মেলাটোনিন হরমোন কী? ভালো ঘুমের জন্য কি মেলাটোনিন খুব বেশি প্রয়োজন?

মেলাটোনিন হরমোন কী? ভালো ঘুমের জন্য কি মেলাটোনিন খুব বেশি প্রয়োজন?

মেলাটোনিন মানব শরীরের ঘুম ও জাগরণ চক্রের চাবিকাঠি। মেলাটোনিন একটি হরমোন, যা মানব দেহে স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয়। সন্ধ্যায় অথবা রাতের অন্ধকার বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে মেলাটোনিন হরমোন শরীরের পাইনাল গ্রন্থি থেকে উৎপাদন শুরু করে। মেলাটোনিন হরমোন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সবার জানা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

মেলাটোনিন হরমোন কি?

মেলাটোনিন হরমোন হল শরীরের সুপ্ত হরমোন যা প্রাকৃতিক ভাবে মানব মস্তিষ্কের পাইনাল গ্লান্ড দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং আমাদের ঘুম-জাগরণ কে নিয়ন্ত্রন করে। এছাড়াও মেলাটোনিন হরমোন আমাদের সারকেডিয়ান রিদমকে বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সন্ধ্যার সময় স্বাভাবিক ভাবেই মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, এবং সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে।

মেলাটোনিন যদিও আমাদের সোজাসুজি ঘুম পাড়িয়ে দেয় না, তবে এটি আমাদের জানান দেয় যে এখন রাত হয়েছে ঘুমানো প্রয়োজন ও সকাল হয়েছে ঘুম থেকে উঠা প্রয়োজন। মেলাটোনিন দুই ভাবে তৈরি হয়, দেহের অভ্যন্তরে ও বাহিরে। কৃত্রিম ভাবে এক্সোজেনাস মেলাটোনিন তৈরি করা হয়ে থাকে, যা বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।

মেলাটোনিন হরমোন কি?

ভালো একটি ঘুমের রুটিনের অংশ হিসেবে মেলাটোনিনের ভূমিকা

ভালো একটি ঘুমের রুটিন তৈরি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস এবং ঘুমের গুনগত মান উন্নত করতে মেলাটোনিন এর ভূমিকা অপরিসীম।

আপনার ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি অপ্টিমাইজ করুন

ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি বলতে ঘুমের গুনগত মানকেই বোঝায়, যার মধ্য রয়েছে বিছানায় যাওয়া, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠা, বিছানায় যাওয়ার সময় চকলেট বা মদ জাতীয় পানীয় থেকে বিরত থাকা। এছাড়াও ঘুমের জন্য বেডরুমের পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখা।

সন্ধ্যায় আপনার স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন

স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, টেলিভিশন, স্ক্রিন থেকে এক প্রকার নীল রশ্মি নির্গত হয় যা আপনার সার্কিডিয়ান ছন্দে বাধা গ্রস্থ করতে পারে এবং আপনার ঘুমের চক্র পরিচালনায় ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, নীল রশ্মি স্ক্রিন করা ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত করলে খুব সহজেই আপনার ঘুম আসতে পারে।

দুপুরে সংক্ষিপ্ত ঘুমের সময়সূচি করুন

যাদের ঠিক মত ঘুম হয় না অথবা ঘুম বঞ্চিত ব্যক্তিদের জন্য একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে, প্রতিদিন দুপুরে সংক্ষিপ্ত আকারে ঘুমানো। আবার দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালে আপনার স্বাভাবিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়াকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। তাই প্রতিদিন দুপুরে ১০ থেকে ২০ মিনিট ঘুমানো প্রয়োজন। এই ১০ থেকে ২০ মিনিটের ঘুম কে আদর্শ ঘুম বলে বিবেচনা করা হয়। কারন এই ঘুম গুলি সাধারণত আপনাকে গভীর ঘুমে নিয়ে যেতে পারে না ও ঘুম চক্রের ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। দুপুরের সংক্ষিপ্ত ঘুম আপনাকে সতেজ বোধ করতে সাহায্য করে।

আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন

ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্ম-কান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যদি আপনার ঘুমের সমস্যা হয়, যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেননা ঘুমের সমস্যা থাকলে আপনি কোন কাজই ঠিক মতো করতে পারবেন না, শরীর ও মন কোনটায় সতেজ থাকবে না। আপনার অধিক ঘুমের সমস্যা বা কম ঘুমের সমস্যা আছে কিনা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করুন।

ভালো ঘুমের জন্য মেলাটোনিন কেন প্রয়োজন?

ভালো ঘুমের জন্য মেলাটোনিন কেন প্রয়োজন?

পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীর ও মন কে ন্যাচারালি হিলিং ও রিপেয়ার করে। সাধারণত ঘুমের সময় নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সারা দিনের জন্য শরীর কে উৎফুল্ল ও সতেজ রাখে। যখন আমরা গভীর ঘুমে যাই, তখন আমাদের শরীর রিস্টোরেটিভ ফাংশনে (যেমন- টিস্যু রিপেয়ার, ইমিউনিটি সিস্টেম সাপোর্ট) কাজ করে।

এছাড়াও কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, মেলাটোনিনের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি (wikipedia)প্রোপারটিজ আছে যা হিলিং বা রিকোভারি প্রসেসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেলাটোনিন হরমোন কিন্তু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (wikipedia) হিসেবে কাজ করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাহলে বুঝতেই তো পারছেন এই হরমোন মানব শরীরে ঘুমের জন্য কতটা প্রয়োজন!

প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে মেলাটোনিন বৃদ্ধি করা যায়

প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে মেলাটোনিন বৃদ্ধি করা যায়?

  • ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা।
  • স্মার্ট ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি ডিভাইসের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিমাণ কমানো।
  • শরীরে সুর্যের আলো লাগানো।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করা।
  • ধুমপান, মদ্যপান, ও চকলেট সমৃগ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • দিনের যে কোন সময় শরীর চর্চা করা

ডিম, দুধ, মাছ, বাদাম, মাশরুম, আঙ্গুরএ প্রচুর পরিমাণে মেলাটোনিন পাওয়া যায়। এছাড়া মেলাটোনিন ওষুধ আকারে বাজারে পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো খাওয়া উচিৎ নয়।

সবশেষে এটাই বলব যে, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুমের প্রয়জনীয়তা নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠতে মেলাটোনিনের অবদান  অনস্বীকার্য।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমরা কেন স্বপ্ন দেখি? স্বপ্ন কি সত্যি হতে পারে?