আপনে কি জানেন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত? গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের অন্যতম সেরা সময়। এই সময় গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তান উভয়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যা রাখবেন এবং গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় ফল ও সবজি।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেন জরুরী?
গর্ভবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় মা যেসব খাবার খাবে, তার প্রভাব পড়বে সন্তানের উপর। কোনো নারীর যদি ওজন কম থাকে, তাহলে জন্মের পর তার সন্তানের ওজনও কম হবে। মা যদি জটিল কোনো শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে, তাহলে তা শিশুর মধ্যে হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
- অনাগত শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্য খাবার তালিকা করা প্রয়োজন।
- গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কোমল প্রাণটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খাবার তালিকা করা প্রয়োজন।
সহজ কথায়, মায়ের খাওয়া পুষ্টিকর সুষম খাদ্যাভাসই যেন তার সন্তানের পূর্ণাঙ্গভাবে বেড়ে ওঠার মূল নিয়ামক হয়।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় কেমন খাবার থাকবে তা নির্ভর করে মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর। মায়ের ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়, তাহলে তার খাবার তালিকায় অতিরিক্ত ৫০০-৭০০ ক্যালরি রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ১ থেকে ৯ মাসের মধ্যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যা ভ্রুণের বিকাশ ও সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। নিচে তার তালিকা দেওয়া হলো-
ডিম ও মুরগি
ডিমে ভিটামিন এ, বি২, বি৬, বি১২, ডি, ই ,কে, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও জিংক রয়েছে। প্রোটিনের চমৎকার উৎস হাঁস মুরগি। এতে ভিটামিন বি, জিংক ও আয়রন ও থাকে। এ জন্য ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অবশ্যই ডিম ও মুরগি রাখা উচিত।
শাকসবজি
সুস্থ্য থাকার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের জন্য শাকসবজি অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাকসবজিতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ফলিক এসিডসহ নানা উপাদান। যা দেহের বিভিন্ন ঘাটতি পূরনে সক্ষম।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, টমেটো, পালংশাক, ভুট্টা, ব্রোকলি, বেগুন, বাঁধাকপি রাখা যেতে পারে।
আয়োডিনযুক্ত লবণ
আয়োডিন গর্ভের সন্তানের মতিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন।
মাছ ও মাংস
মাছে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে এবং এটি কম চর্বিযুক্ত। এটি ওমেগা- ভিটামিন বি২, ডি, ই এবং ৩টি অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের একটি সহজলভ্য ও উৎকৃষ্ট উৎস।
দুগ্ধজাত পণ্য
দুগ্ধজাত পণ্য, বিশেষ করে ফোর্টিফাই দ্রবাদি ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফলিক এসিড ও স্বাস্থ্যকর চর্বির একটই দুর্দান্ত উৎস। এই উপাদানগুলো দাঁত ও হাড় গঠনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দুধ ক্যালসিয়ামের সকল অভাব পূরন করতে সাহায্য করে।
দুধ ছাড়াও দুধ দিয়ে তৈরি অন্যান্য খাদ্য যেমন- ঘি, পনির, দই ইত্যাদি খাওয়া যায়। যা শিশুর ব্রেইন ও শরীরের বিকাশে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।
ফলমূল
শাকসবজির মতো ফলমূলেও রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ। যা দেহের ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। ফলমূলে রয়েছে ভিটামিন থেকে শুরু করে ক্যালরি, ফাইবারসহ একাধিক খনিজ পদার্থ। লেবু, আপেল, আমলকী, মালটা, অ্যাভোকাডো, কমলা, জাম ইত্যাদি এসব ফল খেতে পারেন। জুস বানিয়ে বা অন্যান্য মিশ্র খাবার বানিয়েও খেতে পারেন অথবা সরাসরি ফল ও খেতে পারেন।
তবে ফলের মধ্যে কঁআচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাঁচা পেঁপে গর্ভপাতে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাদাম
কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন-বি্সহ প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান। তাই এই খাবারগুলোও রাখুন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায়।
ডালজাতীয় খাবার
ডালজাতীয় খাবারগুলোতে রয়েছে আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ফলিক এসিড। এই ফলিক এসিড একজন গর্ভবতী মায়েরর জন্য আবশ্যক খাবার। ফলিক এসিড সন্তান জন্মদানের সময় বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে কার্যকর। এই খাবারগুলোর মধ্যে মসুরের ডাল বেশি স্বাস্থ্যকর।
ভাত, রুটি
আমাদের দেহে শক্তির যোগান দেয় শর্করা। ভাত, রুটিতে শর্করার মাত্রা বেশি। কিন্তু এই খাবারগুলোতে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা বেশি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ঠিক নয়। এ জন্য সাদা ভাত না খেয়ে চেষ্টা করুন লাল চালের ভাত খাওয়ার।
পানি
পানির উপকারিতা সম্পর্কে তো আমাদের সবাই জানি। পানি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করে, দেহের অন্যান্য অঙ্গ গুলোর স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বজায় রাখে, সারাদেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, নরমাল ডেলিভারিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় ফল
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ফল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় অনেকে কাঁচা পেঁপে, আনারস, কামরাঙা, অতিরিক্ত আঙ্গুর খেতে নিষেধ করেন। তবে এসব ফল গর্ভাবস্থার জন্য ক্ষতিকর- এমন কোনো তথ্য চিকিৎসকেরা এখন পর্যন্ত পাননি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ফলগুলি বেশি উপকারী-
কলা
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা শরীরের ইলোকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ঠিক রাখে।এর ফলে মাংসপেশি ও স্নায়ুর কাজকর্ম ঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। তাই গর্ভকালে প্রতিদিন অন্তত একটা করে কলা খাবেন।
পেয়েরা
পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা চারটি কমলা বা আপেলের পুষ্টিগুণের প্রায় সমান। পেয়ারা গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কিউই
কিউই তে আছে ভিটামিন সি ও ই, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যারোটেনইয়েডস এবং ফাইবার। এ ফল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রেখে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া হার্টের জন্য়ও খুব উপকারী কিউই।
আপেল
আপেলে প্রচুর আয়রন থাকে, যা গর্ভাবস্থার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে অ্যানিমিয়া রোধ করে। গর্ভকালে প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া উচিত। এর ফলে বাচ্চার অ্যাজমা ও অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।
একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা উপরে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী হওয়া উচিত। অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে উপরে উল্লেখিত খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে অতিদ্রুত হাসপাতালে ন ইয়ে যেতে হবে।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন – গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
আজকের এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করেছি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যেসব খাবার রাখা উচিত সে বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলার। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
উক্ত আর্টিকেলটি ইউনিসেফ বাংলাদেশ হেলথ অর্গানাইজেশন হতে সংগৃহীত।
Leave a Comment