ফুটবল খেলার নিয়ম ও আইন কানুন ২০২৪

ফুটবল খেলার নিয়ম ও আইন কানুন ২০২৪

সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। বিশ্বের প্রায় সব গুলো দেশেই ফুটবল খেলা হয়ে থাকে। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়ষ্ক প্রায় সকল বয়সের মানুষের কাছে ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তা রয়েছে আকাশচুম্বী। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সারাদিন ফুটবল খেলা দেখেন এবং সারাক্ষণ ফুটবল ফুটবল বলে মেতে থাকেন।

মজার বিষয় হলো ফুটবল খেলা দেখা ও সারাক্ষণ ফুটবল নিয়ে মেতে থাকলেও অনেকেই ফুটবল খেলার নিয়ম ও আইন কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। সেই সকল ফুটবল প্রিয় বন্ধুদের জন্যই আমি আজকের এই আর্টিকেলে ফুটবল খেলার নিয়ম ও আইন কানুন ২০২৪ সম্পর্কে আলোচনা করছি। ফুটবল খেলার নিয়ম জানার আগে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত-

ফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল খেলার সঠিক ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে ফুটবল খেলার উৎপত্তিস্থল তৎকালীন ইংল্যান্ড বর্তমান (যুক্তরাজ্য)। ধারনা করা হয়, ১৮৬৩ সালে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলার প্রচলন শুরু হয়। তবে কিছু কিছু মতানুসারে, প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে ফুটবল খেলার উৎপত্তি হয় প্রাচীন গন চীনে। ইতিহাস গবেষণা করে বৈচিত্র্য ও সকল তত্ত্ব উপাত্তের ভিত্তিতে যা পাওয়া যায় তা হলো, ফুটবল খেলা শুরু হয়েছিলো প্রায় ৩৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচিনযুগে গ্রিক ও রোমান সম্প্রদায়িকগোষ্টীর মধ্যে।

মজার বিষয় হচ্ছে ফুটবল খেলা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়মে খেলা হতো এবং ফুটবল খেলার নামও আলাদা ছিল। এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সকল দেশ এক নিয়মে ফুটবল খেলার জন্য ১৯০৪ সালে ফিফা গঠন করা হয়। ফুটবল খেলার জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও, ফিফা গঠিত হয় ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯০৪ সালের ২১ মে মাসে। ফিফার চেষ্টাতেই সারা বিশ্বে ফুটবল খেলা পরিচিতি লাভ করে ও জনপ্রিয় হয়। (wiki)

ফুটবল খেলার নিয়ম

ফুটবল খেলার নিয়ম

প্রত্যেকটা খেলারই বিধিবদ্ধ কিছু নিয়ম রয়েছে। ফুটবল খেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। ফুটবল খেলার মোট ১৭ টি নিয়ম বা আইনকানুন রয়েছে। প্রতিটি আইনে বেশ কয়েকটি নিয়ম এবং নির্দেশ রয়েছে। চলুন পাঠক বন্ধুরা তাহলে জেনে নেই ফুটবল খেলার ১৭ টি নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত-

ফুটবল খেলার মাঠ

আইন-১ঃ ফুটবল খেলার মাঠ

ফুটবল খেলার নিয়ম এর মধ্যে সর্ব প্রথম নিয়ম বা আইন হচ্ছে ফুটবল খেলার মাঠের আকার এবং চিহ্ন নির্ধারন করা। সাধারণত আমরা যাকে ফুটবলের মাঠ বা পিচ বলে থাকি। ফুটবলের মাঠ কৃত্রিম অথবা প্রাকৃতিক ঘাস দ্বারা গঠিত হতে পারে। সম্পূর্ণ মাঠ একটি মধ্যরেখা দ্বারা বিভাজিত থাকে। মধ্যরেখার ঠিক মাঝ বরাবর স্থানকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আকা হয়। বৃত্তটির নাম মধ্যবৃত্ত যার ব্যাসার্ধ ৯.১৫ মিটার। ফুটবল খেলার টাচ লাইন গুলি অবশ্যই ৯০-১২০ মিটার দীর্ঘ এবং গোল লাইন ৪৫-৯০ মিটার চওড়া এবং প্রস্থের সমান হতে হবে।

আইন -২ঃ ফুটবল

ফুটবল খেলার সবচেয়ে মেইন জিনিসটায় হচ্ছে বল। বল না থাকলে তো আর ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। আবার যেকোন বল দিয়েও খেলা যায় না। তাই ফুটবল খেলার জন্য বলের আকার, আকৃতি এবং এর উপাদান গঠন নির্দিষ্ট। বলের আইন অনুসারে একটি বলের আদর্শ ব্যাস প্রায় সেমি এবং পরিধি ৬৮-৭০ সেমি হতে হবে। ফুটবল বলটির ওজন ৪১০-৪৫০ গ্রামের মধ্যে হতে হবে।

ফুটবল খেলোয়াড়

আইন -৩ঃ ফুটবল খেলোয়াড়

খেলোয়াড় ছাড়া ফুটবল খেলা ধুলা করা সম্ভব না। ফুটবল খেলায় প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকতে হবে। ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে অবশ্যই একজনকে গোলকিপার হতে হবে। একটি ফুটবল দলকে সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করার জন্য কমপক্ষে অতিরিক্ত সাতজন খেলোয়াড় থাকতে হবে। খেলোয়াড়দের তাদের পা বা ধড় দিয়ে বল আঘাত করা উচিত। গোলরক্ষক ব্যতীত কোন খেলোয়াড়কে বল স্পর্শ করার জন্য তাদের হাত বা বাহু ব্যবহার করার অনুমতি নেই

আইন-৪ঃ ফুটবল খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম

ফুটবল খেলার নিয়ম এর মধ্যে খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপদান। ফুটবল খেলায় সকল খেলোয়াড় কে নিয়মানুযায়ী একটি শার্ট, হাফপ্যান্ট, মোজা, জুতা এবং সঠিক শিন সুরক্ষা পরতে হবে। খেলোয়াড়দের এমন কোন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা অন্য খেলোয়াড়দের ক্ষতির কারণ হতে পারে। গোলরক্ষককে অবশ্যই অন্যান্য খেলোয়াড় এবং ম্যাচ কর্মকর্তাদের থেকে আলাদা রঙের পোশাক পরতে হবে যাতে সহজে তাদের বোঝা যায়।

রেফারি

আইন-৫ঃ রেফারি

ফুটবল খেলায় রেফারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। কেনোনা একজন রেফারিই ফুটবল খেলার ম্যাচ পরিচালনা করে থাকেন। বিরোধ সহ প্রায় বিষয়েই রেফারির কথা শেষ কথা। একজন রেফারির কাছে খেলোয়াড়কে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, ফাউলের ক্ষেত্রে একটি ম্যাচ বন্ধ করার এবং খেলাটি তদারকি করার সাধারণ দায়িত্ব রয়েছে।

আইন-৬ঃ অন্যান্য ম্যাচ কর্মকর্তারা

রেফারি ছাড়াও একটি ম্যাচ পরিচালনা করতে সহকারি রেফারির প্রয়োজন। তারা খেলার সকল প্রকার সাজ-সজ্জা বজায় রাখতে রেফারিকে সাহায্য করেন। সহকারী রেফারিদের মাঠের উভয় পাশে স্থাপন করা হয় এবং অপরাধ সংঘটনে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

আইন-৭ঃ ফুটবল খেলার সময়কাল

একটি সাধারণ ফুটবল ম্যাচে খেলার সময় ৯০ মিনিট, যা প্রতিটি ৪৫ মিনিটে দুটি অর্ধে বিভক্ত। দুই অর্ধের মধ্যে, ১৫ মিনিটের হাফটাইম বিরতি আছে। পূর্ণ-সময় খেলার সমাপ্তি চিহ্নিত করে। অর্থাৎ, ৪৫ মিনিট খেলা + ১৫ মিনিট বিরতি + ৪৫ মিনিট খেলা

আইন-৮ঃ খেলা শুরু করার নিয়ম

ফুটবল খেলা শুরুর আগে দুই দলের মোট ১১ জন করে ২২ জন খেলোয়াড় সহ তিন জন রেফারি মিলে মোত ২৫ জিন মাঠে নামবেন। তারপর দুই দলের অধিনায়ক সহ রেফারি মিলে টস করবেন। টসে বিজয়ী দল যারা হবেন তারা মাঠের যেকোন একটি সাইড মতো পছন্দ করবেন। আর যারা টসে পরাজিত হবেন তারা রেফারির বাঁশির সংকেত পাওয়া মাত্র “কিক অফ” এর মাধ্যমে খেলা শুরু করে দিবেন। এই কিক অফ থেকে যদি কোন গোল হয় তবে সেই গোলকে বৈধ হইসাবে গন্য করা হবে।

খেলার মধ্যে এবং বাইরে বল

আইন-৯ঃ খেলার মধ্যে এবং বাইরে বল

ফুটবল খেলার সময় বল বিভিন্ন কারণে মাঠের বাহিরে চলে যায়। কোনো খেলোয়ার যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বল মাঠের বাহিরে পাঠায় অর্থাৎ বল গড়িয়ে বা উড়ে গিয়ে মাঠের গোল লাইন ও টাচ লাইন অতিক্রম করে, তবে সেই বলকে খেলার বাহিরে ধরা হবে। তখন যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে আবার খেলা শুরু করতে হয়।

আইন-১০ঃ ম্যাচের ফলাফল নির্ধারন

ফুটবল খেলার ফলাফল নির্ধারন করা হয় গোল সংখ্যার মাধ্যমে। ফুটবল খেলার দুইটি দলের মধ্যে যে দলের গোল সংখ্যা বেশি হবে সেই দলই বিজয়ী হবে। গোল হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে; খেলার মধ্যে যদি বল গোল পোষ্টের ভিতরে উড়ে গিয়ে কিংবা মাটি স্পর্শ করে সম্পূর্ন প্রবেশ করে ক্রসবার পার হয় তখন সেই বলটিকে গোল হিসাবে ধরা হয়। দুই দল যদি সমান গোল করে থাকে তখন ম্যাচটি ড্র হিসাবে নির্ধারিত হয়। সে ক্ষেত্রে ড্র বা টাই ভাঙার জন্য টাইব্রেকার পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

আইন-১১ঃ অফসাইড

ফুটবল খেলার নিয়ম এর মধ্যে অফসাইড একটি যুগোপুযোগী নিয়ম। কোন খেলোয়াড় অফসাইড হয়ে বিপক্ষ দলকে গোল দিলে সেটা গোল হিসাবে গন্য হবে না। অফসাইড হচ্ছে বল ছাড়া বা কিক মারার সময় নিজের দলের খেলোয়াড় বল ব্যতিত বিপক্ষ দলের অর্ধেক মাঠে সর্বশেষ প্রতিরক্ষকের থেকে এগিয়ে অবস্থান করে তাহলে খেলোয়াড়টিকে অফসাইড অবস্থানে বলা হয়।

আইন-১২ঃ ফাউল এবং অসদাচরণ

ফাউল এবং অসদাচরণ ফুটবল খেলার নিয়ম এর মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ম। ফাউল তখনই সংঘটিত হয় যখন খেলার নিয়ম না মেনে কোন খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড়য়ার কে খেলতে বাধা প্রদান করে। খেলার মধ্যে যেকোনো ধরনের ফাউল বা অসদাচারণ সীমিত করতে অনেক ধরনের নিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষত হলুদ ও লাল কার্ডের প্রচলন ফাউল ঠেকানোর জন্যই হয়েছে। ফাউলকারী খেলোয়াড়ের প্রতিপক্ষ দলকে শাস্তি হিসেবে ফ্রি কিক দেওয়া হয়।

ফ্রি কিক

আইন-১৩ঃ ফ্রি কিক

ফ্রি কিক কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা; ডাইরেক্ট ফ্রি কিক এবং ইন্ডাইরেক্ট ফ্রি কিক। নিচে ডাইরেক্ট ফ্রি কিক এবং ইন্ডাইরেক্ট ফ্রি কিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • ডাইরেক্ট ফ্রি কিকঃ একটি দল পরোক্ষ ফ্রি কিক পাওয়ার পরে আবারও ফাউল করা দলকে ডাইরেক্ট ফ্রি কি দেওয়া হয়। এটি দিয়ে একটি গোল সরাসরি করা যেতে পারে।
  • ইন্ডাইরেক্ট ফ্রি কিকঃ এগুলি “নন-পেনাল” ফাউলের পরে বিপরীত পক্ষকে দেওয়া হয়, বা যখন কোনও নির্দিষ্ট ফাউল না ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকে সতর্ক বা বের করার জন্য খেলা থামানো হয়। এর ফলে গোল হতে পারে বা নাও হতে পারে।

আইন-১৪ঃ পেনাল্টি কিক

আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড় যদি প্রতিরক্ষাকারী দলের পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে থাকা অবস্থায় কোনো ফাউলের শিকার হয় যার কারণে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়ে থাকে, তবে আক্রমণকারী দল একটি পেনাল্টি পাবে।

আইন-১৫ঃ থ্রো-ইন

বল খেলার মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরে একটি থ্রো-ইন দেওয়া হয়। যে খেলোয়াড় শেষবার বল স্পর্শ করেছে তার প্রতিপক্ষ একটি থ্রো-ইন পায়।

আইন-১৬ঃ গোল কিক

গোল কিক দেওয়া হয় যখন পুরো বলটি গোল লাইন অতিক্রম করে, মাটিতে বা বাতাসে, আক্রমণকারী পক্ষের একজন সদস্যকে শেষবার স্পর্শ করে এবং গোল হয় না। বলটি গোলরক্ষক দ্বারা একটি গোল কিক দেওয়া হয়।

কর্নার কিক

আইন-১৭ঃ কর্নার কিক

যদি প্রতিরক্ষাকারী দল নিজেই নিজেদের গোল লাইন দিয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে দেয় তবে বিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক পায়। তখন বল কর্নার এরিয়ায় রেখে কিক করতে হয়। এছাড়াও যে পাশ দিয়ে বল গোল লাইন অতিক্রম করবে সেই পাশের কর্নার এড়িয়াতে বল রেখে কর্নার কিক করতে হয়।

শেষ কথা

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা ফুটবল খেলার নিয়ম ও আইন কানুন ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনার ফুটবল প্রিয় বন্ধুদের মাঝে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। অন্যান্য খেলা সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের এই ওয়েব সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আল্লাহ্‌ হাফেয।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *