প্লাস্টিক দূষণ কি? আমরা কি প্লাস্টিক দূষণ করে মানব জীবনের ইতি টানছি?

প্লাস্টিক দূষণ কি? আমরা কি প্লাস্টিক দূষণ করে মানব জীবনের ইতি টানছি?

প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের পরিবেশের ওপর নানা প্রভাব দেখা যায়। ফলে পরিবেশগত ভাবে আমরা নানা সমস্যার কবলে পড়ি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক ঝড়, নিম্নচাপ, পরিবেশ দূষণ সহ আর নানা সমস্যা। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এখানে প্লাস্টিক দূষণকে রোধ করতে নানা ধরনের বক্তব্য উপস্থিত করা হয়।

নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আপনি কি জানেন, এই দূষণ কিভাবে কাজ করে? এবং এই দূষণের প্রক্রিয়াই বা কি? তবে আসুন আজ আমরা প্লাস্টিক দূষণের সঠিক ধারনা ও তথ্য সম্পর্কে জানবো।

প্লাস্টিক দূষণ কি?

প্লাস্টিক দূষণ হল পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আহরণ। যা পরবর্তীতে যে বন্যপ্রাণ, বন্যপ্রাণ আবাসস্থল, এমনকি মানবজাতীর ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশের দিক দিয়ে ভয়াবহতা ডেকে আনতে সক্ষম। কেননা এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার ফলে আমাদের পরিবেশ ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক দূষণের পরিমান ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাস্টিক সাধারানত একটি পলিমার। যা কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়।

এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি হয়। এর ফলে আমাদের পরিবেশ সহ সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র, এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে আমাদের প্রাকৃতিকে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের অসচেতনতার কারণে আমরা নিজেই ক্ষতির সম্মখিন হচ্ছি। কেবল মাত্র আমাদের সচেতনের মাধ্যমেই এটিকে রোধ করা সম্ভব।

প্লাস্টিক দূষণের পরিবেশগত প্রভাব

প্লাস্টিক দূষণের পরিবেশগত প্রভাব

প্লাস্টিক দূষণ বর্তমান সময়ে এর প্রভাব বেড়েই চলছে। প্লাস্টিক যেমন আমাদের নানা কাজে সহয়তা করে, তেমনি এটি প্রাকিতিক দিকদিয়ে মারাক্তক আকার ধারন করে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই প্লাস্টিকের চাহিদা অত্যাধিক। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ইত্যাদি। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়। এছাড়াও এটি আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে যেমনঃ-

  • ভুমি ও মাটি দূষণ।
  • বায়ু দূষণ
  • মাইক্রোপ্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়িতা।
  • সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র।

প্লাস্টিক দূষণের দিক দিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়িতা ভয়াবহতা ডেকে আনে। আমরা সকলেই জানি প্লাস্টিক সহজেই মাটির সাথে মিশে যেতে পারে না। ফলে এটি বহু বছর পর ভেঙে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্রাংশে পরিণত হয়। যা বাতাসের সাথে মিশে নানা রোগব্যাধি বৃদ্ধি করে। এবং এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনাগুলো আমাদের খাদ্যর সাথে মিশে আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।

প্লাস্টিক ব্যাবহার এবং বেবস্থাপনা

প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে ব্যাবহার হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলিথিন ও নানা ধরনের স্ট্র এবং বোতলের মতো দ্রব্যাদি। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এগুলো ব্যাবহার হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু প্লাস্টিক প্যাকেটের উৎপাদনেই ২০২০ সালে ১৪৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্রয়োজন হয়েছে। এই পরিমাণ বিশ্বব্যাপী মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় প্রায় ২৮ শতাংশ। আমাদের প্রায় সকলের অসচেতনের জন্য প্লাস্টিক দ্বারা আমাদের পরিবেশের ওপর নানা প্রভাব বিস্তার করছে।

আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় ভাগাড়ে, যেগুলো পচতে সময় গেলে যায় বছরের পর বছর। এছাড়াও নানা ধরনের জলাসয় সহ আর নানা স্থানে। যার জের ধরেই ক্রমবর্ধমান সমুদ্র দূষণের সমস্যাটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের সঠিক ভাবে প্লাস্টিকের ব্যাবহার করতে হবে। যাতে আমাদের পরিবেশ সুন্দর ও রোগমুক্ত থাকে। এবং সঠিক বেবস্থাপনার ফলে আমরা এটিকে রোধ করতে পারি।

সমুদ্রের জলে প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দিক দিয়ে নানা প্রভাব ফেলে। আমাদের পরিবেশের সাথে এটি সুমুদ্রের জলে নানা ক্ষতি দেকে আনে। আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক একটি বর্জ্যর আকার ধারন করে। ফলে সেটিকে রোধ করতে আমাদের চারপাশে নানা স্থানে ফেলা হয়। তার মধ্য অন্যতম জলাসয়, সমুদ্রের কেন্দ্রস্থল সহ নানা স্থানে। ২০১২ সালে, গবেষণার মাধ্যেমে জানানো হয় যে, সমগ্র বিশ্বের সমুদ্রে আনুমানিক ১৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। যা আমাদের কল্পনার বাইরে। এবং প্রতিবছর এর পরিমান বেড়েই চলছে। ফলে সামুদ্রিক প্রানিদের প্রাণহানি সহ নানা সমস্যার কবলে পরতে হচ্ছে।

ফলে প্লাস্টিক থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর রাষায়নিক পদার্থ যেমন: বায়োস ফেনল, পলিস্টিরিন ইত্যাদি পরিস্রুত হয়। যা আমাদের পরিবেশ সহ সমুদ্রের জন্য বেশ ক্ষতির দিক দেকে আনতে সক্ষম। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সমুদ্রের পানিতে প্রায় ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে। এবং প্রতিবছর অধিক পরিমাণের প্লাস্টিক জমা হচ্ছে যা সামুদ্রিক প্রাণি ও আমাদের চারপাশের পরিবেশকে ধংসের দিকে ধাবিত করছে।

সমুদ্রের জলে প্লাস্টিক দূষণ

প্লাস্টিক দূষণে প্রাণীকূলের উপর প্রভাব

প্লাস্টিক দূষণ প্রাণীকুলে খাদ্যচক্রের ওপর নানা প্রভাব বিস্তার করে। প্লাস্টিক একটি মারাক্তক আকার ধারন করে আমাদের পরিবেশগত দিক দিয়ে। প্লাস্টিকের ব্যাবহার এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যেকিনা দিন দিন এর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে প্রাণীকুলের দিক দিয়ে এর প্রভাব অন্যতম। কারণ বেশকিছু সামুদ্রিক প্রজাতি, যেমন: সামুদ্রিক কচ্ছপের পাকস্থলীতে বিজ্ঞানিরা প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য পেয়েছেন ৷

যখনই এমনটা ঘটে, তখন ঐসব প্রাণী ক্ষুধায় ভোগে কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য তাদের পরিপাকতন্ত্রকে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে অনেক প্রানির মৃত্যু ঘটে। প্লাস্টিকের ব্যাবহারের পরিমান আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। কেননা এটি আমাদের নানা ভাবে ক্ষতির দিকে ধাবিত করছে। যার ফলে সামুদ্রিক প্রানির প্রাণহানি সহ প্রাকৃতিতে নানা পরিবর্তন দেখা মেলে।

প্লাস্টিক দূষণকে কমিয়ে আনতে বিশ্বের নানা উন্নয়নশীল দেশ নানা ধরনের কার্যক্রম চালু করছে। যা আমাদের পরিবেশ রক্ষায় গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে সক্ষম। এছাড়াও অনেক স্থানে পলিথিন সহ নানা প্লাস্টিক জাতীয় বস্তু কমিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক ব্যাবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তাই আমাদের সকলের উচিত নিজ নিজ দায়িত্বে  প্লাস্টিকের ব্যাবহার কমিয়ে এনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *