অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৪

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। আপনার পরিবারের অথবা পরিচিত কেউ যদি বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে ঘরে বসে অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমি দেখাবো কিভাবে খুব সহজেই অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করবেন।

বয়স্ক ভাতা আবেদন করার যোগ্যতা ও শর্তাবলী

বয়স্ক ভাতা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি যার মাধ্যমে বয়স্ক, দুস্থ, কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের লোকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। তবে সরকারি এই আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। কর্তৃপক্ষ আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখে যে আবেদনকারী বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য কি না।

বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা

  • যে এলাকা থেকে আবেদন করবেন সে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
  • জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে
  • পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর হতে হবে। বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, এসএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্র বিবেচনা করতে হবে।
  • প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় দশ হাজার টাকার কম হতে হবে
  • বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।

ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা

  • সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হলে
  • দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে
  • নিয়মিত সরকারী অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে
  • বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে।

বয়স্ক ভাতা প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড

বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী তো জানলাম। তবে আবেদন করলেই যে ভাতা পাবেন তা কিন্তু নয়। কারা বয়স্ক ভাতা পাবে আর কারা পাবেনা, তা নির্বাচন করার জন্য কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেমনঃ-

  • নাগরিকত্ব: প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স: সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • স্বাস্থ্যগত অবস্থা: শারীরিকভাবে অক্ষম/সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • আর্থ-সামাজিক অবস্থা: নিঃস্ব, ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • সামাজিক অবস্থা: বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • ভূমির মালিকানা: ভূমিহীন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতীত কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।

আশা করি কারা বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে পারবেন আর ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবেন সে বিষয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন। তাহলে চলুন এবার বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।

বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম

বয়স্ক ভাতার জন্য আপনি দুইভাবে আবেদন করতে পারবেন- বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম ও বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন। বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম ব্যবহার করে আবেদন করতে চাইলে আপনাকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজসহ নির্দিষ্ট অফিসে জমা দিয়ে আসতে হবে। আর যদি বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করতে চান তাহলে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রিন্ট করে নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজসহ নির্দিষ্ট অফিসে জমা দিয়ে আসতে হবে। চলুন কিভাবে করবেন বিস্তারিত ভাবে দেখে নেওয়া যাকঃ-

বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম

প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ/উপজেলা থেকে বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। আপনি চাইলে খুব সহজে অনলাইন থেকে বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইন থেকে বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সেটি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে নির্দিষ্ট অফিসে গিয়ে জামা দিয়ে আসলেই হয়ে যাবে। যারা বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম খুঁজছেন তারা নিচে দেওয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম

বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম PDF

বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম PDF

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদনের জন্য দরকার হবে মোবাইল/কম্পিউটার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। যার আবেদন করবেন সেই ব্যাক্তিকেও প্রয়োজন হবে কেননা তার থেকে অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে চলুন এখন আমরা দেখব কিভাবে বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করতে হয়।

  • বয়স্ক ভাতা আবেদন করার জন্য প্রথমে mis.bhata.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। তাহলে নিচের ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এখান থেকে “বয়স্ক ভাতা” অপশন সিলেক্ট করুন।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

  • যার আবেদন করবেন প্রথম বক্সে তার এনআইডি কার্ডের নম্বর ও দ্বিতীয় বক্সে তার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করে করুন। তারপরে “যাচাই করুন” বাটনে ক্লিক করুন।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

  • এনআইডি কার্ড থেকে ছবিসহ আবেদনকারীর তথ্য অটোমেটিক পূরণ হয়ে যাবে। যেই তথ্য গুলো অটোমেটিকভাবে পূরণ হবে না, সেগুলো নিজে পূরণ করে নিবেন।

এই ধাপে আবেদনকারী সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে হবে, যেমনঃ-

  • বৈবাহিক অবস্থা
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ,মহিলা ও হিজড়া)
  • পেশা
  • বার্ষিক আয়
  • স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য
  • সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
  • বাসস্থান তথ্য
  • ভূমির পরিমাণ

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

  • এরপরে যোগাযোগের তথ্য দিতে হবে, যেমন – আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড। ভাতার টাকা নেওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নম্বর দিতে হবে। অবশ্যই বিকাশ/নগদ একাউন্ট আছে এমন একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

  • আবেদনের এই ধাপে আপনাকে আবেদনের যোগ্যতা সম্পর্কিত কিছু তথ্য দিতে হবে। সাবধানে নিচের তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে কারণ, ভাতা পাবেন কি না তা এই তথ্য গুলোর উপরে নির্ভর করবে।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন

সব তথ্য ঠিক মতো দেওয়ার পরে সাবমিট করা হলে, প্রিন্ট করার অপশন পাবেন। প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে বয়স্ক ভাতার আবেদনটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিন। এরপর প্রিন্ট করা আবেদন ফরমটি পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী/উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হল-

  • বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • বয়স প্রমানের প্রত্যয়ন পত্র
  • নাগরিকত্ব সনদ

বয়স্ক ভাতা কত টাকা

দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ এবং স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে “বয়স্কভাতা” কর্মসূচি চালু করা হয়। শুরুর দিকে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশনকে এই কর্মসূচির ভেতরে আনা হয়।

অর্থবছর উপকারভোগীর সংখ্যা (হাজার জনে) মাসিক ভাতার হার (টাকায়) বার্ষিক বাজেট (কোটি টাকায়)
১৯৯৭-৯৮ ৪০৩.১১ ১০০ ১২.৫০
১৯৯৮-৯৯ ৪০৩.১১ ১০০ ৪৮.৫০
১৯৯৯-০০ ৪১৩.১৯ ১০০ ৫০.০০
২০০০-০১ ৪১৫.১৭ ১০০ ৫০.০০
২০০১-০২ ৪১৫.১৭ ১০০ ৪৯.৯২
২০০২-০৩ ৫০০.৩৯ ১২৫ ৭৫০.৫৮
২০০৩-০৪ ৯৯৯.৯৯ ১৫০ ১৭৯.৯৯
২০০৪-০৫ ১৩১৫.০০ ১৬৫ ২৬০.৩৭
২০০৫-০৬ ১৫০০.০০ ১৮০ ৩২৪.০০
২০০৬-০৭ ১৬০০.০০ ২০০ ৩৮৪.০০
২০০৭-০৮ ১৭০০.০০ ২২০ ৪৪৮.৮০
২০০৮-০৯ ২০০০.০০ ২৫০ ৬০০.০০
২০০৯-১০ ২২৫০.০০ ৩০০ ৮১০.০০
২০১০-১১ ২৪৭৫.০০ ৩০০ ৮৯১.০০
২০১১-১২ ২৪৭৫.০০ ৩০০ ৮৯১.০০
২০১২-১৩ ২৪৭৫.০০ ৩০০ ৮৯১.০০
২০১৩-১৪ ২৭২২.৫০ ৩০০ ৯৮০.১০
২০১৪-১৫ ২৭২২.৫০ ৪০০ ১৩০৬.৮০
২০১৫-১৬ ৩০০০.০০ ৪০০ ১৪৪০.০০
২০১৬-১৭ ৩১৫০.০০ ৫০০ ১৮৯০.০০
২০১৭-১৮ ৩৫০০.০০ ৫০০ ২১০০.০০
২০১৮-১৯ ৪০০০.০০ ৫০০ ২৪০০.০০
২০১৯-২০ ৪৪০০.০০ ৫০০ ২৬৪০.০০
২০২০-২১ ৪৯০০.০০ ৫০০ ২৯৪০.০০
২০২১-২২ ৫৭০১.০০ ৫০০ ৩৪৪৪.৫৪
২০২২-২৩ ৫৭০১.০০ ৫০০ ৩৪৪৪.৫৪
২০২৩-২৪ ৫৮০১.০০ ৬০০ ৪২০৫.৯৬

শেষকথা

এই আর্টিকেলে বয়স্ক ভাতা আবেদন সংক্রান্ত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া আপনি অনলাইনে আবেদন করার সময় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং কিভাবে কাগজপত্র জমা দিবেন সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পুরোটি পড়লে আপনি সফলভাবে অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে পারবেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *