তাজমহল কোথায় অবস্থিত। তাজমহলের রহস্য ও ইতিহাস জানুন

তাজমহল কোথায় অবস্থিত। তাজমহলের রহস্য ও ইতিহাস জানুন

তাজমহল পৃথিবীর সপ্তমাশ্চার্যের মধ্যে একটি। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের (wiki) অমর কীর্তি তাজমহল কোথায় অবস্থিত, তাজমহলের রহস্য ও ইতিহাস সম্পর্কে আপনারা যারা জানতে ইচ্ছুক তারা সঠিক আর্টিকেলটিতে এসেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি তাজমহল কোথায় অবস্থিত, তাজমহলের রহস্য ও ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা যারা তাজমহল সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চান তারা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাজমহল কোথায় অবস্থিত? জানার আগে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নিব তাজমহল কি-

তাজমহল

তাজমহল

তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। এটি মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম (wiki) যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। তাজমহল বিশ্বের অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ ও মনোমুগ্ধকর নিদর্শন।

তাজমহল কোথায় অবস্থিত

তাজমহল কোথায় অবস্থিত

তাজমহল মূলত ভারতের আগ্রা শহরের যমুনা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। তাজমহলের ঠিকানা ধর্মপুরী , ফরেস্ট কলোনি , তাজগঞ্জ , আগ্রা , উত্তর প্রদেশ , ভারত। তাজমহল, যাকে প্রায়ই রাজপ্রাসাদের মুকুট বলা হয়। এটি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। তাজমহল হলো দুইটি শব্দের সমন্বয়। তাজ মানে মুকুট এবং মহল মানে প্রাসাদ।

তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস

তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস

১৬৩১ সালে সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহল তার ১৪তম সন্তান প্রসবের সময় মারা যান। তার মৃত্যুর পর তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে। এবং ১৬৫৩ এর কাছাকাছি সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল। মূল সমাধি ১৬৪৮ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল এবং আরও পাঁচ বছর পরে আশেপাশের ভবন এবং বাগান সম্পন্ন হয়েছিল।

তাজমহল তৈরি করার জন্য প্রায় ২০ হাজারেরও অধিক কারিগর এবং শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল। সমাধিটি সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি হয়েছিল। সমাধির অভ্যন্তরে অন্তর্নির্মিত কাজে প্রায় ২৮টি বিভিন্ন ধরণের আধা-মূল্যবান এবং মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল। পাথরগুলির মধ্যে ছিল আফগানিস্তান থেকে ল্যাপিস লাজুলি, শ্রীলঙ্কা থেকে নীলকান্তমণি, ফিরোজা ছিল তিব্বত থেকে, জেড ও ক্রিস্টাল চীন থেকে, আরব থেকে কার্নেলিয়ান এবং পাঞ্জাব থেকে জ্যাসপার। সাদা মার্বেল রাজস্থানের মকরানা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

আশ্চর্যজনক এই স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রায় এক হাজার (১,০০০) টি হাতি, বিশ হাজার (২০,০০০) লোক এবং বাইশ (২২) বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। নির্মাণস্থলে ১, ০০০ টিরও বেশি হাতিকে কাজে লাগিয়েছিল, লগ উত্তোলন, বহন এবং পরিবহন, মার্বেলের ব্লক এবং নির্মাণস্থল জুড়ে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীর জন্য কাজ করা হয়েছিল।

তাজমহলের রহস্য

তাজমহলের রহস্য

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভ্রমণকারী তাজমহল দেখতে ছুটে আসেন। বিখ্যাত এই স্থাপত্যের এমন অনেক রহস্যময় বিষয় আছে, যা পর্যটকরা জানেন না। তাই আমি আপনাদের জন্য আর্টিকেলের এই পার্ট এ তাজমহল সম্পর্কে এমন কয়েকটি রহস্যময় তথ্য তুলে ধরছি-

তাজমহলের দেওয়ালে মহামূল্যবান রত্ন খচিত

মার্বেল পাথরে নির্মিত তাজমহল নির্মাণের সময় এর দেওয়াল মূল্যবাল সব রত্ন দিয়ে খচিত ছিল। আলো পড়লে দেওয়াল যেন ঝলমল করে, সেজন্যই বসানো হয়েছিল রত্নপাথর। কিন্তু তাজমহল অসংখ্যবার আক্রমণের শিকার হয়। সেসময় এর অধিকাংশ মহামূল্যবান রত্ন লুট হয়ে যায়। তবে মারবেল পাথরের তাজমহল এখনও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে পূর্ণিমা রাতে মহলের উজ্জ্বলতায় যে কেও বিমোহিত হবে।

মহলের স্থাপত্য নকশা করে দৃষ্ট্রিভ্রম

মহলের স্থাপত্য নকশা করে দৃষ্ট্রিভ্রম

তাজমহলের মেইন দরজা দিয়ে ঢোকার সময় মহলকে বিশাল ও ফ্রেমে আবদ্ধ মনে হবে। কিন্তু যতই এগিয়ে যেতে থাকবেন তা আসলে ছোট হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যা চিন্তা করি তার উলটো ঘটবে। মূল মিনারের পাশের টাওয়ারগুলো আরেকটি নিখুঁত প্রতিসাম্যের বিভ্রম সৃষ্টি করে। এগুলো পুরোপুরি সোজা মনে হলেও আসলে বাইরের দিকে কিছুটা বাঁকানো। এই বাঁকানো কিন্তু ভুল করে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বানানো। ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহলের টাওয়ারগুলো যাতে মূল মিনারের ওপর ধসে সমাধিসৌধের ক্ষতি না করে, সেজন্য বাইরের দিকে হেলানো।

মহলের সব নিখুঁতভাবে নকশা করা হলেও সমাধিসৌধ প্রতিসম নয়

সম্রাট শাহজাহান ও সম্রাজ্ঞী মুমতাজের ফাঁকা সমাধিসৌধ তাজমহলের সবচেয়ে উঁচু ফ্লোরে অবস্থিত। এই জায়গাটি প্রতিসম নয়। তবে আসল সমাধিগুলো একদম নিচ তালায় অবস্থিত, যেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই।ইতিহাসে, শাহজাহান কখনোই চাননি, তার সমাধি তাজমহলে হোক।

আসলে তাজকে প্রতিফলিত করবে, এমন আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কথা ছিল। নদীর অপর পাড়ে তাজমহলের প্রতিচ্ছবিরূপে কালো তাজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সম্রাটের। কিন্তু সেই নির্মাণকাজ কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। তার আগেই শাহজাহানকে তার পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতাচ্যুত করে আমৃত্যু কারাবন্দি রাখেন।

শাহজাহানের আসল সমাধি একদম সাদামাটা

শাহজাহানের আসল সমাধি একদম সাদামাটা

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সত্যিকারের সমাধিস্থল নিচতালায় অবস্থিত। এই সমাধি একদমই সাদামাটা। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে কবর বা সমাধিতে রত্ন খচিত থাকা উচিত নয়। অবশ্য ভেবেচিন্তেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগত দর্শকরা যেন সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর ঝলমলে সমাধি দেখে পুলক অনুভব করে সেজন্য ওপর তালায় স্মারক সমাধি।

ক্যালিগ্রাফ নকশাকারের স্বাক্ষর আজও বয়ে চলেছে তাজমহল

তাজমহলের দেয়ালে রয়েছে মনমুগ্ধকর নানা রকম জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা। এই নকশার মধ্যে ক্যালিগ্রাফি করা কুরআনের বাণীও রয়েছে। এই অক্ষরগুলো নকশা করেছিলেন আমানত খান। মার্বেলে খোদাই করা এই লেখার নিচে আরেকটি লেখাও পাওয়া যাবে। সেখানে বলা হচ্ছে “তুচ্ছ মানুষ আমানত খান সিরাজীর লেখা”।

আল্লাহকে সম্মানিত করতে তাজমহলের স্থাপত্যে রাখা হয়েছিল ত্রুটি

সাধারণ মানুষের চোখে তাজমহল দুর্দান্ত ও নিখুঁত একটি স্থাপত্য। কিন্তু কয়েক বছর আগে শিক্ষাবিদ দিলীপ আহুজা একটি পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করেন, তাজের মূল গম্বুজই নিখুঁত নয়। পরীক্ষাটি ছিল এমন তাজমহলের প্রধান গম্বুজের একটি ছবি মাঝখানে কেটে দুটি অংশ পরীক্ষা করে দেখা যায়, তা প্রতিসম নয়। ৫.৫ শতাংশ পর্যন্ত তা অপ্রতিসম।

অনেকের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহলের স্থপতি ইচ্ছাকৃত ভাবে এই খুঁত রাখেন। ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহান আল্লাহকে সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র এই অপূর্ণতাকে তাজমহলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেষ কথা

আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা তাজমহল কোথায় অবস্থিত, তাজমহলের রহস্য ও ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা তাজমহল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পারেন। তাজমহল সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানতে পারেন। ইনশাআল্লাহ্‌ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *