থানকুনি পাতা কেন খাবেন? – মহাঔষধী থানকুনি পাতার গুনাগুণ

থানকুনি পাতা কেন খাবেন? – মহাঔষধী থানকুনি পাতার গুনাগুণ

থানকুনি পাতা একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এই পাতা দেখতে একটু ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি। কিন্তু দেখতে ছোট হলেও এই পাতার মধ্যে রয়েছে ঔষধি সব গুণাগুণ। এই পাতা আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার অবদান অপরিসীম। এমনকি প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এই পাতার রয়েছে প্রচুর গুণাগুণ। এই থানকুনি পাতার রস থেকে অনেক ঔষধও তৈরি করা হয়।

থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম কি?

থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম ( Centella asiatica (wiki) ). যার ইংরেজি নাম ( Indian pennywort ). বাংলাদেশে এর স্থানীয় নাম হলোঃ ডোলমানিক। তবে এখানকার মানুষেরা এটিকে থানকুনি নামেই চেনে। এটি এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক পরিবারের নাম হলো ম্যাকিনলেয়াসি। যাকে অনেকেই এপিকেসি পরিবারের উপপরিবার মনে করেন।

থানকুনি পাতার ঔষধিগুণ

থানকুনি পাতা কেন খাবেন?

এটি ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ায় অনেক রোগ নিরাময়ে এই থানকুনি পাতার জুড়ি নেই। ঔষধি গুণসম্পন্ন থানকুনি পাতা খেতে পারেন রস করে অথবা বেটেও। আপনি চাইলে এটিকে চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। নিয়মিত এই পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে দূরে থাকতে পারবেন বিভিন্ন রোগ থেকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, থানকুনি পাতা কেন খাবেন-

  • থানকুনি পাতা হজম শক্তি বারায়ঃ- থানকুনি পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, থানকুনি পাতায় রয়েছে একাধিক উপকারী উপাদান। আপনার খাবারগুলো ঠিকমতো হজম হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখে।
  • পেটের সমস্যা দূর করেঃ- আপনার যদি হাঁপানি, আলসার এগজিমা কিংবা অন্যান্য চর্মরোগ থাকে তাহলে এসব রোগ থেকে সেরে উঠতে থানকুনি অত্যান্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন অসুখের ঔষধ হিসেবে যেমনঃ আমাশয়, আলসার, বাতের ব্যথা ইত্যাদিতে এই থানকুনি পাতাকে ব্যবহার করা হয়েছে।
  • কাশি ও ঠান্ডা থেকে বাচতেঃ- আপনার যদি কাশি ও ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে এসব সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। দেখবেন খুব দ্রুতই সেরে উঠবেন। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে রক্তে থাকা উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়।
  • ভিটামিন সি যুক্ত থানকুনি পাতাঃ- অনেক থানকুনি পাতায় ভিটামিন সি রয়েছে। আর এই ভিটামিন সি যুক্ত থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই থানকুনি পাতায় রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের ভেতর থেকে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে।

থানকুনি পাতা কেন খাবেন?

থানকুনি পাতার ঔষধিগুণ

অনেক জটিল রোগ থেকে সারিয়ে তুলতে থানকুনি পাতার জুড়ি মেলা ভার। এতে উপস্থিত রয়েছে একাধিক উপকারী খনিজ এবং ভিটামিন যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। শরীর দেখভালেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এই থানকুনি পাতা। এই থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণাগুণ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো থানকুনি পাতার এইরকমই কিছু ঔষধি গুণাবলি সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাকঃ-

  • যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে মহাঔষধ হিসেবে কাজ করবে। প্রতিদিন সকালে হাফ কেজি দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও ১৭৫ গ্রাম থানকুনি পাতার রস একত্রে খেলে গ্যাস্ট্রিক ভালো হয়।
  • যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে শিশুরা তাদের পেটের সমস্যা দূর করতে এই থানকুনি পাতা বেশ কার্যকর। অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল, আনারসের কচি পাতা ১টি, কাঁচা হলুদের রস এবং ৪/৫ টি থানকুনি গাছের শিকড়সহ ভালো করে ধুয়ে একত্রে বেটে রস করে খালি পেটে খেতে হবে।
  • যাদের হজম শক্তি কম তারা হজম শক্তি বাড়াতে এই থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। পেপের সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে এক মাস রান্না করে খেলে দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • থানকুনি পাতার রস খেলে অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রক্তদূষণ দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে ৭ দিন খান।
  • যাদের আমাশয় রয়েছে তারা যদি থানকুনি পাতা বেটে পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে দুই চা চামচ দিনে দুই বার খান তাহলে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
  • যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে থানকুনির রস ১ চা চামচ। ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রসে সামান্য পরিমাণ চিনি দিয়ে তার সাথে মধু মিশিয়ে ১ মাস খেলে লিভারের সমস্যা ভালো হয়।
  • কোথাও থেঁতলে গেলে সেই স্থানে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন।
  • যাদের অপুষ্টি ও ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যাচ্ছে তারা পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ৫-৬ চামচ থানকুনি পাতার রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • শরীরের কোনো স্থানে যদি ক্ষত হয় তাহলে সেই ক্ষত স্থানে থানকুনি পাতা বেটে ঘিয়ের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে যার ফলে আমাদের ব্রেন সেলের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে আমাদের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতাতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণাগুণ। এই পাতা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় খুবই উপকারী। তবে এই থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়, তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজ আমরা এই থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবোঃ-

  • থানকুনি পাতা খেতে হলে আপনাকে প্রথমে থানকুনি পাতাকে পরিষ্কার করে ধুয়ে বেঁটে বা ব্লিন্ডারে ব্লিন্ড করে নিয়ে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতাকে আপনি ভর্তা করে ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতাকে বেঁটে বড়া করে অথবা পিয়াজু বানিয়েও খেতে পারেন।

থানকুনি পাতা চেনার উপায়

থানকুনি পাতা চেনার উপায়

এই পাতেকে আমরা প্রায় সবাই কোথাও না কোথাও দেখেছি কিন্তু নাম না জানার কারণে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না যে এটা আসলে থানকুনি পাতা কিনা। তাই আমরা আপনাদের এই থানকুনি পাতা চেনার কিছু উপায় জানাবোঃ-

  • এই থানকুনি পাতা দেখতে গোল গোল খাঁজকাটা।
  • থানকুনি পাতা দেখতে গোলাকৃতি ছোট তবে একটা পয়সার থেকে কিছুটা বড়।
  • এই পাতার স্বাদ অনেক তেতো।
  • এটি পুকুরের পাড়ে কিংবা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বেশি জন্মায়।

থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়

আমাদের যাদের ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের ত্বকের জন্য এই থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। এই পাতা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে থাকে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এই থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।

  • থানকুনিতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • যাদের মুখে ব্রণ রয়েছে তারা এই থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এই থানকুনি পাতা মুখের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে থাকে। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান যা ত্বকের ব্রণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • ত্বকের ক্ষত ও জ্বালাপোড়া কমাতে থানকুনি পাতা খুবই উপকারী।
  • থানকুনি পাতাতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড যা ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় ও ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • থানকুনি পাতা ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি

থানকুনি পাতা আমাদের সকলের কাছেই একটি পরিচিত ঔষধি গাছ। এটি প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এই থানকুনি গাছ চাষও করতে পারেন। থানকুনি চাষ প্রায় সব মাটিতেই করা যায়। বিশেষ করে বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি এটি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ছোট কিংবা মাঝারি টবে এই থানকুনি চাষ করা যায়। আপনি চাইলে এটিকে বাড়ির ছাদেও চাষ করতে পারেন। এটি সারাবছরই চাষ করা যায়।

আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা থানকুনি পাতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। এই আর্টিকেলে আপনারা যা জানলেন- থানকুনি পাতার ঔষধি গুণাগুণ, এটি খাওয়ার নিয়ম, এই পাতা মুখে দিলে কি হয়, এই পাতা চেনার উপায়, এই পাতা চাষ করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *