শীতকালীন সবজির _ wirebd.com

১০টি শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

বছর ঘুরতেই ঋতুরাজ শীতকাল আমাদের মাঝে চলে এসেছে নতুন আমেজে। আর এই শীতকালে বাজারে নানা রকমের শাক-সবজি পাওয়া যায়। এসব শীতকালীন সবজি গুলোতে পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কোনো জুড়ি নেই।

আজকের এই আর্টিকেলে কথা বলবো ১০টি শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-

শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

আমাদের শরীরে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট কিংবা ফ্যাট এর পাশাপাশি ভিটামিন এবং মিনারেলস এর ভূমিকা অন্যতম। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সবজিগুলোতে। নিচে ১০টি শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ফুলকপি

শীতকালীন সবজির মধ্যে জনপ্রিয় একটি সবজি ফুলকপি। এটি মূলত শীতকালীন সবজি, তবে সারাবছরই কম-বেশি ফুলকপি পাওয়া যায়। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি। এছড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম, সালফার, অ্যান্টঅক্সিডেন্ট। তবে এই সবজিতে উচ্চমাত্রায় আয়রন রয়েছে। ফুলকপির র‍য়েছে নানা উপকারিতা। নিচে উপকারিতাগুলো দেওয়া হলো-

cauliflower

  • শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর ও টনসিল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • ফুলকপি সালফারযুক্ত হওয়ায় সালফোরারেন নামক উপাদানটি যেকোন টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
  •  দেহ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তপ্রবাহ নিয়মিত রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি  এবং সচল রাখতে অনেক উপকারি।
  • ফুলকপির ফাইবার খাবার হজম করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া

আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত সবজি হলো মিষ্টি কুমড়া। মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে নানান রকমের পুষ্টি। ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি ও ই। এছাড়াও এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্টাসিয়াম ইত্যাদি। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই বলে মিষ্টি কুমড়া একটি নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। নিচে এর উপকারিতা সম্পর্কে বলা হলো-

sweet pumpkin

  • মিষ্টি কুমড়া ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করতে সাহায্য করে সাথে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
  • চোখের ছানি পড়া রোধ সহ চোখের রেটিনা কোর্স রক্ষা করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে উপকারি।
  • মিষ্টি কুমড়া ও জন কমাতে সাহায্য করে।
  • হজমে সহায়তা করে।
  • রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বাঁধাকপি

শীতকালীন সবজি বলতে যেগুলো সবজির কথা আমাদের মাথায় আসে, তার মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। প্রায় সব অঞ্চলেই বাঁধাকপির চাষ হয়ে থাকে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, কে, পটসিয়াম, ক্যালসিয়াম, থায়ামিন, ফাইবার ইত্যাদি। পুষ্টির পাশাপাশি এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। নিচে উপকারিতাগুলো বলা হলো-

Cabbage

 

  • বাঁধাকপি হাড় ভালো এবং মজবুত করতে সহায়তা করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক সেল তৈরি করে।
  • বাঁধাকপিতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় এটি চুলের জন্য খুবই উপকারি।
  • চোখের জন্য খুব উপকারি।
  • আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

টমেটো

টমেটো বাঙালির জনপ্রিয় শীতকালীন সবজির মধ্যে একটি। তবে আমাদের দেশে সারাবছরই টমেটো পাওয়া যায়। টমেটো একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতের সবজি।  কাঁচা ও পাকা এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়ায়া যায়। সালাদে বা রান্না সুস্বাদু করার ক্ষেত্রে এ সবজি ব্যবহার করা যায়।

tomato

 

টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, পটাশিয়াম ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে পানির পরিমাণ উচ্চমাত্রায়। টমেটোর উপকারিতা অনেক। নিচে তা দেওয়া হলো-

  • যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
  • দেহের ক্ষয় রোধ করে।
  • শরীরের মাংসপেশিকে মহবুত করতে সহায়তা করে।
  • দাঁতের গোড়াকে আরও শক্তিশালী করে।
  • চোখের পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে।
  • ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করতে সহায়তা করে।

মুলা

শীতের আরেকটি সবজির নাম হলো মুলা। মুলা রান্না অবস্থায় যেমন খাওয়া যায় তেমনি কাঁচা অবস্থায়ও খাওয়া যায়। মুলার মুলের পাশাপাশি পাতাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি। মুলাতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। আবার মুলার পাতায় ভিটামিন এ এর পরিমাণ ছয় গুণ বেশি। নিচে মুলার উপকারিতাগুলো বলা হলো-

Radish

  • মুলা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস রোধ করে।

মটরশুটি

শীতকালে খুবই পরিচিত একটি সবজি মটরশুটি। মটরশুটি খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি ৬, ভিটামিন সি, ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন ইত্যাদি। নিচে মটরশুটির উপকারিতা দেওয়া হলো-

beans

  • মটরশুটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।
  • শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পাকস্থলি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরে ক্যান্সারের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
  • হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে।

শিম

শিম আমিষের খুব ভালো একটি উৎস। শিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি, প্রোটিন, জিংক ও মিনারেল। এসব পুষ্টিগুণ  আমাদের শরীরের জন্য বেশ জরুরী এবং অত্যাবশ্যকীয়। শিমের উপকারিতাগুলো নিচে দেওয়া হলো-

শিম _ wirebd.com

  • রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • গর্ভবতী নারী ও শিশুর অপুষ্টি দূর করতে খুব উপকারি।
  •  চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
  • শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে শিম উপকারী।
  • রক্ত আমাশয় দূর করতে সহায়তা করে।
  • হৃদরোগ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

গাজর

গাজর অন্যান্য সবজির তুলনায় অত্যন্ত পুষ্টিকর।  সুস্বাদু, আঁশযুক্ত শীতকালীন সবজির মধ্যে একটি। গাজর এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, শর্করা, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। গাজরের উপকারিতা হলো-

carrot

  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
  • অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের মরা কোষ দূর করে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • হাড়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ধনিয়াপাতা

ধনিয়াপাতা এখন সারাবছর পাওয়া গেলেও এটি একটি শীতকালীন সবজি। ধনিয়াপাতা রান্না করে এবং সরাসরি সালাদ হিসেবে উভয়ভাবে খাওয়া যায়। ধনিয়াপাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে ও ফলিক এসিড। এছাড়াও রয়েছে পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ নানা প্রকার পুষ্টিকর উপাদান। নিচে এর উপকারিতা দেওয়া হলো-

coriander leaves

  • চুলের ক্ষয়রোধ করে।
  • রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও বেশ কার্যকরী।
  • চোখের পুষ্টি যোগায়। বিশেষ করে রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।’
  • বাতের ব্যাথাসহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।

পালংশাক

বেশিরভাগ মানুষেরই প্রিয় পালংশাক। পালংশাক একটি উচ্চমানের পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। এতে রয়েছে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও আয়রন। এর উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো-

spinach

  • হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
  • বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
  • হাড়কে মজবুত করে তুলতে উপকারী।
  • মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
  • রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করতে বেশ কার্যকরী।

সব ধরণের শাক-সবজিতেই নানা প্রকার পুষ্টিগুণ থাকে সাথে এর উপকারিতা তো থাকেই। যা আমাদের ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে, ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। দেহের পানির ঘাটতি পূরণেও এসব সবজির ভূমিকা অপরিসীম। এসব সবজি খাদ্যনালীর ক্যান্সারসহ দেহের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের উচিত শীতকালীন সকল প্রকার শাক-সবজি খাওয়া।

Author

More Reading

Post navigation

2 Comments

  • তাহমিদ ভাই এর কোনো লেখা আসছে না কেনো? এটা উনার সাইট না।

    • ওয়্যারবিডি ডট কম এখন লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন। টেক আর্টিকেল গুলো পাবেন, wirebd.tech সাইটে এবং পূর্বের সকল পোস্ট গুলো পাবেন archive.wirebd.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *