পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা । পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা । পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম

রোগ প্রতিরোধে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অতুলনীয়। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নানান ধরণের উদ্ভিদ। যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের পরিবেশের নানাবিধ উপকার করে। বহু দিন আগে থেকে, লোকেরা তাদের অসুস্থতা নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ ওষুধের আশ্রয় নিত। এই ঐতিহ্যগত নিরাময় পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতা থেকে নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে, সময় এখন বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারপর ও অনেক লোক রয়েছে যারা এখনও ঐতিহ্যগত ভেষজ ওষুধের উপর নির্ভরশীল। মানবদেহে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, যার কারণে এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে।

আজকের এ পোস্টে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো-

পাথরকুচি পাতা কি

পাথরকুচি পাতা কি

আমাদের বাড়িতে এবং আশেপাশে, আমরা প্রায়ই এক ধরনের উদ্ভিদ দেখতে পাই। এই উদ্ভিদগুলো পাতা থেকে খুব সহজে চারা করা যায়। খুব বেশি যত্ন ছাড়াই, এই গাছগুলি আমাদের বাড়ির আশেপাশেই বেড়ে ওঠে। এই গাছের নাম ‘পাথরকুচি’। পাথরকুচি হল বিরুৎ পরিবারের একটি প্রজাতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Kalanchoe pinnata Pers। বাড়ির চারপাশে সৌন্দর্যায়নের অংশ হিসাবে এই গাছটি ব্যবহার করে থাকি।  পাথরকুচি খুবই পরিচিত একটি ঔষধি গাছ। প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার মধ্যে পাথরকুচি গাছটি উল্লেখযোগ্য।

পাথরকুচি দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতাগুলো মাংসাল ও মসৃণ, কিছুটা ডিমের আকৃতির মতো। প্রান্তের চারপাশে ছোট গোলাকার গর্ত রয়েছে। এই গর্ত থেকে নতুন চারা গজায়। গাছটি পুরানো হয়ে গেলেও এই গর্ত থেকে চারা গজায়।  পাতা মাটিতে রাখলে সহজেই কোনো পরিশ্রম ছাড়াই চারা পাওয়া যায়। এটি বালুকাময় মাটিতে সহজে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু আর্দ্র, জলাভূমিতে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি একটি স্পঞ্জি অভ্যন্তর সহ একটি ক্যাকটাস মত দেখায়। ফুল লম্বা, দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফুলের বাইরের দিকে সবুজ, লাল এবং সাদা দাগ রয়েছে। গাছটি শীতকালে ফুল ফোটে এবং গ্রীষ্মে ফল ধরে।

কিন্তু আপনি কি জানেন যে একটি সৌন্দর্যবর্ধক উদ্ভিদ হওয়ার পাশাপাশি এটি একটি ঔষধি গাছ হিসেবেও বেশ পরিচিত? এটি দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। এর পাতা বেশ পূর্ণ এবং বিশেষ ঔষধি গুণ রয়েছে। রোগ প্রতিরোধে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অতুলনীয়।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের উদ্ভিদ। যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের পরিবেশের নানাবিধ উপকার করে থাকে। প্রাচীনকাল হতেই ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। হাজার রোগের মহা ঔষধ বলা হয় এই পাথরকুচি কে।  সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদ ছাড়াও পাথরকুচি উদ্ভিদকে ঔষুধি উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আপনি পাথরকুচি সেবন করতে পারবেন? ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক বেশি। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাথরকুচি পাতার উপকারিতাঃ-

  • যদি আপনার শরীরের কোনো অংশ পুড়ে যায়, তাহলে পাথর ফুলের পাতা নিয়ে গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর তা পিষে নিয়মিত সেবন করুন। এভাবে আপনি খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেন।
  • আপনি যদি কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন  তবে আপনি পাথরকুচির গাছের পাতা দিনে দুবার চিবিয়ে এর রস খেতে পারেন। তাহলে খুব ধীরে ধীরে কিডনির পাথর দূর করতে সাহায্য করবে।
  •  আপনি যদি গলগন্ড রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি প্রতিদিন এই পাথরকুচির পাতার রস আপনি দুইবেলা খেতে পারেন এতে বেশ উপকার পাবেন।
  •  ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় নিয়মিত পাথরকুচির গাছের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে খুব উপকার পাওয়া যাবে।
  •  জন্ডিস প্রতিরোধে, আপনি যদি নিয়মিত পাথরকুচির গাছের পাতার রস পান করেন তবে আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই উপকার পাবেন।
  • পাথরকুচি পাতা মূত্র পাথর ও গলব্লাডারের পাথর অপসারণে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটা পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে পাথর নিঃসরণ হয়।
  • পাথরকুচি পাতা লিভারের যে কোনো সমস্যা, যেমন জন্ডিস, হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর রস অনেক উপকারী।
  • পাথরকুচি পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও প্রসাবের ইনফেকশন, মূত্রথলির জাবতীয় সমস্যা, রক্তপিত্ত, পেট ফাঁপা, শিশুদের পেট ব্যথা, মৃগী রোগ ইত্যাদি দূর করতে এ পাতা বেশ উপকারী।
  • পাথরকুচি পাতা ব্রণ, ক্ষত, মাংসপেশী থেঁতলে গেলে, বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
  • সর্দিজনিত কারণে শরীরের নানা স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়। যাকে মেহ বলা হয়। এক্ষেত্রে পাথরকুচির রস এক চামচ করে সকাল-বিকেল এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • বিষাক্ত পোকা কামড়ালে এ পাতার রস আগুনে ছেঁকে লাগালে ভীষণ উপকার পাওয়া যায়।

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

উপরে আমরা পাথরকুচি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি । পাথরকুচি পাতার অনেক গুনাগুন থাকলেও রয়েছে এর কিছু অপকারিতা। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য আমরা আমরা পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকি। কারন পাথরকুচি পাতার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। অনেকে রোগ নিরাময়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন। পাথরকুচি পাতার কিছু অপকারিতা রয়েছে যেগুলো জানা অনেক জরুরি। কারন প্রত্যেক জিনিসেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। চলুন তাহলে পাথরকুচি পাতার কিছু অপকারিতা জেনে নেওয়া যাকঃ-

  • মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • পিত্তথলিতে সমস্যা হতে পারে।
  • পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি।
  • রক্তচাপ বাড়তে পারে।
  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।

আপনি কোন জিনিস খাওয়ার আগে তার নিয়ম জেনে সঠিক পরিমান মতো খাবেন। তাহলে সেই জিনিসের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি পাবেন।

পাথরকুচি খাওয়ার নিয়ম

পাথরকুচি খাওয়ার নিয়ম

যে কোনো ধরনের ঔষধি গাছ খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে পাথরকুচি পাতার রস সেবন করতে পারলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি সঠিক উপায়ে এই রস গ্রহণ না করেন তবে আপনার শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। পাথরকুচি গাছটি শুধু সৌন্দর্য বর্ধনকারী নয়, এটি একটি ঔষধি গাছ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পাথরকুচি গাছ দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্ত আপনি কি জানেন ঠিক কোন কোন সমস্যায় আপনি পাথরকুঁচিকে খেতে পারবেন? পাথকুচি পাতা একটি ঔষধি গুণের সম্পদ। এটি সর্দি, কাশি, কফ, গলা ব্যথা, জ্বর, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, রক্তচাপ, ডায়বেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধে সহায়ক হয়। পাথকুচি পাতা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছেঃ-

  • পাথরকুচির পাতা বেটে পেস্ট করে খেতে পারেন। এতে করে শরীরের জালাপোড়া অনেকাংশে কমে আসবে।
  • পাথরকুচি পাতা বেটে এর রস খেতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পাতার রসের সাথে গোলমরিচ, মধুসহ অন্যান্য উপাদান মেশাতে পারেন। কিডনির সমস্যা সমাধানের জন্য পাথরকুচির রস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
  • সরাসরি পাথরকুচির পাতা চিবিয়েও খেতে পারেন।
  • সর্দি জনিত সমস্যায় আপনি নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস বেটে তার সাথে মধু নিয়ে নিয়মিত খেলে বেশ উপকার পাবেন।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বল করা উচিতঃ-

  • পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার পরে পানি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি পানির সাথে মেশানো ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার পর যদি আপনি কোনো অস্বস্তিকর উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  •  পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ এটি কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

পাথরকুচি পাতা প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্ব করা উচিত এবং যদি কোন সমস্যা হয় তবে একজন ভালো ডাক্তারের সাহায্য নিন।

আরও জানতেঃ-(wikipedia)

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার । কিভাবে বুঝবেন আপনার জন্ডিস হয়েছে