২১ শে ফেব্রুয়ারি, এই দিনটি সারাদেশে আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটি আমরা পালন করে থাকি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংগঠন কর্তৃক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও ভাষণ নিয়ে আলোচনা করবো।
২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস
বাঙালি জাতির ঐতিহ্যময় এবং স্মরণীয় দিন। পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা- বিক্ষোপ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে সারাদেশে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিতে তার চরম প্রকাশ ঘটায়।
একুশে ফেব্রুয়ারি্র ঐ দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ঠিক সেই সময় পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে সালাম, আবুল বরকত, আবদুল জব্বারসহ কয়েকজন ছাত্র হতাহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতনের শিকারের পরও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নামে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের প্রাঙ্গণে শহীদদের জানাজায় অংশগ্রহণ করে। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলে, যা ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকার ভেঙ্গে দেয়।
একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। পবর্তীতে ৭ মে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। এর পর ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯ সালে ইউনোস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্ব এই দিবসটিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে।
২১ শে ফেব্রুরারির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
২১ শে ফেব্রুয়ারি সকল বাংলাভাষী মানুষদের জন্য এক গৌরবময় দিন। এই দিনে সকল ভাষা শহীদদের স্মরণ করা এবং তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করার সঠিক সময়। বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ সকল বাংলাভাষী মানুষ এই দিন পালন করে থাকে। আপনারা কম-বেশি সবাই ২১ শে ফেব্রুয়ারী সম্পর্কে জানেন। তাই আমি ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে আরো বলতে চাই।
১৯৫২ সালে পাকিস্তানি বাহিনীরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে উর্দু করতে চায়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা করার দাবিতে ছাত্র, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের ভিড়ের মাঝে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গুলি বর্ষণ শুরু করে। যার ফলে শহীদ হন অনেক ভাষা আন্দোলনকারী। তাদের মধ্যে আমরা অন্যতম হিসেবে জানি সালাম, রফিক, রব্বার, শফিউল, বরকতসহ অনেকেই। তারপর থেকে এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে।
এই দিনটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মান্তিক ও গৌরবময় স্মৃতিবিজরিত একটি দিন হিসেবে নির্ধারণ হয়ে আছে।
২১ শে ফেব্রুরারির সংক্ষিপ্ত ভাষণ
সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, উপস্থিত সুধিমন্ডলী,
জাতীয় জীবনে, “ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” বিষয়ে আয়োজিত আজকের এই আলোচনা সভার শুরুতে আপনাদের প্রতি আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বাঙ্গালির জীবনে মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষে রফিক, শফিক, সালাম, বরকতসহ অসংখ্য তাজা প্রাণের বিনিময়ে বাংলা ভাষা আজ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত লাভ করেছে। এই দিনে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এই দিনটি শুধুমাত্র একটি শোক দিবস বা স্মৃতিচারণ নয়, বরং এটি একটি চেতনা ও অনুপ্রেরণার দিন। এই দিনটি আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, মাতৃভাষার অধিকারের কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এই দিনটি আমাদের শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কতটা সাহসী হতে হয়।
একুশ ফেব্রুয়ারি অধিকার আদায়ের সাধনা, একুশ আমাদের আমাদের প্রতিবাদী হওয়ার ঘোষণা, একুশ আমাদের মায়ের ভাষা রক্ষার সূচনা, একুশ আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার উন্মাদনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষার স্বাধীনতার দিন। এই দিনে আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে তাদের জীবন দিয়েছেন। এই দিনটি বাংলা ভাষার মানবতা ও স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অবিচল প্রতিবাদের প্রতীক। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। আমি এই আর্টিকেলটি জুড়ে চেষ্টা করেছি একুশে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও ভাষণ বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলার। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত ও অনুপ্রেরিত হবেন।
Leave a Comment