নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম | পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম | পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করলেন, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট জমা দিয়ে আসলেন, তারপরে পুলিশ ভেরিফিকেশান হলো এবং আপনি ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে গেলেন। বর্তমানে এতটাই সহজ হয়ে গেছে নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম। এই আর্টিকেলে নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম ও ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে, যাতে করে আপনি পাসপোর্ট করার নিয়ম জেনে সহজেই আপনার পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন।

পাসপোর্ট করার নিয়ম

আর্টিকেলটির সূচিপত্র

পাসপোর্টের প্রকারভেদ

নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম জানার আগে পাসপোর্টের প্রকারভেদ সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া উচিত তাহলে পাসপোর্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। সময়ের সাথে সাথে পাসপোর্ট আপডেট হয়েছে, বলা চলে পাসপোর্টে তথ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি উন্নত হয়েছে। পাসপোর্ট মূলত তিন প্রকার:-

  1. হাতে লেখা
  2. এমআরপি (MRP)
  3. ই পাসপোর্ট (E-Passport)

হাতে লেখা পাসপোর্ট

হাতে লেখা পাসপোর্টকে সেই পুরনো যুগের পাসপোর্ট বলা চলে। যদিও বর্তমানে কিছু দেশে এখনো হাতে লেখা পাসপোর্টের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে আর কোন হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু করে নি।

হাতে লেখা পাসপোর্ট
হাতে লেখা পাসপোর্ট

এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট

এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট গুলো মেশিন দিয়ে শনাক্ত করা যায়। এমআরপি পাসপোর্টে তথ্যগুলো এমনভাবে থাকে যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মেশিন শনাক্ত করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের “এমআরপি পাসপোর্ট” দেওয়া শুরু করেছে। এমআরপি পাসপোর্টে ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য থাকে না বরং পরিচিতি পাতার  বিশেষ অংশে তথ্য কোডেড বা লুকায়িত থাকে। ইমিগ্রেশন অফিসাররা যন্ত্রের সাহায্যে সেই তথ্যগুলো দেখে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে।

এমআরপি পাসপোর্টধারীরা বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন, তাদের এখনই ই পাসপোর্ট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বর্তমানে নতুন করে কেউ এমআরপি পাসপোর্ট করতে পারবে না। আপনার বর্তমান এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ই পাসপোর্টে রিনিউ বা নবায়ন করে নিতে হবে।

এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট
এমআরপি বা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট

ই পাসপোর্ট

পাসপোর্টের আধুনিক রূপ বা লেটেস্ট ভার্সন হলো ই পাসপোর্ট। ই পাসপোর্ট বর্তমান বিশ্বে পাসপোর্টের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করেছে। এই পাসপোর্টকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্টও বলা হয়ে থাকে। ই পাসপোর্টে মাইক্রো প্রসেসর এবং এন্টেনা প্রযুক্তিতে তৈরি ছোট আকারের চিপ লাগানো থাকে, যা দেখতে অনেকটা সিম কার্ডের মতো। এই চিপের ভেতর পাসপোর্টধারীর শনাক্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো থাকে, যেমন- পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, চোখের আইরিশের স্ক্যান, ১০ আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ ইত্যাদি। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই অত্যাধুনিক পাসপোর্ট ইস্যু করা শুরু করেছে।

ই পাসপোর্টের সুবিধা
ই পাসপোর্ট

ই পাসপোর্টের সুবিধা

ই-পাসপোর্ট সর্বাধুনিক প্রযুক্তি তাই পুরনো পাসপোর্টের তুলনায় এর সুবিধা অনেক বেশি। ই-পাসপোর্ট ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বড় যেই সুবিধাটা পাবেন তা হলো দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হওয়া। এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের ইমিগ্রেশন পার হতে বেশি সময় লাগে, যা দীর্ঘ যাত্রার পরে অনেকের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করলে সে সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। ই-গেটে আপনার ই পাসপোর্টটি রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল তথ্য যাচাই হয়ে যাবে।

অনেকসময় একজনের পাসপোর্ট জালিয়াতি করে আরেকজন ব্যবহার করে, যার ফলে অনেকসময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ই-পাসপোর্টে যেহেতু সকল তথ্য মাইক্রো চিপে থাকে তাই সহজেই এসকল জালিয়াতি এড়ানো যায়।

ই-পাসপোর্টে রয়েছে ৩৮ ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই কোনভাবে পাসপোর্টধারীর সাথে পাসপোর্টের তথ্য না মিললে সহজেই জালিয়াতি ধরা পরে যাবে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশানের এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন পরিচালনা করে। তাই যেকোন স্থল, নৌ বা বিমান বন্দর থেকে পাসপোর্টের সমস্ত তথ্য মূল তথ্যকেন্দ্রের সাথে সহজেই মিলিয়ে দেখা সম্ভব হয়। ফলে সন্ত্রাস দমনের মতো কঠিন কাজও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য বেশি কাগজপত্রের দরকার হয় না এবং কাগজপত্র সত্যায়িত করারও প্রয়োজন হয় না। অনলাইনে ই পাসপোর্টের আবেদন করার পর ছবি এবং বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়। তখন কিছু ডকুমেন্ট সাথে করে নিয়ে যেতে হয়, যেমন-

  • Application Summery
  • ই পাসপোর্ট আবেদন কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ / গ্যাস)
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি ও অরিজিনাল পাসপোর্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে)
  • পেশাজীবী প্রমাণপত্র (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক, আইনজীবি)
  • নাগরিক সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

বর্তমানে আপনি যদি নতুন করে পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আপানাকে ই-পাসপোর্ট করতে হবে, কারণ হাতে লেখা পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্ট আর তৈরি করা হয়না। ই-পাসপোর্ট সুবিধা চালু করার পরে পাসপোর্ট করার নিয়ম অনেক সহজ হয়ে গেছে। পাসপোর্ট করতে যেমন সময় কম লাগে তেমনি কাগজপত্র ভেরিফিকেশানের ঝামেলাও আর নেই।

আপনি মাত্র ৫টি ধাপ অনুসরণ করে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার জন্য ই পাসপোর্ট তৈরি করার এই ৫টি ধাপ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। চলুন তাহলে দেখে নেই পাসপোর্টের আবেদন করা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হবে-

ধাপ ১ : আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না দেখুন

পাসপোর্ট করার নিয়ম এর প্রথম ধাপ হলো আপনার এলাকায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না তা চেক করতে হবে। বর্তমানে নিম্নলিখিত পাসপোর্ট অফিসগুলিতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু আছে:-

আগারগাওঁ সিলেট সিরাজগঞ্জ চুয়াডাঙ্গা
যাত্রাবাড়ি মৌল্ভিবাজার কিশোরগঞ্জ ঝালকাঠি
উত্তরা সুনামগঞ্জ নাটোর কুড়িগ্রাম
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হবিগঞ্জ মাগুরা লালমনিরহাট
বাংলাদেশ সচিবালয় যশোর নড়াইল মেহেরপুর
গাজীপুর খুলনা লক্ষ্মীপূর নীলফামারী
মনছুরাবাদ কুষ্টিয়া টাঙ্গাইল পঞ্চগড়
ময়মনসিংহ বি-বাড়িয়া জামালপুর পিরোজপুর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজশাহী শেরপুর শরিয়তপুর
গাইবান্ধা চাপাইনবাবগঞ্জ নেত্রকোনা ঠাকুরগাঁও
গোপালগঞ্জ বগুড়া মাদারীপুর বান্দরবান
মানিকগঞ্জ রংপুর ফরিদপুর চাঁদপুর
নরসিংদী দিনাজপুর রাজবাড়ি কক্সবাজার
নোয়াখালী নওগাঁ ঝিনাইদহ খাগড়াছড়ি
ফেনী জয়পুরহাট সাতক্ষীরা নারায়নগঞ্জ
চাঁদগাওঁ বরিশাল বাগেরহাট রাঙামাটি
কুমিল্লা পটুয়াখালি ভোলা ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর)
মুন্সিগঞ্জ পাবনা বরগুনা ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর)

ধাপ ২ : অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ

  • অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য ভিজিট করুন www.epassport.gov.bd

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন

  • এরপরে আপনার জিলা ও থানা নির্বাচন করুন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন

  • আপানর ইমেইল এড্রেস দিয়ে কাপচ্যা ভেরিফিকেশান করে Continue বাটনে ক্লিক করুন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন

  • একাউন্ট ইনফর্মেশন দিয়ে আপনার একাউন্ট তৈরি করুন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন

  • একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনার পাসপোর্ট আবেদনের ধাপ শুরু হবে। কি ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তা সিলেক্ট করুন। আপনি সাধারন নাগরিক হিসেবে অর্ডিনারি পাসপোর্ট বাছাই করুন। অফিসিয়াল পাসপোর্ট হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবী এবং কর্মকর্তাদের জন্য।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম

  • এই ধাপে আপানর ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। যদি নিজের জন্য আবেদন করেন তাহলে I apply for myself সিলেক্ট করে দিবেন। পর্যায়ক্রমে আপনার লিঙ্গ, নাম, পেশা, জন্ম তারিখ এবং জাতীয়তা পূরণ করুন।

online passport apply

  • ID Documents ধাপে আপনার আগের কোন পাসপোর্ট আছে কিনা, অন্য দেশের পাসপোর্ট আছে কিনা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিতে হবে।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ

  • Parental information ধাপে আবেদনকারীর পিতা মাতার তথ্য দিতে হবে। পিতা মাতার তথ্য পূরণের জন্য পিতার নাম, মাতার নাম, তাদের পেশা এবং তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করতে হবে।
  • Spouse information ধাপে আবেদনকারী বিবাহিত না অবিবাহিত সেটি জানতে চাও হবে। মেনু থেকে Marital Status বাছাই করে বিবাহিত অথবা অবিবাহিত অপশন সিলেক্ট করে দিতে হবে।
  • Emergency Contact ধাপে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য আপনার পিতা/মাতা/ভাই/বোন/স্ত্রী/পরিবারের সদস্য বা পরিচিত কারও তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • Passport options ধাপে পাসপোর্টের ধরন বাছাই করতে হবে। পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং পাসপোর্টের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে চার ধরনের পাসপোর্ট আছে। বেশি পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য বেশি ফি দিতে হবে।

Passport options

  • কত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি হবে তার ওপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরণকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- রেগুলার, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস। তবে অনলাইনে শুধুমাত্র রেগুলার এবং এক্সপ্রেস এই দুই ধরনের ডেলিভারি টাইপ বাছাই করা যায়।
  • রেগুলার ডেলিভারিতে পাসপোর্ট পেতে ১৪ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। আবেদনে কোন সমস্যা না থাকলে এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে গেলে ১৪ দিনের মধ্যে আবেদনকারী পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে চাইলে এক্সপ্রেস ডেলিভারি বাছাই করতে হবে। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য যথাযথ কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে। চিকিৎসার কারণে বিদেশে যাওয়া কিংবা ইমার্জেন্সি পাসপোর্টের প্রয়োজন হলে Super Express পাওয়া যাবে।

ধাপ ৩ : পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

উপরে দেখানো পাসপোর্ট করার নিয়ম পুরোপুরি অনুসরণ করলে এই ধাপে আপনাকে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। আপনি অনলাইন বা অফলাইন দুই ভাবেই পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে পারবেন। চলুন আপনাদের সুবিধার জন্য আমি দুই ভাবেই ফি পরিশোধ করার পদ্ধতি দেখিয়ে দিব।

অনলাইন পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

  • অনলাইনে ekpay থেকে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে পারবেন।  পেমেন্ট করার জন্য প্রচলিত প্রায় সব ধরনের পেমেন্ট অপশন পেয়ে যাবেন, যেমন- VISA, Master Card, American Express, bKash, Nagad, Rocket, Upay, OK Wallet, Dmoney, Bank Asia, Brack Bank, EBL, UCB, City Bank, AB Bank, DBBL, Midland Bank
  • অনলাইনে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করার পরে ই চালানের পেমেন্ট স্লিপ চেক এবং ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন ekpay.gov.bd অথবা sbl.com.bd

অফলাইন পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

  • দেশের সকল সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যাংক থেকে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ পরিশোধ করা যাবে। নিজে অফলাইনে পেমেন্ট করতে ভিজিট করুন ibas.finance.gov.bd

পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

  • অফলাইনে চালান পেমেন্ট স্লিপ চেক এবং ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন echalan

পাসপোর্ট ফি পরিশোধ

পাসপোর্ট তিনভাবে বিতরণ করা হয়-

  1. নিয়মিত বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ১৫ কর্মদিবস /২১ দিনের মধ্যে।
  2. জরুরী বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ৭ কর্মদিবস / ১০ দিনের মধ্যে।
  3. অতীব জরুরী বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ২ কর্মদিবসের মধ্যে।

সরকারি চাকরিজীবি যাদের এনওসি/অবসর সনদ আছে তারা নিয়মিত ফি জমা দিয়ে জরুরী সুবিধা এবং জরুরী ফি জমা দিয়ে অতীব জরুরী সুবিধা নিতে পারবেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে (১৫% ভ্যাট সহ)-

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বিতরণ: ৪,০২৫ টাকা
  • জরুরী বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা
  • অতীব জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বিতরণ: ৫,৭৫০ টাকা
  • জরুরী বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা
  • অতীব জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা
  • জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা
  • অতীব জরুরী বিতরণ: ১২,০৭৫ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা
  • জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা
  • অতীব জরুরী বিতরণ: ১৩,৮০০ টাকা

ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন – www.epassport.gov.bd

ধাপ ৪ : ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ

এই ধাপে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস এবং বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। বড় শহরের পাসপোর্ট অফিস গুলোতে আবেদনের সময় কবে ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট জমা দিবেন সে ডেট বাছাই করার অপশন থাকে। কিন্তু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করার পর ছুটির দিন ব্যতীত যে কোন দিন গেলেই হবে।

আপনি পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পরে আবেদন কপি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রই জমা দিতে হবে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর আপনার হাতের ছাপ, স্বাক্ষর, রেটিনা, ছবি ইত্যাদি বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে। তারপর আপনাকে একটি ডেলিভারির স্লিপ বা টোকেন নাম্বার দেয়া হবে।

মনে রাখবেন, অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন সাবমিট করার ৬ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা না দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

ধাপ ৫ : পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ

পাসপোর্ট সংগ্রহ করার আগে পুলিশ ভেরিফিকেশান করেত হবে। পাসপোর্ট আবেদনকারী ব্যক্তির নামে কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা বা ঠিকানা ঠিক আছে কি না তা যাচাই করার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে থানায় যেতে হতে পারে অথবা পুলিশ আপনার বাড়িতে যেতে পারে, ভয়ের কিছু নেই আপনার সম্পর্কে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশান শেষ হলে যখন আপনার পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যাবে এবং ইস্যু করা হবে তখন মোবাইলে SMS দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনি ইচ্ছা করলে নিচে দেখানো ই পাসপোর্ট চেক করার পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইন থেকে আপনার পাসপোর্ট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা দেখতে পারবেন।

পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে আপনাকে আবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে, স্বাক্ষর করে এবং ডেলিভারি স্লিপ দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। আপনার পাসপোর্ট অন্যজন কোনভাবেই গ্রহণ করতে পারবে না। পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য নিজ জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে যেতে হবে।

ই পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী:-

ই-পাসপোর্ট এর আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে, তবে ফরম পূরণের সময় কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন:-

  1. ই-পাসপোর্ট আবেদন এর ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।
  2. ই-পাসপোর্টের ফরমে কোন ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।
  3. জাতীয় ‍পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।
  4. অপ্রাপ্ত বয়স্ক আবেদনকারী যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
  5. জাতীয় ‍পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে। ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, ১৮-২০ বছর হলে NID অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ এবং ২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক।
  6. তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরের ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
  7. দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।
  8. আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দাখিল করতে হবে।
  9. ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ‍উপরে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
  10. প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।
  11. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহের সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
  12. দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি এর উপর নির্ধারিত ভ্যাট (VAT) সহ অন্যান্য চার্জ দিতে হবে।
  13. কূটনৈতিক পাসপোর্ট এর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
  14. অতি জরুরী পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।
  15. আবেদনের সময় মূল জাতীয় ‍পরিচয়পত্র, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO)/অনাপত্তি (NOC) দাখিল করতে হবে।
  16. পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট দাখিল করতে হবে।
  17. হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি দাখিল করতে হবে।
  18. ৬ বছর বয়সের নিচে আবেদনের ক্ষেত্রে 3R Size সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি দাখিল করতে হবে।
  19. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে।

ই পাসপোর্ট চেক

ই পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য পাসপোর্ট আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন আইডি বা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং জন্মতারিখ প্রয়োজন হবে। এই দুটি তথ্য ব্যবহার করে খুব সহজেই ই পাসপোর্ট চেক করা যায়। এজন্য-

  • ই পাসপোর্ট চেক করার জন্য ভিজিট করুন – epassport.gov.bd
  • এরপরে আপনার অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বা আইডি অ্যাপ্লিকেশন আইডি দিন।
  • এরপরে আপনার জন্মতারিখ সিলেক্ট করে দিন।
  • কাপচ্যা পূরণ করে Check বাটনে ক্লিক করুন, তাহলে পাসপোর্ট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

ই পাসপোর্ট চেক

SMS দিয়ে ই পাসপোর্ট চেক

SMS এর মাধ্যমে ই পাসপোর্ট চেক করার জন্য আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন START <space> EPP <space> Application-ID আর পাঠিয়ে দিন 16445 নাম্বারে।

আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি 5455-37592756 হলে এসএমএস লেখার ফরমেট হবে SRART EPP 5455-37592756

ফিরতি মেসেজে আপনার পাসপোর্ট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা, আবেদনে কোন সমস্যা আছে কিনা এবং পাসপোর্ট কবে হাতে পাবেন ইত্যাদি তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

কমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

পাসপোর্ট হাতে পেতে কত দিন সময় লাগে?

রেগুলার ডেলিভারিতে ই পাসপোর্ট হাতে পেতে সাধারণত ১৫-২১ দিন সময় লাগে। জরুরী ডেলিভারিতে ৭ দিনেই পাসপোর্ট তৈরি হয়ে যায়। আর মাত্র ৩ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে অতীব জরুরী ডেলিভারি নিতে হবে।

ই পাসপোর্ট চেক করার OID কোনটি?

অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে Application Summary PDF ডাউনলোড করা যায়। এই Application Summary তে ১৩ ডিজিটের Online Registration ID বা OID থাকে।

অতীব জরুরী পাসপোর্ট এর জন্য কারা আবেদন করতে পারবে?

বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক অতীব জরুরী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে শুধুমাত্র পূর্বে পাসপোর্ট ব্যবহারকারীগণ স্থায়ী ঠিকানার তথ্য অপরিবর্তিত রেখে অতীব জরুরী পাসপোর্ট সেবার জন্য আবেদন করতে পারবে।

ই পাসপোর্ট সম্পর্কিত কোন সমস্যা হলে কোথায় যোগাযোগ করব?

ই পাসপোর্ট সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার জন্য ভিজিট করুন – https://epassport.gov.bd/contact

শেষ কথা

আশা করি ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ই পাসপোর্ট করার নিয়ম থেকে শুরু করে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, পাসপোর্ট ফি, ই পাসপোর্ট চেক, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চেক ইত্যাদি সবগুলো বিষয় দেখনোর চেষ্টা করেছি। এর পরেও ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে বা ই পাসপোর্ট করার নিয়ম গুলো বুঝতে অসুবিধা  হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম – ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ও খরচ জানুন