পকেট রাউটার কি? পকেট রাউটার এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানুন

পকেট রাউটার কি? পকেট রাউটার এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানুন

পকেট রাউটার হলো ওয়াইফাই রাউটার এর মতো একটি যন্ত্র। এটা ওজনে খুবই হালকা হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই হাতের তালু বা পকেটে জায়গা হয়ে যায়। তাই পকেট ওয়াইফাইকে আপনার ব্যক্তিগত এবং পোর্টেবল ওয়াইফাই রাউটার হিসেবে ভাবা যেতে পারে। এটি 3G এবং 4G সিম দিয়ে চালানো যায়।

আমাদের বাসা বাড়ির ওয়াইফাই রাউটারের সাথে এর পার্থক্য হলো, এটি সিম দিয়ে চলে, এর ব্যাটারি ব্যাকআপ আছে এবং এটি ছোট ও পরিবহনযোগ্য। এই পকেট রাউটারের যেমন সুবিধা আছে তেমনি এর অনেক অসুবিধাও রয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো পকেট রাউটার কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো কি কি? চলুন তবে শুরু করা যাক-

পকেট রাউটার কি

পকেট রাউটার কি?

পকেট রাউটারকে বলা হয় ওয়াইফাই রাউটারের ছোট ভার্সন। এটি এমন একটি যন্ত্র যা দেখতে ছোট মোবাইল ব্যাটারির মতো।  পকেট রাউটার হল একটি পোর্টেবল ওয়্যারলেস মডেম। যা MiFi, মোবাইল হটস্পট বা ইন্টারনেট ডঙ্গল নামেও পরিচিত। এটি যেকোনো Wi-Fi ডিভাইস (স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট) একটি মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করতে পারে। এর সাহায্যে যেকেউ এর নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হয়ে ইন্টারনেট চালাতে পারবেন। পকেট রাউটার এর সাইজ ছোট তাই এই রাউটারটিকে পকেটে করে যেকোন জায়গায় নেওয়া যায়।

এটি দেখতে ইন্টারনেট মডেম এর মতই ছোট এবং কিছুটা মডেমের মতই কাজ করে থাকে। কিন্তু মডেমে ইনপুট করে ইন্টারনেট চালাতে হয় আর পকেট রাউটারে ওয়াইফাই কানেক্ট করে চালানো যাই। আকারে ছোট ও ওজনে হালকা হবার কারণে এটি বহন করাও বেশ সুবিধাজনক। এর প্রধান সুবিধা হলাে একটু বেশি স্পিড পাওয়া যায় আর কয়েকজন একসাথে চালানো যায়। আপনি যেকোন সিমেই এটা ঢুকিয়ে ইন্টারনেট চালাতে পারবেন। তাই বলা যায়, পকেট রাউটার হলো এমন একটি ডিভাইস, যা সর্বত্র বহনযোগ্য, দেখতে ছোট এবং যার মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

পকেট রাউটার কীভাবে কাজ করে

পকেট রাউটার কীভাবে কাজ করে?

পকেট রাউটার এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সাধারনত ১০-১৫ মিটার হয়ে থাকে। এতে কোন তার সংযোগের দরকার হয়না এবং কোন সফটওয়্যারের দরকার হয় না। শুধুমাত্র সুইচ অন করতে হয় এবং নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। এটা মোবাইল হটস্পটের মতো কাজ করে। এতে একটি সিম কার্ড থাকে যার মাধ্যমে এটি বিভিন্ন ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে থাকে। একবার সিম কার্ডের সাথে সংযোগ হয়ে গেলে এটি মোবাইলের মতো কাজ করে থাকে।

পকেট রাউটারগুলো সাধারণত এক ধরনের সংকেতের মাধ্যমে থ্রিজি বা ফোরজি কানেকশন তৈরি করতে পারে। আমরা বাসাবাড়িতে যেভাবে ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করে থাকি এটাও ঠিক তার মতই। কিন্তু বাসার রাউটারের সাথে এই রাউটারের পার্থক্য হচ্ছে বাসারটা আমরা কোথাও নিয়ে যেতে পারিনা, কিন্তু পকেট রাউটার আমরা আমাদের সাথে করে নিয়ে যেতে পারি। পকেট রাউটার পকেটে করে নিয়ে স্বাচ্ছন্দে যে কোনো স্থানে যাওয়া যায় এবং এর ফলে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা যায়। এটা দেখতে অনেকটা ইন্টারনেট মডেমের মতো ছোট আকারের।তবে মডেমে ইনপুটের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালাতে হয় আর পকেট রাউটারে ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা নেওয়া যায়।

সেরা কিছু পকেট রাউটারের নাম

সেরা কিছু পকেট রাউটারের নাম

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন ধরনের পকেট রাউটার কিনতে পাওয়া যায়। তার মধ্য থেকে আপনি কোনগুলো কিনবেন? কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে? তাই আজকে আমি আপনাদের জানাবো বাজারের সেরা কিছু কোম্পানীর পকেট রাউটারের নাম। যেগুলো ক্রয় করলে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্য সেগুলোকে ব্যবহার করতে পারবেন।

  • TP-Link M7350
  • Huawei Mobile Wi-Fi 3s (E5576-320)
  • TP-Link M7200
  • TP-Link M7450
  • Huawei 5G Mobile Wi-Fi Pro E6878-370

পকেট রাউটারের সুবিধা

পকেট রাউটারের সুবিধা

পকেট রাউটার দেখতে ছোট মোবাইল ব্যাটারির মতো। এর প্রধান সুবিধা হলাে একটু বেশি স্পিড পাওয়া যায় এবং একসাথে অনেকজন চালানো যায়। এই রাউটারের আরোও অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে পকেট রাউটারের সেই সব সুবিধাগুলো সম্পর্কে লেখা হলো-

সহজে বহনযোগ্যঃ- পকেট রাউটারের প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হলো এটি সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বহন করা যায়। এবং আকারে ছোট হওয়ায় সহজেই এটি ব্যবহার করা যায়। পকেট রাউটারকে আপনি আপনার সাথে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন হোক সেটা ঘরে কিংবা বাহিরে যেকোনো স্থানেই নিয়ে গিয়ে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন ধরুন, ট্রেন-লঞ্চ-বাস-কার কিংবা বিমানে ট্র্যাভেল করলেও আপনি যেমন পকেট রাউটার ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। আর পোর্টেবল সিস্টেম থাকায় পকেট রাউটার ব্যবহার আরও সুবিধাজনক।

ইন্টারনেট সুবিধাঃ- বর্তমান যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর যত্রতত্র মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরোও সহজ করেছে পোর্টেবল পকেট রাউটার। কারণ, পকেট রাউটার বহন করা খুবই সহজ। আর এটা সব জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ফলে আপনি যেখানেই যান না কেন সব খানেই ইন্টারনেট পাবেন। ফলে প্রত্যান্ত অঞ্চলে গেলেও আপনার ইন্টারনেট নিয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না।

লং লাস্টিং ব্যাটারিঃ- আমরা সাধারণত যে রাউটার ব্যবহার করি তার থেকে পকেট রাউটার তুলনামূলক ভিন্ন। কারণ, পকেট রাউটার চালাতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। আর পকেট রাউটারের ব্যাটারিতে চার্জ দিলে তা সাধারণত ৬-৮ ঘন্টা লাস্টিং করে থাকে। রিচার্জেবল ব্যাটারি সিস্টেমের কারণে আপনি সহজেই যেকোনো জায়গায় এই রাউটার নিয়ে যেতে পারেন। এটা ইউএসবি ক্যাবল দিয়ে চার্জ দেওয়া যায়। আর এই ব্যাটারির কারণেই পকেট রাউটার মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়েছে।

বাড়তি কেবলের প্রয়োজন নেইঃ- আজকাল বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে কেবলের প্রয়োজন হয়না। আর তেমনি একটি ডিভাইস হলো এই পকেট রাউটার। এই ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি তারের ঝামেলাও নেই। বাসা বাড়ি কিংবা অফিসের ওয়াইফাই রাউটারে যেমন বাড়তি কেবলের প্রয়োজন হয় এবং এসব তার অনেক সময়ই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিরাপদ এবং বিপদমুক্ত থাকতে পকেট রাউটার ব্যবহার করতে পারেন।

নেটওয়ার্ক সিকিউরিটিঃ- পকেট রাউটার ব্যবহারের আরেকটি অন্যতম সুবিধা হলো এটি আপনি পাবলিক প্লেসেও ব্যবহার করতে পারবেন এবং এতে সিকিউরিটি নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার হাতে থাকা পকেট রাউটারে পাসওয়ার্ড থাকায় এটি চাইলেই সকলে ব্যবহার করতে পারবে না। ফলে আপনার সিকিউরিটি নিয়ে বাড়তি কোনো চিন্তার কারণ নেই।

অধিক মানুষের ব্যবহার যোগ্যঃ- পকেট রাউটারের আরোও একটি বড় সুবিধা হলো এটি একসাথে অনেক মানুষ ব্যবহার করতে পারে। পকেট রাউটার আপনার স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইসকে কানেক্ট করতে পারে। ফলে একই সাথে অনেক মানুষ বিভিন্ন ডিভাইসের সুবিধাও গ্রহণ করতে পারে।

 তুলনামূলক কম দামঃ পকেট রাউটারের দাম ওয়াইফাই রাউটার থেকে তুলনামূলক কম। বাজারে বিভিন্ন দামে পকেট রাউটার কিনতে পাওয়া যায়। তবে মোটামুটি ভালোমানের পকেট রাউটার কিনতে চাইলে ২-৩ হাজার টাকার মতো পরবে।

পকেট রাউটারের অসুবিধা

পকেট রাউটারের অসুবিধা

পকেট রাউটারের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি এর অসুবিধাও রয়েছে। তবে পকেট রাউটার ব্যবহারে অসুবিধার তুলনায় সুবিধায় বেশি। তবুও এর সামান্য যে অসুবিধাগুলো রয়েছে নিচে সে সম্পর্কে লেখা হলো-

ইন্টারনেট গতি কমঃ- পকেট রাউটার দিয়ে একসাথে অনেক মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস চালায় ফলে ইন্টারনেট স্প্রিড হ্রাস পায় বা ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। আর ইন্টারনেটের কম গতির কারণে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।  যার ফলে আমরা আমাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারি না।

ইন্টারনেট মেয়াদকালঃ- পকেট রাউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি অসুবিধা হলো ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদসীমা। পকেট রাউটার সিম কার্ডের সাহায্য ব্যবহার করা হয়। আর সিম কার্ডের ইন্টারনেট প্যাকেজের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। ফলে নির্দিষ্ট সময় পর যেকোনো সিম কার্ডেরই ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই পকেট রাউটার ব্যবহারে নেতিবাচক ইন্টারনেট প্যাকেজ প্ল্যানের সীমাবদ্ধ থাকবে।

চার্জঃ পকেট রাউটার চালাতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। ফলে ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই আগে থেকেই এই ডিভাইসগুলি চার্জ করা প্রয়োজন এবং চার্জ না থাকলে ব্যাটারি ফুরিয়ে যেতে পারে। তাই পকেট রাউটার ব্যবহার করার আগে এর ব্যাটারিতে রিচার্জ করে নিন যাতে ৮-১০ ঘন্টা বা তার বেশি একটানা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, কাজের সময় যদি এর ব্যাটারিতে চার্জ না থাকে তাহলে কাজে বাধাগ্রস্ত হতে হয়।

ব্যবহার ব্যয়ঃ- আমরা সাধারণত যে ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করি তার থেকে পকেট রাউটার ব্যবহার করা অত্যাধিক ব্যয়বহুল। কারণ, নির্দিষ্ট কোম্পানির সিম দিয়ে এটি ব্যবহার করতে হয়। আর একটি ডাটা প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। যার কারণে, এসব প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমা ও ডাটা লিমিট থাকায় আপনি ইচ্ছামতো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না।

সেটিংসে পরিবর্তনঃ-  আপনি যখন পকেট রাউটার নিয়ে বাহিরের দেশে ভ্রমণ করবেন তখন এই রাউটারের সেটিংসে পরিবর্তন করতে হয়। আর  এর ইন্টারনাল সফটওয়্যার সেটিংস চেঞ্জ করে বিভিন্ন ডিভাইসে কানেক্ট করার জন্য কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হয়। ফলে অনেক সময় এই প্রোসেসিংটি বেশ সমস্যাপূর্ণ।

হারিয়ে যাওয়া ভয়ঃ- পকেট রাউটার যেহেতু খুব ছোট একটি  ডিভাইস তাই এই ডিভাইসটি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। পকেট রাউটারের যতগুলো অসুবিধা রয়েছে তার মধ্যে এটিও অন্যতম।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ, আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানিয়েছি পকেট রাউটার কি, এটি কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো কি কি। আমরা সবাই এখন যেহেতু ইন্টারনেট নির্ভর। আর ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না। সেক্ষেত্রে পকেট রাউটার হতে পারে ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান। এটিকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। এবং বর্তমানে এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এবং এটিকে আপনার পছন্দের সিম দ্বারাই চালাতে পারবেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রাউটার কি? রাউটার কিভাবে কাজ করে?