ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন

ট্রেড লাইসেন্স কি? ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন জানেন কি?

বাংলাদেশে বৈধভাবে ছোট বা বড় যেকোনো ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক। আপনি যে ব্যবসায় করেন না কেন ট্রেড লাইসেন্স না করা পর্যন্ত আপনার ব্যবসা অবৈধ এবং এর জন্য আপনার জেল-জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই আর্টিকেলে ট্রেড লাইসেন্স কি এবং কিভাবে করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ট্রেড লাইসেন্স কি?

ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে ব্যবসা করার আইনগত অনুমতিপত্র। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে এই লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়। ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার আবেদন ও ব্যবসার উপরে ভিত্তি করে লাইসেন্স দেওয়া হয়। বৈধভাবে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স করা অত্যাবশ্যক। আর আপনার যদি একের অধিক আলাদা আলাদা ব্যবসা থাকে তাহলে প্রতিটি ব্যবসার জন্য ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।

ট্রেড লাইসেন্স কেন করবেন?

আগেই বলেছি ট্রেড লাইসেন্স হল বৈধভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পত্র। তবে এই লাইসেন্সের আরো অনেক সুবিধা আছে। যেমন-

  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য লাইসেন্স দরকার হয়
  • ব্যাংক কিংবা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোণ বা পুঁজি সংগ্রহের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন
  • অনন্যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনের জন্যে লাইসেন্স দরকার হয়
  • আপনি যদি বিদেশী কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে চান তাহলে লাইসেন্স দরকার হবে।

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন?

আপনি অনলাইন ও অফলাইন দুই জায়গা থেকেই এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের সব সিটি কর্পোরেশন থেকে অনলাইনে আবেদন করা যায় না। তাই অফলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। তাহলে চলুন কিভাবে লাইসেন্স করবেন সেই ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিই-

আবেদন করার যোগ্যতা

লাইসেন্স এর আবেদন করার জন্য-

  1. আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে।
  2. নারী ও পুরুষ উভয়ই লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবে।
  3. লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজ

২০১৬ সালের গেজেট অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়নের জন্য মোট ২৯৪ টি ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করা যাবে। তবে মূলত সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স ও ফ্যাক্টরি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন সবথেকে বেশি হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে শুধু সাধারণ লাইসেন্স ও ফ্যাক্টরি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের জন্য যেই কাগজগুলো দরকার হয় সেগুলো দেখে নেওয়া যাক-

সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স-

  1. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি,
  2. ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি,
  3. অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র,
  4. সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন (কোম্পানির ক্ষেত্রে)
  5. ব্যবসা যদি যৌথভাবে হয় তাহলে পার্টনারশিপের অঙ্গিকারনামা,
  6. প্রতিষ্ঠানের স্থান নিজের হলে কর্পোরেশন এর হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ,
  7. প্রতিষ্ঠানের স্থান ভাড়ায়  হলে ভাড়ার চুক্তি পত্র ও রশিদের ফটোকপি।

ফ্যাক্টরি বা শিল্প প্রতিষ্ঠান-

সাধারণ লাইসেন্স এর কাগজগুলো জমা দিতে হবে তার পাশাপাশি ফ্যাক্টরি বা শিল্প প্রতিষ্ঠান এর জন্য কিছু আলাদা কাগজ জমা দিতে হবে। যেমন আপনি যে বিষয়ের উপরে ব্যবসা করতে চান তার অনুমতি পত্র। যদি অস্ত্র ও গোলাবারুদ এর ব্যবসা করেন তবে অস্ত্রের লাইসেন্স, ওষুধের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স, আবাসিক হোটেল এর জন্য ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি। এছাড়া দাহ্য পদার্থ, ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতাল, লিমিটেড কোম্পানি, প্রিন্টিং প্রেস, আবাসিক হোটেল, ঔষধ ও মাদকদ্রব্য, ট্রাভেলিং এজেন্সি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আলাদা আলাদা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স করার ধাপগুলো

ধাপ ১ঃ প্রথমে আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করতে হবে, অর্থাৎ আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি কোন অঞ্চলে তা নির্ধারণ করতে হবে।

ধাপ ২ঃ লাইসেন্স আবেদনের জন্য আই ও কে নামে দুটি ভিন্ন ফরম আছে। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আই ফরম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফরম সংগ্রহ করতে হয়। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যে সরকার ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকে এই ফরমগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। যেমন-

  • উপজেলা বা জেলা পরিষদ
  • সিটি কর্পোরেশন
  • পৌরসভা
  • ইউনিয়ন পরিষদ

ধাপ ৩ঃ এরপরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে লাইসেন্সের ফি জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।

ধাপ ৪ঃ ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফরমের সাথে ব্যাংকে ফি জমা দেওয়ার রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।

ধাপ ৫ঃ তারপরে স্থানীয় সরকারের অধীভূক্ত আঞ্চলিক অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা আপনার ব্যবসায়িক কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে অফিসে রিপোর্ট করবেন।

ধাপ ৬ঃ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।

অনলাইনে যেভাবে ট্রেড লাইসেন্স করবেন

যদি আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা, রংপুর অথবা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর অঞ্চল এর ভেতরে হয় তাহলে আপনি বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য-

  • প্রথমে etradelicense.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে।

  • এরপরে অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য “নতুন নিবন্ধনের জন্য ক্লিক করুন” এর উপরে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনার সামনে নিচের পেজটি ওপেন হবে।

  • প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করুন এ ক্লিক করলে অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। এরপরে ফোন নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট লগইন করে নিতে হবে।

  • অ্যাকাউন্ট লগইন করার পরে “নতুন আবেদন” অপশন পাবেন। নতুন আবেদনে ক্লিক করলে আপনার সামনে একটি ফরম ওপেন হবে। ফরমে আপনার ব্যবসার তথ্যগুলো দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করে দিলে আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
  • আবেদন করা হয়ে গেলে ঘরে বসেই অনলাইন থেকে আবেদনের অবস্থান দেখতে পারবেন।

ভবিষ্যতে এই ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মানুষ অনলাইনে লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা ও কত দিন সময় লাগে?

আপনি কোন ট্রেড লাইসেন্স করবেন তার উপরে ভিত্তি করে ২০০-২০০০০ টাকা পর্যন্ত ফি হয়ে থাকে। এই ফি ব্যবসার পাশাপাশি আপনি কোন অঞ্চলে ব্যবসা করেন তার উপরে ভিত্তি করে কম বেশি হয়ে থাকে। যেমন আপনি যদি উপজেলা পরিষদে ব্যবসা করেন তাহলে আপনার লাইসেন্স করার ফি সিটি কর্পোরেশন এলাকার থেকে কম হবে। নতুন লাইসেন্স করার জন্য লাইসেন্স ফি, সাইনবোর্ড ফি এর মোট খরচের উপরে ১৫% ভ্যাট দিতে হয়।

ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদন করার পর হাতে পেতে সর্বোচ্চ সাত দিন (কর্ম দিবস) সময় লাগে।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছর। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে লাইসেন্সের কোন মূল্য থাকে না। তাই প্রতি ১ বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এজন্য-

  • যেখান থেকে লাইসেন্স করেছিলেন সেখান গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।
  • নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হবে তাহলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা  আপনার কাগজগুলো পর্যবেক্ষণ করে লাইসেন্স নবায়ন করে দিবেন।

আশা করি ট্রেড লাইসেন্স কি এবং কিভাবে করবেন তা বুঝতে পেরেছেন। এটি সরকারের কর আদায়ের একটি পদ্ধতি ও বলা চলে। তাই বৈধভাবে ব্যবসা করতে এবং ভবিষ্যতে কোন রকমের হয়রানির শিকার যেন না হতে হয় সে জন্য লাইসেন্স করে নেওয়া জরুরী।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *