Morning-Walk

সকালে হাঁটার ১০টি উপকারিতা যা আগে জানতেন না?

প্রতিদিন সকালে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুস শক্তিশালী হয়। সকালে হাঁটার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্যে করে। যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তাদের হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুকিও কমে যায় অনেকাংশে।

শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। ছোট থেকে বড় যে কেউ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে ছোট- বড় অনেক রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

আর্টিকেলটির সূচিপত্র

সকালে হাঁটার ১০টি উপকারিতা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সকালে হাঁটলে হার্ট ভালো থাকে। সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, সকালে হাঁটাচলা করার রয়েছে অনেক গুণ। নিয়মিত সকালে হাঁটাহাঁটি করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। হাঁটলে প্রাকৃতিকভাবে পাবেন সুস্থতা ও প্রাণবন্ত অনুভূতি। এই আর্টিকেলে আজকে আমরা জানবো সকালে হাঁটার ১০টি উপাকরিতা সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক-

সকালে হাঁটার ১০টি উপকারিতা _ wirebd.com

  • এনার্জি বুস্টারঃ হাঁটার জন্য সকাল বেলা উপযুক্ত একটি সময়। এই সময় পরিবেশ শান্তশিষ্ট ও নিরিবিলি থাকে। সকালে হাঁটতে বের হলে শরীর ও মন দুটোই একদম তাজা ফুরফুরে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল বেলা কেউ যদি একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটাচলা করে তাহলে মানুষের এনার্জি লেভেল অনেক বেড়ে যায়। সারাদিনের যে একটা ক্লান্তিভাব বা ঝিমানি ভাব সেটা আর থাকে না, কেটে যায়। এতে শরীর চনমনে থাকে। ফলে সারাদিনের কাজকর্মে উৎসাহ পাওয়া যায়।
  • সুস্থ হৃদপিণ্ড, সুন্দর জীবনঃ যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তাদের হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুকি কমে যায় অনেকাংশে। এছাড়াও হাঁটাহাঁটি করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল এলডিআর কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টোরেল এইচডিআরের মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের রক্তচলাচল ও স্বাভাবিক থাকে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে ২৭ ভাগ পর্যন্ত উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা কমে যায়।
  • বাড়বে সুস্থতাঃ যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে। কারণ, ডাক্তারের ভাষ্যমতে কোনো ডায়াবেটিস রোগি যদি নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তাহলে তিনি অনেক উপকারিত হন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়। ব্রিটিশ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে প্রায় ৬০ ভাগ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও চর্বি কমায়ঃ যাদের ওজন একটু বেশি তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করতে দেখা যায়। আপনি যদি নিজের ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন আপনাকে ৬০০ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যাদের ওজন ৬০ কেজি তারা প্রতিদিন ঘণ্টায় ২ মেইল গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটলে দেহের পেশিগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নিয়মিত হাঁটলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বিও কমে যায়।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ মানুষের বয়স যতো বাড়ে তত তাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বয়স ৬৫ বা তার বেশি তাদের প্রতি ১৪ জনের মধ্যে ১ জনের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। আর যাদের বয়স ৮০ বা তার বেশি তাদের প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাড়ার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার ও ঝুঁকি ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। যেসব বয়স্করা সপ্তাহে ৬ মাইল হাঁটে তাদের স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
  • মস্তিষ্কে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়ঃ গবেষণায় বলা হয়েছে, সকালে হাঁটাহাঁটির ফলে মানব মস্তিষ্ক উর্বর হয়। ফলে যেকোনো কাজেই মন বসে। নিয়মিত হাঁটলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, রক্ত ভালোভাবে চলাচল করতে পারে ফলে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগকেও ঠেকানো যায়।
  • জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি নেইঃ আজকাল তরুণদের মাঝে অনেকেরই মাসেল বা জয়েন্টে ব্যথা হতে দেখা যায়। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। সাধারণত বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন হাড় ও সংযোগস্থলে ব্যথা হতে শুরু করে। আপনি যদি শরীরের জয়েন্টগুলোকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিঃসন্দেহে হাঁটা খুবই কার্যকর একটি ব্যায়াম।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও হাঁটা বেশ কার্যকর। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের নিয়মিত হাঁটাচলা করা অত্যান্ত জরুরী। হাঁটলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমে যায়। হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে যার ফলে রক্তের গুলুকোজ কমে যায়।
  • অনিয়মিত ঘুমের সমস্যার সমাধানঃ অনেকেরই রাতে শুয়ে শুয়ে ফোন চালানোর অভ্যাস রয়েছে। এতে করে তারা রাতে সঠিক সময়ে ঘুমাতে পারেন না। তাদের ঘুম উড়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত সকালবেলা  হাঁটাচলা শুরু করেন তাহলে আপনার শরীর এক্টিভ থাকবে এবং ন্যাচারাল হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণ সঠিক ভাবে হবে। এতে করে আপনি সহজেই ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন। আপনাকে আর অনিদ্রায় সমস্যায় ভুগতে হবে না। তাই এখন থেকেই  প্রতিদিন সকালে উঠে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ভিটামিন ডিঃ সকালের আলোতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি সকালে হাঁটার অভ্যাস করেন তাহলে শরীর ভিটামিন ডি তে সমৃদ্ধ হবে। আমরা দৈনিক যে খাবার খাই সেখান থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি প্রতিদিন সকাল করে হাঁটেন তাহলে আপনি সকালের আলো থেকেও ভিটামিন ডি পাচ্ছেন। যা আপনার শরীরের জন্য ভালো।
  • শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকেঃ সকালের প্রকৃতি এমনিতেই খুব শান্তশিষ্ট ও স্নিগ্ধ থাকে। এ সময় করে হাঁটার আলাদা একটা মজা। ভোরের তাজা বাতাস শরীরকে কর্মক্ষম ও ফ্রেশ করে তোলে। প্রতিদিন ভোরে কিছুক্ষণ হাঁটলে স্ট্রেস কমে ও মন ভালো থাকে। শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে অক্সিজেনের প্রাণপ্রবাহে মাংসপেশীগুলো শিথিল ও রিলাক্সড হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিভার্সিটির জরিপে দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটাচলা করলে একাকীত্বের অনুভূতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। সেই সাথে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে মেজাজও নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

নিজেকে সুস্থ-সবল রাখতে আরও পড়ুনঃ- শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *