ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় – ফ্রিজ কিনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা প্রয়োজন

আপনে কি নতুন ফ্রিজ কিনতে চাচ্ছেন? তবে জেনে রাখুন ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় গুলো কি কি। যদি ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানা থাকে, তবে ফ্রিজ কিনে কখনো ঠকবেন না। বর্তমান জীবনে ফ্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটি আমাদের খাবার সংরক্ষণ করে ও ভালো রাখতে সহায়তা করে।

এমন অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন বাজার করতে আগ্রহী নন। তারা একদিনে অনেক বাজার করে এনে ফ্রিজে রেখে দেয়। এতে করে খাবার যেমন অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে তেমনি প্রতিদিন বাজার করার প্রয়োজনও হয় না।

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়

আমরা অনেকে ফ্রিজ কিনতে চায় কিন্তু ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা না থাকার কারণে ফ্রিন কিনতে গিয়ে অনেক ঝামেলার মুখে পড়তে হয়। ঘরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো এখন ফ্রিজও প্রায় প্রত্যেকেরই প্রয়োজন হয়। এখন সমস্যা হচ্ছে আমরা যখন ফ্রিজ কিনতে যাই তখন ফ্রিজের ভালো দিক ও মন্দ দিক গুলো সম্পর্কে না জেনেই অনেকে ফ্রিজ কিনে থাকি। পরবর্তীতে যখন সেসব ফ্রিজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে যা অনেকের কাছেই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আপনাকে আগে ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে এবং সঠিক মানের একটি ফ্রিজ কিনতে হবে।

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়

সুতরাং আমাদের ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জেনে রাখাটা অনেক জরুরী। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ভালো ফ্রিজ চেনার কিছু উপায় সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত?

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে প্রথমে জানতে হবে যে, ফ্রিজের তাপমাত্রা কত? যদি দেখেন ফ্রিজের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হয়। তাহলে ঐ ফ্রিজে আপনাকে শুধুমাত্র এমন খাবারই রাখতে হবে যে খাবারের জন্য ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যথেষ্ট।

তবে কিছু ফ্রিজের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, এমন অনেক ফ্রিজ আছে যার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যেকোনো ধরনের খাবার আপনার ফ্রিজে রাখতে পারেন। তাই একটি ভালো মানের ফ্রিজ চেনার জন্য ফ্রিজের তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ফ্রিজের আকার

আপনে যদি ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানতে চান তবে আমি প্রথমে বলব আগে ফ্রিজের আকার সম্পর্কে ভালো ধারণা নিন। ফ্রিজের দাম যত কম ফ্রিজের আকারও তত কম। কিন্তু ফ্রিজের দাম যতই কম হোক না কেন, বেশি বড় ফ্রিজ নেওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি ফ্রিজ বড় কিনবেন নাকি ছোট কিনবেন এর সম্পূর্ণটাই নির্ভর করবে আপনার পরিবারের চাহিদার ওপর।

পরিবার যদি ছোট হয় তাহলে খুব বড় আকারের ফ্রিজের যেমন প্রয়োজন হয় না ঠিক তেমনি পরিবার যদি বড় হয় তাহলে খুব ছোট ফ্রিজেও কাজ হয় না। আবার বেশি বড় আকারের ফ্রিজ কিনলে তা মোটেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় না। সুতরাং আপনার কোন ফ্রিজটা দরকার সেই ফ্রিজটাই কিনুন। অযথা টাকা খরচ করার কোনো মানেই হয় না।

কিভাবে পরিষ্কার করা যায়?

এমন অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলো মাসে একবার হলেও পরিষ্কার করতে হয়। আবার কিছু ফ্রিজ এমন আছে যেগুলো তিন মাস অন্তর পরিষ্কার করতে হয়। তাই ফ্রিজ কেনার সময় এই বিষয়গুলোও জেনে নেওয়া জরুরী। তবে চেষ্টা করবেন যে ফ্রিজ পরিষ্কারে ঝামেলা কম, সেই ফ্রিজ কেনার। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আরেকটা বিষয় এখানে জেনে রাখা দরকার, কি দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে হয়। কারণ, এমন অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলো তোয়ালে বা টিস্যু বা নরমাল কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। আপনি ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় সাধারণ সাবান পানি বা ডিটারজেন্ট পানিও ব্যবহার করতে পারেন।

আবার এমন অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলো স্ব কিছু দিয়েই পরিষ্কার করা যায় না। তখন ওই ফ্রিজগুলো পরিষ্কার করা আমাদের জন্য একটু কষ্ট সাধ্য। তাই চেষ্টা করবেন যেসব ফ্রিজ সহজভাবে ইউজ করা যায় সেগুলোই নিতে।

ফ্রিজের যেকোনো পার্টস সহজলভ্য কিনা?

একটি ফ্রিজের অনেকগুলো যন্ত্রাংশ থাকে। অনেকগুলো যন্ত্রাংশের মাধ্যমেই তৈরি হয় একটি ফ্রিজ। একেকটি যন্ত্রাংশের কাজ একেক রকম হয়ে থাকে। আসল কথা হলো এই যন্ত্রাংশ গুলো সহজলভ্য কিনা। কারণ, অনেক সময় এসব যন্ত্রাংশ অনেক দামী হয়ে থাকে।

যন্ত্রাংশ গুলোর যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকেই বুঝে নিতে হবে আপনি যে ফ্রিজ কিনছেন তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজলভ্য কিনা। যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা একটি ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় ও গুনাগুনের মধ্যে পড়ে।

বিদ্যুৎ- সাশ্রয়ী কিনা

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানতে হলে আপনাকে ফ্রিজের বিদ্যুৎ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। ফ্রিজ কিনার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন সেটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কিনা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। এই ফ্রিজগুলো মাসে আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আনবে। ফ্রিজের মানের উপর নির্ভর করে যে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কিনা।

যখন দেখবেন কোনো ফ্রিজের গায়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্টার চিহ্ন দেওয়া আছে তখন বুঝবেন ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। তখন আপনি চেষ্টা করবেন ওই ফ্রিজটি কিনতে । এতে করে আপনার বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।

ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজি

আপনে যে ফ্রিজটি ব্যবহার করবেন সেটি শুধু খাবার সংরক্ষণের জন্যই ব্যবহার করা হবে তা না। আপনাকে দেখতে হবে খাবার সংরক্ষণের পাশাপাশি আপনার খাবার কতটুকু জীবাণুমুক্ত থাকবে। ফ্রিজে খাবার জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য অনেক কোম্পানি ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করে থাকে। যা আপনার ফ্রিজের খাবারকে রাখবে জীবাণুমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত।

আপনার ক্রয়কৃত ফ্রিজটিতে ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করেছে নাকি সেটি ফ্রিজের গায়ে লাগানো স্টিকার দেখে জানতে পারবেন বা ফ্রিজ শোরুম কর্তৃপক্ষের থেকে জেনে নিতে পারেন।

কপার কনডেন্সার যুক্ত ও কম্প্রেসর ভালো কিনা

যখন ফ্রিজ কিনতে যাবেন তখন অবশ্যই জেনে নিতে হবে এর কনডেন্সার কিসের তৈরি। ফ্রিজটি যদি কপার কনডেন্সার দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ওই ফ্রিজটি কেনা উচিত। কপার কনডেন্সারের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ

  • ফ্রিজ অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়।
  • তারে কোনো মরিচা পড়ে না।
  • অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।

ফ্রিজে ব্যবহৃত গ্যাস

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়গুলোর মধ্যে এটি অনেক বড় একটি পয়েন্ট হতে চলেছে। নতুন ফ্রিজ কেনার আগে আপনাকে অবশ্যয় দেখতে হবে উক্ত ফ্রিজে কি গ্যাস ববহার করা হয়েছে। অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলোতে R134a গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা অনেক পুরাতন একটি গ্যাস যা আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি বাড়িয়ে দিবে।

তাই ফ্রিজ কেনার সময় এখন লক্ষ্য রাখতে হবে R600a গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে কিনা। কারণ R600a একটি  উন্নত মানের গ্যাস যা খাবারকে সতেজ রাখে এবং অনেক কম সময়ের মধ্যে ফ্রিজ ঠান্ডা করে থাকে। যার ফলে আপনার বিদ্যুৎ বিল যেমন কম আসবে, অন্যদিকে খাবারের মানও ভালো থাকবে।

ফ্রস্ট নাকি নন ফ্রস্ট ফ্রিজ

ফ্রিজ ফ্রস্ট নাকি নন ফ্রস্ট নিবেন এটি সম্পুর্ন আপনার চাহিদার উপর নির্ভর করে। অনেকে বরফ জমা পছন্দ করে না তাদের জন্য নন ফ্রস্ট, আবার অনেকে মনে করে বরফ জমা কন সমস্যা না তাদের জন্য ফ্রস্ট ফ্রিজ।

  • ফ্রস্ট ফ্রিজঃ ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমে যায়। যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তারপরেও খাবার ভালো থাকে। এতে বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।
  • নন ফ্রস্ট ফ্রিজঃ এই ফ্রিজে বরফ জমে না। বরফ গলানোর জন্য এই ফ্রিজ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করে। তবে এই ফ্রিজে বরফ পরিষ্কার করার কোনো ঝামেলা থাকে না।

ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের কিনা

আপনে যে ফ্রিজটি কিনতে যাচ্ছেন সেটি ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের কিনা যা একবার যাচায় করে নিবেন, ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি লক্ষণীয় বিষয়। কারণ ফ্রিজে ব্যবহৃত প্ল্যাস্টিক যদি ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের না হয় তবে আপনার ফ্রিজে রাখা খাবার থেকে কিছু দিনের মধ্যে একটা দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারেন। এ জন্য ফ্রিজ কিনার আগে অবশ্যয় ফ্রিজ ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের কিনা তা যাচায় করে নিতে হবে। এর জন্য ফ্রিজের ভিতরের ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের লোগো দেখে নিতে পারেন বা শোরুম কর্তিপক্ষের থেকে জেনে নিতে পারেন।

ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি ও কিস্তির তথ্য

যখন আপনি ফ্রিজ কিনবেন তখন কেনার আগে ফ্রিজের বিক্রয়োত্তর সম্পর্কে জেনে নিবেন। ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির বিষয়টাও বুঝে নিবেন। বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানিতে  ফ্রিজ কিস্তিতেও কেনা যায়। কিস্তিতে ফ্রিজ কিনলে কয় মাসের কিস্তি বা প্রতি মাসে কত টাকা করে পরিশোধ করতে হবে সে সম্পর্কেও জেনে নিবেন। ফ্রি ডেলিভারী ও ইন্সটলেশন সম্পর্কেও জানা উচিত।

আশা করি, এতক্ষণ ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় সম্পর্কে আমরা যা জানলাম তা থেকে আমি মনে করি, আপনি এখন সহজেই একটি ভালো ফ্রিজ চিনে বাজার থেকে কিনে আনতে পারবেন। এখনি বাজারে গিয়ে একটি ভালো ফ্রিজ চিনুন এবং আপনার বাজেট অনুযায়ী কিনে ফেলুন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *