার করার আগে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যদি বাধ্য হয়ে চার্জ দিতেই হয় তাহলে সেম ওয়াটের চার্জার ব্যবহার করে চার্জ দিতে পারেন।

নিয়মিত ব্যাকআপ না করা

আমাদের স্মার্টফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ফাইল ইত্যাদি থাকে। যদি স্মার্টফোন হারিয়ে যায়, চুরি বা ভুলবশত ডেটা মুছে যায় তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলি একবারে হারিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ফোনের ফাইল ব্যাকআপ করার অপশন কাজে আসবে। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস দুই অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যাকআপ করার সুবিধা পাওয়া যায়। ম্যানুয়াল ভাবে বা অটো ব্যাকআপ সুবিধা ব্যবহার করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ফাইল নিয়মিত ব্যাকআপ করে রাখতে পারেন।

অবিশ্বস্ত সোর্স থেকে ডাউনলোড করা

অ্যাপলে থার্ডপার্টি অ্যাপ ইনস্টল করা যায় না, কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডে ইনস্টল করা যায়। তাই আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাহলে আপনার এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেকোন ওয়েবসাইট থেকে থার্ডপার্টি অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল দেওয়া যাবে না। এতে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার থাকতে পারে, যা ফোনের ক্ষতি করতে পারে এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। তাই অ্যাপ ডাউনলোড দেওয়ার সময় অবশ্যই গুগল প্লেস্টোর অথবা ট্রাস্টেড কোন ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড দিতে হবে। যেকোনো লিংক বা অবিশ্বস্ত সোর্স থেকে ডাউনলোড দেওয়া যাবে না।

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক না হওয়া

রেলস্টেশন, ক্যাফেতে গেলেই অনেকে ফ্রী পাবলিক ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। পাবলিক ওয়াইফাই গুলো কিন্তু নিরাপদ নয়, এতে ম্যালওয়্যার থাকতে পারে যা আপনার ফোনে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। ব্যবহারকারীর অগোচরেই এই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময় সাবধান থাকুন। খুব জরুরী না হবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করা

গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করা

আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে অনেকে ড্রাইভিং করার সময়ও স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা একেবারেই উচিত নয়। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য অনেক দেশে ট্রাফিক আইন করা হয়েছে। সবকিছুর থেকে আমাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

শেষকথা

আসলে স্মার্টফোন ব্যবহারে আমরা আরও অনেক ছোটখাট ভুল করে থাকি, যেমনঃ-

  • রাতভর ফোন চার্জ করা,
  • সব সময় Bluetooth চালু করে রাখা,
  • সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বা গাড়ির ড্যাশবোর্ডের কাছাকাছি কোনো গরম জায়গায় ফোন চার্জে দেওয়া,
  • স্মার্টফোনে সমস্যা দেখা দিলে দূরবর্তী সার্ভিস সেন্টারে যাওয়া এড়াতে স্থানীয় দোকানে গিয়ে ঠিক করা।

স্মার্টফোন যেহেতু আমাদের সবার প্রিয় এবং আমরা চাই ফোনের কোন ক্ষতি না হোক তাই এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *