চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত

চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত । চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খাবার, স্থান ও ব্যক্তি

চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাতঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক এলাকা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা। তবে একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলাটি সবসময় আলোচনার বাইরে থাকে। আবার এমনও আছে, এই জেলার নাম অনেকেই জানে না। অথচ এই জেলায় রয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের দেখার জন্য অসংখ্য অপরূপ দর্শনীয় স্থান!

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত।

চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত

চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত

চুয়াডাঙ্গা বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে পরিচিত। চুয়াডাঙ্গা কিসের জন্য বিখ্যাত এটা নিয়ে অনেকের মনে কৌতূহল কাজ করে। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে পান পাতা ও তামাক পাতা চাষ করা হয়ে থাকে। যার ফলে চুয়াডাঙ্গা সারা বাংলাদেশে সমাদৃত ও বিখ্যাত। এছাড়াও এই জেলায় রয়েছে নানা দর্শনা। যেটি ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের নিকট অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা এবং পর্যটক কেন্দ্র।

চুয়াডাঙ্গার মাটিতে অনেক ভাষা শহীদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চির নিদ্রায় রয়েছেন। এছাড়াও এই জেলায় রয়েছে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত স্থান

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত স্থান

চুয়াডাঙ্গা জেলা হলো বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একসময় কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত ছিলো। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিভিন্ন বিখ্যাত স্থানের জন্য বিখ্যাত। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি, দর্শনা পার্ক, ঠাকুরপুর জামে মসজিদ, মেহেরুন শিশু পার্ক, কেরু এন্ড কোং, পুলিশ পার্ক, ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ, কার্পাসডাঙ্গা নীল কুঠি, খাজা মালিক-উল-গাউসের মাজার, গড়াইটুপি অমরাবতী মেলা, দুয়া লেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, কার্পাসডাঙ্গা, তালসারি সড়ক প্রভৃতি।

মেহেরুন শিশু পার্ক

মেহেরুন শিশু পার্ক

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে মেহেরুন শিশু পার্কটি অবস্থিত। কে আর মলিক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে প্রায় ৬০ বিঘা জায়গার উপর পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এই পার্কটি অবস্থিত। এই পার্কটি স্থানীয় মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়ে উঠেছে।

মেহেরুন শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষনীয় রাইড, নান্দ্যনিক ভাস্কর্য, ঘোড়ার গাড়ি, রেস্টুরেন্ট, তাঁতশিল্প পল্লী এবং রিসোর্ট। দর্শনার্থীদের দেখার জন্য মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে উট, ময়ূর, বানর, পেঁচাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি।

ঠাকুরপুর জামে মসজিদ

ঠাকুরপুর জামে মসজিদ

চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি অন্যতম প্রাচীন ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন হলো ঠাকুরপুর জামে মসজিদ। এই মসজিদটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের পার্শ্ববর্তী ঠাকুরপুর গ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে মসজিদটি পীরগঞ্জ জামে মসজিদ হিসেবে সুপরিচিত। প্রায় ৩০ বিঘা জায়গার উপর মসজিদটি স্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রবীনদের মতে, ১৬৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাধক পুরুষ আফু শাহ ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এক রাতের মধ্যেই জীনদের সাহায্যে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এ কারণে এই মসজিদটি অনেকেই “জিনের মসজিদ” হিসেবে অভিহিত করেন। মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রতি বছর বাংলা মাসের ১২ ফাল্গুন বার্ষিক ওরশের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলেই আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি প্রবেশ পথ দেখা যায়। আর মসজিদের পেছনে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ, একটি বড় পুকুর, এবং কনরস্থান। স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, প্রতি বৃহস্পতিবার এই মসজিদে জীনেরা নামাজ পড়ে এবং মানুষের রেখে যাওয়া  পানি বা তেলে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই তেল বা পানি পরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

দর্শনা রেলওয়ে ষ্টেশন

দর্শনা রেলওয়ে ষ্টেশন

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দর্শনা। শহরটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় অবস্থিত। এই দর্শনাতে ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর দেশের প্রথম রেললাইনের কাজ শুরু হয়। এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হলো সীমান্তবর্তী আন্তর্জাতিক মানের দর্শনা রেলওয়ে ষ্টেশন। এখান থেকেই মৈত্রী ট্রেন সরাসরি ভারতে যাতায়াত করে।

দর্শনাতে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম চিনিকল কেরু এন্ড কোং। ৩,৫৭২ একর জায়গায় উপর অবস্থিত পুরো কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, বানিজ্যিক খামার, ডিস্টিলারি ওয়াটার ও জৈব সার কারখানার সমন্বয়ে গঠিত। এই খারখানার প্রধান উৎপাদিত পণ্য চিনি হলেও উপজাত পণ্য থেকে হার্ড ড্রিংক্স, স্পিরিট এবং জৈব সার উৎপাদন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে মাথাভাঙ্গা তীরে পুলিশ পার্ক অবস্থিত। পার্কটি চুয়াডাঙ্গা শহরের ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে পুলিশ পার্কে বিনোদনের জন্য রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, বিভিন্ন আকর্ষনীয় রাইড, মিনি চিড়িয়াখানা সহ সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

এছাড়াও পুলিশ পার্ক কমিউনিটি সেন্টার এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে জন্মদিন, বিয়ে, সেমিনারসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সুব্যবস্থা আছে। পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খাবার

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খাবার

চুয়াডাঙ্গা জেলাটি খাবারের জন্যও অনেক বিখ্যাত। চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খাবারের কথা বললেই প্রথমেই মাথাতে আসে খেজুরের গুড়ের নাম। শুধু খেজুরের গুড় ই নয়, এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে বেশ সমৃদ্ধ করেছে এখানকার নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় খাবার। নিচে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিখ্যাত খাবারগুলো সম্পর্কে লেখা হলো-

খেজুরের গুড়: সারা বাংলাদেশ জুড়ে চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় বিখ্যাত। এটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু একটি খাবার।বাংলাদেশের সব জায়গায় খেজুরের গুড়টি পাওয়া যায়। গুড়টি খেজুর দানা এবং গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়। সাধারনত খেজুরের গুড়টি পিঠার মতো বা পাউরুটির সাথে খাওয়া যায়।

কুমড়ি বড়ি: কুমড়া, কলাই ডাল এবং বেশ কয়েক প্রকারের মসলা একসাথে মিশিয়ে বিশেষ কায়দায় কুমড়ি বড়ি তৈরি করা হয়। বড়িটি রোদে শুকতে দেওয়া হয়, শুকনা হয়ে গেলে তৈরি হয়ে যায় অনন্য স্বাদের কুমড়ি বড়ি। সাধারণত মাছের সাথে তরকারি এবং সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়ে থাকে। আবার অনেকে ভেজে খেতে পছন্দ করেন।

পান ও তামাক: ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চুয়াডাঙ্গায় বেশ ভালো তামাক এবং পান উৎপন্ন হয়ে থাকে। এখানে “এ” ক্যাটাগরির তামাক চাষ করা হয়। এখানকার পান পাতা বেশ বিখ্যাত।

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাংলাদেশের এমন কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্ব জন্ম গ্রহণ করেছেন যাদের অবদান ছিল রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন, ব্রিটিশ ভাগাও অভিযান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো: সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, ফিরোজা বারী মালিক, অনন্তহরি মিত্র, মিঞা মোহাম্মদ মনসুর আলী, বেবী ইসলাম, শামসুজ্জামান দুদু, কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ, আব্দুস সেলিম, আসহাব-উল-হক, টিনা খান, মোজাম্মেল হক প্রভৃতি। নিচে এই জেলার কয়েকটি বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

ফিরোজা বারী মালিক

ফিরোজা বারী মালিক ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নারী নেত্রী। তিনি ১৮৮২ সালের ৫ জুন চুয়াডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব হোসেন জোয়ার্দ্দার ও মা ফাতেমা বেগম। ১৯৮২ সালে তাকে জনসেবায় অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য তাকে “সমাজসেবায় স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়। তিনি তার স্বামীর সহযোগিতায় ভারতের শান্তিনিকেতনে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি এরশাদ সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালের ৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

অনন্তহরি মিত্র

অনন্তহরি মিত্র ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। তিনি ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ নদিয়া জেলায়, বর্তমানের বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার বেগমপুরে জন্মগ্রহণ করে। তিনি ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। এই মহান বিপ্লবীর ফাঁসি হয় ১৯২৬ সালের  ২৮শে সেপ্টেম্বর।

আব্দুস সেলিম

আব্দুস সেলিম ছিলেন বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং অনুবাদক। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতক ও স্মাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পেশায় তিনি ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক। তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। আব্দুস সেলিম ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজিতে অসংখ্য প্রবন্ধ, কবিতা এবং ছোটগল্প অনুবাদ করেছেন।

সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন

সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলার আরাম পাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা যুবলীগের সভাপতি, ৭৯ সালে আওয়ামী লীগের জেলা সেক্রেটারী ছিলেন।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় ছিলো চুয়াডাঙ্গা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেই সম্পর্কে। চুয়াডাঙ্গার সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য ইতিহাস। আশা করি আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। এমন বিভিন্ন জেলার সেরা সব আকর্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে সাথেই থাকুন

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

খুলনা জেলার পোস্ট কোড ও এরিয়া কোড জেনে নিন