লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতে আগ্রহ প্রকাশ করি। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো লক্ষ্মীপুর জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক_
লক্ষ্মীপুর জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।মেঘনা নদীর অববাহিকায় এ জেলা অবস্থিত। এ জেলাটি নারিকেল, সয়াবিন এবং সুপারির জন্য বিখ্যাত। ১৮৬০ সালে লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর মহকুমা এবং একই এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা।
এছাড়াও লক্ষ্মীপুর[wiki] জেলার নামকরণ নিয়ে কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে। লক্ষ্মী, হিন্দু ধর্মানুসারে ও সৌভাগ্যের দেবী (দুর্গা কন্যা ও বিষ্ণু পত্নী) এবং পুর হল নগর বা শহর। এ মতানুসারে লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় সৌভাগ্যের নগরী বা সম্পদ সমৃদ্ধ শহর। লক্ষ্মীপুর জেলার মোট আয়তন ১৩৬৭.৫৯ বর্গ কিলোমিটার।
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে খোয়াসাগর দিঘী, জ্বীনের মসজিদ, মেঘনা নদী, চর আলেকজান্ডার, কমরেড তোহায়া স্মৃতিসৌধ, নারিকেল ও সুপারির বাগান, তিতা খাঁ জামে মসজিদ, কামানখোলা জমিদার বাড়ি, ভোম রাজার দীঘি ইত্যাদি। নিচে লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দেওয়া হলো-
খোয়াসাগর দিঘী
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার লক্ষ্মীপুর রায়পুর সড়কের পূর্বপাশে খোয়াসাগর দিঘী অবস্থিত। এই দিঘীটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। দালাল বাজারের জমিদার ব্রজ বল্লভ রায় মানুষের পানীয় জল সংরক্ষণে আনুমানিক ১৭৫৫ সালে এ দিঘীটি খনন করেন। এই দিঘীর ঠিক পার্শ্বেই দালাল বাজার মঠ রয়েছে।
খোয়া মানে কুয়াশা অর্থাৎ দিঘীর আয়তন এত দীর্ঘ যে এর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের দিকে তাকালে কুয়াশাময় মনে হয়, এ কারণে এর নাম দেওয়া হয় খোয়াসাগর। প্রদর্শনের জন্য দিঘীর পাড়ে অসংখ্য গাছ লাগানো হয়েছে। সন্ধ্যা নামলে যখন দিঘীর পশ্চিম ও পূর্ব পাশ আলোকিত হয়ে যায় সেই দৃশ্যটা আরও রমণীয় হয়ে ওঠে। লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এটি একটি জনকোলাহলপূর্ণ জায়গা। যা সব সময় দর্শনার্থী দ্বারা পরিপুর্ন থাকে।
ঢাকা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রয়েল কোচ, গ্রীনলাইন এক্সপ্রেস, ইকোনো, আল বারাকা, হিমাচল এক্সপ্রেস, জোনাকি সার্ভিস বা ঢাকা এক্সপ্রেসের বা লক্ষ্মীপুর জেলায় যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর ঘাটে যেতে পারবেন। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে সিএনজি বা রিকশা নিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খোয়াসাগর দিঘী দেখতে যেতে পারবেন।
জ্বীনের মসজিদ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের দেনায়েতপুর এলাকায় জ্বীনের মসজিদ অবস্থিত। ১৮৮৮ সালে ৫৭ শতাংশ জমির ওপর এই মসজিদটি নির্মিত হয়। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১১০ ফুট ও ৭০ ফুট। জ্বীনের মসজিদে রয়েছে ৩টি গম্বুজ ৪টি মিনার। মসজিদের তলদেশে ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে একটি গোপন ইবাদতখানা রয়েছে। ইটের তৈরি আদি এ স্থাপনায় গম্বুজ, মিনার ও মূল ভবন নকশায় রয়েছে শতভাগ মুন্সিয়ানা।
মসজিদটির ভিটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। এর সামনে রয়েছে বিশাল এক পুকুর। দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের নকশায় নির্মিত জ্বীনের মসজিদটি ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটি লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অনেক পুড়নো একটি মসজিদ যা দেখে দর্শনার্থীর চোখ জুরিয়ে যায়।
ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে চলে আসুন। লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হতে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে জ্বীনের মসজিদটি অবস্থিত। লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা, বাস দিয়ে রায়পুর উপজেলা হয়ে মাওলানা আবুল খায়ের রোডে পৌঁছালেই জ্বীনের মসজিদ।
মেঘনা নদী
লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিমাঞ্চল মেঘনা নদী বিধৌত। চাঁদপুর জেঁলার দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম কোন দিয়ে রায়পুর উপজেলায় মেঘনা নদী লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিই এই নদী বিধৌত। রহমতখালী, কাটাখালি ও ভুলুয়া নদী পশ্চিমে মেঘনায় মিশেছে।
বাংলাদেশের একটি বড় নদী মেঘনা নদী। এ নদীতে প্রচুর পরিমাণে রূপালী ইলিশ পাওয়া যায়। রামগতির বেশির ভাগ মানুষেরাই আয়ের বড় একটি অংশ হলো মেঘনায় মাছ আহরন করে জীবিকা নির্বাহ। এছাড়া মেঘনা নদীর বিকালের স্নিগ্ধ বাতাস শরীরকে শীতল করে দেয়।
ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে চলে আসুন। বাসে, সি,এন,জি, এবং টেম্পু যোগে উপজেলা হইতে রামগতি বাজার, সেখান থেকে ৫ মিনিট হেঁটে কিংবা রিক্সা যোগে নদীর তীরে পৌঁছানো যায়।
কমরেড তোহায়া স্মৃতিসৌধ
কমরেড তোহায়া স্মৃতিসৌধ লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের হাজিরহাটের কাছে অবস্থিত। কমলনগর পূর্বে কমলনগর রামগতির দক্ষিণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা একজন ৭ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং তৎকালীন সময়ে কমলনগর ও রামগতির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তিনি অত্র অঞ্চলের জন্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। তার এসব অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে উৎসর্গ করে কমরেড তোহায়া স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এটিও লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি জনপ্রিয় স্থান।
ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে চলে আসুন। লক্ষ্মীপুর থেকে হাজির হাট বাজারের উত্তর পাশে তোয়াহা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌছালেই কমরেড তোহায়া স্মৃতিসৌধ।
চর আলেকজান্ডার
চর আলেকজান্ডারের অবস্থান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার ৪নং ইউনিয়নে। আলেকজান্ডার নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোক ব্রিটিশ শাসনামলে রামগতি এসিল্যান্ড অফিসে রেভিনিউ কালেকটর পদে কর্ময়ত ছিলেন। তার নামানুসারে এই ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় আলেকজান্ডার। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন এলাকা হচ্ছে চর আলেকজান্ডার।
চারপাশে সবুজ মাঠ, বাঁধের গায়ে আঁচড়ে পড়া মেঘনার ঢেউ সাথে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে প্রশান্তির ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়। হাতে আরও কিছুহ সময় থাকলে আলেকজান্ডারের চেয়ারম্যান ঘাট ছাড়াও নুরু পাটোয়ারী ও সূবর্ণ চরও ঘুরে দেখে আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে নোয়াখালীর একুশে এক্সপ্রেস কিংবা হিমাচল বাসে চড়ে সরাসরি সোনাপুর যাবেন। সেখান থেকে সূবর্ণচর এক্সপ্রেস নামের একটি বাস রয়েছে। সেটিই আপনাকে পৌঁছে দেবে আলেকজান্ডারের চেয়ারম্যান ঘাট। এছাড়াও আপনি চাইলে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাতেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৩০০ টাকার মট ভাড়া পড়বে, লোকাল সিএনজিতে ৫০ টাকা ভাড়া নিবে। একইভাবে ঢাকা থেকে টাংকির চর যেতেও পারেন। সোনাপুর থেকে বাসে চড়ে যাওয়া যায় সেখানে।
নারিকেল ও সুপারির বাগান
নারিকেল ও সুপারি চাষের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর এলাকা বিখ্যাত। বিশেষ করে দালাল বাজারের পশ্চিমে চর মন্ডল, হায়দরগঞ্জ, রাখালিয়া মহাদেব-পুরের বিস্তীর্ণ নারিকেল ও সুপারি বাগানে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সুউচ্চ-সুপারি গাছের সারি, নারিকেল গাছের চিরল পাতার ফাকে বাতাসের ঝাপটা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।
রায়পুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি যোগে যাওয়া যায়।
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকেই এই আর্টিকেলে আমি চেষ্টা করেছি লক্ষ্মীপুর জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
বিভিন্ন জেলার সব দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে আমাদের সাইট ভিজিট করুন।
Leave a Comment