জন্মনিবন্ধনে ভুল থাকলে পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, যেমনঃ শিক্ষা সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট করার সময় অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। যদি আপনার জন্মনিবন্ধনে কোন ভুল থাকে তাহলে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার আবেদন করতে পারবেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের দেখাবো কিভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আবেদন করবেনঃ-
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য bdris.gov.bd/br/application ওয়েবসাইটে ভিজিট করে যে তথ্য পরিবর্তন করতে চান তা সিলেক্ট করে পরিবর্তন করতে হবে। এরপরে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদন অনলাইনে সাবমিট করতে হবে এবং একটি প্রিন্ট কপি ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/কাউন্সিলরের অফিসে জমা দিতে হবে।
এই পদ্ধতিতে সহজেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারবেন।
তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর ধাপগুলো দেখে নেইঃ-
ধাপ ১ঃ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন
- প্রথমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। ওয়েবসাইট লিংক bdris.gov.bd
- এরপরে “জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন” অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
- পরের পেজে আপনার ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে “অনুসন্ধান” এ ক্লিক করতে হবে।
- তাহলে আপনার সামনে আপনার জন্ম নিবন্ধন শো করবে। এরপর ডানপাশে থাকা “নির্বাচন করুন” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ২ঃ অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ
- এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদন ফরম ওপেন হবে।
- এখান থেকে আপনি যেই তথ্যটি সংশোধন করতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে। তারপরে ডানপাশে “চাহিত সংশোধিত তথ্য” ঘরে আপনার সংশোধিত তথ্যটি দিতে হবে। তথ্য সংশোধনের পরে “সংশোধনের কারণ” এ কেন তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে।
চলুন কিছু কমন ভুলের ক্ষেত্রে সংশোধন করার পদ্ধতিগুলো দেখে নেই-
নাম সংশোধন করার পদ্ধতি
প্রথমে আপনি কোন ভাষায় নাম পরিবর্তন করতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে। যদি বাংলায় আপনার নাম ভুল থাকে তাহলে “নাম বাংলায়” অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপরে “চাহিত সংশোধিত তথ্য” ঘরে আপনার সঠিক নামটি দিতে হবে। নাম দেওয়ার পরে সংশোধনের কারণে দিতে হবে “ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল”।
পিতা মাতার নাম সংশোধন
যদি আপনার পিতা অথবা মাতার নাম বাংলা বা ইংরেজিতে ভুল থাকে তাহলে যে ভাষায় ভুল আছে তা সিলেক্ট করে ঠিক নামটি দিতে হবে এবং কারণে “ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল” সিলেক্ট করতে হবে।
জন্মতারিখ সংশোধনের পদ্ধতি
বিষয় থেকে “জন্ম তারিখ” অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপরে সঠিক জন্ম তারিখ দিয়ে সংশোধনের কারণ উল্লেখ করতে হবে।
ঠিকানা সংশোধন
জন্ম নিবন্ধনে তিনটি ঠিকানা থাকে- জন্মস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা। আপনি যেই ঠিকানা সংশোধন করতে চান সেই ঘর থেকে আপনার গ্রাম, বাসা, ডাকঘর, বিভাগ যেকোনো নির্বাচন করে পরিবর্তন করতে হবে।
একটা বিষয় বলে রাখা ভালো যদি আপনি একসাথে একাধিক তথ্য সংশোধন করতে চান তাহলে “আরও তথ্য সংযোজন করুন” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তাহলে আপনার সামনে একাধিক তথ্য সংশোধনের জন্য আলাদা আলাদা ঘর ওপেন হবে। এরপরে প্রতিটি ঘরে আলাদা আলাদা তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
ধাপ ৩ঃ জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে যে যে কাগজ লাগে
- যেই তথ্য সংশোধন করবেন তা সিলেক্ট করা হয়ে গেলে নিচে থাকা সবুজ রঙের “সংযোজন” বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে।
আপানদের সুবিধার জন্য কোন তথ্য সংশোধনের জন্য কোন ডকুমেন্টের (প্রমাণপত্র) দরকার হয় তা উল্লেখ করা হল-
নিজের নাম ও পিতা-মাতার নাম সংশোধন
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- পাসপোর্টের কপি
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র
- টিকা কার্ড/ হাসপাতালের সনদ
বয়স বা জন্ম তারিখ সংশোধন
- জন্ম সাল পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না, শুধুমাত্র দিন ও মাস সংশোধন করা যাবে।
স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন
- কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র
- স্থায়ী ঠিকানার কর পরিশোধের রসিদ
বর্তমান ঠিকানা সংশোধন
- বিদ্যুৎ অথবা যেকোনো ইউটিলিটি বিলের কপি
ধাপ ৪ঃ আবেদনকারীর তথ্য দিন
- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম পূরণ শেষে আবেদনকারীকে তার যোগাযোগ নম্বর দিতে হবে। যদি আপনি নিজের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করেন তাহলে “নিজ” সিলেক্ট করুন।
- আর যদি অন্য কারও আবেদন করে দেন, যেমন আপনার সন্তানের নিবন্ধন সংশোধন করলে পিতা/মাতা সিলেক্ট করুন। আর কোন সম্পর্ক না থাকলে “অন্যান্য” সিলেক্ট করুন। তবে নিজের অথবা পিতা/মাতা ছাড়া অন্য কেউ, যেমনঃ অভিভাবক, নানা/নানী, দাদা/দাদি আবেদন করলে তাদের জন্মনিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি
বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধনের যেকোনো তথ্য সংশোধন করতে সর্বোচ্চ ৫০-২০০ টাকা লাগে। সরকারি ফি অনুসারে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তা নিচে দেয়া হলঃ-
সংশোধনের ধরণ | ফি (টাকা) |
তথ্য সংশোধন | ১০০ |
জন্মতারিখ ব্যতীত অন্যান্য তথ্য সংশোধন | ৫০ |
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নিবন্ধনের নকল সরবরাহ | ৫০ |
ধাপ ৫: জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন পত্র প্রিন্ট
- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন শেষ করার পরে আপনি আবেদনের একটি আইডি নম্বর পাবেন। এই আইডি নম্বর অবশ্যই আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপিতে লিখে রাখবেন। এরপরে আবেদন পত্রটির প্রিন্ট কপি ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিন।
- যদি আপনার নিজস্ব প্রিন্টার না থাকে তাহলে আবেদনের Application ID অথবা PDF দিয়ে সংশোধন ফরমটি স্থানীয় যেকোন কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন অবস্থা চেক
অনলাইনে নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করার পাশাপাশি আবেদনের অবস্থাও জানতে পারবেন। এজন্য ভিজিট করুন-https://bdris.gov.bd/br/application/status । আবেদনের ধরণ সিলেক্ট করে Application ID দিন এবং জন্ম তারিখ বাছাই করুন। সবশেষে “দেখুন” বাটনে ক্লিক করে আবেদনের অবস্থা জানতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন সংক্রান্ত কিছু কমন প্রশ্ন ও তার উত্তর
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে সর্বোচ্চ কতদিন সময় লাগে?
জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করতে সর্বোচ্চ ৫-৭ কর্মদিবস লাগতে পারে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম পূরণ করে কোথায় জমা দিতে হবে?
অনলাইনে আবেদন করার পর ফরমটির প্রিন্ট নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিতে হবে।
একজনের জন্ম নিবন্ধন সর্বোচ্চ কতবার সংশোধন করা যায়?
সর্বোচ্চ ৭ বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান ভুল থাকলে কি সঠিক বানান দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করা যাবে?
না। আপনাকে জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান সংশোধন করতে হবে, তারপর জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারবেন।
আরও জানুনঃ- যেভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবেন।
Leave a Comment