এইডস কেন এত ভয়ানক! এইডস কি ছোঁয়াচে? কিভাবে ছড়ায়!

এইডস কেন এত ভয়ানক! এইডস কি ছোঁয়াচে? কিভাবে ছড়ায়!

এইডস হলো এক ধরণের মরণব্যাধি। আর এই মরণব্যাধির জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস। এটি বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকটগুলোর একটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্য অনুযায়ী,বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডসে আক্রান্ত। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এক তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুন করে ১৮ লাখের মতো মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন।

এইডস কি?

এইডস হচ্ছে এইচআইভি নামের এক ধরনের ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। যা মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা তথা অনাক্রম্যতা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যেকোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

এইডস কেন হয়?

এইডসের পূর্ণরূপ হচ্ছে Acquired Immuno Deficiency Syndrome. এইডস একটি সংক্রামক রোগ যা এইচআইভি নামের জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হয়। যখন এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে তখন শ্বেত রক্তকণিকায় উপস্থিত ডিএনএতে পৌঁছে বিভাজিত হয়ে যায় এবং রক্তের সাদা কণাতে আক্রমণ করে। এটি ধীরে ধীরে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা কম করে দেয়।

এইডস মূলত দুটি ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে, এইচআইভি ১ এবং এইচআইভি ২। এইচআইভি ১ ভাইরাস পৃথিবীতে সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। অপরদিকে এইচআইভি ২ ভাইরাস শুধু পশ্চিম আফ্রিকাতেই পাওয়া যায়। এই দুটো ভাইরাস রেট্রোভাইরাস প্রজাতির। বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের শরীরে যে ভাইরাস পাওয়া যায় সেটি বাঁদরের প্রজাতি থেকে এসেছে। কারণ, মানুষ এবং বাঁদরের মধ্যে পাওয়া এইচআইভি অনেকটা একই রকম।

এইডস কেন হয়?

অনেকের ধারণা যে, শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক করলেই এইডস হয়। কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও  একাধিক কারণ আছে এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার। এইডসের জন্য দায়ী মূলত এইচআইভি নামের রেট্রোভাইরাসটি।

যার দেহে আগে থেকেই এই ভাইরাস রয়েছে তার সাথে যদি কেউ শারীরিক সম্পর্ক করে তাহলে তার শরীরে এই ভাইরাস রক্ত ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়ায়। বীর্যের মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয় বলে একে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হিসেবেও গণ্য করা হয়। এই ভাইরাস যখন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে দেয়।

এইডস কীভাবে ছড়ায়?

এইডস কীভাবে ছড়ায়?

এইডস কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, পানি খেলে, তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে আপনি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এইডস কীভাবে ছড়ায় বা এইচআইভি সংক্রমণের কারণ সম্পর্কে জানবো:-

  • পুরুষ বা নারীর শরীরে যদি আগে থেকেই এই ভাইরাস থাকে তাহলে যৌন সম্পর্কের ফলে এই ভাইরাস সহজেই অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে।
  • অনেকের ধারণা, যৌন সম্পর্কের সময় যদি কনডম ব্যবহার করা হয় তাহলে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, আপনি যখন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করবেন তখন যদি কনডম ছিঁড়ে যায় বা ফুঁটা হয়ে যায় তখন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় যদি নতুন সিরিঞ্জ বা সূচ ব্যবহার না করা হয় তাহলে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
  • এইডসে আক্রান্ত প্রসূতির সন্তানের শরীরেও এইডস হতে পারে। শিশুর দেহে এই ভাইরাস বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রবেশ করে। বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একটি শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত যদি বিনা পরীক্ষা করে ব্যবহার করা হয় তাহলেও এইচআইভি হতে পারে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ক্ষত থেকে নিঃসৃত লালা ও রস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

কি কি উপায়ে এইডস ছড়ায় না

এই আর্টিকেলে আমরা জানবো এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যে সকল সম্পর্ক করলে এইডস কিংবা এইচআইভিতে সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে না:-

  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কারো শরীরের উপর হাঁচি দেয়, কাশি দেয়, চোখের পানি ফেলায়, থুথু দেয় কিংবা নাক ঝাড়ে তাহলে অপর ব্যক্তির এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কারো সাথে হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, স্পর্শ কিংবা চুমু দেয়।
  • যদি একই পুকুরে বা গোছলখানায় গোছল করে। একই তোয়ালে, লুঙ্গি বা গামছা ব্যবহার করে তাহলেও
  • অপর ব্যক্তির এইচাইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি খাবার রান্না করে এবং সেই খাবার যদি কেও খায় সেক্ষেত্রেও এইচাইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই বাড়িতে বসবাস করলে।

এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইডস প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। এইডস প্রতিরোধে আমাদের যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো নিচে লেখা হলোঃ

  • আপনার যদি এইচআইভি হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, আপনার কারণে যাতে পরিবারের অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ, এটি একটি মারাত্মক রোগ। নিজে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করুন।
  • ভুলবশত যদি আপনি এইচআইভির সংস্পর্শে চলে আসেন তাহলে পোস্ট-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস ব্যবহার করুন। প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিইপি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। এতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবেন।
  • যৌনসঙ্গীর যদি এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকুন। অথবা প্রতিবার শারীরিক সম্পর্কের সময় নতুন কনডম ব্যবহার করুন।
  • একবার ব্যবহার করা যায় এমন জীবাণুমুক্ত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
  • যদি সুচ ও সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার করতে হয় তাহলে ব্যবহারের আগে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় আপনি যদি এইচআইভি পজিটিভ হন তাহলে দেরি না করে খুব দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করুন। তা না হলে আপনার গর্ভে থাকা শিশুর শরীরেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে।
  • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা এইডস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেন। এইডস কি, এটি কেন হয়, এটি কীভাবে আমাদের দেহে ছড়ায় এবং এই মরণব্যাধি এইডসকে প্রতিরোধ করার উপায়। যেহেতু, এইডসের কোনো প্রতিষেধক বা টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই, এইডস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো- এইডস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সে অনুযায়ী সচেতন হয়ে নিরাপদ জীবনযাপন করা।

আরও জানুনঃ- ডায়াবেটিস এর লক্ষণ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *