দ্রুত ঘুম আসার উপায়। রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য পরীক্ষিত কিছু উপায়

দ্রুত ঘুম আসার উপায়। রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য পরীক্ষিত কিছু উপায়

শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রাতের ভালো একটি ঘুম আপনার পরের দিন সকালটায় পাল্টে দিতে পারে এবং আপনার কার্যক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে পারে। আর রাতের ঘুম যদি ভালোভাবে না হয় তাহলে কেমন বিরক্ত লাগে সেটা আমরা কম বেশি সবাই জানি। সুতরাং বলা যায় যে, রাতের ভালো ঘুম বা পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সবার কাছেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকেই আছেন যাদের রাতের বেলা দ্রুত ঘুম আসে না, বা রাতের বেলায় ভালো ঘুম হয়না, তাদের জন্যই আমি আজকের এই আর্টিকেলে দ্রুত ঘুম আসার উপায় ও রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য পরীক্ষিত কিছু উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। আপনারা যারা রাতের বেলায় দ্রুত ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তারা আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

দ্রুত ঘুম আসার উপায়

দ্রুত ঘুম আসার উপায়

ভালো ঘুম মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসকল ব্যক্তি প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ঘুমান তারা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায় ১৯% কম কার্যক্ষম। আরও যেসকল ব্যক্তি ৫ ঘন্টারও কম সময় ঘুমান তাদের কর্মক্ষমতা প্রায় ৩০% কম।

আমাদের মধ্যে অনেক মানুষজনই আছেন যাদের ভালো ঘুম হয়না বা ঘুম আসতেও অনেক দেরি হয়, তারাই ঘুমের কদর জানেন। দ্রুত ঘুম আসার উপায় গুলো মেনে চললে খুব সহজেই দূর করা যায়, ভালো ঘুম না আসার এই সমস্যাটি। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের জন্য দ্রুত ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরছি। পাঠক বন্ধুরা, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-

নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন

নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন

ভালো এবং দ্রুত ঘুম আসার জন্য সর্ব প্রথম আপনাকে নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। রাতের বেলায় যত দ্রুত সম্ভব ঘুম আসা যায় ততোই আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। শুধু রাতের বেলা দ্রুত ঘুমালেই হবে না, সকাল সকাল দ্রুত ঘুম থেকেও উঠতে হবে। এ কারণেই বিজ্ঞান বলে, রাত ১১ টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময় হল ঘুমানোর আদর্শ সময়। কিন্তু পড়াশুনা বা অন্যান্য কাজে যদি ঘুমাতে দেরি হয় তবুও চেষ্টা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমানো।

মেলাটনিন হরমোন যা ব্রেনের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয়। মেলাটনিন আপনার ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম। তাই দিনে যত বেশি পারা যায় আলোতে থাকবেন এবং রাতে যত কম পারেন আলো থেকে দূরে থাকবেন। রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে রুম অন্ধকার করবেন এবং মোবাইল হাতের বাইরে রাখবেন।

ঘুমের জায়গা নির্বাচন

দ্রুত ঘুম আসার উপায় গুলোর মধ্যে ঘুমের জায়গা নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। ঘুমানোর জন্য উত্তম জায়গা হলো বিছানা। বিছানা এমন একটি জায়গা যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ সব কাজ ছেড়ে আরাম আয়েশ করার জন্য শুয়ে পড়ে। আপনারা যদি শুধু মাত্র ঘুমানোর জন্য বিছানা ব্যবহার করেন, তবে বিছানায় শোয়া মাত্রই, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কমান্ড করবে যে, এটা ঘুমানোর জায়গা এবং ঘুমের পাটার্ন ততক্ষণাৎ চালু হয়ে যাবে।

ঘুমের পরিবেশ

ঘুম আসার আগে আপনাকে ঘুমের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। আপনি যে রুমে ঘুমাবেন সে রুমের তাপমাত্রা আপনার ঘুমের পরিবেশ কে প্রভাবিত করে। ঘুমানোর জন্য রুমের আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গভীর ঘুমের জন্য আপনার রুমের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করে এরকম রুম নির্বাচন করতে হবে এবং গরমে অবশ্যই ফ্যান ব্যবহার করুন।

ঘুমের ব্যায়াম করুন

ঘুমের ব্যায়াম করুন

ঘুমের জন্য ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। প্রথমে আপনাকে আরামদায়ক একটি স্থানে বসতে হবে। তারপর চোখ বন্ধ করুন, কাঁধ নামিয়ে দিন। চোয়াল আরামে রাখুন। তবে মুখটা হালকাভাবে বন্ধ রাখুন। নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিন। তবে বুক ভরে নয়, পেট ভরে! এবার মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার করুন। এরপর এক মুহূর্ত স্থির হয়ে বসে থাকুন। নিজেকে বলুন আমি ঘুমের জন্য তৈরি। তারপর ধীরে ধীরে উঠে পড়ুন এবং বিছানায় চলে যান।

দিনের বেলায় ঘুম বন্ধ করতে হবে

দ্রুত ঘুম আসার উপায় এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি উপায় হচ্ছে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ও অনিয়মিত ঘুম বন্ধ করতে হবে। দিনের বেলায় অল্প সময়ের ঘুম আপনাকে এনার্জি ফিরিয়ে আনে কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম আবার মারাত্মক ক্ষতি করে। দিনের বেলার ঘুম শরীরের অভ্যন্তরীণ বায়োলজিক্যাল ক্লক কে বিভ্রান্ত করে দেয় এবং এর ফলে রাতে ঠিকমতো ঘুম আসতে চায় না। গবেষণা করে দেখা গেছে যে, দিনের বেলায় ৩০ মিনিটের মতো ঘুম মস্তিস্কে কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এর বেশি ঘুম রাতে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।

ঘুম আসার আগে গোসল করা

ঘুম আসার আগে গোসল করা ভালো ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের জন্য এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরী। ঘুমের মোটামুটি ৯০ মিনিট আগে গোসল করলে ঘুমের গভীরতা খুবই ভালো হয়। যাদের রাতে গোসল করতে সমস্যা থাকে, তারা ঘুমানোর আগে ভালো করে গরম জলে পা ধুয়ে নিলেও ভালো ঘুম হয়।

ঘুমানোর আগে রিলাক্স করুন

ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে রিলাক্স করলে আপনার দেহ ও মন দুটোই চাপমুক্ত থাকবে। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনাকে রিলাক্স করতে হবে, যাতে আপনার শরীর ও মন বুঝতে পারে আপনার ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে। রিলাক্স আপনি যেকোনভাবে করতে পারবেন। যেমন; হালকা গরম জলে গোসল করা, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, ডায়েরি লেখা, বই পড়া, বা আলো কমিয়ে দিয়ে গান শোনা ইত্যাদি।

ব্লু রশ্মির ব্যবহার কমানো

ব্লু রশ্মির ব্যবহার কমানো

কম্পিউটার ও মোবাইল থেকে আসা ব্লু রশ্মি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গোধূলি বা ব্লু লাইট ফিল্টার এপস ব্যবহার করুন। এই এপস মোবাইল স্কীনে লাল আভা সৃষ্টি করে যা ক্ষতিকর রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে নটিফেকশন বারে গিয়ে ডার্ক মুড অপশন চালু করলে হয়ে যাবে।

ব্লু রশ্মির ক্ষতিকর দিক জানতেঃ ব্লু রশ্মি

ঘুম আনার কৌশল

দ্রুত ঘুম আসার উপায় এর মধ্যে ঘুমার আনার কৌশল অত্যাধিক পরিচিত। দ্রুত ঘুম আনার কৌশল এর মধ্যে একটি ব্যায়াম করতে হয়। ব্যায়ামটির নাম হচ্ছে ৪-৭-৮। আপনাদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তারা প্রতিদিন এই ব্যায়ামটি করলে খুব তারাতারি অথবা ১ মিনিট এর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। দ্রুত ঘুম আনার কৌশল গুলো হচ্ছে;

  • প্রথমে ৪ সেকেন্ড নাক দিয়ে খুব ভালো করে শ্বাস নিন।
  • এরপর ৭ সেকেন্ড দম ধরে রাখুন। শ্বাস ছাড়বেন না।
  • তারপর ৮ সেকেন্ড ধরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
  • এভাবে কয়েক বার করুন এবং ঘুমাতে যান।

ভালো ও দ্রুত ঘুম আসার উপায়

ভালো ও দ্রুত ঘুম আসার উপায়

আপনারা যারা ভালো ও দ্রুত ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান, তারা নিচে থেকে জেনে নিতে পারেন। আসুন তাহলে জেনে নেই ভালো ও দ্রুত ঘুম আসার উপায় গুলো কি কি-

  • তন্দ্রাভাব না আসা পর্যন্ত বিছানায় না যাওয়া।
  • দিনের বেলা না ঘুমানো।
  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে জাগার চেষ্টা করা।
  • শোয়ার ঘরটি শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই বরাদ্দ রাখা। শোয়ার ঘরে খাবার গ্রহণ, পড়ালেখা বা টিভি দেখার মত কাজগুলো না করা।
  • শোয়ার ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেন তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম না হয়। এই ঘরটিকে যেকোন ধরনের তীব্র শব্দ বা শব্দ দূষণ থেকে দূরে রাখাও বাঞ্চনীয়।
  • বিছানাটি আরামদায়ক (খুব নরম বা খুব শক্ত নয়) হওয়া এবং যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
  • ঘুমাতে যাবার পূর্বে চা, কফি, এলকোহল বা সিগারেট থেকে দূরে থাকা। সম্ভব হলে এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং শোয়ার পূর্বে একগ্লাস গরম দুধ পান করা।
  • ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা ঘুমের জন্য উপকারী।
  • ঘুমানোর আগে অন্তত দশ মিনিট বই পড়া।

শেষ কথা

আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে সত্যিই ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে মতামত জানাতে এবং আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। দ্রুত ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে আপনার আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট এ প্রশ্ন করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ্‌ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুনঃ- আমরা কেন স্বপ্ন দেখি? স্বপ্ন কি সত্যি হতে পারে?

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *