বীজগণিতের সূত্র সমূহ একসাথে দেখে নিন

বীজগণিতের সূত্র সমূহ একসাথে দেখে নিন

যখন ছাত্র হিসেবে আমরা গণিত শিখতে শুরু করি, তখন গণিত শুধুমাত্র সংখ্যা ছিল। যেমনঃ সাধারণ সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা, অখণ্ড সংখ্যা, বাস্তব সংখ্যা, জটিল সংখ্যা, মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা ইত্যাদি। তারপর আমরা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি গাণিতিক ফাংশন সম্পর্কে শিখতে শুরু করি এবং তারপর হঠাৎ ক্লাস 6 থেকে বা তার পরের ক্লাসগুলো থেকে বীজগণিতের সাথে আমাদের পরিচয় শুরু হয়। আর বীজগণিতের গাণিতিক জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য বীজগণিতের সূত্র সমূহের প্রয়োজন হয়।

তাই  আজ আমরা বীজগণিত এবং বীজগণিতের সূত্র সমূহ এর উপর আলোকপাত করব। বীজগণিতের সূত্র সমূহ ভালোভাবে মুখস্ত রাখলে বীজগণিতের সকল অংক সমাধান করতে অনেক সহজ হয়ে যাবে। চলো তাহলে শুরু করি!

বীজগণিত কি?

বীজগণিত কি?

বীজগণিত হল গণিতের একটি অংশ যা সংখ্যা তত্ত্ব, জ্যামিতি এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করে। এটি গাণিতিক রাশি গঠনের জন্য x, y, z  চলক বা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং a,b,c,d,….. ইত্যাদির মতো গাণিতিক ক্রিয়াকলাপগুলিকে ব্যবহার করি। গণিতের সমস্ত শাখায় যেমনঃ ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাস এবং সমন্বয় জ্যামিতি ইত্যাদির সাথে বীজগণিতের ব্যবহার রয়েছে [wiki]। বীজগণিতের একটি রাশির সাধারণ উদাহরণ হল: 2x + 4 = 8।

বীজগণিত চিহ্ন, চলক বা প্রতীকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় এবং এই চলকগুলি গাণিতিক কার্যাবলির সাহায্যে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ একটি কোম্পানিতে  কিছু সংখ্যক মেয়ে কর্মী কাজ করে যাদের দ্বিগুনের চেয়েও ৪০ জন বেশি পুরুষ কর্মী কাজ করে। আর মেয়ে কর্মীদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ, যা মোট কর্মীর ১/১১ অংশ।

এখানে মেয়ে কর্মীর সংখ্যা X চলক ধরে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মী এবং পুরুষ ও মেয়েদের সংখ্যা জানা যায়। এক্ষেত্রে নিচের সম্পর্কটি ব্যবহার করা যেতে পারে: X+(2X+40)=11(X÷3)

এটি কেবল একটি গাণিতিক ধারণা নয়, এটি একটি দক্ষতা যা আমরা সবাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উপলব্ধি না করেই ব্যবহার করি।  বীজগণিতকে একটি ধারণা হিসেবে সূত্র প্রয়োগ করে সমীকরণগুলি সমাধান করা এবং সঠিক উত্তর খোঁজার চেয়ে বীজগণিত মনে রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গণিতের অন্যান্য সমস্ত বিষয়ে দরকারি যা আপনি ভবিষ্যতের জন্য শিখতে পারেন বা আপনি ইতিমধ্যে অতীতে শিখেছেন।

বীজগণিতের সূত্র সমূহ

বীজগণিতের শাখা

যেহেতু উপরন্ত থেকে জানা যায় যে, বীজগণিত হল অজানা মানের উপর ভিত্তি করে প্রতীকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল সমীকরণ। বীজগণিত গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করে। এটি আমাদের চারপাশের অনেক কিছু বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়।  বীজগণিতকে বিভিন্ন উপ-শাখায় বিভক্ত করা হয়। যেমনঃ

  1. প্রাথমিক বীজগণিত
  2. উন্নত বীজগণিত,
  3. বিমূর্ত বীজগণিত,
  4. রৈখিক বীজগণিত এবং
  5. পরিবর্তনশীল বীজগণিত।

বীজগণিতের সূত্র সমূহ

বীজগণিত মূলত একটি গাণিতিক পদ্ধতি। যা সংখ্যার পরিবর্তে বিভিন্ন চলক বা প্রতীক ব্যবহার করে অজানা রাশির মান বের করে অথবা রাশি সমূহের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে। বীজগণিতের সূত্র সমূহের বিভিন্ন পরিচয় রয়েছে। গাণিতিক বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আলদা আলদা সূত্রের প্রয়োগ করা হয়। যেমনঃ বর্গ নির্ণয়ের সূত্র, ঘন নির্ণয়ের সূত্র, সূচক নির্ণয়ের সূত্র, লগারিদম নির্ণয়ের সূত্র। সংখ্যা, অক্ষর, ফ্যাক্টরিয়াল, ম্যাট্রিস ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি সমীকরণ তৈরি করতে বীজগণিতের সূত্র সমূহ ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেকের সমীকরণ নির্ণয়ের সূত্র ভিন্ন ভিন্ন। এখানে, আমরা সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বীজগণিতের সূত্র সমূহ এর একটি তালিকা তৈরি করেছি। বিস্তৃত তালিকাটি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে দ্রুত দেখে নিতে পারবে অথবা  যখনই তাদের সূত্রের প্রয়োজন হবে ইচ্ছা করলে তারা সূত্র গুলো ব্যবহার করতে পারবে।

বীজগণিতের বর্গ নির্ণয়ের সূত্র

বীজগণিতের বর্গ নির্ণয়ের সূত্র

গণিতের জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য বর্গ নির্ণয়ের সূত্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্গ নির্ণয়ের বীজগণিতের সূত্র সমূহ সম্পর্কে ধারণা থাকলে বড় বড় গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। পরবর্তীতে গণিত বিষয়ে ভালো করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে বর্গ নির্ণয়ের বীজগণিতের সূত্র সমূহ সঠিকভাবে জানতে হবে এবং এর ব্যবহার সঠিকভাবে করতে হবে। নিম্নে  গুরুত্বপূর্ণ কিছু বর্গ নির্ণয়ের সূত্র দেওয়া হল:

  • (a+b)² = a²+2ab+b²
  • (a+b)² =(a-b)²+4ab
  • (a-b)² = a²-2ab+b²
  • (a-b)² = (a+b)²-4ab
  • a²+b² = (a+b)²-2ab
  • a²+b² = (a-b)²+2ab
  • (a+b+c)² = a²+b²+c²+2(ab+bc+ca)
  • 2(ab+bc+ca) = (a+b+c)² – a²+b²+c²
  • a²-b² = (a+b)(a-b)
  • a²+b² = ½⟨(a+b)+(a-b)
  • 2(a²+b²) = (a+b)²+(a-b)²
  • 4ab = (a+b)²-(a-b)²
  • ab = (a+b)²/2 – (a-b)²/2
  • a²+b²+c² = (a+b+c)² – 2(ab+bc+ca)
  • (a+b+c)² = a²+b²+c²+2(ab+bc+ca)
  • a²+b²+c² = (a+b+c)² – 2(ab+bc+ca)

বীজগণিতের ঘন নির্ণয়ের সূত্র

বীজগণিতের ঘন নির্ণয়ের সূত্র

বীজগণিতের প্রথম সূত্র হলো বর্গ নির্ণয়ের সূত্র। বর্গ নির্ণয়ের সূত্রের পরেই ঘন নির্ণয়ের সূত্র আসে । তাই বীজগণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে ঘন নির্ণয়ের সূত্র বিবেচ্য করা হয়। বীজগণিতে ঘনকের অংক সমাধান করার জন্য ঘন নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করতে হয়। যেহেতু বীজগণিতের অংক মানেই কোন সূত্র বা নিয়ম মেনে করতে হয়। তাই ঘন নির্ণয়ের সূত্রটি গুরুত্ব সহকারে দেখে নিন।

  1. (a+b)³= a³+3a²b+3ab²+b³ (ঘন নির্ণয়)
    (a+b)³= a³+b³+3ab(a+b)
  2. (a-b)³= a³-3a²b+3ab²-b³ (ঘন নির্ণয়)
    (a-b)³= a³-b³-3ab(a-b)
  3. a³+b³= (a+b)(a²-ab+b²) (উৎপাদক নির্ণয়)
    a³+b³= (a+b)³-3ab(a+b) (মান নির্ণয়)
  4. a³-b³= (a-b)(a²+ab+b²) (উৎপাদক নির্ণয়)
    a³-b³= (a-b)³+3ab(a-b) (মান নির্ণয়)

