ওটস কি? ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

ওটস কি? ওটস খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

একসময় পশু খাদ্য হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও পুষ্টিগুণে অনন্য এই ওটস। বর্তমান সময়ে ওটস বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবাই খেয়ে থাকে। ওটস পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় বেশ উপরের দিকে থাকার মূল কারণ হচ্ছে, এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আরও আছে কোলেস্টেরল বিরোধী বিটা-গ্লুকান, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, কপার, জিঙ্ক, আয়রন,ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি-১, সেলেনিয়াম ইত্যাদির মতো মিনারেল।

ওটস খাওয়ার অনেক উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে তবে অপকারিতা চেয়ে উপকারিতাই বেশি। ওটসের সঠিক উপকারিতা পেতে হলে ওটস খাওয়ার নিয়ম আগে জানতে হবে। ওটস খেলে যেমন খুব সহজে মোটা হওয়া যায় তেমনি ওটস খেলে ওজনও খুব তাড়াতাড়ি কমানো যায়। এটা ডিপেন্ড করে ওটস কিভাবে খাচ্ছে তার ওপর। আজকে আমরা ওটস কি, ওটস খাওয়ার নিয়ম, এবং ওটসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

ওটস কি

ওটস হচ্ছে ধান, গম ও যবেরই পরিবারভুক্ত এক প্রকার খাদ্য শস্য। এটি প্রচুর পুষ্টি সমৃগ্ধ একটি খাবার হলেও ওটস খাওয়ার নিয়ম না জানা থাকলে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। ওটস মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ায় জন্মানো একটি ফসল। পশুখাদ্য হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হলেও মানুষের স্বাস্থ্যের উপকারিতায়ও রয়েছে এর অনেক অবদান। ওটস থেকে বিস্কুট, কেক, রুটি ইত্যাদির মতো খাবার তৈরি করা হয়।

সাধারণত কৃষকেরা ধান, গমের মতো করে ওটসের ও চাষ করে থাকে। এটি প্রায় চার হাজার বছর আগে থেকে চাষ করে আসছে। ওটসে রয়েছে অন্য খাদ্যশস্যের তুলনায় উচ্চ মানের পুষ্টি গুণ। কতিপয় গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এতে আছে অতি উচ্চ মাত্রায় সহজে দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকন। এই বেটা-গ্লুকন দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে নেই ওটসের পুষ্টি গুণ, ওটস খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে-

ওটসের পুষ্টিগুণ

ওটসের পুষ্টিগুণ সিঠিক ভাবে কাজে লাগাতে চাইলে আগে ওটস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। পুষ্টিবিদদের মতে এটি দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর শস্যের একটি। দারুণ এই পুষ্টি সম্পন্ন খাবার কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের অন্যতম একটি উৎস। অন্য যেকোনো খাদ্যের চেয়ে বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে এই খাদ্যশস্যে। আধাকাপ বা ৭৮ গ্রাম ওটসে  ৪১% ফসফরাস, ১৯১% ম্যাঙ্গানিজ, ২৪% কপার, ৩৪% ম্যাগনেশিয়াম, ২০% আয়রন, ১১% ফোলেট, ২০% জিঙ্ক, ৩৯% ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন, ১০% ভিটামিন বি৫ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ৫১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফ্যাট এবং ৮ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

ওটস খাওয়ার নিয়ম

ওটস খাওয়ার নিয়ম

ওটস কি তা অনেকে জানলেও ওটস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জানে না। ওটস বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। আপনি এটিকে কাঁচা, রান্না করা বা প্রসেস করা ওটস খেতে পারেন। কাঁচা ওটস খাওয়ার সময় এটিকে ধুয়ে নিয়ে লবণ, মশলা বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও আরও কয়েকটি উপায়ে ওটস খাওয়া যায়। নিচে ওটস খাওয়ার নিয়ম সহজভাবে তুলে ধরা হলো:-

  • ব্রেকফাস্ট এর সঙ্গে ওটস খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এর মধ্যে কুচি করে দিন পছন্দমত ড্রাই ফ্রুটস বা বিভিন্ন ধরনের ফল।
  • রাতে ওটস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে দুধ বা ফল মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • বিকালে চা বা কফির সাথে ওটস বিস্কিট খান। ইচ্ছে করলে বানিয়ে নিন চকলেট চিপস বিস্কিট। পেয়ে যাবেন স্বাদ এবং স্বাস্থ্যের এক অপূর্ব বন্ধন।
  • নিজে নিজে বানিয়ে নিতে পারেন ওটস এর সবজি বা মাংসের খিচুড়ি।
  • স্ন্যাস্কস হিসেবে বানাতে পারেন ওটস ইডলি সোমবার আর নারকোলের চাটনি দিয়ে নাস্তা।
  • দুপুরের ভাতের বদলে ওটস সেদ্ধ করে ডাল তরকারি মাছের ঝোলের সঙ্গেও খেতে পারেন।
  • ওটস টক দই এর সাথে খেতেও খুবই মজাদার। এতে খুব ছোট ছোট কুচি কুচি করে আপেল বা খেজুর মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া স্ট্রবেরিয়ার ব্লুবেরিয়া দিয়েও খেয়ে দেখতে পারেন।
  • অনেক সময় সকালে তাড়াহুড়ো রান্না করার সময় থাকে না। তাই ওটস রাতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সেটা দিয়েই সকালে উঠে বানিয়ে ফেলুন নানা রকম মজাদার খাবার। আপেল কলা আম কিংবা বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়ে জল খাবার বানানো যেতে পারে। ওটস এর স্বাদ বাড়াতে মধুও ব্যবহার করতে পারেন। একসঙ্গে মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ওটসের মুদি।

উপরোক্ত ওটস খাওয়ার নিয়ম ছাড়াও আরও বিভিন্ন ভাবে ওটস খাওয়া যায়। তবে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ওটস খেলে যতেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

ওটস খাওয়ার উপকারিতা

ওটস খাওয়ার উপকারিতা

ওটস কি, ওটস খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি ওটসের উপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিৎ। ওটস ক্যালসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রনের ভিটামিনিয়া এবং ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী। গর্ভবতী মহিলাদের এবং ক্রমবর্ধমান শিশুর ওটস খাওয়া উচিত। ওটসের আরও কয়েকটি উপকারিতা হলো-

ওটস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ- ওটস হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ওটস দারুন উপকারি খাবার হতে পারে। কেননা এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করে পেটকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া লিভারের জন্য ওটস খুবই উপকারী একটি খাবার।

ওটস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ- ওটস উপস্থিত বিটা গ্লুকন মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ওটসঃ- ওটস স্কিনের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। কারণ এর অনেকগুলো পুষ্টিকর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বককে নরম এবং উজ্জ্বল করে তোলে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ- ওজন কমাতে নিয়মিত ওটস খেতে পারেন। কারণ ওটসে রয়েছে অদ্র গুনি এবং দ্রবণীয় ফাইবার যা চর্বি পোড়ানোর জন্য খুবই ভালো, সেই সাথে রয়েছে প্রোটিনের উপস্থিতি যা পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। যারা জিমে যাওয়া পর খাবার খাওয়ার সময় পান না, তারা ওটস খেতে পারেন। কেনোনা ওটস খুব সহজে ওজন কমাতে পারে।

ওটস হার্টের জন্য উপকারিঃ- হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফাইবার ও ফুলেবল ফাইবারের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু মানব শরীরকে হার্টের রোগ থেকে রক্ষায় করেনা, বরং শরীরে অনেকগুন বেশি শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ফুলেবল ফাইবার। আপনাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত কিছু পরিমাণ ওটস খেতে পারেন। তাছাড়া ওটস শরীরে চিনির মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেঃ- উচ্চ রক্তচাপ আমদের হৃদ যন্ত্রের জন্য খুবই বিপদজনক। উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাচার অন্যতম উপায় হলো ওটস খাওয়া। ওটসে থাকা ফাইবারের কারণে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশে কমে যায় এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম।

কোলন ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে সাহায্য করেঃ- বর্তমান সময়ে কোলন ক্যান্সার খুবই পরিচিত একটি মারাত্মক রোগ। ওটস এ বিদ্যমান অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট কোলন ক্যান্সার কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেসকল মানুষ প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ ওটস খান, তাদের ভেতর কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। আর এটি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এসব অঙ্গ সুস্থ থাকলে কোলন ক্যানসার হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।

মানসিক সুস্থতা বাড়াতে ওটস খেতে পারেনঃ- ওটস খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেরোটোনিন ঘুম ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দুশ্চিন্তা দূর করে মন ভালো রাখতেও বেশ সহায়ক।

ওটস খাওয়ার উপকারিতা

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে আমরা ওটস কি, ওটস খাওয়ার নিয়ম, ওটস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আপডেট সব নিউজ পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *