বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলুন খুব সহজে

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলুন খুব সহজে

আপনি যদি একজন বিকাশ ইউজার হন তাহলে অ্যাপ থেকে বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলে টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন এবং সেখান থেকে নিদিষ্ট হারে ইন্টারেস্ট বা মুনাফাও পাবেন। বর্তমানে গ্রাহক দুই ধরনের বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন এবং বিভিন্ন মেয়াদ অনুযায়ী টাকা জমা রাখতে পারবেন।

এই আর্টিকেলে আমি বিকাশ সেভিংস একাউন্ট কিভাবে খুলবেন এবং বিকাশ সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা অসুবিধা সহ এর স্কিম নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা

আমরা সাধারণত সঞ্চয় বা ডিপিএস সেবা নিতে সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা রাখি। এতে করে আমাদের অনেক সময় ঝামেলা পোহাতে হয়, যেমন-

  • সঞ্চয় একাউন্ট তৈরি করার সময় কাগজপত্রের ঝামেলা পোহাতে হয়,
  • নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে হয়,
  • আবার অনেক সময়তো টাকা জমা দেওয়ার কথাটাই ভুলে যাই।

এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে বিকাশ সেভিংস একাউন্ট সেবা চালু করেছে। বিকাশে সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংকে যেতে হবে না, নেই বেশি কোন কাগজপত্রের ঝামেলা। কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরন করে আপনি বিকাশের সেভিংস একাউন্ট করে ফেলতে পারবেন। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে টাকা জমা দেওয়ার জন্যও ব্যাংকে যেতে হবে না। বিকাশ নির্দিষ্ট তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে সেভিংস একাউন্টে টাকা জমা করে দিবে।

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

আপনি দুই ধরনের বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন-

  1. সাধারণ সেভিংস
  2. ইসলামী সেভিংস

চলুন এই দুটি সেভিংস সার্ভিস ও এদের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক-

সাধারণ সেভিংস

বিকাশ অ্যাপের সেভিংস সার্ভিসের “সাধারণ সেভিংস” ব্যবহার করে আপনি আকর্ষণীয় মুনাফাসহ সহজে ও নিরাপদে টাকা জমা করতে পারবেন। বর্তমানে আপনি বিকাশ থেকে চারটি ব্যাংকে সাধারণ সেভিংস একাউন্ট করে টাকা জমা রাখতে পারবেন-

  1. ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড
  2. আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড (৭%)
  3. ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড (৬%)
  4. মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (৫.৫%)

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

সাধারণ সেভিংস একাউন্ট খোলার ধাপগুলো

  1. বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপের ড্যাশবোর্ড থেকে “সেভিংস” অপশনে ক্লিক করে নিয়ম ও শর্তাবলিতে সম্মতি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এরপর “নতুন সেভিংস স্কিম খুলুন” অপশনে ক্লিক করলে একাউন্ট খোলার প্রসেস শুরু হবে।
  2. সেভিংস একাউন্টের ধরন থেকে “সাধারণ সেভিংস” বেছে নিন।
  3. সেভিংসের সময়কাল (২/৩/৪ বছর) ও জমার ধরন (মাসিক) নির্বাচন করুন।
  4. এরপরে প্রতি মাসে কত টাকা জমা রাখবেন সেই তথ্য দিতে হবে। আপনি ৫০০/১০০০/২০০০/৩০০০ টাকা জমা রাখতে পারবেন।
  5. আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের তালিকা থেকে ব্যাংক সিলেক্ট করতে হবে। যেমনটা আগেই বলেছি বর্তমানে বিকাশে আপনি চারটি ব্যাংকে সাধারণ সেভিংস একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। এই চারটি ব্যাংক থেকেই আপনাকে ব্যাংক সিলেক্ট করতে হবে।
  6. ব্যাংক সিলেক্ট করার পরে আপনার নমিনি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপনি কেন সেভিংস একাউন্ট খুলতে চান তা নির্বাচন করুন।
  7. সেভিংস সামারি দেখে নিশ্চিত হয়ে নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে আপনার সম্মতি দিন।
  8. আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখুন।
  9. বিকাশ সেভিংস একাউন্ট তৈরির রিকোয়েস্টটি সম্পন্ন হলে, বিকাশ ও ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন।

সাধারণ সেভিংস স্কিমের বিস্তারিত

চারটি ব্যাংকের সেভিংস স্কিম একই। চলুন সেভিংস স্কিমগুলো দেখে নেওয়া যাক-

  • জমার পরিমাণ প্রতিমাসে ৫০০/১,০০০/২,০০০/৩,০০০ টাকা।
  • সেভিংস স্কিমের মেয়াদ ২/৩/৪ বছর।
  • মেয়াদ শেষে লাভসহ সম্পূর্ণ টাকা কোনো খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করতে পারবেন।
  • দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এআইটি ও আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
  • আপনি একটি বিকাশ অ্যাপ থেকে একাধিক সেভিংস স্কিম খুলতে পারবেন।
  • সেভিংস স্কিমে নমিনির তথ্য প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • সেভিংস স্কিমের জন্য বিকাশ/আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেই।
  • সেভিংস স্কিমের গ্রাহক যদি মেয়াদ শেষে লাভসহ সম্পূর্ণ টাকা বা আংশিক পরিমাণ ক্যাশ আউট করেন তাহলে কোন ক্যাশ আউট দিতে হবে না।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি-বিধান অনুসারে, ৩ মাস পূর্ণ হবার আগে সেভিংস স্কিম বাতিল করা যাবে না। তবে আপনি ৩ মাস পরে যেকোনো সময় এনক্যাশমেন্টের জন্য রিকোয়েস্ট করতে পারবেন।
  • আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন ও ভেরিফিকেশন কোড কখনো শেয়ার করবেন না। আপনার একাউন্টের পিন, ওটিপি ও অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে যদি অন্য কেউ  প্রতারণামূলকভাবে সঞ্চয় সুবিধা বাতিল করে দেয় তবে বিকাশ কোন দায় বহন করবে না।
  • আপনি যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই আপনার সেভিংস স্কিম বন্ধ করতে চান, তবে আপনার নির্বাচিত সেভিংস স্কিম অনুযায়ী সম্পূর্ণ মুনাফা নাও পেতে পারেন। মুনাফা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য আইডিএলসি’র সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  • বিকাশ নির্ধারিত আমানত/কিস্তি জমাদানের তারিখে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স না থাকলে লেনদেন ব্যর্থ হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ পরবর্তী সাতদিন আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি অপর্যাপ্ত ব্যালান্স থাকার কারণে এই ৭ দিনেও কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া সম্ভব না হয় তবে আপনি উক্তদিনের মুনাফা পাবেন না।
  • আর্থিক প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী মুনাফার হার কোনো কারণ দর্শানো ব্যাতিরেকে পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করার অধিকার রাখে। বিকাশ কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যেকোন সময় উল্লিখিত শর্তাবলি পরিবর্তন বা সংশোধন করার অধিকার সংরক্ষণ করে।

ইসলামিক সেভিংস

বিকাশ অ্যাপের ‘সেভিংস’ সার্ভিস থেকে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের সাথে শুরু করতে পারবেন শরিয়াহ মোতাবেক ইসলামিক সেভিংস স্কিম। এই স্কিমের আওতায় প্রতিমাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে সিটি ব্যাংক ইসলামিকে জমা হবে এবং মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ আসল টাকা চলে আসবে আপনার বিকাশ একাউন্টে।

ইসলামিক সেভিংস একাউন্ট খোলার ধাপগুলো

  • বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে ‘সেভিংস’ বাটনে ক্লিক করুন।
  • ‘নতুন সেভিংস স্কিম খুলুন’-এ ট্যাপ করে “ইসলামিক সেভিংস” বেছে নিন।
  • সেভিংসের মেয়াদ (২/৩/৪ বছর) ও জমার ধরন (মাসিক) নির্বাচন করুন।
  • প্রতিমাসে যে পরিমাণ টাকা জমাবেন (৫০০/১০০০/২০০০/৩০০০) তা সিলেক্ট করুন।
  • সিটি ব্যাংক ইসলামিকের মোট জমার তথ্য দেখে আপনার নমিনি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সেভিংসের উদ্দেশ্য সিলেক্ট করুন।
  • নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে এবং বুঝে আপনার সম্মতি দিন।
  • আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখুন।
  • সেভিংসের রিকোয়েস্ট সম্পন্ন হলে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক থেকে কনফার্মেশন ম্যাসেজ পাবেন।
  • ব্যাস! সফলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে খুলে ফেললেন আপনার ইসলামিক বিকাশ সেভিংস একাউন্ট।

ইসলামিক সেভিংস স্কিমের বিস্তারিত

  • এক বিকাশ একাউন্ট থেকে আপনি একাধিক সেভিংস স্কিম খুলতে পারবেন।
  • সেভিংস স্কিমের নমিনির তথ্য প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • সেভিংস স্কিমের জন্য বিকাশ/দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষ থেকে কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেই।
  • আপনার ই-টিন এর তথ্য সেভিংস স্কিমে দিলে সেভিংস স্কিমে অর্জিত লাভের উৎসে কর কম কর্তন করা হবে। সেভিংস স্কিমের মেয়াদ শেষ হবার আগে যেকোনো সময় আপনি বিকাশ অ্যাপের সেভিংস অপশনে গিয়ে ই-টিন এর তথ্য প্রদান করতে পারবেন। ই-টিন না থাকলে এনবিআর-এর ওয়েবসাইট থেকে নিতে পারবেন: https://secure.incometax.gov.bd/TINHome
  • তিন মাস পূর্ণ হবার আগে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের সাথে সেভিংস স্কিম বাতিল করা যাবে না। তবে আপনি ৩ মাস পরে যেকোনো সময় এনক্যাশমেন্টের জন্য রিকোয়েস্ট করতে পারবেন
  • আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন এবং ভেরিফিকেশন কোড কখনো কারো সাথে শেয়ার বা প্রকাশ করবেন না। আপনার একাউন্টের পিন, ওটিপি বা অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে যদি অন্য কেউ  প্রতারণামূলকভাবে সঞ্চয় সুবিধা বাতিল করে দেয় তবে বিকাশ কোন দায় বহন করবে না।
  • আপনি যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আপনার সেভিংস স্কিম বন্ধ করতে চান, তবে আপনি আপনার নির্বাচিত সেভিংস স্কিম অনুযায়ী সম্পূর্ণ মুনাফা নাও পেতে পারেন। মুনাফা সম্পর্কিত আরো তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের শর্তাবলি দেখুন।
  • আপনার বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকার কারণে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া সম্ভব না হয়, তবে আপনি উক্ত দিনের মুনাফা পাবেননা।
  • বিকাশ কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যেকোনো সময় উল্লেখিত শর্তাবলি পরিবর্তন বা সংশোধন করার অধিকার রাখে।
বিকাশ সেভিংস একাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য-

কল করুন – 16247
ইমেইল করুন – [email protected]
লাইভ চ্যাট – https://www.bkash.com/help/livechat

শেষকথা

এই আর্টিকেলে আমি বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সেভিংস স্কিমের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেছি যা আপনাদের সেভিংস একাউন্ট খুলতে সাহায্য করবে। আমার মতে, আপনি যদি সেভিংস একাউন্ট খোলার প্লান করে থাকেন কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে কাগজপত্রের ও টাকা জমা দেওয়ার ঝামেলা না করতে চান তাহলে আপনার জন্য বিকাশ সেভিংস একাউন্ট একটি ভালো অপশন। বাকি বিকাশ সেভিংস একাউন্ট করবেন কি করবেন না সেই সিদ্ধান্ত পুরোটা আপনার উপরে।

Author

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিকাশ কেন এবং কিভাবে ব্যবহার করবেন? বিকাশ অ্যাকাউন্টের সুবিধা

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার বিস্তারিত নিয়ম ও ব্যাংকিং সেবা ২০২৪

নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম জেনে নিন খুব সহজে