বীজগণিতের সূচক নির্ণয়ের সূত্র

বীজগণিতের সূচক নির্ণয়ের সূত্র

গণিত বিষয়ে ভালো করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে বীজগণিতের সূচক নির্ণয়ের সূত্র মূখস্ত করতে হবে এবং এর ব্যবহার সঠিকভাবে করতে হবে। নিম্নে সূচকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্র দেওয়া হলঃ

  • am×an = am+n
  • am÷an = am-n
  • (am)n = amn
  • a−n = 1 ÷ a n
  • (ab)n = anbn
  • (a÷b)n = an÷bn
  • am÷n = n√am
  • √a = a 1÷2
  • a0 = 1
  • a1 = 1

বীজগণিতের লগারিদম নির্ণয়ের সূত্র

বীজগণিতের লগারিদম নির্ণয়ের সূত্র

লগারিদম হল সূচক লেখার আরেকটি উপায়। যখন আমরা সূচকগুলি ব্যবহার করে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারি না, তখন আমরা লগারিদম ব্যবহার করি। লগারিদমের সাহায্যে অনেক গাণিতিক সমস্যা সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়। লগারিদমের বেশিরভাগ ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার সায়েন্সে এবং পরিসংখ্যানে। বিভিন্ন লগারিদম সূত্র রয়েছে যা সূচকের সূত্র ব্যবহার করে উদ্ভূত হয়। আসুন কয়েকটি বীজগণিতের লগারিদম নির্ণয়ের সূত্র দেখে সেগুলি মুখস্থ করি।

  • loga (MN) = loga (M) + loga (N)
  • loga (M÷N) = loga M − loga N
  • loga Mr = rloga M
  • logb M × loga b = loga M
  • loga b = 1 ÷ logba
  • loga M = x হলে ax = M
  • logaa = 1
  • loga 1 = 0
  • logab × logba = 1

বীজগণিতের ত্রিকোণমিতির সূত্র

বীজগণিতের ত্রিকোণমিতির সূত্র

বীজগণিতের ত্রিকোণমিতির অনেকগুলো সূত্র রয়েছে। এর মধ্যে যে সূত্র গুলো সব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এখানে সেগুলোর কিছু সূত্র দেওয়া হলো। এই সূত্রগুলো ত্রিকোণমিতির সাধারণ কিছু সূত্র:

  • sinθ=लম্ব/অতিভুজ
  • cosθ=ভূমি/অতিভূজ
  • tanθ=लম্ব/ভূমি
  • cotθ=ভূমি/লম্ব
  • secθ=অতিভুজ/ভূমি
  • cosecθ=অতিভুজ/লম্ব
  • sin θ=1/cosecθ, cosecθ=1/sinθ
  • cosθ=1/sec θ, secθ=1/cosθ
  • tanθ=1/cotθ, cotθ=1/tanθ
  • sin²θ + cos² θ= 1
  • sin² θ = 1 – cos² θ
  • cos² θ = 1- sinθ
  • sec² θ – tan²θ = 1
  • sec² θ = 1+ tan²θ
  • tan²θ = sec² θ – 1
  • cosec²θ – cot²θ = 1
  • cosec²θ = cot²θ + 1
  • cot²θ = cosec²θ – 1

সমাধান করা উদাহরণ

প্রশ্নঃ 17² – 4² এর মান নির্ণয় কর?

উত্তর: উক্ত মান গুলো সরল সংখ্যা, তাই আমরা এর উত্তর গণনার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু এর সঠিক পদ্ধতি হল সূত্র প্রয়োগ করা, যেমনঃ

a² – b² = (ab)(a+b)

17² – 4² = (17-4)(17+4) = 13 × 21 = 273

শেষ কথা

মনে রাখবেন, শুধুমাত্র মুখস্থ করে শেখা যথেষ্ট নয়। বীজগণিতের সূত্র সমূহ কীভাবে কার্যকরভাবে কোনো গাণিতিক সমস্যায় প্রয়োগ করতে হয় তাও আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। আশা করছি, আজকের এই আর্টিকেলে বীজগণিতের সূত্র সমূহ আপনাদের অনেক উপকৃত করেছে।

আরও সব মজাদার ও ইনফরমেটীভ পোস্ট পড়তে WIREBD.COM.BD তে চোখ রাখুন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *