১৯৮৩ সালে দেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের সকল কার্যক্রম শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক। বর্তমানে এই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে গ্রাহক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। এর অন্যতম কারণ সব ধরনের আধুনিক সেবা সহ গ্রাহকদের ১০০ ভাগ সেবা নিশ্চিত করা।
বর্তমান সময় পর্যন্ত এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই ব্যাংক বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে আমরা ঘরে বসেই ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারি। নতুন ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। আজকে আমি আপনাদের জানাবো কীভাবে ইসলামিক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয় এবং একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজপত্র লাগে বা কত টাকা লাগে। চলুন তবে শুরু করা যাক-
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কি এবং এর প্রকারভেদ?
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট হলো এক ধরনের ব্যাংক একাউন্ট যা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এ ব্যাংক বাংলাদেশে অনেক মর্জাদার সাথে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত হয়ে আসতিছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (Islami Bank Bangladesh Limited) ৩ ধরনের একাউন্টে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এগুলো হলো-
- ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টঃ- এই একাউন্টে কোন রকমের ইন্টারেস্ট প্রযোজ্য হয় না এবং এটি প্রতিদিন লিমিট ছাড়া ট্রানজেকশন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টঃ- এই একাউন্টে টাকা জমা রাখলে লাভ পাওয়া যায়।
- ইসলামিক ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টঃ- এই একাউন্ট মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা হয়।
বাংলাদেশের যেসব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকগুলোতে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়। আপনি চাইলে এই ব্যাংকগুলিতে একটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করতে পারেন বা একটি একাউন্ট খুলতে পারেন। বাংলাদেশের যেসব ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয় সেই ব্যাংকগুলো নিম্নে লেখা হলো-
- ইসলামী ব্যাংক।
- সিটি ব্যাংক।
- সোনালী ব্যাংক।
- সোশাল ইসলামী ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। আর সেটা যদি হয় ইসলামিক ব্যাংক একাউন্ট তাহলে তো আর কথাই নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে ব্যাংক একাউন্ট প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ২ ভাবে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায় এবং এই ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। নিচে তা লেখা হলো-
- স্থানীয় শাখা বা এজেন্ট অফিসে সরাসরি উপস্থিত হয়েঃ- এজেন্ট অফিসে সরাসরি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাইলে প্রথমে একাউন্টের ধরন নির্বাচন করতে হবে, তারপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ ইসলামী ব্যাংকের শাখা বা এজেন্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করবে এবং স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ করবে। যদি সকল তথ্য ও ডকুমেন্টস সঠিক হয় তাহলে একাউন্টের প্রাথমিক ডিপোজিট সম্পন্ন করে তাৎক্ষণিকভাবে একটি একাউন্ট করতে পারবেন।
- অনলাইনে সেলফিন অ্যাপের মাধ্যমেঃ- আবার ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই মাত্র ২-৫ মিনিট সময়ে অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। তারপর চেক বই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি সেবা পেতে যে শাখা বা এজেন্ট অফিসের অধীনে একাউন্ট খুলবেন সেখানে ৩ মাসের মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে?
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ন্যূনতম ডিপোজিট ফি প্রদান করে একাউন্ট খুলতে হয়। এখান থেকে আপনি ৫০০ টাকা কখনো উত্তোলন করতে পারবেন না। এছাড়াও মাত্র ১০০ টাকায় ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। এই একাউন্ট খুলতে বেশ কিছু কাগজপত্রের দরকার হয়। নিচে তা লেখা হলো-
- আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি রঙিন ছবি পাসপোর্ট সাইজের।
- নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
- নমিনির সদ্য তোলা ১/২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স / ই-টিন সার্টিফিকেট।
- অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানের তথ্য প্রয়োজন হবে।
- বিশেষ ক্ষেত্রে নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
- একাউন্ট তৈরি করার পরে ন্যূনতম ডিপোজিট ফি।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট
আমরা আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন লেনদেনের প্রয়োজনে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করে থাকি। আর এই দৈনন্দিন লেনদেনের প্রয়োজনে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের একটি সুসংগত এবং সহজ মাধ্যম হলো কারেন্ট একাউন্ট। বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ীরা আছেন তাদের জন্য। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধনী ব্যক্তিদের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত।
কারণ, ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট যে একাউন্ট রয়েছে সেখানে আপনার চাহিদামত প্রতিদিন অসংখ্য বার লেনদেন করতে পারবেন। এই কারেন্ট একাউন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে কোন সুদের হার প্রযোজ্য থাকে না এবং ব্যাংক চার্জও দিতে হয় না। যে কেউ চাইলেই এই একাউন্ট খুলতে পারবে।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে
ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট দেশের যেকোনো নাগরিক চাইলেই খুলতে পারবে। ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট খুলতে যেসব কাগজপত্রের দরকার হয় নিম্নে তা লেখা হলো-
- সঠিকভাবে পুরনকৃত আবেদন ফরম।
- আবেদনকারীর যেকোনো একটি আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট- জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এক কপি।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আবেদনকারী দ্বারা সত্যায়িত নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি ও ছবি।
- ঠিকানার তথ্য নিশ্চিত করতে ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি)।
- আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলে ই-টিন সার্টিফিকেট।
- প্রাথমিক ব্যাংক ডিপোজিট ১,০০০ টাকা।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টের সুবিধা
এই একাউন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে কোনো সুদের হার দিতে হয় না এবং ব্যাংক চার্জেরও কোনো ঝামেলা নেই। এই ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টের আরোও যেসব সুযোগ-সবিধা রয়েছে সেগুলো নিম্নে লেখা হলো-
- কারেন্ট একাউন্টে আনলিমিটেড লেনদেন করা যায়।
- যেকোনো পরিমাণ/অংকের টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়।
- ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয় না।
- ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টে টাকা প্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করতে পারে।
- চাহিদা মাত্র টাকা প্রদানে ব্যাংক বাধ্য থাকে।
- ইসলামী ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট
ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্যাংকিং সেবা হচ্ছে সেভিংস একাউন্ট। এই একাউন্টটি খোলা হয় মূলত ব্যাংকে নিয়মিতভাবে অর্থ জমা রাখলে তা থেকে নিয়মিত একটি লভ্যাংশ পাওয়া যায়। ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টে জমাকৃত অর্থ ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী হালাল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। সেখান থেকে প্রাপ্ত লোভ্যাংশের সর্বনিম্ন ৬৫ ভাগ হিসাবধারীদের মধ্যে ওয়েটেজের ভিত্তিতে বন্টন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিমাসে স্বল্প পরিমাণ নির্ধারিত লভ্যাংশ একাউন্টে জমা হয় এবং বছর শেষে লভ্যাংশের বাকি টাকা জমা হয়।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী শাখা বা এজেন্ট অফিসে একাউন্ট খুলতে পারবেন। ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুলতে যেসব কাগজপত্রের দরকার হয় নিম্নে তা লেখা হলো-
- ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে পূরণ।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এক কপি। আবেদনকারী প্রাপ্তবয়স্ক না হলে অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্র সহ জমা দিতে হয়।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- একাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক সত্যায়িত নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি ও ছবি।
- ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি)।
- আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
- প্রাথমিক সেভিংস একাউন্ট ডিপোজিট ৫০০ টাকা।
এছাড়াও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সেভিংস একাউন্ট করলে প্রতিষ্ঠানভেদে কিছু ভিন্ন ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। যেমন-
- ব্যক্তিগত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলে টি আই এন সার্টিফিকেট (TIN Certificate)।
- ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান হলে ট্রাস্টের দলিল বা প্রমানপত্র।
- মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় হলে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন।
- আবেদনকারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি কোন লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন (Memorandum and Articles of Association) এর সত্যায়িত কপি।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের সুবিধা
সেভিংস একাউন্ট কারেন্ট ব্যাংক একাউন্টের মতো হলেও এখানে মাসিক লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। এই একাউন্টে নিয়মিত লভ্যাংশ বা সুদের হার পেতে চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অর্থ উত্তোলন করা যায় না। এই ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের আরোও যেসব সুযোগ-সবিধা রয়েছে সেগুলো নিম্নে লেখা হলো-
- জমাকৃত অর্থের উপর নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পাওয়া যায়।
- পায়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া যায়।
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
- ব্যাংক বিভিন্ন খাতে এই টাকা ইনভেস্ট করে মুনাফ অর্জন করতে পারে।
- সেভিংস একাউন্ট খুলতে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মে মাত্র ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়।
ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে স্টুডেন্ট একাউন্ট। এই স্টুডেন্ট একাউন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদেরকে যেন ওই শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ই সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়। স্টুডেন্ট একাউন্টে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে হয় না শিক্ষার্থীরা স্বল্প পরিমাণ অর্থও জমা দিয়ে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সঞ্চয় করে থাকে। এই স্টুডেন্ট একাউন্টে শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকে সেই অর্থ থেকেই তারা তাদের শিক্ষার খরচ চালাতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে
স্টুডেন্ট একাউন্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। অন্যান্য একাউন্টের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। যেসব কাগজপত্রের দরকার হয় নিম্নে তা লেখা হলো-
- শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট কার্ড, এনআইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টের কপি।
- অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নমিনির ১ কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- গ্রাহকের স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
- কমপক্ষে ১০০ টাকা প্রাথমিক ডিপোজিট।
ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
সেভিংস বা কারেন্ট একাউন্ট খোলার পর এর একটা বার্ষিক চার্জ থাকে যা অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দ্বারায়। আবার যদি সেটা শিক্ষার্থীদের একাউন্ট হয়ে থাকে তাহলে তো আরও বড় সমস্যা। কারণ একজন শিক্ষার্থী সেই পরিমাণ চার্জ দিতে সক্ষম হয়ে থাকে না। এসব কথা বিবেচনা করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড স্টুডেন্ট একাউন্ট চালু করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলার সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হচ্ছে এখানে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে হয় না শিক্ষার্থীরা স্বল্প পরিমাণ অর্থ জমা দিয়েই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সঞ্চয় করতে পারে। এই ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টে শিক্ষার্থীদের জন্য আরোও যেসব সুযোগ-সবিধা রয়েছে সেগুলো নিম্নে লেখা হলো-
- এ ধরনের একাউন্টের লেনদেনে কোন এটিএম (ATM) চার্জ দিতে হয় না।
- অনলাইনে বা সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয়ে মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়।
- শিক্ষার্থীদের জমানো টাকার উপর স্বল্প পরিমাণ মুনাফাও পাওয়া যায়।
- সঞ্চয় হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় ব্যবহার করা যায়।
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
- ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখায় একাউন্ট ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা যায়।
অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ঘরে বসেই ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া যায়। আপনাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে এসেছে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এখন ঘরে বসেই মাত্র কয়েক মিনিটে ইসলামিক ব্যাংক একাউন্ট খোলা যাবে আপনার হাতের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে। তবে অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার কিছু নিয়ম রয়েছে। এ নিয়ম গুলো ভুল করলে আপনার একাউন্ট খোলার সমস্যা হতে পারে। তাই আগে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে অনলাইনে আপনার মূল্যবান ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন। তাই নিচের দেওয়া তথ্য গুলো মনোযোগ সহকারে দেখুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুণ। নিম্নে তা লেখা হলো-
- প্লে স্টোরে যেয়ে cellfin অ্যাপসটি ইনস্টল করে নিয়ে রেজিস্টার করবেন।
- আপনি যে নাম্বারে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই নাম্বারটি এবং অপারেটরটি ক্লিক করবেন
- তারপর ছয় সংখ্যার একটি কোড নাম্বার দিবেন।
- রেজিস্টারে গিয়ে এলাও তে ক্লিক করে দিবেন।
- তারপর আপনার নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে।
- উক্ত ভেরিফিকেশন কোডটি লিখে সাবমিট করে দিবেন।
- আপনি আপলোড এনআইডিতে ক্লিক করে আপনার এন আইডির একটি ফটোকপি নিয়ে নিবেন।
- ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার ক্ষেত্রে কর্নার থেকে টেনে উপরে তুলতে হবে। তারপর একটা অপশন আসবে কনফার্ম আপলোড।
- সেখানে ক্লিক করলে একটি ফর্ম চলে আসবে আপনার সামনে। সে ফর্মটির নিচের দিকে নামলে দেখা যাবে প্রফেশন নামে একটি অপশন।
- এখানে ক্লিক করে সাবমিট করলেই আপনার ক্যামেরাটি অন হয়ে যাবে।অর্থাৎ আপনাকে সেলফি তুলতে হবে।
- শুধু আপনার চোখের পলকে সাহায্যে করতে হবে। চোখ তিনবার বন্ধ এবং খোলা, এমনটা করলে আপনার সেলফি তোলা হয়ে যাবে।
- সেলফিটি সাবমিট করার সাথে সাথে আপনার দেখতে পারবেন cellfin একাউন্ট হয়ে গেছে।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট আবেদন ফরম
আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংক ব্রাঞ্চে উপস্থিত হয়ে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন, তার জন্য আপনার একটি একাউন্ট ওপেনিং ফরম প্রয়োজন হবে। ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় একাউন্ট খুলতে গেলে একাউন্টের ধরণ অনুযায়ী আপনাকে একটি ফরম দেওয়া হবে। আপনারা চাইলে সরাসরি অনলাইন থেকে ফরমটি islamibankbd.com ডাউনলোড করতে পারেন। যথাযথ সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করে, ইসলামী ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়ার মাধ্যমে নতুন ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম
আপনার যদি কোন স্মার্ট ফোন না থাকে বা ফোনে নেট কানেকশন না থাকে তবে আপনে চাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের ব্যাল্যান্স দেখতে পারবেন। ইসলামী ব্যাংক থেকে যেকোনো ভেরিফাইড সিমে IBB <space> BAL <space> ফরমেটে এসএমএস লিখে ২৬৯৬৯ নাম্বারে পাঠাতে হবে এবং আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন তাহলে BB <space> BAL <space> Send to : +8801714006969 এই ফরমেটে এসএমএস পাঠাতে হবে।
এই পদ্ধতিতে অর্থাৎ এসএমএসের মাধ্যমে আপনার ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। এছাড়াও আপনারা চাইলে সরাসরি ব্যাংক ব্রাঞ্চে ভিজিট করে এমনকি এটিএম বুথ থেকে ATM কার্ড ব্যবহার করে আপনার ইসলামী ব্যাংকের ব্যালেন্স দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও সেলফিন অ্যাপসের মাধ্যমেও ব্যালেন্স চেক করতে পারেন।
শেষ কথা
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার যাবতীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জেনে অনেক উপকৃত হয়েছেন। এখানে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, খুলতে কি কি কাগজপত্র লাগে বা কত টাকা লাগে, আর কোন কোন ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায় এবং আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সরাসরি শাখায় গিয়ে খোলার পাশাপাশি কিভাবে অনলাইনে খুলতে পারবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
Leave a Comment