মাশরুম _ wirebd.com

মাশরুম কি? মাশরুমের উপকারিতা ও চাষ করার উপায়!

মাশরুম নামটির সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত। কিন্তু আমরা কি সকলে এর গুনাগুন সম্পর্কে জানি? মাশরুম হল বিশ্বে অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি খেতে কেবল সুস্বাদু নয়, বরং এর গুনাগুন রয়েছে  অনেক বেশি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।

সৃষ্টিকর্তা উদ্ভিদ আকারে আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান দিয়েছে। এর মধ্যে মাশরুম একটি। বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ করা হয়ে থাকে। মাশরুমে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে,যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি। এছাড়াও মাশরুম নানান রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মাশরুম কি?

পরজীবি সমাঙ্গদেহী ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ কে মাশরুম বলে। মাশরুমের বাংলা অর্থ হচ্ছে ব্যাঙ এর ছাতা। এদের ক্লোরোফিল বা সবুজ কণা থাকে না, যার কারনে এরা নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না। কাজেই এরা অন্যের উপর নির্ভশীল। এরা সাধারণত পচা গবর, পরিত্যাক্ত কাঠের গুড়ি, পচা বাঁশের উপর জন্মায়।

মাশরুম _ wirebd.com

মাশরুমের প্রকারভেদঃ

মূলত মাশরুম কে সাদা সবজি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। পৃবিথীতে প্রায় ১৬০০ প্রজাতির মাশরুম রয়েছে, এর মধ্যে ১০০ টি খাবার সবজি হিসেবে স্বীকৃত এবং ৩৩ প্রজাতির মাশরুম কে সারা বিশ্বে খাওয়ার জন্য চাষ করা হয়।

হরেক রকমের মাশরুম আছে, যার মধ্যে কিছু মাশরুম খাবার যেমন বোতাম, ঝিনুক, পোরসিনি এবং চ্যান্টেরেলের মতো সুপরিচিত প্রজাতি। আবার অনেক গুলি আছে যা খাওয়ার যোগ্য নয়। এগুল খাওয়া হলে পেট ব্যথা বা বমি বমি ভাব এবং কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিসাধন হতে পারে।

মাশরুম কোন দেশের

বিশ্বের প্রায় সব দেশে বাণিজ্যিক ভাবে কম-বেশি মাশরুম উৎপাদন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মাশরুম উৎপাদিত হয় চীনে। বিশ্বের মোট যত মাশরুম উৎপাদিত হয়, প্রায় তার অর্ধেক মাশরুম উৎপাদন করা হয় চীনে।

মাশরুমের পুষ্টিগুন

প্রোটিনে ভরপুর মাশরুমে কোন প্রকার ক্ষতিকর চর্বি না থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে মেদ ভূরি, উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম প্রোটিন, ৫৭-৬০ গ্রাম ভিটামিন, ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, ৪-৬ গ্রাম স্বাস্থ্য উপকারি চর্বি, এবং এতে আঁশের পরিমান ও রয়েছে অনেক। এর পরিমাণ প্রায় ১০% থেকে ২৮%।

মাশরুমের পুষ্টিগুন _ wirebd.com

অন্যান্য খাবারের তুলনায় মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে। ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ৫৭%-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া মাশরুম খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। মানবদেহকে সুরক্ষিত রাখতে মাশরুমে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা

মাশরুম কে বলা হয় পুষ্টির ভাণ্ডার। এর গুনাগুন এতো বেশি যে বলে শেষ করা যায় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মাশরুমের জুরি নেই। মাশরুমে আছে ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, ফ্যাট সহ আরো বিভিন্ন রকম উপাদান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মাশরুমঃ

মাশরুম মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারন প্রাকৃতিক ভাবেই মাশরুমে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজ হল মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করা।

হাড়ের ক্ষয় রোধ করেঃ

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় মজবুত করতে এবং হাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত মাশরুম খেলে অস্টিওপোরোসিস, জয়েন্টে ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এবং অন্যান্য হাড় ক্ষয় জনিত রোগ সহ বিভিন্ন হাড় সম্পর্কিত রোগের অবস্থার উন্নতি করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করেঃ

মাশরুমে উচ্চমাত্রার আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। যার কারনে মাশরুম রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ও হৃদপিণ্ডের কাজ সচল রাখতে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে মাশরুমঃ

ওজন কমাতে ও পেশি বহুল শরীর তৈরি করতে মাশরুমের বিকল্প নেই। মাশরুমের আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। অধিক ফ্যাট সমৃদ্ধ গরুর অথবা খাসির মাংসের পরিবর্তে নিয়মিত মাশরুম গ্রহণ করলে অনেকাংশে ওজন কমানো সহজ হয়।

বহুমুত্র বা ডায়াবেটিক প্রতিরধেঃ

বহুমুত্র বা ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধে মাশরুম অনেক উপকারি। যেহেতু মাশরুম রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আঁশ জাতীয় খাবার হওয়াই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার হতে পারে। এটি নিয়মিত খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ও কমে যায়।

এইডস প্রতিরোধক হিসেবে মাশরুমঃ

মাশরুম এর মধ্যে থাকা ট্রাইটারপিন বর্তমান বিশ্বে এইডস রোগের প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করতেঃ

চুল দ্রুত পরে যাওয়া ও পেকে যাওয়ার মূল কারন হছে সালফারের অভাব। আর মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী উপদান অ্যামিনো এসিড। যার ফলে নিয়মিত মাশরুম খেলে চুল পড়া ও পাকা রোধ করা সম্ভব হয়।

ত্বক সুস্থ রাখে মাশরুমঃ

ত্বককে কোমল ও নরম রাখতে প্রয়োজন নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন। এই দুটি উপাদান মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আমাদের সকলের উচিৎ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণে মাশরুম রাখা। মাশরুমে ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে বিধায় এটি ত্বককে কোমল ও নরম রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডিঃ

সাধারণত শাক-সবজি তে ভিটামিন ডি খুব সহজে পাওয়া যায় না। কিন্তু মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম শোষণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

মাশরুম যে কতটা উপকারি তা আপনি উপরের লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছেন। মাশরুমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপকারি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *