টেস্ট টিউব বেবি কি? টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে যত ভুল ধারণা

টেস্ট টিউব বেবি কি? টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে যত ভুল ধারণা

টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে বর্তমান সময়ে ভুল ধারনার কোন শেষ নেই। অনেকেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক নিঃসন্তান নারী সন্তান লাভ করেছেন। আমাদের সমাজে টেস্ট টিউব শব্দগুলো থেকে অনেকের মনে ভুল ধারনা জন্ম হয়েছে। সাধারানত টেস্ট টিউব একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক দম্পতি টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি অনেক নারী বন্ধ্যত্বের সমস্যা বাড়ছে। এর ফলে টেস্ট টিউব চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকেই সন্তান নিয়ে থাকে। আজ আমরা টেস্ট টিউব নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে করে আমরা সঠিক তথ্য জানতে পারি।

টেস্ট টিউব কি?

টেস্ট টিউব সাধারানত একটি চিকিৎসা প্রকিয়া। অনেকেই এই প্রকিয়াটি ব্যাবহার করে সন্তান জম্ম দিতে সক্ষম হয়। বর্তমান বিশ্বে অনেক নারী বন্ধ্যত্বের সমস্যা বাড়ছে। সারা বিশ্বে এর হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক দম্পতি টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে থাকেন।

টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে গর্ভ ধারণ করার পদ্ধতি। একটি টেস্ট-টিউব বেবি একটি শব্দ যা একটি ভ্রূণকে বর্ণনা করে যা ফ্যালোপিয়ান টিউবের পরিবর্তে একটি টেস্ট টিউবে তৈরি হয়। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু একটি পরীক্ষাগারের থালায় নিষিক্ত হয় এবং নিষিক্তকরণের এই প্রক্রিয়াটি যা একটি গ্লাস বা পেট্রি ডিশে ঘটে। তাকে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলে (Wiki)। তাই টেস্টটিউব বেবি টেকনিককে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) বলা হয়।

টেস্ট টিউব কি?

আইভিএফ কি?

টেস্ট টিউব বেবি নেওয়া হয় সাধারানত আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে। এককথায় বলা যায় টেস্ট টিউব ও আইভিএফ পদ্ধতি ও নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া একই হয়। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারেস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। পরে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়। এবং ঠিক একই ভাবে পুরুষের শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। পরে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু।

এবং এই প্রকিয়াকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসকরা অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে রাখা ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশটিকে তারপর সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশ অনুরূপ একটি ইনকিউবেটরে। ইনকিউবেটরে ৪৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের ফলে বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। এবং এই ভ্রূণ সৃষ্টির পরে এটিকে একটি বিশেষ নলের দ্বারা জরায়ুতে স্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। এভাবেই একটি নবজাতক জম্ম নেয়।

বন্ধ্যাত্ব কি?

অনেকের দাম্পত্য জীবনে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা নাও হতে পারে। এটির কারণ নানা ধরনের হয়ে থাকে। পরিবেশগত ও শারীরিক সমস্যার দিক দিয়ে এটি অন্যতম। জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ অসংক্রামক রোগব্যাধি ও পরিবেশগত পরিবর্তনে বন্ধ্যত্বের হার বাড়ছে। এবং দেখা গেছে যে নারীর তুলনায় পুরুষের ক্ষেত্রে এর হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অনেকেই টেস্ট টিউবের মাধ্যমে বাচ্চা নিয়ে থাকে।একজন স্বাভাবিক শিশুর জন্ম প্রক্রিয়ায় সাধারণত ৮০ শতাংশ দম্পতির চেষ্টার প্রথম বছরের মধ্যেই সন্তান হয়ে থাকে।এবং অনেকের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ দম্পতির দ্বিতীয় বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। বাকি ১০ শতাংশের কোন না কোন সমস্যা থাকে।

ফলে এদের টেস্ট টিউব পদ্ধতি চিকিৎসা দরকার। এক সমীকরণে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুধু স্বামী দায়ী। এবং ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুধু স্ত্রী দায়ী। আবার ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দায়ী। বন্ধ্যত্বের যেসকল কারণ উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে অন্যতম। মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বাণুর অভাব, অনেকের ডিম্বানুর ওয়ালেও সমস্যা থাকে যার ফলে ডিম্বানুতে শুক্রানু প্রবেশ করতে পারেনা। আবার ডিম্বনালি বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা কার্যক্রম না থাকলে এটির সমস্যা দেখা দেয়। এবং পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমান কমে যাওয়া, শুক্রাণুর চলাচল স্বাভাবিক না থাকা সহ আর বিভিন্ন কারণ।

টেস্ট টিউব বেবি এবং আইভিএফ শিশুর প্রক্রিয়া

টেস্ট টিউব বেবি এবং আইভিএফ শিশুর প্রক্রিয়া

টেস্ট টিউব বেবি এবং আইভিএফ এই দুই ধরনের প্রকিয়া একই। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির মান উন্নত হওয়ায় আমাদের জীবন যাত্রার মান অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ব্যাবহার হয়ে থাকে। সেই সাথে আমাদের চিকিৎসা গত মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসকল দাম্পত্তি স্বাভাবিক ভাবে শিশু জম্মদিতে বার্থ হন, তারা টেস্টটিউব বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাবহার করে থাকে। তবে এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেস্ট টিউব অন্যতম। সাধারানত টেস্ট টিউব এবং আইভিএফ অর্থ একই, তাদের নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াও একই থাকে। যেমনঃ-

  • ওভারিয়ান স্টিমুলেশন।
  • ডিম পুনরুদ্ধার।
  • নিসিক্তকরন।
  • ভ্রূণ স্থানান্তর।
  • IVF গর্ভাবস্থা।

বর্তমানে বাংলাদেশে এই টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে বেবি নিচ্ছেন অনেক দম্পতি। এছাড়াও পৃথিবীতে অন্যান্য স্থানেও এই চিকিৎসার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এভাবেই টেস্টটিউব এবং আইভিএফ চিকিৎসা আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে।

টেস্ট টিউব বেবির জম্ম

টেস্ট টিউব বেবির জম্ম

টেস্ট টিউব বেবির জম্ম বর্তমান সময়ে এসে এর কার্যকারিতা অত্যাধিক। অনেক দম্পতির চেষ্টার পরেও সন্তান নিতে ব্যর্থ হন। ফলে তাদের প্রথামিক অবস্থায় ওষুধের মাধমে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারপর যদি না হয় তবে তাদের জন্য আমার টেস্ট টিউবে বেবি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একটি শিশু জম্মানোর ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব একটি গুরুপ্তপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের বন্ধ্যত্বের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।

এবং এটি বাংলাদেশে বাড়ছে প্রায় ১২ শতাংশ। অনেকেই মনে করেন টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয় টেস্ট টিউবের মধ্যে। এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। টেস্ট টিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া কোনো শিশু নয়। টেস্ট টিউব মূলত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এছাড়াও কৃত্রিম উপায়ে এভাবে সন্তানলাভে ধর্মীয় বাধা থাকতে পারে। তবে টেস্ট টিউব বেবির বিষয়টি এমন নয়। এরা অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক ভাবেই জম্মগ্রহণ করে থাকে। এবং অন্যদের মতোই পৃথিবীতে বেড়ে ওঠে।

টেস্ট টিউব একটি চিকিৎসা সেবা। এটির দ্বারা অনেক দাম্পত্তি সন্তান পেতে সক্ষম হচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের হার ৩০-৪০ ভাগ। কিন্তু আমাদের দেশে অর্থাৎ ঢাকায় এ ধরনের যে পাঁচ-ছয়টি সেন্টার আছে তাতেও সাফল্য একই রকম। এ প্রক্রিয়ায় রোগীদের প্রতি একটিই পরামর্শ, তারা যেন ধৈর্যসহকারে কোনো সেন্টারে দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে তাদের চিকিৎসা করান।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *